“শৈশবের একাল – সেকাল” – সাজেদুল হক

বহমান এই সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তীত হচ্ছে মনুষ্য সমাজ এবং তাদের চিন্তা-ধারা, কৃষ্টি কালচার ইত্যাদি। প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করছি তথাকথিত এক আধুনিক জীবনধারায়। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের জীবনধারা সহজ হয়েছে অন্যদিকে আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অনেক কৃষ্টি কালচাল। শুধু তাই নয় দিন দিন আমরা প্রকৃতির সংস্পর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি এবং এর ফলে দিন দিন আমাদের রুচি ও চিন্তাধারায় আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।

শৈশবের সেকালঃ আজ থেকে ১৫ বছর আগের কথা, তখনকার দিনে ফেসবুক কি জিনিস জানতামই না। তখন স্কুলে যাওয়া ও একাডেমিক পড়াশুনার বাহিরে যেই সময় পেতাম ওই সময়টা কাটাতাম নানান ধরনের মজার খেলার মাধ্যমে। তখন টেলিভিশনের তেমন প্রচলন ছিল না। মাঝে মাঝে কিছু বাড়িতে সাদাকালো টেলিভিশন দেখা যেত। আর চ্যানেল ছিল এক বিটিভি। টেলিভিশনে বিনোদন বলতে ২ টা প্রোগ্রাম উপভোগ করতাম। এক হল আলিফ লায়লা যা এক সপ্তাহ পর পর হত। আর বিটিভির হানিফ সংকেত এর ইত্যাদি।

তখন টেলিভিশনে এখনকার মত অশালীন প্রোগ্রাম হত না। ভিনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন ছিল না বললেই চলে। আর আমরা এলাকার ছেলেপেলের দল দারুন সব খেলাধুলায় সময় কাটাতাম। তার মধ্যে ছিল- ডাংগুলি, চোর পুলিশ, গোল্লাছুট, বোম বাস্টিং, সাত চাড়া, ক্রিকেট, দাড়িয়া বান্ধা, ঘুড়ি উড়ানো সহ নানান ধরনের মজার সব খেলা। খুব উপভোগ্য ছিল সেই দিনগুলি।

তখন ছিল না মোবাইলের এত সহজ লভ্যতা। ছিল না ইন্টারনেট ব্যাবস্থা। এলাকায় মোবাইলের দুই একজন ব্যাবসায়ী পাওয়া যেত। তখন মোবাইল টিপাটিপি তো দুরের কথা কোনভাবে মোবাইল একটু হাতে নিতে পারলে অন্য রকম অনুভুতি হত। আস্তে আস্তে গ্রামের কেউ বিদেশ থেকে আসলে ক্যামেরা মোবাইল নিয়ে আসত। মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা যায় শুনলেই আশ্চার্য লাগত। তখনকার দিনে গ্রামে ছিল না বিদ্যুত ব্যবস্থা। হারিকেন এর আলোয় পড়াশুনা করা লাগত। বাতাস খাওয়ার এক মাত্র উপকরণ ছিল হাতপাখা।

তখন ছেলেপেলারা এখনকার মত নেশা করার সাহস পেত না। গ্রামের ছেলে মেয়েরা গার্ডিয়ানদের খুব মান্য করত এবং ভয়ও করত। অর্থাৎ তখনকার দিনে ছেলে মেয়েদের সময় কাটাত স্কুলের পড়াশুনা আর নানান প্রকার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায় মত্ত থেকে। সত্যি অসাধারন ছিল সেকালের শৈশবকালের সোনালী দিনগুলো।

শৈশবের একালঃ প্রযুক্তির কল্যানে বর্তমান কালের ছেলে মেয়েদের জীবন হতে পারে অনেকটা উন্নত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান কালের ছেলে মেয়েদের শৈশব কাটে অনেকটা একঘেয়েমিতে। তাদের দেখিনা অবসরে ঘুড়ি উড়াতে, হাতে উঠতে দেখি না লাটিম। এখন চোখে পড়ে না আগের মত বিকেল বেলা ছোট ছেলেমেয়েদের পাড়ার মাঠে নানান মজার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায় মত্ত থাকতে। তাদের দেখা যায় না খেলার মাঠে, দেখা যায় না দলবল নিয়ে পুকুরে সাঁতার কাটতে কিংবা দেখা যায় না বৃষ্টির মাঝে কাদায় গড়াগড়ি করে বল নিয়ে মেতে থাকতে।

কে হবে ক্লাসে প্রথম এ প্রতিযোগীতায় বই এর স্তুপে পড়ে থাকে তাদের নিরানন্দ জীবনের বেড়ে উঠা৷ অথবা কেউ কেউ পড়ে থাকে মোবাইল নামক এক ডিভাইস হাতে নিয়ে। এক ঘেয়েমি দুর করতে বর্তমানে অনেক কিশোরেরা মোবাইল, ইন্টারনেট আর ফেসবুকে নিজের মত তৈরি করে নিয়েছে এক ভার্চুয়াল জগৎ। অসুখের ভয়ে বৃষ্টিতে ভেজা হয়না। বইয়ের বোঝা, টেলিভিশনে কার্টুন দেখা কিংবা মোবাইলের স্ক্রীনে লুকিয়ে থাকে তাদের শৈশব। শৈশবের প্রকৃত আনন্দ তারা উপলব্ধি করেনা।

বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির যুগে অনেক ছেলে মেয়ে কে দেখা যায় টিভি স্ক্রীনের সামনে ভীনদেশী সংস্কৃতি নিয়ে পড়ে থাকতে। বর্তমানে এমনও দেখা যায় প্রায় সারা দিন রাত ইন্টারনেট আর ফেইসবুক নামক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নিয়ে পড়ে থাকতে। এইগুলো নিয়ে শুধু যে পড়ে থাকে তাই নয়, বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে অল্প বয়সেই সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ইন্টারনেট কিংবা ফেসবুক এর অকল্যানকর ব্যাবহার করছে।

প্রযুক্তির কল্যানে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে মোবাইল প্রেম, অনলাইনে অবাধ ভার্চুয়াল যোগাযোগ অবশেষে প্রেম, ব্যাভিচার, নস্টামি। আমার এলাকার ক্লাস সিক্স এ পড়ুয়া এক ছোট ভাইকে দেখেছি ইন্টারনেট ফেসবুক এর কল্যানে চোখের সামনে অল্প বয়সে নস্ট হতে! সত্যিকার অর্থে প্রযুক্তির কল্যানে আমরা পেয়েছি অনেক কিছু কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার না করার ফলে আমরা অনেক মুল্যবান কিছু দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। নৈতিকতার অবক্ষয় এখন চরম পর্যায়ে। এই কিশোর বয়সে অনেকেই অধিক মাত্রায় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নিয়ে পড়ে থাকায় তাদের মেজাজ হয়ে যাচ্ছে চড়া, লেখাপড়া কম করায় পরীক্ষার রেজাল্ট হচ্ছে খারাপ।

এই হচ্ছে আধুনিকযুগে ছেলেমেয়েদের শৈশবকালের অবস্থা। নিজের চোখের সামনে যা দেখেছি তাই অগোছালোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সবকিছু মিলিয়ে আমার কেনো জানি মনে হয় একালের শৈশব থেকে সেকালের ব্যাকডেটেড শৈশবকালটাই মনে হয় শতগুনে ভাল ছিল, মধুর ছিল, অনেক সহজ-সরল ছিল।

-সাজেদুল হক,

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ, সম্মান ৪র্থ বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ

(পূর্বে প্রকাশিত )

Level 2

আমি সাজেদুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 17 টি টিউন ও 191 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই অনেক ভালো লিখেছেন। বর্তমানের উন্নত প্রযুক্তির ফলে কেউ আর খেলায় সময় কাটায়না। এই উন্নত প্রযুক্তিও প্রয়োজন। কিন্তু সব কিছুর পরিমিত ব্যাবহার প্রয়োজন।

মনটা ফ্রেস লাগতাছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

tnks bro

মনে পরে গেল শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা। দেখতে দেখতে দিনগুলো কিভাবে যেন হারিয়ে গেল টের ই পেলাম না।

# খেলাগুলোর নাম পড়া মাত্র দুইটা খেলার নাম মনে হয়েছে। চোর-পুলিশ, বোম বাস্টিং। অপ্রত্যাশিতভাবে পরের লাইনেই খেলাদুটির নাম দেখে খুবই ভাল লাগলো।
# “কোনভাবে মোবাইল একটু হাতে নিতে পারলে অন্য রকম অনুভুতি হত।” এখনও মনে আছে জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে নিয়ে সুফিয়ান ফুফার ১৪ টাকা ফুরিয়েছিলাম। আর সর্বপ্রথম ক্যামেরা ফোনে ছবি তুলেছিলাম জেসমিন আন্টির ফোনে।
# “গ্রামের ছেলে মেয়েরা গার্ডিয়ানদের খুব মান্য করত এবং ভয়ও করত।” এটা একদম সত্যি কথা। এখন এটা আর চোখেই পড়ে না। সেদিন হাইস্কুলের স্যারের সাথে কথা হল। স্যার বলল যে, বেত দিয়ে পিটালে ছাত্রের বাবা সাংবাদিক ডেকে আনে। অথচ আগে যদি আমি প্রথমদিন পিটাতাম তাহলে দেখা যেত পরের দিন আরো ১০ জনের পড়া হয়েছে। সপ্তাহ শেষে দেখা যেত যে ৫০ জনের ৪০ জনেরই পড়া হয়েছে। যে ১০ জন থাকল, এরা ঐ দলভুক্ত যাদের কোনদিনও পড়া হয় না। যার হাতে শাসনের ভার নাই, তাকে সম্মান করেই কী বা না করেই কী? এটা শিক্ষকদের অসম্মান করার অন্যতম একটা কারণ।
# চিঠি লেখাটা হারিয়ে গেছে। আগে আপুর বান্ধবীরা আপুকে অনেক চিঠি পাঠাত। পোস্টম্যানের সাথে ভালো পরিচয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান যে কে তাকেই চিনি না।
সব মিলিয়ে পোস্টটা খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাই।

Level 0

ভাই আপনার লেখাটি পড়ে শৈশবের কথা মনে পরে গেল। খুব ভাল লাগলো, ধন্যবাদ।