বাংলাদেশের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গণিতের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা।তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এর আয়োজন করে থাকে। দৈনিক প্রথম আলো এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক অলিম্পিয়াড আয়োজনে সহায়তা দিয়ে থাকে। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়। তখন থেকে প্রতি বছরই নিয়মিতভাবে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই অলিম্পিয়াড দুটি স্তরে সম্পন্ন হয়ে থাকে: বিভাগীয় উৎসব ও জাতীয় উৎসব। বিভাগীয় উৎসবে নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীরা জাতীয় উৎসবে অংশ নেয়। জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব প্রদর্শনকারীদের নিয়ে গণিত ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়, আর সেখানে থেকেই বাছাই করা হয় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্যে বাংলাদেশের জাতীয় গণিত দল।
এছাড়াও গণিতের জাগরণকে মুখরিত রাখতে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড, নিজস্ব ব্লগ এবং গণিত ক্লাব ও ফোরাম চালু করেছে। এসকল ফোরাম ও ক্লাবে গণিত বিষয়ে নানা সমস্যার আলোচনা ও সমাধান করা হয়।
গণিত অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষতা এবং আগ্রহ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গণিত অলিম্পিয়াডের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে এখানে এবং এখানে এই দু’টি ওয়েবসাইট ঘুরে দেখতে পার। বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডের মোটামুটি তিনটি ধাপ আছে।
প্রথমটি হল আঞ্চলিক (বিভাগীয়) গণিত উৎসব, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে সারাদেশের প্রায় ১৪-১৫ টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। রেজিস্ট্রেশনের জন্য চোখ রাখতে হবে প্রথম আলোর বিজ্ঞান প্রজন্ম এবং গণিত ইশকুল পাতায়। প্রতিটি ভেন্যুতে সর্বোচ্চ প্রায় ১০০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারে। তাই আগে ভাগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলাই ভাল।
২য় ধাপ হল বাংলাদেশ জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড। সারাদেশে আঞ্চলিক প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের নিয়ে ঢাকায় ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটি সাধারণত দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিন সকালে মূল অলিম্পিয়াড পর্ব। এর পর প্রতিযোগীদের জন্য নানা পর্বের আয়োজন থাকে। পরদিন পুরস্কার বিতরণীল মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
৩য় ধাপ হল গণিত ক্যাম্প এবং Team Selection Test (TST) । জুনিয়র, সেকেন্ডারী এবং হায়ার সেকেন্ডারী পর্যায়ের (প্রশ্ন ক.২ দ্রষ্টব্য) শিক্ষার্থীদের নিয়ে মার্চের দিকে প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য দল নির্বাচন করা হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যেহেতু আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ইংরেজীতেই সবকিছু করতে হয়, তাই ক্যাম্পের পাঠদানের মাধ্যমও মূলত ইংরেজী। তবে এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ইংরেজীতে গণিত শেখা খুব একটা সমস্যার ব্যাপার নয়।
বিভাগীয় গণিত উৎসবে ৩য় থেকে ১২শ শ্রেণীর (বা সমমানের) শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে। বাংলাদেশে ৪টি ক্যাটেগরীতে ভাগ করে অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়:
তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে জাতীয় গণিত ক্যাম্পে কোন ক্যাটেগরী নেই। সবাইকে একই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
গণিত অলিম্পিয়াডে কী ধরণের সমস্যা দেওয়া হবে তার কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। তাছাড়া কোন বই থেকে সমস্যা না দিয়ে সাধারণত মৌলিক সমস্যা, বা কোন সমস্যাকে পরিবর্তিত করে নতুন সমস্যা দেওয়া হয়, সুতরাং কমন পড়ার সম্ভাবনা নেই! তবে সাধারণত, বিভাগীয় গণিত অলিম্পিয়াডে ৭০-৭৫ মিনিট সময়ের ভেতর ১০-১২ টি সমস্যার সমাধান করতে হয়। এখানে কোনকিছু প্রমাণ করতে হয় না; কেবল উত্তর লিখলেই চলে। জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডেও ১০-১২ টি সমস্যার সমাধান করতে হয়। তবে এখানে প্রমাণ নির্ভর বেশকিছু সমস্যা দেওয়া হয় এবং সময় ক্যাটেগরীভেদে ২-৪ ঘন্টা। আগের বছরগুলোর গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া বেশ কঠিন। কারণ অনেকে প্রচুর পড়াশোনা বা অনুশীলনের পরও হয়ত সমস্যা সমাধানে তেমন ভাল করবে না। অনেকে অল্প চেষ্টাতেই বেশ ভাল করতে পারে। তবে সমস্যা সমাধান কখনোই সহজ কোন বিষয় নয় (অন্তত শুরুতে তো নয়ই)। তাই এক্ষেত্রে পরামর্শ হল ধৈর্য না হারিয়ে বার বার চেষ্টা করে যাওয়া। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে গণিতে দক্ষতা যেমন রাতারাতি অর্জন করার মত বিষয় না, তেমনি এমন কোন বিষয়ও না যা নির্দিষ্ট একটা পথ অবলম্বল করলে বা কয়েকটা বই পড়ে ফেললেই শেখা যাবে। তবে শুরুতে সমস্যাগুলো খুব কঠিন লাগলেও আস্তে আস্তে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য (Relation) এবং pattern নিজে থেকেই যখন আবিষ্কার করতে পারবে তখন সহজ সমস্যা সমাধান করা আরও অনেক সহজ হয়ে যাবে। কী ধরণের বিষয় কোন ক্যাটেগরীতে আসতে পারে তা জানতে এখান থেকে BdMO syllabus লেখা pdf দেখতে পার। তবে বিভাগীয়তে মূলত: পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান কতটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম সেটা দেখা হয়। কিন্তু জাতীয় অলিম্পিয়াডে অনেক advanced বিষয় থেকে সমস্যা দেওয়া হতে পারে যেটা আমাদের সিলেবাসে নেই (যেমন: সংখ্যাতত্ত্ব বা কম্বিনেটরিকস)।
সমস্যা সমাধান সম্পর্কে জানার জন্য এবং সাধারণ কলাকৌশলে শেখার জন্য সবচেয়ে ভাল (এবং highly recommended) বই হল: The art and craft of problem solving। এছাড়া USA গণিত দলের প্রাক্তন কোচ কিরণ কেদলায়ার এই নোটটিতে তিনি চমৎকার কিছু টিপস দিয়েছেন।
সবে সর্বশেষ কথা হল সঠিক অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। (“সঠিক অনুশীলন” সম্পর্কে জানতে প্রশ্ন ক. ৬ দেখ)
প্রাইমারী এবং জুনিয়র ক্যাটেগরির শিক্ষার্থীদের জন্য মূলত নিজ ক্যাটেগরির পাঠ্যবইয়ের দিকেই বেশি নজর দেওয়া উচিত। তবে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান যথেষ্ট নাও হতে পারে। বাংলা বইয়ের ভেতর problem book হিসেবে “গণিত এবং আরও গণিত” এবং “নিউরনে অনুরণন” ছোটদের জন্য ভাল।
সেকেন্ডারী আর হায়ার সেকেন্ডারী ক্যাটেগরির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই যথেষ্ট নয় (তবে অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের উপর ভাল দখল থাকতে হবে)। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আলাদা আলাদা বিষয়ের উপর textbook থেকে মূল বিষয়গুলো পড়ে problem book থেকে অনুশীলন করতে পার। তবে এক্ষেত্র বাংলা ভাষায় লেখা বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। সেকারণে মূলত: ইংরেজী বইই পড়তে হবে। বই সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য প্রশ্ন ক.৭ দেখ।
প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বলা দরকার। অনেকের ধারণা যারা জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয় বা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে মেডেল যায় তারা একটা সমস্যা নিয়ে বসে…আর কিছুক্ষণ পর একটা ম্যাজিকের মত সমাধান বের করে (এমন যদি হতো!)…কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্যি না। আসল ব্যাপার হল যারা অলিম্পিয়াড সমস্যা সমাধান করে দীর্ঘদিনের জন্য তারা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একটা pattern খুঁজে পায়। ফলে তার কোন উপায়ে আগাতে হবে সেটা বুঝতে পারে (এটাকে অনেকে intuition বলে)। এটা আসলে দীর্ঘদিনের অনুশীলনের ফল। তাছাড়া তারা নানা দিক থেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে ধৈর্য ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালায়। আমাদের কোচ ড. মাহবুব মজুমদারের মতে: “The best problem solvers are those, who work on problems like a mad dog. They are not necessarily more genius than you.”
আরেকটা ব্যাপার হল সঠিকভাবে সমস্যা সমাধান না করা। সমস্যা সমাধান করার সময় যদি কোন সমস্যা খুব সহজ লাগে তাহলে সেই level এর সমস্যাতে মোটামুটি পারদর্শী হয়েছ বলে ধরে নেওয়া যায়। তাই সেক্ষেত্রে আরও একটু advanced level এর সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। অর্থাৎ সহজ সমস্যা সমাধানের চেয়ে challenging সমস্যা সমাধান করলেই দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব। তবে সহজ সমস্যা তো আগে পারতেই হবে! আর কোন সমস্যা সমাধানের পর অন্য কোন সমাধান দেখা বা দীর্ঘসময় ধরে সমাধান না করতে পারলে সমাধান দেখে শেখার চেষ্টা করলেও অনেকসময় অনেককিছু শেখা যায়।
আমাদের কাছে এখন গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির জন্য বিশ্ববিখ্যাত প্রায় সব বইই আছে। তবে সমস্যা হল বই না পড়ে দেখলে সেটা কতটা কঠিন (Difficulty level) বা মান বোঝা সম্ভব না। এখানে একটা comprehensive book list তৈরীর চেষ্টা করছি, মন্তব্য এবং ডাউলোড লিঙ্ক সহ: । আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ করতে পারব।
তবে কম্পিউটারে পড়তে সমস্যা হলে printed copy এর জন্য যেকোনো বইয়ের দোকানে দেখতে পারেন।
শুধু পুরস্কার পাবার জন্য গণিত অলিম্পিয়াডে আসতে হবে এমন কোন কথা নেই। একটা সমস্যা সমাধান না করলেও সেটা অনেকক্ষণ চেষ্টা করলে যেমন সেটা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়, তেমনি গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিলে পুরস্কার না পেলেও গণিতের প্রতি আগ্রহ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটাও কিন্তু কম না। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে অনেকেই প্রথমবার অংশ নিয়ে ভাল না করলেও পরেরবার অনেক ভাল ফলাফল করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এরকম নেতিবাচক চিন্তা না করে আত্মবিশ্বাস রাখ যে তুমি পারবে; তাহলেই তুমি ভাল করতে পারবে।
যারা মোটামুটি গণিত অলিম্পিয়াডে শুরুর ধাপটা পার করতে পেরেছ, তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ওয়েবসাইট হল The art of Problem solving: এখানে
(Mathlinks নামেও পরিচিত)। আরও লিঙ্ক পাওয়া যাবে এখানে।
তথ্য সূত্রঃ Tarik Adnan Moon (তারিক আদনান মুন), সকল তথ্য তারিক ভাইয়ের ব্লগ থেকে পাওয়া।
এখানে ইংরেজি অনুশীলন করতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
ফেসবুকে আমি
আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...