জ্ঞানপাপীর টুকিটাকি : (পর্ব -০১) :চলুন , ওষুধ ছাড়াই মাথা যন্ত্রণা সারিয়ে ফেলি !

 চলুন , ওষুধ ছাড়াই মাথা যন্ত্রণা সারিয়ে ফেলি !

 

ধরুন আপনি কোনো কাজে বা অকাজে বাইরে এমন একটা জায়গায় আছেন যেখানে হাতের কাছে কোন ডাক্তার বা ওষুধের দোকান নেই। আর আপনার কাছেও কোন ওষুধ নেই। এদিকে মাথার যন্ত্রণায় আপনার নিজের মাথা ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কী করবেন ?

কিম্বা ধরুন : আপনি এই মুহূর্তে ট্রেনের মধ্যে । এদিকে মাথা-ব্যথায় মাথা কেটে ফেলার জোগাড়। কিন্তু ব্যাগেতো ওষুধ নিয়ে বের হননি।

বা মনে করুন বাড়িতে কেউ একজন খুব অসুস্থ।রাত জেগে আপনার মাথা এমন যন্ত্রণা করছে আপনি চুপ করে থাকতে পারছেন না।কিন্তু তার অসুস্থতাটা এতই বেশি যে আপনার প্রচন্ড মাথাযন্ত্রণা করলেও সেখানে আপনার কথা জানাতে পারছেন না।

হয়তো এমন হল আপনার কোনো কাছের মানুষ মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যখন তখন ওষুধ খেতে পছন্দ করেন না ( অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়াও উচিত নয়)। কী করবেন ? কেবল বসে বসে তার কষ্ট দেখবেন ?

চলুন দেখি কিছু করা যায় কিনা ।

কেন মাথা-যন্ত্রণা ?

মাথার যন্ত্রণা নানা কারণেই হতে পারে। ঠাণ্ডা লাগলে ,বদহজম-গ্যাস-অ্যাসিড হলে , টেনশন করলে ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে শেষ করা যাবেনা।

মূল বিষয় হল এটা- আমাদের শরীরে হৃদপিণ্ড থেকে শরীরের নানা অংশে রক্ত সঞ্চালিত হয়।যখন সেটা উপরোক্ত বা তার বাইরের নানা কারণের জন্য বিঘ্নিত হয় তখন নানা ধরণের সমস্যার সূত্রপাত।মাথার যন্ত্রণাও তাই।

 

ওষুধ ছাড়া কিভাবে নিরাময় করা যেতে পারে ?

তাহলে দেখা গেল শরীরের নানা অংশে অক্সিজেন সহ রক্ত সঞ্চালনের অসুবিধা হওয়ার জন্যে এই সমস্যা। যদি এই সমস্যাটা দূর করা যায় তবে সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।

কিন্তু কী ভাবে বা কোন পদ্ধতিতে এটা করা যেতে পারে ?

অ্যাকিউপ্রেসার পদ্ধতির মাধ্যমে এটা সম্ভব।

অ্যাকিউপ্রেসার নামই তো শুনিনি ! তা ভালো , এটা খায় না মাথায় দেয় ?

না , আপনাকে খেতেও হবে না , মাথায়ও দিতে হবে না। অ্যাকিউপ্রেসার একটা পদ্ধতি। এই পদ্ধতি বিশ্বাস করে যে আমাদের শরীরে যত স্নায়ু আছে তার একটা অংশ এসে মিশেছে আমাদের হাতের তলায় ও পায়ের তলায়। শরীরের যে অংশে অসুবিধা , সেই স্নায়ুর উপর আপনি যদি প্রেসার দিয়ে তার কাজকে সচল বা সুস্থ করে তুলতে পারেন তবে যন্ত্রণা নিরাময় হবে।

ও এতক্ষনে নামটা যেন একটু চেনা চেনা লাগছে ? কি যেন ,  কি যেন ,  ও হ্যাঁ , মনে পড়েছে আকুপাংচার। আপনি আকুপাংচারের কথা বলছেন তাহলে ?

হ্যাঁ আমি তার কথা বলছি , আবার বলছিও না। আপনি যার কথা বললেন , আর আমি যার কথা বলছি দুটোরই উদ্দেশ্যটা এক বটে। তবে কাজ করার ধরণটা আলদা।

আকুপাংচারে শরীরের ক্ষতিপ্রাপ্ত ঐ অংশ গুলোতে ছুঁচ ফুটিয়ে ছুঁচের ডগার মাধ্যমে প্রেসার দেওয়া হয়। আকিউপ্রেসারে ছুঁচ না ফুটিয়েই অ্যাকিউপ্রেসারে ব্যবহৃত যন্ত্রের সাহায্যে এই প্রেসার দেওয়া হয়।অবশ্য এই যন্ত্র আপনি নিজেই তৈরী করে নিতে পারবেন যেমন ধরুন পেনসিলের ডগা বা কিছু না পেলে আপনার আঙুলের সাহায্যেও এই কাজটা করতে পারবেন।

কিন্তু আকুপাংচারের  সুঁচ ফোটানোতো অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অসম্ভব।

মানে দাঁড়াল গিয়ে এই - আকুপাংচার থেকেই অ্যকিউপ্রেসার এসেছে,  তাইতো ?

না ,মোটেই তা  নয় বরং অ্যাকিউপ্রেসার অনেক পুরনো পদ্ধতি। তা থেকেই পরবর্তীতে আকুপাংচার এসেছে।

প্রমাণ আছে কি কিছু এই পদ্ধতির প্রয়োগ সম্পর্কে ?

এই উপমহাদেশেই তিন হাজার বছর পূর্বে এর সূচনা হয়েছিল। চরক-সুশ্রুতের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। সুশ্রুতের রচনায় এর প্রমাণ আছে। আমাদের দেহের মধ্যেই অবস্থিত প্রকৃতির নিজস্ব বিজ্ঞান থেকেই অ্যকিউপ্রেসারের জন্ম। ষোল শতাব্দীতে রেড ইন্ডিয়ানরাও রোগীর হাত-পায়ের তেলোর বিভিন্ন অংশে চাপ দিয়ে রোগ নিরাময় করত।মার্কিন দেশের ডাক্তার উইলিয়ন ফ্রিটজজেরালড প্রমুখ ব্যক্তিরা গবেষণা করে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আধুনিক যুগের আলোয় নিয়ে এসেছেন।সবচেয়ে বড় কথা এর কোন সাইড এফেক্ট নেই।

আমার মাথা যন্ত্রণা করছিল না কিন্তু এখন আপনার বকবকানি শুনে মাথাযন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল ।

বা , তাহলেতো বেশ ভালোই হল । একেবারে হাতে কলমে পরীক্ষা করে নিতে পারবেন ।

দেখুন আমি নিচে হাতের ছবি দিয়েছি।

যেখানে গোল করা আছে ঐ অংশটা ভালো ভাবে লক্ষ করুন।

এবার আপনার একহাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে অন্য হাতের ঐ অংশ জুড়ে বারবার প্রেসার দিন।একটু যেন লাগে। কিছুক্ষণ করতে থাকুন।

এবার হাতটিকে উল্টে নিন ছবির মতো।

আবার বুড়ো আঙুলের সাহায্যে গোলদাগ দেওয়া জায়গায় প্রেসার দিন।

এবার এই হাতকে রেস্ট দিন।একই রকম ভাবে অন্যহাতে কিছুক্ষণ করুন।

এবার পায়ের দিকে লক্ষ করুন ।

গোল দাগ দেওয়া জায়গায় হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে হাতে যেভাবে প্রেসার দিচ্ছিলেন একই রকম ভাবে প্রেসার দিন। কিছুক্ষণ করতে থাকুন।

এবার অন্যপায়ে করুন। পুরো প্রক্রিয়াটা পুনরায় আরো দু একবার করুন।

আর সবশেষে হাতের গোলদাগ দেওয়া জায়গায় কিছুক্ষণ প্রেসার দিন।

এবার পায়ের গোল দাগ দেওয়া জায়গায়

এর কারণ হল এই পদ্ধতিতে বিশ্বাস করা হয় এই জায়গাটাতেই বৃক্কের স্নায়ু আছে। হাতের  ও পায়ের যে উপাচার করা হল তার ফলে ঐ অংশ থেকে দূষিত পদার্থ বৃক্কে গিয়ে জমা হয়েছে (বৃক্কের কাজও তো আসলে তাই।)।এই প্রেসারের ফলে বৃক্ককে সুস্থ রাখার উপাচার করা হল।

আর হ্যাঁ যদি মনে করেন অম্বল বা অ্যাসিড থেকে হয়েছে তবে একটা আলু থেতো করে রস খেতে পারেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ভালোবোধ করবেন। পাশাপাশি অ্যকিউপ্রেসারটা  চালু রাখুন।(তবে খবরদার , যদি সুগার থাকে তবে কোনোমতেই আলুর রস খাওয়া চলবে না।)

যদি না কমে ?

যদি কমে তবে অ্যকিউপ্রেসারের গুণ ,যদি না কমে তবে মনে মনে একটু গালি দিয়েন আমাকে।তবে চেষ্টা করে দেখতে দোষ কী? একটু করেই দেখুন না । ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গিয়েছি-মাথা যন্ত্রণা শুরু হবার উপক্রম হচ্ছে বুঝতে পারলে শুরুতেই একটু উন্মুক্ত পরিবেশে হাঁটুন। বাইরের উন্মুক্ত হাওয়া এবং প্রচুর অক্সিজেনের কারণে শুরুতেই আপনার মাথা যন্ত্রণা সেরে যেতে পারে।

সহায়ক গ্রন্থ :আপনার স্বাস্থ্য আপনারই হাতে : অ্যাকিউপ্রেশার ও অন্যান্য প্রাকৃতিক চিকিৎসা। (লেখক-দেবেন্দ্র ভোরা )

*********************************************************************************************************

***********************************************************************

আমার এই লেখাটি প্রথমে  http://www.techspate.com/sobujer-abhijan/4352/  তে প্রকাশিত 

Level 2

আমি সবুজের অভিযান ( Sobujer Abhijan )। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 333 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

সব কিছুই তো শিখতে চাই , তবু সময় যে খুব অল্প , এক পলকেই ফুরিয়ে যাবে জীবনের যত গল্প।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 2

ভাই, আপনি একটা সুন্দর জিনিস আমাদের সাথে শেয়ার করলেন । আমার কাছে অ্যাকিউপ্রেশার এর একটা বই আছে, মারাত্তক বই । বইটির নাম- ‘আপনার স্বাস্থ আপনারই হাতে’ । লেখক দেবেন্দ্র ভোরা । অনুবাদ- প্রবীর রায় চৌধুরী । এটা ব্যবহার করে আমি সত্যিই অনেক উপকার পাচ্ছি । আমার বাবা ঢাকায় অ্যাকিউপ্রেশারের উপর ট্রেইনিং এর সময় এই বইটি পেয়েছিলো । আমাদের সকলের উচিৎ অ্যাকিউপ্রেশারের নিয়ম ফলো করা । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এরকম গুরুত্তপূর্ণ একটা বিষয় উপস্থাপন করার জন্য ।

Level 0

“ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গিয়েছি-মাথা যন্ত্রণা শুরু হবার উপক্রম হচ্ছে বুঝতে পারলে শুরুতেই একটু উন্মুক্ত পরিবেশে হাঁটুন। বাইরের উন্মুক্ত হাওয়া এবং প্রচুর অক্সিজেনের কারণে শুরুতেই আপনার মাথা যন্ত্রণা সেরে যেতে পারে।” এটাই ভালো পদ্ধতি।

    @Mask: সত্যিই এর কোনো বিকল্প নাই। 😀

    আপনাকে কানে কানে আর একটা টিপস দিই- কারো পরে অভিমান হলে আমি একদম গান করি না , করলেই মন ভালো হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে। :mrgreen:

Level 0

notun kichhu shikhlam, dhonnobad bro

Level 0

অনেক সুন্দর একটি দরকারী লেখা । শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যাথা নিয়ে ধারাবাহিক টিউন আশা করছি। সকলের কাজে লাগবে পাশ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা। ধন্যবাদ ।

ভালো টিউন উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

!!”আমার কাছে অ্যাকিউপ্রেশার এর একটা বই আছে, মারাত্তক বই । বইটির নাম- ‘আপনার স্বাস্থ আপনারই হাতে’ । লেখক দেবেন্দ্র ভোরা । অনুবাদ- প্রবীর রায় চৌধুরী ।” রোহান ভাই বা সবুজের অভিযান কেউএকজন যদি উক্ত বইটির বাংলা অনুবাদ কপি দিতেন মিডিয়া ফায়ারে তাহলে আরো বেশী অর্থ বহ হতো টিউনটি। আর হা বরাবরের মতো অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে টিউনের জন্য সবুজের অভিযান ( Sobujer Abhijan ) কে অনেক অভিনন্দন।

    @মোহাম্মদ খালিদ হোসাইন: খালিদ ভাই , মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। 😆

    বইটা আমার কাছে আছে কিন্তু ই-বুক না। অনেককটা পেজের বই ।স্ক্যান করে নিতে হবে।অনেকটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। রোহন ভাইয়ের কাছে অনুরোধ রইল যদি দিতে পারে। আমি দিতে গেলে অনেকটা দেরী হবে। 🙂

নতুন জিনিষ শিখলাম।
এমন কিছু পারলে আরও শেয়ার করবেন। 🙂

Level 0

ফলাফল হাতে -নাতে পাইলাম. ধন্যবাদ.

Level 0

so good.thank you.

Level 0

nice tune & thanks for share this. But i cant see the image which u share. Can u try once again please?

    @f_hasan: মনে হয় নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল।এখন চেষ্টা করুন দেখতে পাবেন।আমি তো দেখতে পাচ্ছি।না হলে নিচে দেখুন আমি অন্য একটি ঠিকানা দিয়েছি।সেটাতে দেখতে পাবেন।

    সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 😀

বাহ দারুন বাপার তো ।