কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সবাই ভালো আছেন। কিছুদিন আগে যেই আমি কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলাম, সেই আমিই আজ আপনাদের মাঝে ফিরে আসলাম একটু অন্যভাবে অন্য রকম টিউন নিয়ে। আমার আজকের এই টিউনের বিষয় কোন টেকনোলজি বিষয়ক নয়, জাস্ট আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। এটা অবশ্য মুলত তাদের জন্য যারা ডিফেন্স অথবা মেরিন লাইনে যেতে চান। অনেকেই জানেন আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল যে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হব,আগের বিদায়ী টিউনে তা আমি সবাইকে বলেছি। তো সেই কারনে এইচএসসি এর পর ভর্তি পরীক্ষা দেই "বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিস একাডেমী, চট্রগ্রাম" এ। বিভিন্ন প্রকার শারীরিক এবং ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করি এবং ভর্তি হই। এখানে চান্স পাওয়া ভর্তি এবং যোগদানের আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম অনেক খুশি, কারন আমার এত দিনের স্বপ্ন পুরন হতে চলেছে। তো ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি সেখানে যোগদান করি। ওখানে গিয়ে দেখলাম খুব উৎসব মুখর পরিবেশ, আমার মত আরো ৭২জন ছেলে যোগদানের অপেক্ষায় আছে। আমাদের গার্জিয়ানেরা সবাই আমাদের বিদায় দিয়ে চলে আসে। আমরা সবাই এডমিন বিল্ডিং এ জনাব অধ্যক্ষের বক্তব্যের অপেক্ষা করতে থাকি। যথাসময়ের চেয়ে আধাঘন্টা পর তিনি আমাদের তার মুল্যবান বক্তব্য দেন, এবং আমাদের আনুষ্ঠানিক যোগদান পর্ব সম্পন্ন করেন। সেখানেই জানতে পারি যে ডিফেন্স এবং মেরিনের ট্রেইনিং প্যারালাল অর্থাৎ এক। এরপর আমাদের ক্যাডেট ব্লকে (ক্যাডেটদের হোস্টেল কে ব্লক বলে) যাবার পালা। যাবার আগে আমাদের প্রিন্সিপাল সাহেব জাস্ট একটা কথা বলে, "তোমাদের সাথে নেক্সট আধাঘন্টায় যা করা হবে তা তোমরা সাথে সাথে ভুলে যাবা"
আমরা মনে করলাম র্যাগিং ট্যাগিং হতে পারে। এটা তো স্বাভাবিকই। ওখানকার ক্যাডেট ক্যাপ্টেন এবং তার এক সাগরেদ আমাদের নিতে এলো। সে আমাদের সবাইকে এডমিন বিল্ডিং এর নিচে নিয়ে এলো। আমাদের সবাইর কাছে একটা করে লাগেজ (ওজন আনুমানিক ১৮-২২কেজি)। প্রথমে আমাদের কাছ থেকে সব ধর্মীয় বই, কুরআন, গীতা, ধর্মীয় ছবি ইত্যাদি সরিয়ে নেয়া হল। তারপর আমাদের যার যার লাগেজ নিজ কাঁধে নেওয়ার অর্ডার করা হল। এডমিন বিল্ডিং থেকে ক্যাডেট ব্লকের দূরত্ব প্রায় ২০০মিটার। তারপর ওরা বলল দৌড়াও। ২০/২২কেজি ওজনের লাগেজ কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছি। ব্লকের গেটে দেখলাম ১৪০-১৫০ জন সিনিয়র ক্যাডেট দাড়িয়ে আছে। সবার হাতে হকিস্টিক/ক্রিকেট ব্যাট/ স্ট্যাম্প, ইত্যাদি লাঠিসোঁটা। আমরা দৌড়ে ব্লকের গেট দিয়ে ঢুকছি আর আমাদের ওগুলো দিয়ে সবাই মারছে। মাইর মানে যেমন তেমন মাইর না, হেভি মাইর। আমার সাথের একটা ছেলের সাথে সাথে মাথা ফেটে গেল, তাতেও ওদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আমরা ব্লকের বারান্দা দিয়ে ঢুকছি আর ওরা আমাদের প্রচন্ড মারছে। তখন একটা নতুন নিয়ম, ওরা যখন সিট আপ বলবে তখন লাগেজ ঘাড়ে নিয়ে দাড়িয়ে যেতে হবে আবার যখন বলবে সিট ডাউন তখন লাগেজ সহ মাটিতে বসে পরতে হবে। এই অসহ্য যন্ত্রনা চলল ১৫ মিনিট, এর মাঝে হ্যাট দিয়ে বারি, বুট দিয়ে লাথি এগুলোতো আছেই, কোন কারন ছাড়াই। এর পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল মাঠে। মাঠের পরিধি আনুমানিক ২৫০-৩০০ মিটার, এই লাগেজ ঘাড়ে নিয়েই তারা আমাদের ৩-৪ চক্কর দেয়ালো। আমার সাথের গুলো দৌড়াতে গিয়ে পরে যাচ্ছে ওদেরকে লাথি মেরে আবার উঠানো হচ্ছে। এভাবেও গেলো ১৫ মিনিট। তারপর ফ্রন্ট রোল মানে ডিগবাজি, কোন রকম প্রশিক্ষন ছাড়াই পুরো মাঠ এক চক্কর সবাইকে দিয়ে ফ্রন্ট রোল দেয়ালো। তখন সবাইর পিঠের অবস্থা বেজে গেছে। সবার পুরো শরীরের যায়গায় যায়গায় কেটে এবং ছিলে গেছে। তখন কিন্তু আমরা সবাই লুক ডাউন পজিশন, মানে জামার প্রথম বুতামের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। ডাইনে বায়ে অথবা উপরে তাকালে হেভি পানিশমেন্ট। তারপর সবাইকে লাগেজ নামিয়ে রাখতে বলা হল। এরপর হল টাচ এন্ড ব্যাক, মানে আনুমানিক ২০০মিটার দূরে একটি সীমানা টাচ করে ব্যাক করতে হবে। এটি হল ৩-৪ বার। মাঠে পিপাসায় সবার অবস্থা খারাপ, গলা বুক শুকিয়ে পুরা কাঠ। তারমাঝে কিছু ছেলে পানি চেয়েছিলো, বলতে খারাপ লাগছে, তাদের দেওয়া হল ইউরিন। এসব দেখে গেলাম পানির কথা ভুলে। এরপর আমাদের আবার ব্লকে নিয়ে যাওয়া হল। আমাদের রুম নাম্বার ঠিক করে আমাদের যার যার রুমে নিয়ে যাওয়া হল। এর আগে ফ্রেশ হবার জন্য নিয়ে যাওয়া হল বাথরুমে। আমাদের ৭২জনের জন্য মাত্র ৪টি টয়লেট এবং ৪টি গোসলখানা। সেদিন আমি সহ সবাইকে বাধ্য হয়ে বাথরুমের ট্যাপের পানি খেতে হয়েছে। এরপর আমরা রুমে মাথা নিচু করে অর্থাৎ লুকডাউন দাড়িয়ে আছি, তখন একজনের পর একজন সিনিয়র স্যার অর্থাৎ সিনিয়র ক্যাডেট আসছে এবং কোন কারন ছাড়াই আমাদের প্রচন্ড স্ল্যাপ করছে এবং অত্যান্ত খারাপ খারাপ স্ল্যাং ইউজ করছে। এর আধাঘন্টা পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল ডাইনিং এ লাঞ্চের জন্য। ওখানেও একই অবস্থা। প্রথমে খোলা যায়গায় নিয়ে যাওয়া হল, সবাইকে একজগ করে পানি খেতে হবে, বমি না করা পর্জন্ত। যতসব আজগুবি নিয়ম, পানি আর কত খাওয়া যায়? যারা যারা বমি করেছে তাদের আবার ফ্রেশ করে নিয়ে যাওয়া হল ডাইনিং এ, অর্থাৎ আমরা সবাই বমি করে অবশেষে খেতে এলাম। খাওয়া খেতে হবে চামুচ, কাটা চামুচ দিয়ে এবং এগুলো ধরতে হবে ওদের নিয়মে। খাওয়ার সময় ৫মিনিট। শব্দ না করে খেতে হবে। শব্দ হলে পানিশমেন্ট অর্থাৎ পাংগা। খাওয়া শেষ করে আবার যার যার রুমে চলে গেলাম। ফাস্ট ইয়ারে কোন হাটার পারমিশন নাই, নাই লুক আপের পারমিশন। সবসময় দৌড়াতে হবে। এরপর রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ। ক্যাডেটদের ড্রেসের বাহার আছে অনেক। ব্রেক ফাস্ট ড্রেস, পিটি ড্রেস, প্যারেড ড্রেস, ক্লাস/ ডিউটি ড্রেস, লাঞ্চ ড্রেস, প্রেয়ার ড্রেস, ওয়ার্কিং ড্রেস এবং স্লিপিং ড্রেস। সঠিক যায়গায় সঠিক ড্রেস পরতে একটু ভুল হলে কড়া পানিশমেন্ট। আছে ৫-৭ প্রকার কার্টেসি, সঠিক যায়গায় সঠিক কার্টেসি না নিলেও কড়া পানিশমেন্ট। এরপর আমাদের চুল কাটতে নিয়ে গেলো। কাটিং বলতে বাটিছাঁট। সবসময় সিনিয়র স্যার অর্থাৎ সিনিয়র ক্যাডেটদের সালাম দিতে হবে। বাথরুমে যেতে হবে টাওয়েল পরে। প্রথমদিন বলে সব সিনিয়ররা এসে পানিশমেন্ট দিচ্ছে, আর সিনিয়রদের সাথে Yes sir, no sir, Excuse me sir এবং Thank u sir, এই চারটা ওয়ার্ড ছাড়া একটা ওয়ার্ড ও ইউজ করা যাবে না। এর বাইরে কোন কিছু বলতে হলে বার বার Excuse me sir, Excuse me sir বলতে হবে, তারপর স্যার অনুমুতি দিলে বলতে হবে এবং কোন বাংলা বলা যাবে না। ১ম ৪মাস হল কোয়ান্টাম পিরিওড, এই চার মাসে কোন বসার পারমিশন নাই, রুমে ফ্যান চালানোর পারমিশন নাই, পাইপ ডাউন অর্থাৎ ঘুমাতে যাবার পর টয়লেটে যাবার পারমিশন নাই। রুমমেটের সাথে কথা পর্যন্ত বলার পারমিশন নাই। যাই হোক এরপর নামাজের সময় হল, মুসলিমরা সব একাডেমিক মসজিদে গেলো আর আমরা কয়েক জন নন-মুসলিমরা গেলাম আমাদের প্রেয়ার রুমে। ওখানে খারাপ সিনিওরদের মতও কিছু ভালো সিনিওর ছিল, সারাদিন লুকডাউন থাকার পর ঘাড়ে অসহ্য ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। তারা সবাই প্রেয়ার রুমে এবং মসজিদে গিয়ে গিয়ে আমাদের ঘাড়ে মুভ মালিশ করে দিয়ে এসেছে। তখন তাদের ব্যবহার দেখে চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। তারা একটা কথাই বলল যে কয়েকদিন কস্ট করতে, পরে আস্তে আস্তে সব সহ্য হয়ে যাবে। আর চার মাস অর্থাৎ কোয়ান্টাম পিরিওডের পর নাকি সব ইজি হয়ে যাবে। একটা কথা বলা হয়নি যে প্রত্যেকটা কাজের আগে এবং শেষে আমাদের ফল-ইন করে দাড় করিয়ে মাস্টারিং করানো হত, অর্থাৎ আমাদের গোনা হত, প্রেয়ার রুম থেকে বের হয়ে মাস্টারিং করে গেলাম নিজ নিজ রুমে। এখন তৈরি হতে হবে রুম ইন্সপেকশনের জন্য। মানে সিনিওররা এসে চেক করবে রুমের অবস্থা সম্পর্কে, কোন বেআইনি জিনিশ পেলে অথবা রুম অগোছালো পেলে/ স্পাইডার নেট অথবা খুব ধুলাবালি থাকলে খেতে হবে কঠিন পানিশমেন্ট। বর্তমানে মেরিন ফিশারিস একাডেমীতে ৭০ প্রকার পানিশমেন্ট আছে আগে ছিল ১৫০প্রকারের বেশি, সিনিওরদের ভাষ্যমতে পানিশমেন্ট নাকি কমে আসছে , মিলিটারি একাডেমীতে নাকি এর পরিমান আরো বেশি। প্রথম দিনে রুম ইন্সপেকশনের জন্য ধরা খেলাম না। প্রথম ১৫দিনে মাত্র ১বার ধরা খেয়েছিলাম তা ও আমার ব্যাচমেটের জন্য, এখানে নিয়ম হল, কোয়ান্টাম পিরিওডের সময় একজন ফল্ট করলে পানিশমেন্ট খাবে পুরো রুম অথবা পুরো ব্যাচ। এরপর যার যার নিজস্ব ফল্টের জন্য সে সে পানিশমেন্ট খাবে। আমাদের দেখা শুনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের ভার একজন করে ইমিডিয়েট সিনিওরের কাছে ছিলো। সেই সিনিওরকে বলা হত সি-ড্যাড (2nd year) অর্থাৎ সমুদ্রের বাবা এবং সি-ড্যাডের যে সি-ড্যাড (3rd year) তাকে বলা হত গ্র্যান্ডপপ সি মানে সমুদ্রের দাদা। একাডেমীক লাইফে এই দুইজন হল বন্ধু মানে এই দুই জনের কাছে সব কথা শেয়ার করা যাবে, এবং হেল্প করবে। এরাই সব ড্রেস কোড এবং একাডেমীক নিয়ম কানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে শুনিয়ে দিত। আমার সি-ড্যাড এবং গ্র্যান্ডপপ-সি ছিল খুবই ভালো মানুষ, কোন সময়ই আমাকে পানিশমেন্ট দেয়নি। আমার রুম মেটে গুলোর সি-ড্যাডরা ওদের মাঝে মাঝে পানিশমেন্ট দিতো। যাই হোক সাপারের পর পাইপ ডাউন কার্টেসি নিয়ে সবাই যার যার রুমে চলে এলাম। ঘুমানোর আগে সবাইকে টয়লেটে যাবার সুযোগ করে দেওয়া হল, তারপর সব রুমের লাইট নিভিয়ে দেওয়া হল, এই অন্ধকারেই মশারী টানাতে হবে এবং সাথে সাথে ঘুমিয়ে যেতে হবে। তখন সি-ড্যাড এসে হেল্প করল এবং পানির বোতল এবং একটি খালি বোতল দিয়ে গেল যদি রাতে ১নাম্বার ধরে তার জন্য। সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথা, সি-ড্যাড ব্যাথার ট্যাবলেট এবং মুভ দিয়ে গেছে তবুও কাজ হচ্ছে না। শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুমানোর আগে পানি একটু বেশি খেয়েছিলাম। মাঝরাতে ঘুম ভাঙল তলপেটে প্রচন্ড চাপ নিয়ে, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বাইরে করিডরে ডিউটি ক্যাডেট টহল দিচ্ছে। সি-ড্যাড এর দেওয়া বোতল বেড এর নিচে, খুজতে গেলে শব্দ হবে। আর যদি ডিউটি ক্যাডেট একবার দেখে যে বেড ছেড়ে নিচে নেমেছি, অবস্থা খারাপ করে দিবে। পাশের জানালা খোলা ছিলো, তাই নিঃশব্দে জানলা দিয়ে আস্তে করে ছেড়ে দিলাম, আহঃ কি শান্তি। তারপর আবার ঘুমিয়ে পরলাম। জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম দিনের অবসান হল।
সুর্য উঠার আগে ঘুম ভাঙল একটা অমানুষিক আতঙ্ক নিয়ে। অনেক গুলো সিনিয়র খুব জোরে জোরে হই হই করে রুমে এলো এবং জামার কলার ধরে খুব জোরে জোরে ঝাক্কুনি দিলো আর সাথে ৩-৪টা স্ল্যাপ অর্থাৎ চর থাপ্পর তো আছেই। ঘুম থেকে ঊঠিয়েই আমাদের বসানো হল কক পজিশনে অর্থাৎ কাউট্টাচেংগি পসিশনে, (আপনাদের মাঝে ছোটবেলায় টিচারের হাতে কে কে খেয়েছেন জানি না।) 🙂 এটি হল হাটু গেড়ে বসে দুই পা এর চিপা দিয়ে হাত বের করে কান ধরে থাকা। ওরা যখন বলতো "বাটাক আপ" তখন ব্যাক সাইড উঁচু করতে হত আবার যখন বলতো "বাটাক ডাউন" তখন ব্যাক সাইড নিচু করতে হত। আমার কাছে এটিকেই সবচে কস্টকর পানিশমেন্ট মনে হত। প্রতিদিন আমাদের এই ভাবে ঘুম থেকে ঊঠানো হত। এর পর প্রেয়ার, ফল ইন, মাস্টারিং। এরপর টয়লেট। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, ৭২জন জুনিয়র ক্যাডেট এর টয়লেটের সময় ছিল মাত্র ১০মিনিট! এরপর পিটি করতে নিয়ে যাওয়া হত। এখানেও নো মার্সি। মেরিনের বিশাল মাঠটিকে বলা হত ৪০-৫০ চক্কর দিতে। সবাই ম্যাক্সিমাম ১৭-২০ চক্কর দিতাম, দৌড়াতে দৌড়াতে কেউ পরে গেলে তার কপালে জুটতো এক্সট্রা পানিশমেন্ট। এর পর ফ্রন্ট রোল, সাইড রোল, স্ক্রলিং, পুশআপ, বেলিফিকেশন ইত্যাদি কাহিনি তো আছেই, হটাৎ বলল ১০০পুশআপ বা ৫০০বেলিফিকেশন এরকম অদ্ভুত ভাবে ট্রেইনিং, আমি আবার ছোট বেলা থেকেই লুতুপুতু ভাবে মানুষ, ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, ভলিবল সব খেলাই খেলেছি কিন্তু কম্পিউটারে! ছিলাম শান্ত শিষ্ট তাই দৌড় ঝাপ ও বেশি করা হয়নি। টিউন করা ছাড়া কোন কাজ কর্ম ও করিনি। তাই এগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে খুব কস্ট হচ্ছিল কিন্তু চেস্টা করছিলাম। যাই হোক তারপর আবার ব্লকে তারপর ডাইনিং এ, ব্রেকফাস্ট। এরপর ক্লিনশিপ অর্থাৎ শেভ করতে হত, মাত্র ৫মিনিট সময়, একটি আয়না ৩-৪জনে শেয়ার করতে হত, বিশ্রি অবস্থা। ক্লিনশিপের পর হতো চেকিং অর্থাৎ সবার প্রোপার শেভ হয়েছে কি না। যদি একটু দাড়ি পেত তবে দেওয়া হত ব্রিক শেভ, মানে যেখানে হাল্কা দাড়ি থাকতো সেখানে ইটের টুকরা দিয়ে জোরে ঘসা দেওয়া হত। এরপর নমুনা ক্লাস, আসল ক্লাস শুরু হবে ৪ মাস পর। ক্লাসে সবার চোখ ভেঙে ঘুম আসতো। ২-৩ঘন্টা ক্লাস হত। ক্লাস এবং প্রেয়ারের সময়টা আরামে থাকতাম। ক্লাস শেষে হত প্যারেড, প্যারেড দেখতে যতই ভালো লাগুক সেটা ছিলো দিনের সবচে কস্টকর অধ্যায়। ১.৫ কেজি করে ৩কেজি ওজনের দুইটি প্যারেড বুট পায় দিয়ে টানা ৪৫ করে মোট ২.৫ঘন্টা প্যারেড করতে জান বেরিয়ে যেত, ১ম কয়েকদিন পা এ ফোস্কা পরে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। বাজনার তাল মিস হলে কপালে জুটতো বাজনার তালে তালে লাঠির বাড়ি। তখন খালি মনে হত একটা প্যারেড শেষ তো একটা দিন শেষ। জীবনে এর আগে কেউ গায়ে হাত তুলেনি, মোটামুটি ছাত্র ছিলাম বলে স্কুল কলেজেও কোন সময় পানিশমেন্ট খাইনি, সিনিওরদের এই সব অমানুষিক অত্যাচারে খুব খারাপ লাগত এবং খুব বাড়ির কথা মনে হত। কোয়ান্টাম পিরিওড অর্থাৎ ১ম ৪মাস কারো সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করা যাবে না। বিকালে সিনিয়রদের খেলার জন্য ক্রিকেট পিচ রোলার টেনে এবং বাস্কেটবল পিচ ঠিক করে দিতে হত, ওদের বল কুড়াতে হত। প্রতি শুক্রবার ও শনিবারে ছিলো ওয়ার্কিং আওয়ার, সেদিন সিনিওর দের ব্লক পরিস্কার করে দিতে হত, ঘাস কাটতে হত, আমাদের এবং সিনিওরদের টয়লেট পরিস্কার করতে হত, এবং বিভিন্ন কায়িক পরিশ্রম করানো হত। এছাড়া বিভিন্য সময় তারা আমাদের নিয়ে যেত তাদের রুম পরিস্কার করাতে ওদের খাবার রুমে পৌছে দেবার জন্য, সবই মেনে নিতে পেরেছিলাম বাট সিনিয়রদের অশ্রাব্য গালি গালাজ গুলো খুব খারাপ লাগতো, জুনিয়র ৭২ ক্যাডেটের প্রত্ত্যেকের ১টি করে অশ্রাব্য নিক-নেম একটি করে অত্যান্ত খারাপ ডায়লগ ছিলো, সিনিয়ররা যখন নিক-নেম ধরে ডেকে ডায়লগ দিতে বলতো তখন ওই ভাবে নেচে নেচে ডায়লগ বলতে হত। জয়েন করার ১ম ৩-৪দিন তো গোসলই করতে পারিনি। টাইম ছিলো ৫মিনিট এবং একটি গোসলখানায় ৫-৭জন একসাথে গোসল করতে হত, সবাই লাজ লজ্জা সব ভুলেই গিয়েছিলাম। হয়তো এমনও দেখা গেছে যে গোসলের টাইম চলে গেছে বাট আমরা কয়েকজন সিরিয়াল পাইনি। সকালের ব্রেকফাস্টের সময় ছিলো ২মিনিট মানে ২মিনিটে যে যতটুকু খেতে পারে, এভাবে লাঞ্চের অথবা সাপারের সময় ছিল ম্যাক্সিমাম ৫মিনিট!! একাডেমীতে প্রত্যেকটি দিন কে মনে হত একটি বছর। এভাবেই দিন গুলো কাটছিলো, বাট ১৫দিন পর একদিন পিটি করার সময় পা হরকে পরে গিয়ে বুকে এবং পা এ ভিষন ব্যাথা পাই, পরে গিয়ে যখন কাতরাচ্ছিলাম তখন এক সিনিয়র ভাবল আমি নকশা করছি, তখন সে তার হাতের লাঠি দিয়ে পা এ দিলো এক বারি, কাত হয়ে একটু সরে গেলাম, তখন বারিটা লাগলো পা এর জয়েন্ট এ। তখন আমার কি হল বুঝতে পারলাম না, চোখে মুখে অন্ধকার দেখলাম। ওখানকার মেডিকেল সেন্টারে কাজ না হওয়ায় এডমিন থেকে আমাকে নিয়ে এলো চিটাগাং মেডিকেল এ, একদিন ওখানে ভর্তি ছিলাম। পরে আমার গার্ডিয়ান খবর পেয়ে আমাকে নিয়ে আসে। এখানে প্রায় একমাস ট্রিটমেন্ট করার পর মোটামুটি সুস্থ হই এবং স্বাভাবিক ভাবে হাটার অবস্থায় আসি, তারপর আর ব্যাক করিনি,ফ্যামিলির ইচ্ছা ছিলো না। ওখানকার ভর্তি ক্যানসেল করিয়ে এখানকার একটি ভালো প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হই, এবং এই আমার আবার আপনাদের সাথে ফিরে আসা...........................................
এখানে আমাদের সাথে যা করানো হয় তা আমাদের সহ্যশক্তি বাড়ানোর জন্য, বডি ফিটনেস ও মেন্টালিটি শক্ত করার জন্য এবং সি-লাইফের সাথে মানিয়ে নেবার জন্য। আমি এর ১% ও আগে জানতাম না, জানলে হয়তো মানসিক প্রস্তুতিটা অন্যভাবে নিতাম। তাই আপনাদের মাঝে যারা মেরিন অথবা ডিফেন্স লাইনে যেতে চান তারা ওই রকম ধৈর্য শক্তি, শক্ত মানসিকতা এবং কঠিন পন নিয়ে তারপর জয়েন করবেন নইলে আমার মত এভাবে ফিরে আসতে হবে। আগে জীবন সম্পর্কে অন্যরকম একটা ধারনা ছিলো, এই ১৫দিনে আমি জীবনকে ভালোভাবে বুঝতে এবং চিনতে শিখেছি। জীবন মানে শুধু আরাম আয়েস না, জীবনের আসল মানে কস্ট এবং সংগ্রাম। এই ১৫দিনের চরম অভিজ্ঞতা হয়তো আমার সারাজীবন কাজে লাগবে।
হয়তো অনেকে জানেন যে আমি টেকটিউনস ছাড়া অন্য কোথাও ব্লগিং করিনা। আমি টেকটিউনসকে আমার দ্বিতীয় পরিবার মনে করি তাই আপনাদের সাথে এই নন-টেকি কথা গুলো শেয়ার করা। এই টেকটিউনস কমিউনিটি আমার অনেক আপন। তবুও এই পোস্টকে সামান্য টেকি করার জন্য আমি আপনাদের সাথে ২টি অনেক পুরনো, কমন কিন্তু অনেক মজার দুটি সফটওয়্যার শেয়ার করবো।
২০০১ সালে যখন প্রথম কম্পিউটার এর সাথে পরিচিত হই তখন ৪টি জিনিস নিয়ে সারাদিন পরে থাকতাম। সেগুলো হল......
১. ভার্চুয়াল কপ।
২. পেইন্ট।
৩. টক ইট।
৪. পিয়ানো।
এর শেষের দুটির প্রতি অন্য রকম আকর্শন ছিলো, এ দুটির সাথে আপনারা সবাই পরিচিত, কিন্তু হয়তো অনেকের পিসিতেই এটি এখন নেই এবং ভুলে গিয়েছেন। তাই নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে আবার নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হন।
আপনাদের মাঝে আবার ফিরে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। ধন্যবাদ সবাই কে।
আকাশ
আমার আগের টিউন গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমি শুভ্র আকাশ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 72 টি টিউন ও 1922 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাই,জানোয়ারের বাচ্চা গুলোর কি হৃদয় নেই???এইভাবে কেউ ব্যবহার করতে পারে!!!পড়েই আমার গায়ের লোম খারা হয়ে গেল,আপনার জন্য খুব খারাপ লাগসে।এখন কই ভর্তি হলেন?দোয়া করব যাতে যেইখানে ভর্তি হয়েছেন সেইখান থেকেই ভালো ১টা ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।