অদম্য ইচ্ছা, ভালোলাগা আর জেদের কারণে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘চারু চন্দন’ নামের একটি সম্পূর্ণ নতুন বাংলা ফন্ট ৯ ফাল্গুন ১৪২০; ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকলের জন্য উন্মুক্ত করেছেন তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার চন্দন আচার্য। চলুন আগে শুনে নেয়া যাক নতুন এই ফন্টটির জন্মকথা ফন্টটির ডিজাইনারের মুখেই...
“একজন ডিজাইনার হিসেবে যখন কোনো ডিজাইন করতে বসি তখনি আমাদের বাংলা ফন্টের অপ্রতুলতা প্রকটভাবে উপলব্ধি করি। অপরদিকে ইংরেজি ফন্টের সমৃদ্ধ জগতটি যখন দেখি তখন বাংলা ফন্টের সেই অভাববোধ আরো গভীরভাবে নাড়া দেয় নিজেকে। আর তাই বাংলা ফন্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। অনেক আগে থেকেই রাস্তার পাশের দেয়ালে চিকা মারা দেখতাম আর নতুন নতুন বাংলা ফন্ট তৈরি করার ইচ্ছা প্রকট হতো। আর তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার পর অবসর সময়টাতে ব্যানার- সাইনবোর্ড লেখার দোকানে দোকানে ঘুরেছি এই লেখার কাজটি শেখার জন্য। কিন্তু হয়ে উঠেনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ভর্তির সুযোগ পেয়ে এবং আমার গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সিলেবাস অনুযায়ী নতুন ফন্ট তৈরির ক্লাশ পেয়ে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠল সেই পুরোনো ইচ্ছাটি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছে ফন্ট তৈরির প্রাথমিক ধারণা ক্লাশ থেকেই পেয়ে গেলাম এবং ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার যোগার করে বসে গেলাম ফন্ট তৈরির কাজে। এক সময় মনে হলো কারো জন্য বসে না থেকে আমার প্রয়োজন মতো বাংলা ফন্ট আমি নিজেই তৈরি করে নেবো। কতোটা সময়সাপেক্ষ আর কষ্টসাধ্য সেটা বুঝলাম কাজটি করতে বসে। বাংলা ফন্ট তৈরির কাজটি যারা করেন একমাত্র তারাই ব্যাপারটি ভালো জানেন। ফন্ট বানিয়ে আমার কি লাভ কিংবা ব্যাপারটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো ছাড়া আর কিছুই না! ফন্ট তৈরি নিয়ে কারো কারো সাথে কথা বলতে গিয়ে এমন অনেক কথাই শুনেছি। থেমে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসেনি। নিজের ক্লাশ আর অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাজটি চালিয়ে গিয়েছি। কোনো বিশেষ ব্যাক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে আমি ফন্টটি তৈরি করিনি। মূলত ক্লাশের অনুশীলনের অংশ হিসেবে কাজটি শুরু করা এবং নিজের অদম্য ইচ্ছা, ভালোলাগা আর জেদের কারণে কাজটি পরিপূর্ণরুপে শেষ করা। আর তাই ফন্টটি তৈরি করার পর শুধুমাত্র নিজের কাছে রেখে না দিয়ে সকল বাংলা ভাষাভাষিদের ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়াটাই শ্রেয় মনে করেছি। আর ফন্টটি উন্মুক্ত করে দিতে বেছে নিলাম ৯ ফাল্গুন ১৪২০; ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি। বাঙালি জাতির এক গৌরবময় ইতিহাসের দিন। মাতৃভাষা অর্জনের বিনিময়ে ঘাতকের বুলেটের সামনে যারা নির্দিধায় বুক পেতে দিয়েছিলেন- বাংলার সেইসব বীর সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধা জানাতেই ভাষার মাসে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। ‘চারু চন্দন’ নামের আমার এই বাংলা ফন্টটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। ফন্টটি সকল ব্যাবহারকারীদের ভালো লাগলেই কেবল আমার স্বার্থকতা। আমার বিশ্বাস আমার মতো আরো অনেকেই বাংলা ফন্টের অভাব প্রকটভাবে উপলব্ধি করেন। আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত যেভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন ঠিক তেমনি উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের বাংলা ফন্টের জগতটিও সমানতালে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস” ।
চন্দন আচার্য, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ – (চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।)
'চারু চন্দন' ফন্টটি ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে -- http://www.charuchandan.com
তো, আর দেরি কেন...এখনই ডাউনলোড করে ব্যবহার করে দেখুন আনকোরা নতুন সুন্দর এই বাংলা ফন্টটি। আর ফন্টটি সম্বন্ধে অবশ্যই আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেননা।
ফন্টটির ডিজাইনারের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করতে চাইলে...https://www.facebook.com/chandan.acharja
ধন্যবাদ সবাইকে 🙂
আমি নীলসুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 40 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অসাধারন ফন্ট 🙂