গতানুগতিক মার্কেটিং এর ধারা বদলে দিয়েছে ইন্টারনেট। এখন বিজ্ঞাপণ বলতে শুধু লিফলেট, টিউনার ব্যানার বিতরণ বা টেলিভিশনে অভিনয় করে পণ্যের প্রচার করাকে বুঝায় না। মার্কেটিং সেক্টরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মার্কেটিং। এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর আছে আবার বিভিন্ন ধরন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যান্য ধরন গুলোর মধ্যে খুব জনপ্রিয় ও সহজ একটি মার্কেটিং সিস্টেম হলো সিপিএ মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হলো এই সিপিএ মার্কেটিং। কোনো নির্দিষ্ট কাজ টার্গেট অডিয়েন্স দের মাধ্যমে করিয়ে নেয়া হয় সিপিএ মার্কেটিং এর মাধ্যমে। অনলাইন সেক্টরে যারা ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য সিপিএ মার্কেটিং হতে পারে বেস্ট চয়েস। কেননা মার্কেটিং সেক্টরে তুলনামূলক একটি সহজ কাজ হলো সিপিএ মার্কেটিং।
সিপিএ মার্কেটিং কী, কীভাবে সিপিএ মার্কেটিং করবেন তার সকল বিস্তারিত তথ্য জানতে পুরো টিউনটি পড়ার অনুরোধ রইলো। সিপিএ মার্কেটিং এর বেসিক কনসেপ্ট এখান থেকে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
সিপিএ মার্কেটিং (CPA Marketing) এর এর পূর্নাঙ্গ রূপ হলো Cost Per Action। এর নামের মধ্যেই কিন্তু পুরো কাজের বর্ণনা রয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু কাজ বা টাস্ক এর বিনিময়ে কমিশন বা টাকা আয় করার পদ্ধতিকে সিপিএ মার্কেটিং বলে। এই কাজগুলো নির্দিষ্ট অডিয়েন্স দের দিয়ে আপনাকে করিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট টাস্ক সম্ভাব্য অডিয়েন্স দের মাধ্যমে করানোর জন্য যে বিজ্ঞাপণ প্রচার করা হয় তাকেই সিপিএ মার্কেটিং বলে৷
ধরুন কোনো একটি ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ চাইছে তাদের সাইটে এক হাজার ভিজিটর আসুক। কিন্তু তারা ব্যক্তিগতভাবে এই ভিজিটর নিয়ে আসতে পারছে না। এই কাজটি তারা আপনার মাধ্যমে করিয়ে নিবে এবং তার বিনিময়ে আপনাকে কমিশন প্রদান করা হবে। আপনি আপনার সাইটে ঐ সাইটের লিংক দিয়ে একটি বিজ্ঞাপণ দিয়ে তাদের সাইটে ভিজিটর নিয়ে আসবেন। এই যে আপনি আপনার সাইটের ভিজিটর দের মাধ্যমে অন্য সাইটের নির্দিষ্ট টাস্ক পূরণ করলেন এটাই মূলত সিপিএ মার্কেটিং।
কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করা, সার্ভে ফর্ম পূরণ করা, ভিডিও দেখা সহ এমন হাজারো ছোট ছোট কাজ আছে সিপিএ মার্কেটিং এর আওতায়। প্রতিটি কাজ এর জন্য আপনি কমিশন ভিত্তিতে আয় করতে পারবেন। একজন সিপিএ মার্কেটার হিসেবে আপনার কাজ হবে নির্দিষ্ট কাজ অথবা টাস্ক গুলো টার্গেট অডিয়েন্স দের মাধ্যমে করিয়ে নেয়া।
সিপিএ মার্কেটিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং দুটো কাজই প্রায় এক। কিন্তু তবুও এর মধ্যে কিছুটা তফাত রয়েছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনার পণ্য বিক্রয়ের শর্ত থাকে। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট বা যে কোনো নেটওয়ার্ক থেকে বিজ্ঞাপণ দেখে কেউ যদি নির্দিষ্ট সাইটের পণ্য ক্রয় করে তবে তা হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। উল্লেখ যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনার মাধ্যমে কেউ বিক্রেতার ওয়েবসাইট ভিজিট করে পন্যটি না কিনলে আপনি কোনো ধরনের পেমেন্ট বা কমিশন পাবেন না৷
অন্যদিকে সিপিএ মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রি করার কোনো শর্ত থাকে না। নির্দিষ্ট কাজ গুলো দর্শকদের মাধ্যমে করিয়ে নিতে পারলেই আপনি কমিশন পাবেন। এদিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায় সিপিএ মার্কেটিং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর থেকে তুলনামূলক সহজ। পণ্য বিক্রি করার থেকে ছোট ছোট টাস্ক কমপ্লিট করা যে কারো কাছে সহজ বলেই বিবেচিত হবে।
উল্লেখ যে সিপিএ মার্কেটিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং দুটো ক্ষেত্রেই আপনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু মূল পার্থক্য হলো, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ পণ্য বিক্রি করতে হবে আর সিপিএ মার্কেটিং এ টাস্ক সম্পন্ন করতে হবে।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সিপিএ মার্কেটিং এর কাজের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিপিএ মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্ট বিভিন্ন ধরনের টাস্ক প্রদান করে। এর মধ্যে থেকে আপনি আপনার পছন্দ মতো যে কোনো কাজের লিংক আপনার সাইটে সংযুক্ত করে সিপিএ মার্কেটিং করতে পারবেন। সিপিএ মার্কেটিং এর সবথেকে জনপ্রিয় তিনটি কাজের ধরন সম্পর্কে এখানে উল্লেখ করা হলো।
এই ক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে ক্লায়েন্ট এর কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে দেয়া। আপনি আপনার সাইটে নির্দিষ্ট অ্যাপ এর বিজ্ঞাপণ যুক্ত করে দিবেন। আপনার ভিজিটর ঐ বিজ্ঞাপণ দেখে যদি অ্যাপ টি ডাউনলোড করে তাহলে আপনি প্রতিবার ডাউনলোড এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন পাবেন। এরকম যে কোনো ডাউনলোড সম্পর্কিত কাজ Pay Per Download সেক্টরের আওতাভুক্ত হবে।
কোনো সার্ভে ফর্ম পূরণ করার জন্য মার্কেটিং করলে তা Pay Per Lead এর আওতাভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে কোনো সাইটে একাউন্ট তৈরি করা, সাইট ভিজিট করা, প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করার মতো কাজগুলো ভিজিটর দের মাধ্যমে করিয়ে নিতে হবে। আপনার সাইট থেকে সিপিএ মার্কেটিং এর লিংকে ক্লিক করে কেউ যদি এই ধরনের লিড জেনারেশন এর কাজ করে তাহলে আপনি প্রতিটি লিড এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন পাবেন।
এক্ষেত্রে কাজটি পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সিপিএ মার্কেটিং পদ্ধতিতে ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়ের মাধ্যমে আপনি কমিশন লাভ করলে তা Pay Per Sale এর আওতাভুক্ত হবে। যেমন: অনলাইন কোর্সে এডমিশন করানো, ডিজিটাল সেবা বিক্রয় ইত্যাদি।
এছাড়াও সিপিএ মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করলে আপনি পরিচিত অপরিচিত নানান ধরনের ক্যাটাগরি পাবেন। আপনার যে বিষয় সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞান বেশি থাকবে ঐ সেক্টরের টাস্ক ধরেই আপনি কাজ শুরু করবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধারাগুলোর মধ্যে তুলনামূলক সহজ একটি সেক্টর হলো সিপিএ মার্কেটিং। এই সেক্টরে কাজ করার জন্য আপনাকে খুব বেশি টেকনিক্যাল নলেজ রাখতে হবে তেমনটা কিন্তু না। মোটামুটি বেসিক ধারণা নিয়ে ছোটখাটো একটা কোর্স করলেই আপনি এই সেক্টরে কাজ করে আয় করতে পারবেন৷ তাই যে কেউ চাইলে সিপিএ মার্কেটিং সেক্টরে ক্যারিয়ার তৈরির পরিকল্পনা করতে পারে।
তাছাড়া সিপিএ মার্কেটিং এ আয়ের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। যাদের ধরাবাঁধা আয়ের চিন্তাভাবনা নেই বরং বিশেষ কিছু করে ইনকামের ধারা বদলাতে চাইছেন তাদের জন্য সিপিএ মার্কেটিং উপযুক্ত। এখানে যতো বেশি টাস্ক কমপ্লিট করতে পারবেন ততোই আয় বাড়তে থাকবে। আপনার সাইটে যতো বেশি ভিজিটর থাকবে ততোই আপনার ক্লায়েন্ট এর টাস্ক বেশি সম্পন্ন করতে পারবেন। এবং কমিশন বাড়তে থাকবে৷
সিপিএ মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট অফিস টাইমের মধ্যে কাজ করতে হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনার অবসর সময়ে দৈনিক তিন থেকে চার ঘন্টা সময় দিলেই এখান থেকে বেশ ভালো একটা এমাউন্ট আয় করতে পারবেন৷ তাই যারা মুক্ত পেশায় নিয়োজিত থাকতে চান তাদের জন্য সিপিএ মার্কেটিং একটি উপযুক্ত পেশা। এখানে আপনাকে কারো ইচ্ছেতে, কারো গাইডলাইন অনুযায়ী কাজ করার প্রেশারে থাকতে হবে না।
সুতরাং ডিজিটাল সেক্টরে তুলনামূলক সহজ কাজ করতে চাইলে সিপিএ মার্কেটিং এর পথ ধরে আগাতে পারেন। মুক্ত পেশার একটি ভালো উপায় হতে পারে সিপিএ মার্কেটিং।
সিপিএ মার্কেটিং সম্পর্কে তো ধারণা পাওয়া গেল। এবার হয়তো অনেকেই চাইছেন সিপিএ মার্কেটিং সেক্টরেই ক্যারিয়ার গড়বেন। কিন্তু যে কোনো কাজ শুরু করার আগে তো অবশ্যই তার জন্য Preparation নিতে হবে। কিছু ইন্সট্রুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে এবং কিছু দক্ষতা ও গুনাবলি অর্জন করতে হবে৷ সিপিএ মার্কেটিং করার জন্যও আপনাকে কিছু বিষয় Arrangement করতে হবে।
চলুন দেখে নেয়া যাক সিপিএ মার্কেটিং করার জন্য কী কী প্রয়োজন হবে।
অনেকেই বলে মোবাইল দিয়ে সিপিএ মার্কেটিং করা যাবে। কিন্তু এর সত্যতা কতোটুকু তা আপনি কাজ শুরু করলেই হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। হয়তো প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু কাজ আপনি মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন। কিন্তু Pro লেভেলের সিপিএ মার্কেটার হওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার প্রয়োজন হবে। তাই সিপিএ মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করতে চাইলে আপনি আগে নিজের জন্য একটি ব্যক্তিগত ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার এর ব্যবস্থা করে নিন।
এরপর কম্পিউটার পরিচালনার বেসিক দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিন ও পাশাপাশি টাইপিং স্পিড যতোটা সম্ভব বৃদ্ধি করুন। আর আপনার যদি ইতোমধ্যে কম্পিউটার থাকে এবং যথাযথ কম্পিউটার এর বেসিক স্কিল জানা থাকে তাহলে তো আপনি কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
সিপিএ মার্কেটিং এর পুরো কাজটাই ইন্টারনেট ভিত্তিক। আপনার কাছে একদিন ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে না মানে আপনি পুরো একটা দিন আপনার কর্মস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবেন। মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ সংগ্রহ করা, নিজের সাইটে সিপিএ মার্কেটিং এর লিংক বসানো, নিয়মিত নিজের সাইটে কনটেন্ট আপডেট করে ভিজিটর ধরে রাখা এমনকি কাজ থেকে কমিশনের টাকা উত্তোলন এই সবগুলো কাজের জন্যই আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট স্পিড কম হলে আপনার কাজের গতি কমে যাবে ও কাজ করতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ এর ব্যবস্থা করার।
সিপিএ মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করার জন্য অবশ্যই একটি ব্যক্তিগত ইমেইল একাউন্ট থাকতে হবে। এই ইমেইল একাউন্ট দিয়েই আপনি আপনার সিপিএ মার্কেটপ্লেসের একাউন্ট ক্রিয়েট করবেন। তাছাড়া ইমেইল এর মাধ্যমে নিউজ কনটেন্ট শেয়ার করে তার মধ্যে সিপিএ লিংক বসিয়ে আপনি মার্কেটিং করতে পারবেন। এক্ষেত্রে এটা আপনার এক্সট্রা আয়ের একটি সুযোগ হয়ে উঠবে।
মূলত এই ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল হলো আপনার সিপিএ মার্কেটিং এর মূল সম্পদ। সিপিএ মার্কেটিং এর পূর্বশর্ত হলো আপনার একটি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। ওয়েবসাইটে সিপিএ লিংক বসিয়ে কিংবা ইউটিউব ভিডিওতে সিপিএ লিংক বসিয়ে আপনি অন্য কোনো সাইট বা অ্যাপ এর মার্কেটিং করবেন। আপনার সাইটের দর্শক বা আপনার চ্যানেলের দর্শকদের কাছেই আপনার সিপিএ মার্কেটিং এর বিজ্ঞাপণ তুলে ধরবেন।
আপনার যদি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল না থাকে তাহলে আপনি সিপিএ মার্কেটিং এর প্রথম ধাপে গিয়েই আটকে যাবেন। তাই সবার আগে একটি ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে নিন।
আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর ট্রাফিক কিংবা ইউটিউব চ্যানেল এর ভিজিটর দের মাঝে মার্কেটিং করবেন। তারাই আপনার সিপিএ মার্কেটিং এর টাস্ক গুলো সম্পন্ন করবে। এখন আপনার ওয়েবসাইটে যদি পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকে কিংবা আপনার ইউটিউব চ্যানেল যদি আশানুরূপ ভিজিটর না থাকে তাহলে আপনি মার্কেটিং করবেন কাদের উদ্যেশ্যে? আপনি তো একটি টাস্ক-ও সম্পন্ন করতে পারবেন না। ফলে আপনার সিপিএ মার্কেটিং থেকে কোনো আয়-ও হবে না। এজন্য আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ট্রাফিক নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং ইউটিউব চ্যানেলে পর্যাপ্ত ভিউয়ার থাকতে হবে।
আপনার একটি চলমান ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল আছে যেখানে আপনি সিপিএ মার্কেটিং করতে পারবেন। কিন্তু এখন তো আপনাকে কাজ পেতে হবে। সিপিএ মার্কেটিং এর কাজ আপনি কোথা থেকে পাবেন? এজন্যই আপনাকে সিপিএ মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। ইতোমধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে অনেক অনেক সিপিএ মার্কেটপ্লেসের আগমন ঘটেছে।
আপনি আপনার পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ী যে কোনো এক বা একাধিক মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করে কাজ শুরু করতে পারবেন। একাউন্ট তৈরি করে সেখান থেকে টাস্ক সংগ্রহ করে নিজের সাইটে লিংক সংযুক্ত করে মার্কেটিং করতে পারবেন। এবং আপনার প্রতিটি টাস্ক সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে কমিশন গিয়ে যুুক্ত হবে আপনার সিপিএ মার্কেটপ্লেসের একাউন্টে। নির্দিষ্ট পরিমান টাকা বা ডলার জমা হওয়ার পরে আপনি পেমেন্ট উইথড্র করতে পারবেন।
এখানে কয়েকটি সিপিএ মার্কেটপ্লেসের নাম উল্লেখ করা হলো।
সিপিএ মার্কেটিং এ কেউ একদিনে সফল হতে পারেনি। এজন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের ওয়েবসাইট এর একটি পপুলার ইমেজ তৈরি করতে হবে। নিয়মিত ট্রাফিক ধরে রাখার জন্য ধৈর্য সহকারে কনটেন্ট পাবলিশ করতে হবে। পাশাপাশি সিপিএ মার্কেটপ্লেসে সবসময় নজর রাখতে হবে। ভালে কোনো অপরচুনিটি পেলে সাথে সাথে সেটা ধরার চেষ্টা করতে হবে।
সবমিলিয়ে বলা চলে আপনাকে অনেক লম্বা সময় ধরে সিপিএ মার্কেটিং এর ওপর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ এক দিন দুই দিন কাজ করে আবার হারিয়ে গেলে এই সেক্টরে আপনি সফল হতে পারবেন না। তাই প্রথম থেকেই মাথায় সেট করে নিন যে আপনাকে নিয়মিত ধৈর্য সহকারে কাজ করতে হবে।
সিপিএ মার্কেটিং এ হয়তো আপনাকে ঘড়ি ধরে দশটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ডিউটি করতে হবে না। কিন্তু আপনাকে এখানে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। সেটা হতে পারে দিনে, অথবা রাতে কিংবা আপনার সুবিধামতো যে কোনো সময়। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন আপনি নিয়মিত এখানে সময় দিতে পারবেন না তাহলে আগে থেকেই এই পথের চিন্তা ভাবনা বাদ দিন।
সিপিএ মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে নিয়মিত কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় দিতে হবে। তবে শুরুর দিকে এর থেকেও বেশি সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তাই সিপিএ মার্কেটিং সেক্টরে চেষ্টা করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে।
মোটামুটি উপরোক্ত বিষয়গুলো এরেঞ্জ করার ক্ষমতা থাকলে আপনি প্রফেশনাল ভাবে সিপিএ মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন। তাই প্রথমে পরিকল্পনা করে সবকিছু এরেঞ্জ করে তবেই কাজ শুরু করুন।
সিপিএ মার্কেটিং এর পূর্বশর্ত হলো আপনার একটি পপুলার ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া গ্রুপ বা পেইজ কিংবা একটি ভাইরাল ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। মোটকথা আপনার একটি শক্তপোক্ত অডিয়েন্স থাকতে হবে যাদেরকে মূলধন করে আপনি সিপিএ মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন৷ তাই সিপিএ মার্কেটিং শুরু করার প্রথম স্টেপ হলো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট পাবলিশ করে ট্রাফিক নিয়ে আসা। অথবা ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করে চ্যানেল ভাইরাল করা। আপনার একটি পপুলার সাইট তৈরি হয়ে গেলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।
এরপর সিপিএ মার্কেটপ্লেসে নিজের একাউন্ট তৈরি করে কাজ শুরু করতে হবে। তবে সিপিএ মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করার উপায় এবং নিয়মিত কাজ সংগ্রহ করার উপায় সম্পর্কে আপনার অবশ্যই ক্লিয়ার ধারণা থাকতে হবে। কীভাবে সিপিএ মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ সংগ্রহ করে তার লিংক নিজের সাইটে এড করবেন, কীভাবে আপনার ব্যালেন্স চেক করবেন, কীভাবে কাজ পাবেন তার সবকিছু আগে আপনাকে শিখে নিতে হবে। পূর্নাঙ্গ ধারণা গ্রহণ করে ও টেকনিক্যাল বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিষ্কার কনসেপ্ট নিয়ে আপনি প্রফেশনাল ভাবে কাজ শুরু করতে পারবেন
সিপিএ মার্কেটিং শেখার জন্য এখন অনলাইনে অনেক কোর্স রয়েছে। চাইলে আপনি নিকটস্থ কোনো আইটি সেন্টার থেকেও অফলাইনে সিপিএ মার্কেটিং শিখতে পারবেন৷ সিপিএ মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে কাজের পুরো টিউটোরিয়াল হাতে কলমে শিখতে পারবেন একটি কোর্স করলেই। তবে যেখানেই কোর্স করেন না কেন আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন তারা আপনাকে লাইফটাইম সাপোর্ট দিতে পারবে কিনা। পাশাপাশি পেমেন্ট উইথড্র সম্পর্কিত সকল কাজে সহায়তা করবে কিনা।
আপনি যদি চান যে কোনো প্রকার টাকা খরচ না করেই সিপিএ মার্কেটিং শিখবেন তাও পারবেন। ইউটিউবে সিপিএ মার্কেটিং এর ওপরে অনেক ভালো ভালো টিউটোরিয়াল ভিডিও রয়েছে। এই ভিডিও গুলো মনোযোগ দিয়ে দেখলে আপনি সিপিএ মার্কেটিং সম্পর্কে অনেক কিছুই শিখতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইট এর কনটেন্ট পড়লেও আপনি সিপিএ মার্কেটিং কাজ সম্পর্কে বেশ ভালোই শিখতে পারবেন। তবে পুরোপুরি ভাবে হাতেকলমে শিখিয়ে দেয়ার মতো লাইভ মেন্টর আপনি এক্ষেত্রে পাবেন না।
ভালো হয় যদি আপনি ফ্রি সোর্স থেকে আগে বেসিক ধারণা নিয়ে একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পেইড কোর্স করেন। এতে করে আপনি কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই প্রফেশনাল ভাবে সিপিএ মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন।
সিপিএ মার্কেটপ্লেসের মধ্যে সবগুলো ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস। তাই এখানে আপনি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট মেথডে আপনার কমিশন উইথড্র করতে পারবেন। একেক মার্কেটপ্লেস একেক মেডথে পেমেন্ট করে থাকে। তবে সাধারণত আপনি ক্রেডিট কার্ড, Payoneer, পেপাল, পারফেক্ট মানি, মেইল ক্রেডিটস, ওয়েব মানি ইত্যাদি মেথড ব্যবহার করে পেমেন্ট উইথড্র করতে পারবেন।
আপনার প্রতিটি কাজের ওপর ভিত্তি করে কমিশন সাথে সাথে আপনার সিপিএ মার্কেটপ্লেসের একাউন্টে জমা হবে। প্রতিটি ওয়েবসাইট এর একটি নির্দিষ্ট উইথড্র সীমা আছে। নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন জমা হয়ে গেলেই আপনি আপনার পেমেন্ট উইথড্র করতে পারবেন। আপনার যদি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট মেথড না থাকে তাহলে আপনি যাদের কাছ থেকে সিপিএ মার্কেটিং কোর্স করেছেন তাদের মাধ্যমে আপনার ক্যাশ উইথড্র করতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে আগে থেকেই তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিতে হবে।
আশাকরি সিপিএ মার্কেটিং সম্পর্কে ইতোমধ্যে পুরোপুরি ধারণা পেয়ে গেছেন। সিপিএ মার্কেটিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এখন থেকেই পরিকল্পনা করুন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাতে থাকুন। সঠিক উপায়ে কাজ শুরু করলে অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ ভালো একটা এমাউন্ট আয় করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। আপনার ক্যারিয়ার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।