টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে। চলুন শুরু করি
আপনি ইনফ্লয়েন্সার, ব্র্যান্ড, অথবা ব্যক্তিগত, যে কারণেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না কেন, বিগত দশক থেকে কোন ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়াকে অস্বীকার করতে পারবেন না। AIM, Friendster, এবং MySpace এর সাথে এই সোশ্যাল মিডিয়া এক সময় যাত্রা শুরু করলেও এটি বর্তমানে যেকোনো ব্র্যান্ড বা ইনফ্লুয়েসারদের জন্য বেশ লাভজনক প্ল্যাটফর্ম।
সাম্প্রতিককালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিগত ব্যবহার থেকে ব্যবসায়ী ভাবে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া নিউজ-ফিডে অর্ধেকের বেশি থাকে বিভিন্ন কোম্পানির অফার এবং প্রোমোশন। বর্তমানে এই করোনা মহামারীতে মানুষজন স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা ভেবেও অনলাইনে কেনা কাটা এবং বিনোদকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও মহামারীর জন্য এই পরিবর্তন গুলো খুব দ্রুত হয়েছে, তারপরেও ব্যবহারকারীদের এই অভ্যাস গুলো ভবিষ্যতে সোশ্যাল মিডিয়া গুলোকে বদলে দেবে।
করোনা পরবর্তী বিশ্বে এই ধরনের পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক। আর আপনার ভবিষ্যতের ব্র্যান্ড সফলতা নির্ভর করবে বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড গুলোর উপর।
সুতরাং আসছে পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কিভাবে কন্টেন্ট লিখবেন সেটার কিছু গাইডলাইন নিচে দেয়া হল এবং বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড গুলো তুলে ধরা হল।
পৃথিবী, যেখানে মানুষকে একে অপরের থেকে ৬ ফিট দুরে থাকতে হয় সেখানে ডিজিটাল কমিউনিটি এমন একটি বিষয় যা মানুষ মরিয়া হয়ে খুঁজে। ভবিষ্যতের জন্য সমৃদ্ধ একটি সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটি তৈরি করতে আগে যোগাযোগ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অনুভূতি তৈরি করা জরুরি।
ফেসবুক তাদের গ্রুপ গুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে। গ্রুপ গুলো ওয়ার্ড অফ মাউথ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে দারুণ পরিচিতি দিতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে একজন ইউজার যেকোনো ব্র্যান্ডের Post পড়ার চেয়ে, ১৬ গুন বেশি পড়ে তার বন্ধু বান্ধব এবং পরিচিত জনের Post। সুতরাং ওয়ার্ড অফ মাউথ এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং করা বর্তমানে বেশ কার্যকর। ASOS, Peloton এর মত ব্যান্ড গুলো তাদের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ইতিমধ্যে মার্কেটিং করে যাচ্ছে। গ্রুপ গুলোতে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা, ভাল লাগা ইত্যাদি শেয়ার করছে।
আপনি যখন আপনার ব্র্যান্ডের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটি তৈরি করতে পারবেন তখন সহজেই আপনার পণ্যের ভাল খারাপ জানতে পারবেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিতে পারবেন, মেম্বার এবং ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে ভাল রিলেশনশিপ তৈরি করতে পারবেন।
একটিভ কোন কমিউনিটি বিল্ড করতে পারলে আপনি সহজেই কাস্টমারদের থেকে জানতে পারবেন ভবিষ্যতে তারা আসলে কি চাচ্ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড কোন দিকে যাচ্ছে। সুতরাং কমিউনিটি আপনার জন্য মূল্যবান একটি সম্পদ যা আপনার ব্র্যান্ডকে অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে রাখবে।
কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে সরাসরি কথা বলার দিন কিছুটা হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে কাস্টমাররা ডিজিটাল ওয়েতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। গ্রাহকরা ব্র্যান্ড গুলো থেকে তাদের প্রশ্নের উত্তর এখন Comment এর মাধ্যমেই আশা করছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে ৬০% এর মত কাস্টমার, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে কোন অভিযোগ করে তারা সেটির উত্তর ১ ঘণ্টার মধ্যে জানতে চায়।
সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে দুর্দান্ত গ্রাহক পরিষেবা সরবরাহ করা বেশ ক্লান্তিকর হলেও তা সমস্যা সমাধানে বেশ সাশ্রয়ী। কল সেন্টারের মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধান করার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমাধান করা প্রায় ৮৩% সাশ্রয়ী। ২৪ ঘণ্টা কাস্টমার সার্ভিস দেয়ার মানে এই নয় যে আপনি একাই সব সামলাবেন। আপনি শিফট অনুযায়ী আপনার টিমকে ভাগ করে দিতে পারেন অথবা সোশ্যাল মিডিয়া লিসেনিং এক্সপার্টও নিয়োগ করতে পারেন।
সাধারণ ভাবে কাস্টমার যখন কোন বিষয় জানতে চায়, তখন সে কপি পেস্ট উত্তর বাদে সরাসরি হিউম্যান ইন্টারেকশন পছন্দ করে। ভবিষ্যতের কাস্টমার সার্ভিস স্ট্রেটেজি পরিকল্পনা করতে অবশ্যই আগে আপনার ভয়েসকে সংজ্ঞায়িত করুন। যাতে প্লাটফর্ম গুলোতে আপনার প্রতিক্রিয়া, ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ব্র্যান্ডকে সামনের এগিয়ে নিতে পারে।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে যেভাবে ভিডিও এবং লাইভ স্ট্রিমিং গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে আশা করা যায় ভবিষ্যতে এটি আরও ত্বরান্বিত হবে। ইউজাররা Post পড়ার চেয়ে ভিডিওতে কোন কিছু দেখতে বা জানতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। একটি ভিডিও Post যেকোনো ছবি Post এর থেকে ১০ গুন বেশি ভ্যালুয়েবল। আশা করা যায় ২০২২ সালের মধ্যে লাইভ ভিডিও ১৫ গুন বৃদ্ধি পাবে এবং সমস্ত ইন্টারনেট ট্রাফিকের ১৭% চলে যাবে ভিডিওতে।
এখন আর ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হয় না। সুখবর হচ্ছে ফোন ল্যাপটপের বিভিন্ন চমৎকার অ্যাপ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য খুব কম সময়ই তৈরি করে নেয়া যায় বিভিন্ন হাই কোয়ালিটি ভিডিও।
যেকোনো Post থেকে ভিডিও Post এর পারফরম্যান্স ভাল থাকলেও একটি ভিডিও তৈরিতে আপনাকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি আগে নিশ্চিত হোন, আপনার ভিডিও এর উদ্দেশ্য কি? কোন বিষয়টি ভিডিওতে বেশি ফোকাস হবে? কেন আপনার ভিডিও গুলো মানুষ অন্য যেকোনো ভিডিও থেকে বেশি পছন্দ করবে?
আপনার ব্র্যান্ডের উপযুক্ত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে অবশ্যই আপনাকে সঠিক সোশ্যাল মিডিয়া সিলেক্ট করতে হবে। যদিও মূলধারার সোশ্যাল মিডিয়া গুলো যেমন, Instagram, Twitter এবং Facebook, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আধিপত্য অব্যাহত রেখেছে তারপরেও নির্দিষ্ট কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে, আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কাস্টমার ইন্টারেস্ট কে গুরুত্ব দিতে হবে।
আপনাকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম বাচাই করতে হবে যেখানে আপনার টার্গেট কাস্টমাররা অধিক সময় দেয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী তুলনা মূলক কম। যেমন আমি যদি Twitch এর কথা বলি যা একটি সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে বেশির ভাগ গেমাররা সময় দেয়। এখানে আপনার কোন গেম ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপণ, ফেসবুক থেকে বা অন্যান্য মূল ধারার সোশ্যাল মিডিয়া গুলো থেকে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিন্তু টার্গেট অডিয়েন্স দের কাছে পৌঁছে যাবে।
আপনার ব্র্যান্ডের প্রোমোশনের জন্য অবশ্যই ভাল ভাবে রিসার্চ করুন এবং নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মটি বাছাই করুন যেখানে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহজে আপনার মেসেজটি নির্দিষ্ট কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে যাবে। এমন প্ল্যাটফর্ম বাছাই করুন যেখানে আপনার পণ্যটি বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং ভবিষ্যতে গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
আপনার ব্র্যান্ডের ভাল রিচ পেতে আপনি Ephemeral কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন। সহজ ভাষায় Ephemeral কন্টেন্ট হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী Post। এটা হতে পারে আপনার ফেসবুকের অথবা ইন্সটাগ্রামের ডে পিক বা স্টোরি। যা দারুণ ভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।
চেষ্টা করুন ছবি অথবা ভিডিও দিয়ে বেশি বেশি Ephemeral কন্টেন্ট বানানোর। প্রতিদিন আপনার ব্র্যান্ডের পেজে ডে পিক দিয়ে রাখুন এতে করে মানুষজন আপনার ব্র্যান্ডকে ভুলে যাবে না।
বারবার কোন পণ্য দেখালে মানুষ এর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। একটি গবেষণায় ৬২% মানুষ বলছে তারা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বা পণ্যের স্টোরি দেখে এগুলোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
এই ধরনের Ephemeral কন্টেন্ট আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি ভবিষ্যতে ইউজারের মনোযোগ রক্ষা করতে সাহায্য করবে কারণ বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ফোনে স্টোরি দেখতে বা স্ক্রুল করতে পছন্দ করে। আপনার Ephemeral কন্টেন্ট গুলো ইউজারদের ফোনের স্ক্রীনের সাথে পারফেক্ট ভাবে এডজাস্ট হয়ে ইউজারের আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে। আপনি স্টোরি গুলো আরও গ্রহণযোগ্য বা কার্যকরী করে তুলতে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ এলিমেন্ট যেমন, স্টিকার যুক্ত করতে পারে। এটা প্রমাণিত যে স্টিকারের মত ইন্টারেক্টিভ এলিমেন্ট গুলো স্টোরির পারফরম্যান্স ৮৩ % পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
Ephemeral কন্টেন্ট এর বড় একটি সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ইউজার জেনারেট কন্টেন্ট গুলো সহজেই শেয়ার করা যায়। ৪৫% এর বেশি কাস্টমার দাবী করেছে নতুন পণ্য খুঁজে পেতে ইউজার জেনারেট কন্টেন্ট গুলো বেশ কার্যকর।
যেকোনো কিছুর জন্যই ভবিষ্যৎ অজানা এবং ব্র্যান্ড গুলোর জন্য সেটা হতে পারে ভয়ংকর। যেভাবে বিশ্ব, মানুষের চাহিদা, রুচি পরিবর্তন হচ্ছে তার সাথে তাল না মিলাতে পারলে গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে টিকে থাকা বেশ কষ্ট কর। আপনাকে আপডেট থাকতে হলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড গুলো ধরতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। সেই ট্রেন্ড গুলোর সাথে সামঞ্জস্যতাই পারে আপনার ব্র্যান্ডকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতেও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।