আসসালামু আলাইকুম। টেকটিউনস ওয়েবসাইটের নতুন আরো একটি টিউনে আপনাকে স্বাগতম। আমি স্বপন আছি আপনাদের সাথে, আশাকরি সকলেই অনেক অনেক ভালো আছেন। স্বাগতম সবাইকে সেরা ৫ টি এন্টি থেফ্ট অ্যাপ অথবা সফটওয়্যার নিয়ে নতুন আরো একটি টিউনে। মোবাইল ফোন, বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রায় 99.99% মানুষই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। এই মোবাইল ফোনগুলোতে নিজেদের পার্সোনাল ডকুমেন্ট দিয়ে ভরপুর থাকে। যার কারণে মোবাইল ফোন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে উঠেছে। কেমন হবে, যদি আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ডিভাইসটি হারিয়ে যায়? অবশ্যই অনেক বেশি চিন্তা আর মন খারাপের কারণ হবে। আপনি জানলে অবাক হবেন যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশে মোবাইল ফোন চুরি হয় এমন ঘটনা রয়েছে।
বাংলাদেশের মত একটি দেশে মোবাইল চুরি হওয়াটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ব্যাপারটা দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি। যদিও আমরা কখনই চাই না যে আমাদের মোবাইল চুরি হয়ে যাক। কিন্তু চুরি হওয়া মোবাইল ফেরত পাওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ আগে থেকে গ্রহণ করলে মোবাইল চুরির পর তা খুঁজে পাওয়া অনেকটাই ইজি হয়ে যাবে। এমনই পাঁচটি এন্টি থেফ্ট অ্যাপ নিয়ে আজকে কথা বলবো যেগুলো আপনাদের ফোনে অবশ্যই ইন্সটল থাকা উচিত। আরে এন্টি থেফ্ট অ্যাপগুলোর কোন একটি আপনার ফোনে ইন্সটল থাকলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফোনটি চুরি হওয়ার পরেও তা অনেক সহজেই খুঁজে পেতে পারেন। তো আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের টিউন সেরা ৫টি এন্টি থেফ্ট সফটওয়্যার যেগুলো আপনার অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত!
এই অ্যাপটি আপনারা প্লে স্টোরেই একদম ফ্রিতে পেয়ে যাবেন। অ্যাপটি ইনস্টল করে অ্যাপটিতে প্রবেশ করলেই কিছু পারমিশন চাইবে। অ্যাপটিকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে হলে পারমিশনগুলো অ্যালাও দিয়ে দিতে হবে। এইবার আসি মূল ফিচারের ব্যাপারে। অ্যাপের মধ্যে প্রথম যে ফিচারটি দেখতে পাবেন সেটিই হলো এন্টি থেফ্ট ফিচার। অপশনটিতে ক্লিক করলে প্রথমেই আপনার কাছে আরো কিছু পারমিশন অ্যাকসেস চাইবে তারপর আপনার কাছে একটি রিকভারি নাম্বার চাইবে যেটিতে কিনা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলা আছে।
চোর বা অন্য কেউ যখন আপনার মোবাইলের উলটা পালটা পাসওয়ার্ড দিয়ে খোলার জন্য ট্রাই করবে তখনই চোরের বা ওই ব্যক্তির ছবি ও লোকেশন আপনার দেয়া রিকভারি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে মেসেজ আকারে চলে যাবে। তাছাড়া এই অপশনের আন্ডারে আরেকটি ফিচার আছে যেটি হলো ফেক শাটডাউন। এই ফেক শাটডাউন সার্ভিসটি অন থাকলে কেউ যখন আপনার ফোন অফ করতে যাবে তখন তাকে দেখানো হবে ফোন অফ হয়ে গেছে কিন্তু আপনার ফোন তখনও অন থাকবে যা কিনা চোর চিন্তাও করতে পারবে না। যার ফলে পরবর্তীতে খুব সহজেই আপনি আপনার ফোনের লাইভ লোকেশন ট্র্যাক করতে পারবেন।
Official Download @ Hammer Security
ফাইন্ড মাই ডিভাইস একটি বহুল পরিচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য একটি সফটওয়্যার। এটার বিশ্বাস যোগ্যতা বেশি হওয়ার একটি কারণ হলো এটি গুগলের একটি সফটওয়্যার এবং এটিও আপনারা প্লে স্টোরেই একদম ফ্রিতে পেয়ে যাবেন। এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে ওপেন করবেন এবং আপনার পার্সোনাল জিমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগইন করবেন ব্যাস কাজ শেষ, হ্যামার সিকিউরিটির মত এই অ্যাপটিতে কনফিগারেশন এর পিছনে এত সময় বা শ্রম দেয়া লাগবে না। তবে এই সফটওয়্যারটিতেও হারানো ডিভাইস খুঁজে পাওয়া ফিচারের কোনো কমতি থাকছে না।
এবার যখন আপনার ফোনটি চুরি হয়ে গেলো কিংবা হারিয়ে গেলো তখন নিচের স্টেপগুলো ফলো করুন:
মোবাইল হলে প্লে স্টোর থেকে ফাইন্ড মাই ডিভাইস অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন এবং ওপেন করুন।
এখন এমন হতে পারে যে আপনার ফোনটির লোকেশন একটি কোলাহল বা জনমানব পূর্ণ এলাকায় দেখাচ্ছে সেখানে আপনি কীভাবে বুঝবেন যে আপনার মোবাইলটি কোথায় বা কার কাছে আছে? এই সমস্যায় পড়লে নিচের স্টেপগুলো অনুসরণ করুন।
ফাইন্ড মাই ডিভাইস সফটওয়্যার এ আপনার ফোনের লোকেশন দেখানোর পাশাপাশি আরো একটি অপশন থাকবে সেটি হলো ‘রিং’ অপশন। এখন ‘রিং’ অপশনটিকে সিলেক্ট করতে হবে। এখন আপনার মোবাইলটি সাইলেন্ট থাকলেও সেটি ফুল ভলিউমে রিং বাজতে থাকবে। এবং যতক্ষণ না আপনি ফোনটিকে খুঁজে বের করে তার পাওয়ার বাটনটি চাপ দিচ্ছেন, ততক্ষণ ফোন রিং হতেই থাকবে। এ বার সেই আওয়াজ অনুসরণ করে ফোনটিকে খুঁজে বার করুন। এই পদ্ধতিতে আপনি আপনার হারানো ট্যাব-ও খুঁজে বের করতে পারবেন।
Official Download @ Find My Device
যারা স্টোরেজ সমস্যার কারণে বাড়তি অ্যাপ ফোনের মধ্যে ইনস্টল করতে চায় না তাদের জন্য গুগল ম্যাপ অ্যাপটি হতে পারে একটি ম্যাসিভ ব্যাকাপ অপশন। নতুন বা পুরাতন সকল মোবাইলেই স্পেসিফিক ভাবে বললে সকল স্মার্টফোনেই গুগল ম্যাপ প্রি-ইনস্টল অবস্থায় থাকে। সেক্ষেত্রে আলাদা করে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করার কোনো প্রয়োজন হচ্ছে না তবুও কেউ যদি এই অ্যাপটি আনইন্সটল করে থাকেন তাহলেও কোনো সমস্যা নেই কারণ এই অ্যাপটিও প্লে স্টোরে ফ্রিতে পাওয়া যায়। যার ফলে সহজে পুনরুদ্ধার করতে প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করতে পারবেন।
এবার আসল কোথায় আসা যাক, গুগল ম্যাপে আপনার বর্তমান লোকেশন শো করার জন্য যে ব্লু ইন্ডিকেশন সার্কেল মার্ক দেয়া থাকে সেটির উপর প্রেস করলেই কিছু অপশন স্ক্রিনে ভেসে উঠে। এতটুকু আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু এখানেই আসল টুইস্ট, স্ক্রিনে শো করা সেই অপশনগুলোর মধ্যে থেকে "শেয়ার মাই লোকেশন" অপশনে ক্লিক করলে দুই ধরনের অপশন স্ক্রিনে শো হয় কিছু অপশন থাকবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে লোকেশন শেয়ার করার ওপর আরেকটি অপশন থাকবে আপনি বন্ধ করার আগ পর্যন্ত লোকেশন শেয়ার করার সেই অপশন টি কিছুটা এমন লেখা থাকবে "আন্টিল আই টার্ন ইট অফ"।
এই অপশনটি সিলেক্ট করে আপনার কোনো সেকেন্ডারি মেইলে অথবা আপনার অন্য কোনো ফ্যামিলি মেম্বারের মেইলে কিংবা কাছের কোনো বন্ধুর মেইলে লোকেশন পাঠিয়ে রাখলে যখন আপনার ফোন হারিয়ে যাবে কিংবা চুরি হয়ে যাবে তখন যেই মেইলে লোকেশন পাঠিয়েছেন সেই মেইল লগইন করা আছে এমন ফোনের গুগল ম্যাপে প্রবেশ করলে আপনার ফোনের লাস্ট অ্যাকটিভ লোকেশন শো করবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হল, আপনার ফোনটি যতক্ষণ পর্যন্ত পাওয়ার অন থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডিভাইসের লাইভ লোকেশন দেখতে পারবেন। হারানো ডিভাইসের পাওয়ার অফ হয়ে গেলে সেটির লাইভ লোকেশন আর দেখতে পারবেন না।
Official Download @ Google Map
এই সফটওয়্যার টি প্লে স্টোরে না পাওয়া গেলেও এই ধরনের অনেক অ্যাপই প্লে স্টোরে পাওয়া যায়, যায় কাজ প্রায় কাছাকাছিই। মূলত আমরা যখন ফোন অফ করি তখন শুধু পাওয়ার বাটন চেপে ধরে অফ করে থাকি কিন্তু এই অ্যাপটি ইনস্টল থাকলে শুধু পাওয়ার বাটন চেপে ধরলে ফোন অফ হবে না বরং পাওয়ার বাটনের সাথে ভলিউম আপ বাটন প্রেস করে ধরে রাখলে পাওয়ার অফ অপশন শো করবে, এই অ্যাপটি ইনস্টল থাকলে চোর শত চেষ্টা করেও আপনার মোবাইল অফ করতে পারবে না।
অ্যাপটি প্লে স্টোরে পাবলিশ না থাকার কারণে, অ্যাপটির ইনস্টল লিংক আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। আপনারা চাইলে যেকোনো থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে পারবেন। হারানো ফোন খুঁজে পাওয়ার জন্য অ্যাপটি বেশ ভালোই কাজ করে। কারণ চোর যদি অনেক বেশি অভিজ্ঞ না হয় তাহলে সে বুঝতেই পারবে না এই ফোনটি কীভাবে অফ করতে হয়। আর সে যদি আপনার ফোনটি অফ না করতে পারে তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার ফোনের লাইভ লোকেশন বের করতে পারবেন।
Official Download @ Volume Key Power Off
আইফোন অর্থাৎ আইওএস এর সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। চুরি হওয়া আইফোনের সন্ধান পেতে অনেক পদক্ষেপই নেয়া যায় আবার আইফোনের সিকিউরিটি সিস্টেম এর সহায়তায় আইফোনটি কে চিরতরে ব্লকও করা যায় তবে ঘরে বসে আইফোনটি ট্রেক করার জন্য এটির মত অ্যাপ কমই আছে। পরিচিত কারো ফোনে এই অ্যাপটি ইনস্টল করে প্রয়োজনীয় সব ইনফরমেশন দিয়ে আপনার আইফোনের লোকেশন খুঁজে বের করতে পারবেন খুব সহজেই। তাছাড়া এই সফটওয়্যারটি gps (জিপিএস) ব্যবহার করে কোনো আইফোনের লোকেশন বের করে থাকে তাই এটি অনেকটাই ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
এ আপনি শুধুমাত্র আইফোন ইউজাররা ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন না। আজকের টিউনে যেহেতু অনেকগুলো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করলাম তাই ভাবলাম আইফোন ইউজাররা কেন আজকের টিউন থেকে বঞ্চিত হবে। তাই তাদেরকে উদ্দেশ্য করে চমৎকার একটি অ্যাপ শেয়ার করলাম। আশাকরি আপনিও এই অ্যাপটি দ্বারা সহজেই আপনার হারানো আইফোনটিকে খুঁজে পেতে পারেন।
Official Download @ Phone Tracker For Iphone
উপরের ১ থেকে ৩ নম্বর অ্যাপগুলোর অথবা অ্যাপ গুলো ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন পরে। তাই বাহিরে বের হওয়ার সময় ইন্টারনেট অন রাখলে বিপদ থেকে অনেকটাই বেঁচে থাকার সুযোগ থাকে। তাছাড়া লোকেশনও অন করাও থাকা লাগবে। অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে চোর তো ফোন চুরি করে তা ফরমেট বা ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়ে দিবে। আসলে ফোন চুরি করে চোর সাথে সাথেই টা রিসেট দেয় না বরং সে মোবাইলটি সুইচ অফ করে রাখে এবং পরে সময় বুঝে টা অন করে রিসেট দেয়।
এক্ষেত্রে হ্যামার সিকিউরিটি অ্যাপটি সেটাপ করা থাকলে চোর আপনার ফোন সুইচ অফ করলেও মোবাইলটি সুইচ অফ হচ্ছে না এই সুযোগে আপনি অন্য অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আপনার ফোনটি খুব সহজেই খুঁজে বের করে ফেলতে পারবেন। এছাড়াও আজকের টিউন নিয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে তা অবশ্যই টিউমেন্ট করে জানাবেন। আপনার করা মন্তব্যটি গঠনমূলক হলে তা অবশ্যই আমি আমার টিউনে যুক্ত করে নেব।
তো বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের টিউন, সেরা ৫ টি এন্টি থেফ্ট অ্যাপ অথবা সফটওয়্যার যেগুলো আপনার ব্যবহার করা উচিত! আশাকরি টিউন টি আপনাদের একটু হলেও হেল্পফুল হবে। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ অবধি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং টেকটিউনস এর সাথেই থাকবেন।
আমি স্বপন মিয়া। Sonic টিউনার, টেকটিউনস, গাইবান্ধা, রংপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 107 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টেকনোলজি বিষয়ে জানতে শিখতে ও যেটুকু পারি তা অন্যর মাঝে তুলে ধরতে অনেক ভালো লাগে। এই ভালো লাগা থেকেই আমি নিয়মিত রাইটিং করি। আশা করি নতুন অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পারবেন।