সাইবার সিকিউরিটি কি? বুঝুন, শিখুন এবং সুরক্ষিত থাকুন

টিউন বিভাগ সাইবার সিকিউরিটি
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 2
১ম বর্ষ, সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, নবাবগঞ্জ

আজকের এই ডিজিটাল যুগে, আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি দিকই ইন্টারনেটের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। অনলাইনে ব্যাংকিং থেকে শুরু করে কেনাকাটা, শিক্ষা, এবং সামাজিক যোগাযোগ এই সবকিছুই আমাদের আঙুলের ডগায় এনে দিয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটের এই বিশাল সুবিধার সাথে সাথে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। সাইবার অপরাধীরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক তথ্য, এবং গুরুত্বপূর্ণ ডেটা চুরি করার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।

সাইবার সিকিউরিটি হলো আমাদের ডিজিটাল জীবনকে ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া। এটি ব্যক্তিগত তথ্য, ডেটা, এবং সিস্টেমকে অননুমোদিত অ্যাক্সেস, ব্যবহার, প্রকাশ, ব্যাঘাত, পরিবর্তন, বা ধ্বংস থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

আজকে আমি সাইবার সিকিউরিটির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এই টিউনে আমার উদ্দেশ্য হলো আপনাদেরকে সাইবার সিকিউরিটির বিষয়ে সচেতন করা এবং আপনাদের ডিজিটাল জীবনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করা। তাই আমাদের সাথে থাকুন এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আরও জানুন!

১. সাইবার সিকিউরিটি কি?

সাইবার সিকিউরিটি

সাইবার সিকিউরিটি (Cyber Security) এমন একটি ক্ষেত্র, যা আমাদের কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটে আমাদের ডেটাগুলিকে সাইবার হামলা, অনুমোদনহীন অ্যাক্সেস, ডেটা লঙ্ঘন ও অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করে। সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা জাতীয় প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ক্ষেত্রটি প্রযুক্তি, সিস্টেম এবং নীতিমালা - এই তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে। শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার, ফায়ারওয়াল এবং এনক্রিপশনের মতো প্রযুক্তিগুলি সাইবার হামলা প্রতিহত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সিস্টেম আপডেট, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক না করার মতো সচেতনতামূলক পদ্ধতিগুলি ব্যবহারকারীদের সাইবার হুমকি এড়াতে সক্ষম করে। আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা সাইবার অপরাধ দমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

২. কেন সাইবার সিকিউরিটি জরুরী?

সাইবার সিকিউরিটি

ডিজিটাল দুনিয়া দিন দিন বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে সাইবার অপরাধের হুমকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, বর্তমান সময়ে সাইবার সিকিউরিটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। এক সময় হয়তো ব্যক্তিগত কম্পিউটারে কিছু ভাইরাস ঢুকে পড়া বা ইমেইলে স্পাম আসা ছিল সাইবার অপরাধের প্রধান উদাহরণ। কিন্তু আজ আর এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

বর্তমানে, সাইবার অপরাধীরা আরও সূক্ষ্ম ও জটিল কৌশল অবলম্বন করছে। তারা ফিশিং আক্রমণের মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমন পাসওয়ার্ড ও ক্রেডিট কার্ড নম্বর, হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া, র‍্যানসমওয়্যার (ransomware) মালওয়্যারের সাহায্যে তারা ব্যবহারকারীদের ডিভাইস বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লক করে ফেলে, এবং তা ফেরত দেওয়ার জন্য মুক্তিপণ দাবি করে। এছাড়াও, Advanced Persistent Threats (APT) নামক জটিল আক্রমণের মাধ্যমে তারা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে গোপনে অবস্থান করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে।

এই ধরনের সাইবার হামলার ফলাফল যে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই করে, তা নয়। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আর্থিক লোকসান, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ক্ষতির মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্য চুরি থেকে শুরু করে অবকাঠামোর ক্ষতি, অর্থনৈতিক ক্ষতির মতো বিরাট বিপদের সৃষ্টি করে। সুতরাং, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় স্তরে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

৩. সাইবার সুরক্ষায় ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা:

সাইবার সিকিউরিটি

আমরা যেমন আমাদের বাড়িঘর রক্ষার জন্য সচেতন থাকি, তেমনি অনলাইন জগতেও নিজেদের এবং আমাদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। সাইবার অপরাধের হাত থেকে বাঁচতে শুধু জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন নিজের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতারও। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে আমরা সাইবার সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারি।

১. সচেতনতা অবলম্বন করুন: সাইবার হামলার বিভিন্ন কৌশল, যেমন ফিশিং, মালওয়্যার, বা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরী। সন্দেজনক কোন লিঙ্কে ক্লিক না করা, অপরিচিত উৎস থেকে আসা ফাইল ডাউনলোড না করা, এবং ব্যক্তিগত তথ্য সাবধানে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপটি অনলাইন জগতে আমাদের অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে।

২. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: অনেকেই একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন জাইগাই ব্যবহার করার অভ্যাস আছে। এটি আমাদের একটি বিরাট ভুল। প্রতিটি হ্মেত্রের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যাবহআর করা খুবই ভাল। পাসওয়ার্ড অবশ্যয় ইউনিক এবং জটিল ভাবে তৈরি করা উচিৎ। এছাড়া, নিয়মিত পাসওয়ার্ড পুরনো হয়ে গেলে টা পরিবর্তন করাও অত্যন্ত জরুরি।

৩. সফটওয়্যার আপডেট রাখুন: অনেক সাইবার অপরাধ, আপনার ডিভাইসে থাকা সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটির মাধ্যমে ঘটে। অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট রাখা খুবই জরুরী। কারণ এই আপডেটগুলোতেই সাধারণত নিরাপত্তা সংশোধনী (security patches) থাকে। আরও একটি কথা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, কখনো কোন ভাবেই ক্রাক বা নুল সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না।

৪. সন্দেহজনক কার্যকলাপের প্রতি সচেতন থাকুন: আপনার ইমেল অ্যাকাউন্টে যদি অস্বাভাবিক কার্যকলাপ, অজানা ডিভাইস থেকে লগ-ইন বা অস্বাভাবিক ফাইল ডাউনলোডের মতো বিষয় লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত পদহ্মেপ নিন। এক্ষেত্রে যথাশীঘ্র পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় সাবধানতা বাড়ান: সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য, বিশেষ করে জন্ম তারিখ, হোমটাউন, নিজের শহর, বা স্কুলের নামের মতো তথ্য অতিরিক্ত পরিমাণে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি হয়তো ভাবছেন, এটা আবার এমন কি। লিন্ত আপনাকে বলে রাখি, সাইবার অপরাধীরা এই তথ্যগুলো ফিশিং অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি অনুসরণের মাধ্যমে আমরা সাইবার অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারি এবং সাইবার স্পেসে নিজেদের আরও সুরক্ষিত করতে পারি। তবে, মনে রাখবেন, সাইবার নিরাপত্তা একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সাইবার অ্যাটাকের কৌশলও পরিবর্তিত হচ্ছে। সুতরাং, নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধি, নতুন তথ্য অর্জন এবং সর্বশেষ নিরাপত্তা পদ্ধতি সম্পর্কে অব্যাহত থাকা অত্যন্ত জরুরী।

৪. সাইবার হামলা হলে করণীয়

সাইবার সিকিউরিটি

বর্তমানে সাইবার অ্যাটাক অনেকটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই হয়ে গিয়াছে। আগে থেকে হাজার সতর্ক থাকা সত্ত্বেও কখনো না কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেই পারে একজন ব্যবহারকারী। তবে সাইবার হামলার শিকার হলে উত্তম করণীয় হলো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। আসুন জেনে নেওয়া যাক সাইবার হামলা মোকাবিলায় কী করা উচিত:

১. ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা: সাইবার হামলার সন্দেহ হলে প্রথমেই আক্রান্ত ডিভাইসটি ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করুন। এতে করে হামলাকারী আপনার ডিভাইস থেকে তার নিয়ন্ত্রন হারানর সম্ভাবনা থাকে। ল্যাপটপ হলে ওয়াইফাই বন্ধ করুন এবং ইথারনেট ক্যাবল খুলে ফেলুন। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ওয়াইফাই ও মোবাইল ডেটা দুটোই বন্ধ করে দিন।

২. পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: সাইবার হামলা যে ডিভাইস বা অ্যাকাউন্টে ঘটেছে, সেই সব অ্যাকাউনটের পাসওয়ার্ড সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করুন। মনে রাখবেন, নতুন পাসওয়ার্ড যেন পুরোনোটির সাথে কোনো মিল না থাকে এবং পাসওয়ার্ড জেনো অনেক কঠিন হয়।

৩. সন্দেহজনক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করুন: আপনার অ্যাকাউন্টে যদি কোনো অস্বাভাবিক কার্যকলাপ, যেমন অজ্ঞাত স্থান থেকে লগইন বা অচেনা ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেসের চেষ্টা লক্ষ্য করলে সতর্ক হোন এবং দ্রুত বাবস্থা নিন।

৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানান: গুরুতর সাইবার হামলার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অবহিত করে মামলা দায়ের করুন। এটি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার পথ সুগম করে তোলে।

শেষ কথাঃ

এই টিউনে আমি সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক, যেমন সাইবার সিকিউরিটি কি?, সাইবার হামলায় ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এবং সাইবার হামলা হলে করণীয়, তা আলোচনা করেছি।

মনে রাখবেন, সাইবার নিরাপত্তা শুধুই প্রশাসনের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব। সচেতনতা বৃদ্ধি, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সাইবার স্পেসকে আরও নিরাপদ করে তুলতে পারি।

আসুন, আমরা সকলেই সাইবার নিরাপত্তায় সচেতন ভূমিকা পালন করে ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও নিরাপদ করে তুলি।

Level 2

আমি ইমন সিকদার। ১ম বর্ষ, সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, নবাবগঞ্জ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 মাস 3 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 23 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস