আপনার অনেকেই প্রক্সি এবং ভিপিএন নামটির সাথে পরিচিত। আর আপনারা হয়তোবা বিভিন্ন কাজের জন্য এগুলো ব্যবহার করে থাকতে পারেন।
যাইহোক, যখন আমাদের সাইবার নিরাপত্তার কথা আসে, তখন আমাদেরকে অবশ্যই VPN এবং Proxy এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি বাছাই করতে হয়। অনেকেই বিভিন্ন ব্লক করা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য প্রক্সি ব্যবহার করে থাকতে পারেন আবার অনেকেই নিজেদেরকে গোপন করার জন্য VPN ব্যবহার করে থাকে। লোকেরা ইন্টারনেটে নিজেদেরকে লুকানোর জন্য ভিপিএন এবং প্রক্সি ব্যবহার করে।
কিন্তু, আসলে ভিপিএন এবং প্রক্সি সার্ভার এর মধ্যে পার্থক্য কী? আপনার সাইবার নিরাপত্তার জন্য আসলে VPN এবং Proxy এর মধ্য থেকে কোনটি ব্যবহার করা উচিত? আজকের এই টিউনে মূলত Proxy Vs Vpn নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং এগুলোর মধ্যে থেকে আপনার জন্য কোনটি সেরা, তা জানতে পারবেন।
এখানে আমরা কেন ভিপিএন এবং প্রক্সি নিয়ে তুলনা করছি, প্রথমেই আমাদেরকে সেই বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা উচিত। Proxy ও VPN নিয়ে তুলনা করার কারণ হলো, এই দুইটি সার্ভিস ব্যবহার করা হয় সাধারণত একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য। আর সেটি হল, কোন ওয়েবসাইট ব্যবহারের সময় আপনার আইপি এড্রেস লুকিয়ে রাখা।
আপনি যখন কোন একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তখন এটি আপনার আইপি অ্যাড্রেস থেকে আপনার অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেতে পারে। আর এক্ষেত্রে প্রক্সি এবং ভিপিএন গুলো আপনার আইপি অ্যাড্রেস গোপন করে এবং ওয়েবসাইট গুলোকে অন্য একটি আইপি অ্যাড্রেস প্রদান করে।
লোকেরা তাদের নিজের আইপি অ্যাড্রেস কেন লুকিয়ে রাখতে চায়, এটি সেই ব্যক্তির বিভিন্ন উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। কিন্তু, যখন নিজের আইপি এড্রেস লুকিয়ে রাখা এবং একই সাথে সাইবার নিরাপত্তার কথা আসে, তখন এগুলোর মধ্য থেকে কোনটি ব্যবহার করা ভালো হবে? কেননা, ভিপিএন ও প্রক্সি ব্যবহার করে মূলত একইভাবে কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশের সময় আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে।
যাইহোক, আইপি এড্রেস লুকিয়ে রেখে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য আমাদেরকে Proxy Server এবং VPN Server সার্ভার এর কাজ সম্পর্কে জানা উচিত।
প্রক্সি সার্ভার হলো একটি “মিডেলম্যান” যা আপনার এবং আপনি যে ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করেন তার মাঝে কাজ করে। সাধারণত আপনি অনলাইনে ওয়েবসাইট আকারে বিভিন্ন প্রক্সি সার্ভার খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে, আপনি সেসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে, যে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন সেটি লিখুন এবং তারপর এন্টার করলে, এটি আপনাকে সেই ওয়েব সাইটে নিয়ে যাবে। প্রক্সি সার্ভারগুলো মূলত আপনার দেওয়া ওয়েব এড্রেস টি নেয় এবং সেই ওয়েবসাইটের সাথে কানেক্ট করে দেয়।
এরপর সেই ওয়েবসাইট থেকে যাবতীয় কনটেন্ট বা ইনফরমেশন আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রক্সি সার্ভার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। প্রক্সি সার্ভার ব্যবহারের প্রধান সুবিধা হলো, এটি ব্যবহারের ফলে আপনি সরাসরি ওয়েবসাইটের সাথে কানেক্ট করবেন না। এক্ষেত্রে আপনি যখন কোন একটি প্রক্সি সার্ভার ব্যবহারের জন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত URL টি দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন, তখন সেই সার্ভার আপনার রিকোয়েস্ট টি নিয়ে তাদের সার্ভার এর মাধ্যমে মূল ওয়েবসাইটের সার্ভারে প্রেরণ করবে।
আর এ সময় আপনি সেখানে নির্দিষ্ট কান্ট্রি সিলেক্ট করার মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আপনার লোকেশন সেসব ওয়েবসাইটকে ভিন্নভাবে দেখাতে পারবেন। আপনার দেশ থেকে ব্লক করা কোন একটি ওয়েবসাইটকে প্রবেশ করতে কিংবা কোন একটি সার্ভিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে এ ধরনের প্রক্সি সার্ভারের সাহায্য নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের প্রক্সি সার্ভার রয়েছে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ইন্টারনেটের বিভিন্ন কনটেন্ট অ্যাক্সেস করার জন্য Forward Proxy ব্যবহার করে থাকি।
আপনি যদি শুধুমাত্র একটি ব্লক করা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চান, তাহলে প্রক্সি সার্ভার এই কাজটিকে সহজ এবং দ্রুত করতে পারে। এক্ষেত্রে, আপনার ডিভাইসে কোন অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার প্রয়োজন নেই। এজন্য শুধুমাত্র যেকোনো একটি Free Proxy Website এ প্রবেশ করুন এবং একটি কান্ট্রি বেছে নিন। তারপর, URL এর জায়গায় ওয়েবসাইটের এড্রেস লিখে সার্চ করলেই আপনি সেই ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারবেন।
যেহেতু, Proxy Server গুলো অনলাইনে পাওয়া যায়, তাই আপনি যেকোনো ব্রাউজার বা অপারেটিং সিস্টেম থেকেই এটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। প্রক্সি সার্ভারগুলো সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে নির্ভর এবং আপনি এক্ষেত্রে যে কোন ব্রাউজার দিয়েই এ ধরনের ফ্রি প্রক্সি ওয়েবসাইট গুলো দিয়ে ব্লক করা ওয়েবসাইট গুলো ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।
যে লোকেশন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্লক করা ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করার জন্য প্রক্সি সার্ভারগুলো সত্যিই দারুণ একটি সমাধান। কিন্তু, আপনি যদি Anonymously ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার চেয়ে আরো বেশি কিছু করতে চান, তাহলে এক্ষেত্রে প্রক্সি সার্ভারগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে না। এমনকি, আপনি যদি শুধুমাত্র ওয়েব ব্রাউজিং এর জন্য প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করেন, তাহলে ও আপনি দেখতে পাবেন যে, এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটটি অনেক ধীর গতিতে লোড হচ্ছে।
VPN গুলো মূলত প্রক্সি সার্ভার এর মত একইভাবে কাজ করে। এক্ষেত্রেও আপনি যখন একটি ভিপিএন সার্ভারের সাথে আপনার ডিভাইস কে কানেক্ট করেন, তখন এটি আপনার সমস্ত ট্রাফিক গুলো তাদের একটি ডেটা সার্ভার এর মধ্য দিয়ে পাস করে। যাইহোক, VPN এবং Proxy সার্ভার এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, এই দুইটি মাধ্যমে কীভাবে আপনার ডাটা সর্বপ্রথম মূল সার্ভারে পাঠানো হয়।
আপনি যখন একটি ভিপিএন সফটওয়্যার আপনার পিসি বা মোবাইলে ইন্সটল করেন, তখন এটি চালু করার সাথে সাথে আপনার ইন্টারনেটের সকল ডেটা গুলো কম্পিউটার থেকেই এনক্রিপ্ট করে ভিপিএন সার্ভারে পাঠানো হয়। তারপর, সেই VPN Server থেকে আপনার রিকোয়েস্ট করা মূল সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে ডেটা নিয়ে ভিপিএন সার্ভার থেকে আবার এনক্রিপ্ট করে আপনার ডিভাইসে পাঠানো হয়।
একটি ভিপিএন ব্যবহারের সময় যেহেতু আপনার ডিভাইস থেকেই সমস্ত ডেটা এনক্রিপ্ট হয়ে ভিপিএন সার্ভারে যায় এবং পুনরায় মূল সার্ভার থেকে আসা ডাটা গুলো ভিপিএন সার্ভার থেকে আপনার ডিভাইসে এনক্রিপ্ট অবস্থায় আসে, তাই অন্য কেউ আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর ডেটা গুলো দেখতে পায় না। এক্ষেত্রে, আপনার আইএসপি, সরকার কিংবা অন্য থার্ড পার্টির কাছ থেকে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক হাইড করা যায়।
আপনার অনলাইন এক্টিভিটি কে মাস্ক বা হাইড করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা একটি দুর্দান্ত উপায়। এর বিপরীতে, প্রক্সি সার্ভারগুলো তাদের ডেটা সার্ভারে আপনার রিকোয়েস্ট পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত আপনার অনলাইন এক্টিভিটি কে Anonymous করে না। তার মানে হল, প্রক্সি ব্যবহার করার সময়, প্রক্সি সার্ভারে ডেটা যাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য কেউ যেমন (হ্যাকার বা ISP) আপনার ডেটা দেখতে পারে।
যেহেতু ভিপিএন আপনার পিসিতে ইন্সটল করা থাকে এবং এখান থেকেই সমস্ত ডেটা এনক্রিপ্ট করে, তাই আপনার আইএসপি সহ অন্য কেউ এটি দেখতে পারে না যে, আপনি ইন্টারনেটে কী করছেন। তার মানে হল, একটি VPN ব্যবহার করার সময় আপনি একটি Secure ও Encrypted Connection এ থাকতে পারছেন।
ভিপিএন ব্যবহারের তেমন বড় কোন অসুবিধা নেই। তবে, বেশিরভাগ সেরা ভিপিএন গুলো সম্পূর্ণভাবে ফ্রি ব্যবহার করা যায় না।
এছাড়াও, ভিপিএন এর আরও একটি অসুবিধা হল, ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য আপনার পিসিতে অবশ্যই সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হবে। যদিও এটি তেমন বড় সমস্যা নয়। কিন্তু, মোবাইল বা কম্পিউটারে এ ধরনের অ্যাপ ইন্সটলের কারণে কিছুটা পারফরমেন্স ঘাটতি লক্ষ্য করতে পারেন। কিন্তু, আপনার ডিভাইস থেকে ডেটা পাঠানোর আগে সেগুলোকে এনক্রিপ্ট করতে এটি কাজ করে। তাই, এটিকে ভিপিএন এর তেমন বড় কোন অসুবিধা বলা যায় না।
ভিপিএন এবং প্রক্সি, উভয় টেকনোলজি অনলাইনে আপনার পরিচয় গোপন করার জন্য কাজ করে। তাহলে, অনলাইনে আপনার সার্ভার নিরাপত্তা আরো বাড়ানোর জন্য কোন সার্ভিসটি ব্যবহার করা ভালো হবে?
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোন দেশের ব্যবহারকারী হওয়ার কারণে ইন্টারনেটের কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে না পারেন, তাহলে সেই ওয়েবসাইট দ্রুত অ্যাক্সেস করার জন্য প্রক্সি সার্ভারগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি কোন ওয়েবসাইটের কাছ থেকে আপনার ডেটা লুকানোর জন্য ও প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করতে পারেন।
Proxy Server গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। আর তাই, আপনি যেকোনো কম্পিউটার বা আপনার মোবাইল ডিভাইস থেকেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। যদিও, অনলাইনে প্রাইভেসির জন্য এটি সর্বোত্তম সমাধান নয়। কারণ, এটি তাদের ডেটা সার্ভারে আপনার রিকোয়েস্ট পাঠানোর আগ পর্যন্ত সেগুলোকে এনক্রিপ্ট করে না। আর তাই, Proxy Server এ আপনার ডেটা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার আইএসপি কিংবা অন্য কেউ ডেটা গুলো দেখতে পারে।
আপনি শুধুমাত্র তখনই প্রক্সি সার্ভারগুলো ব্যবহার করতে পারেন, যখন আপনি অন্য কোন দেশের লোকেশন সেট করে কোন ব্লক করা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করবেন কিংবা অন্য দেশের Netflix Show দেখতে চাইবেন।
অন্যদিকে, আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদী ব্রাউজিং করতে চান এবং ডিভাইস ব্যবহার করে সেনসিটিভ কাজ করেন, তাহলে আপনার জন্য ভিপিএন হল সর্বোত্তম অপশন। একটি ভিপিএন ইন্টারনেটে আপনার কানেকশন কে Anonymous করার পাশাপাশি, সিকিউরিটি ও প্রাইভেসির অফার করে। তাই, আপনি যদি অনলাইনে আপনার পরিচয় লুকিয়ে রাখার বিষয়ে সচেতন হন, তাহলে সাইবার নিরাপত্তার জন্য ভিপিএন একমাত্র উপায়।
তাই, আপনি যদি সত্যিই অনলাইনে নিজের প্রাইভেসি রক্ষার জন্য ভিপিএন বা প্রক্সি এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে চান, তাহলে আপনার অবশ্যই VPN Service বাছাই করা উচিত।
প্রক্সি এবং ভিপিএন এর মধ্য থেকে আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন, এটি আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা এবং অগ্রাধিকার এর উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণত Geo-restrictions বাইপাস এর মত কাজ সহজে এবং দ্রুত সময় করার জন্য Proxy Server ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যদিকে, VPN গুলো আপনার সমস্ত ইন্টারনেট ট্র্যাফিক এনক্রিপ্ট করে এবং আপনার আইপি অ্যাড্রেস হাইড করার মাধ্যমে ইন্টারনেটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
যদিও প্রক্সি সার্ভারগুলো তাদের ব্যবহার সহজতার কারণে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প মনে হতে পারে। তবে, এটির এনক্রিপশন অভাবের কারণে আপনার ডেটাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আজকের এই ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বে অবশ্যই অনলাইন নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। আর তাই, যখন আপনার গোপনীয়তা এবং সংবেদনশীল তথ্য রক্ষার কথা আসে, তখন অবশ্যই আপনার একটি ভালো VPN ব্যবহার করা উচিত।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)