ইউটিউব চ্যানেল অনেকের কাছে শখের, অনেকের কাছে স্বপ্নের, আবার অনেকের কাছে উপার্জনের মাধ্যম। যার কাছে যেমনই হোক একটি কথা সবার জন্যই সত্যি যে, একটি ইউটিউব চ্যানেলের সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসা।
তবে, ইদানীং দেখা যাচ্ছে ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হওয়ার প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। কীভাবে নিজেদের প্রিয় চ্যানেলটিকে আমরা হ্যাকিং এর হাত থেকে রক্ষা করব; তা নিয়েই আজকে লিখব।
ইউটিউব চ্যানেলকে নিরাপদ রাখতে যে কাজগুলো করবেন
যেকোনো একাউন্টকে হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে প্রথমেই একেবারে বেসিক যে কাজটি করতে হবে তা হলো শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা। এটা শুধু ইউটিউব নয়, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সকল সাইটের জন্যই প্রযোজ্য।
ইউটিউবের রিকভারি অপশনটি হচ্ছে সাইটটির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যদি আপনার চ্যানেলটি হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে আপনি যেনো আপনার চ্যানেলটিকে পুনরায় ফিরে পেতে পারেন সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তাই ইউটিউব থেকে রিকভারি ই-মেইল চাইলে আপনার অন্য একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস এবং রিকভারি ফোন নম্বর চাইলে আপনার অন্য একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল করুন, রিকভারির জন্য ই-মেইল ও ফোন নম্বর চাইলে আপনি আপনার নিজের ই-মেইল এবং নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করতে চেষ্টা করবেন। কেননা, অন্য কারো ফোন নম্বর বা ই-মেইল ব্যবহার করলে দেখা যাবে যখন আপনার প্রয়োজন হবে তখন হয়তো সেই ব্যক্তিটি আপনার কাছে থাকবে না। তাই তৎক্ষণাৎ রিকভারি করা সম্ভব নাও হতে পারে।
হ্যাকাররা যখন প্রাইমারি ই-মেইল দিয়ে অন্য ডিভাইস থেকে লগইন করবে তখন রিকভারি ই-মেইলে নোটিফিকেশন আকারে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। ঐ ডিভাইসটি যদি আপনার না হয় তাহলে বুঝবেন হ্যাকাররা অন্য কোনো ডিভাইস থেকে লগইন করে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করেছে আর তখন আপনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেল দুই রকমের।
যে ইউটিউব চ্যানেলের একজন ওনার বা মালিক থাকে অর্থাৎ কারো ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে কোনো ব্যক্তি প্রথম যে ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেন, সেই চ্যানেলের একাউন্টটি হচ্ছে একটি পার্সোনাল একাউন্ট।
যে ইউটিউব চ্যানেলের একাধিক কোলাবোরেটর থাকে অর্থাৎ একজন প্রাইমারি ওনার এবং একাধিক কোলাবোরেট ওনার বা সহযোগী মালিক থাকে সেই চ্যানেলের একাউন্টটি হচ্ছে একটি ব্র্যান্ড একাউন্ট।
ইউটিউব চ্যানেলটিকে অবশ্যই Brand Account হিসেবে তৈরি করবেন। যদি চ্যানেলটি পার্সোনাল একাউন্টও হয়, তাহলেও সেটিকে ব্র্যান্ড একাউন্ট হিসেবে কনভার্ট করে নিবেন। কারণ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট এর ক্ষেত্রে দেখা যায় হ্যাকাররা হ্যাক করার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাসওয়ার্ড, রিকভারি ইমেইল ইত্যাদি রিমুভ করে চেঞ্জ করে ফেলে। তবে ব্র্যান্ড একাউন্টের প্রাইমারি ওনারকে রিমুভ করতে ১ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ একাউন্টটি হ্যাক হওয়ার পরও আরও ১ দিন সময় হাতে পাওয়া যায় চ্যানেলটি ফিরিয়ে আনার জন্য।
কোনো ওনারকে রিমুভ করা হলে সে নোটিফিকেশন পায়। তাই সহজেই বোঝা যাবে চ্যানেলটি হ্যাক হয়েছে কিনা।
ব্র্যান্ড একাউন্ট এর একটি ইমেইল থাকে যা চেঞ্জ করা যায় না এবং রিমুভ করা যায় না।
যেভাবে ব্র্যান্ড অ্যাকাউন্ট এর ইমেইল এড্রেস টি জানবেন
হ্যাকাররা যদি কখনো আপনার ই-মেইলটি হ্যাক করে ফেলে অথবা রিমুভ করে দেয় তাহলেও এই ব্র্যান্ড একাউন্টের ই-মেইল রিমুভ করতে পারবে না এমনকি চেঞ্জও না। একারণে হ্যাকার যদি অন্য একটি ই-মেইল বসিয়ে ফেলে তবুও ব্র্যান্ড একাউন্টের ই-মেইল একই থাকায় আপনি আপনার চ্যানেলটি খুঁজে পাবেন। তবে এক্ষেত্রে ইউটিউব সাপোর্টে গিয়ে আপনাকে মেইল করতে হবে চ্যানেলটি ফিরে পাওয়ার জন্য।
আপনার প্রিয় ইউটিউব চ্যানেলে ব্যবহৃত ই-মেইলটিতে অবশ্যই 2 Factor Authentication চালু করে রাখবেন। ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হওয়ার অন্যতম বড় একটি কারণ এই কাজটি না করা। বেশিরভাগ ইউটিউব চ্যানেল এই দুর্বলতার কারণে খুব সহজেই হ্যাকারদের হাতে চলে যায়। তাই আর যাই হোক, এই কাজে অবহেলা একদমই করবেন না।
ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের একটি প্রাথমিক কাজ হলো তারা কোনো একটি একাউন্ট হ্যাক করতে বিভিন্ন ফিশিং লিংক পাঠিয়ে থাকে। সাধারণত বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে তারা ইউজারদেরকে ঐসব লিংকে ক্লিক করতে আগ্রহী করে তোলে। আর ইউজাররা যদি এসব লিংকে ক্লিক করে তাহলে মুহূর্তেই তারা ঐ একাউন্টটির এক্সেস নিয়ে নেয়।
সর্বশেষ আপনার ইউটিউব চ্যানেলের নিরাপত্তার জন্য কিছু কথা
যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে অন্য কাউকে ওনার না বানিয়ে বরং তাকে ম্যানেজার বানিয়ে রাখুন। আর একাধিক ব্যক্তি যদি একসাথে বিজনেস করতে চান তাহলে সেটা অন্য ব্যাপার কারণ তখন সবার সমান অধিকার এবং আর অর্থ পাওয়ার একটা ব্যাপার থাকে।
তথ্য এবং প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সাম্প্রতিক সমস্যার সমাধান পেতে এ একাউন্টটি ফলো করে রাখতে পারেন।
আর পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে নিজেকে আপডেটেড করে রাখতে নিয়মিত চোখ রাখুন টেকটিউনস এর পাতায়। ধন্যবাদ।
আমি জান্নাতুল ফেরদৌস ইভা। এসএসসি ২০২২, ময়মনসিংহ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 8 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।