বন্ধুরা আশাকরি সকলেই ভালো আছেন। বর্তমানে জীবনধারাকে একটু সহজ করতে বেড়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। আর ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিও।
বর্তমানে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট না হলে যেন চলেই না। পুরো বিশ্ব যেন এক হাতের মুঠোয়। ঘর থেকে অফিস কিংবা প্রয়োজনীয় কোনো কাজ বলতে গেলে সবই হয়ে গিয়েছে ইন্টারনেট নির্ভর।
তথ্য প্রযুক্তির এই ব্যবহারের ফলে যেমন বেড়েছে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা, ঠিক তেমনি একটু অসতর্কতা বা অসচেতনতায় ঘটতে পারে অনেক বড় বিপত্তি। এক ক্লিকেই হয়ে যেতে পরে মারাত্মক দুর্ঘটনা। ইন্টারনেটের অপব্যবহার ফলে ঘটে সাইবার বুলিং, হ্যাকিং সহ ব্লাকমেইলিং এর মতো ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে দরকার ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার।
তাই আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ইন্টারনেটে সাইবার ঝুঁকি থেকে বেঁচে কিভাবে এর নিরাপদ ব্যবহার করবেন। ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপদ থাকতে হলে আপনাকেই বেশি সতর্কতা থাকতে হবে।
আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আপনাকে আপনার ডিভাইসে বায়েমেট্রিক, মোবাইলের মাধ্যমে সিকিউরিটি কী হিসেবে ওয়ানটাইম কোড, ইত্যাদি সেট করে রাখতে হবে। আপনার পাসওয়ার্ড যতোই শক্তিশালী হোক না কেন আপনি তবুও এসব সিকিউরিটি সেট করবেন অতিরিক্ত নিরাপত্তা হিসেবে।
আপনার একাউন্টটের সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো পাসওয়ার্ড। অনেকেই এ পাসওয়ার্ড তৈরি করার ক্ষেত্রে ভুল করে থাকে। খুব সহজেই যাতে মনে থাকে এজন্য খুব ছোট এবং দুর্বল পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকে। আপনি এই ভুলটি কখনোই করবেন না।
সাইবার নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে আপনার একাউন্টে। আপনি এখানে কোনো বাক্য এবং সঙ্গে কোনো সংখ্যা যুক্ত করতে পারেন। কমপক্ষে ১২ অক্ষরের একটি বাক্য। আপনার মনে রাখতে সহজ হয়, এমন কোনো সহজ অথচ কঠিন এমন পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন।
আপনার পাসওয়ার্ডকে আরো শক্তিশালী করতে স্পেস, সাংকেতিক চিহ্ন, সংখ্যা, বড়হাতের-ছোটহাতের অক্ষর ব্যবহার করতে পারেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলোর জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
আপনার যদি একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে সব অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে প্রত্যেকের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এটি সাইবার অপরাধীদের পাসওয়ার্ড চুরি ঠেকাতে সাহায্য করে। সতর্কতা হিসেবে আপনার জিমেইল একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড অন্য কোন সাইটে পাসওয়ার্ড হিসেবে সেট করবেন না।
আপনার একাধিক একাউন্ট এ একাধিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। এতে করে যদি কোন কারণে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায় তবে অন্য একাউন্টগুলো নিরাপদ থাকবে। অন্তপক্ষে আপনার অফিস এবং ব্যক্তিগত অ্যকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড আলাদা করতে পারেন।
আপনার যেকোন একাউন্টের পাসওয়ার্ড কোন নিরাপদ স্থানে লিখে রাখুন। বেশি প্রয়োজন না হলে আপনি গুগল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার পাসওয়ার্ড সেভ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট যদি হ্যাক হয়ে যায় তাহলে আপনার সমস্ত ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবে হ্যাকার। তাই গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের কোন পাসওয়ার্ড নিরাপদ স্থানে লিখে রাখুন।
হ্যাকাররা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি এবং হ্যাকিং এ সবচাইতে বেশি ব্যবহার করে থাকে হ্যাকিং লিংক। হ্যাকাররা যেকোন উপায়ে ভুক্তভোগীকে লিঙ্ক প্রেরণ করে। ইমেইলে পাঠানো ওয়েবলিঙ্ক, সোশ্যাল মিডিয়ার টিউন এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনগুলোর মাধ্যমে প্রায়ই সাইবার অপরাধীরা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরির চেষ্টা করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় এসব কোন লিংক আপনার সন্দেহ হলে সেটিতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। বরং সেটিতে ক্লিক না করে মুছে দিন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনাকে সবচাইতে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো আপনি যে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন সেটি নিরাপদ কিনা। এটি দেখার জন্য দেখুন ওয়েবসাইটটির অ্যাড্রেসবারে https:// অথবা “shttp:// দেখাচ্ছে কি না। এটি দেখানোর মানে হলো ওয়েবসাইটে আপনার তথ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া আছে। আর যদি https:// এর পরিবর্তে “http://” থাকে তাহলে বুঝবেন সেটি নিরাপদ নয়।
এমন ওয়েবসাইটে আপনি কোন তথ্যই দিবেন না। যেমন আপনার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, ইমেইল আড্ড্রেস, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি। কেননা তারা এসব তথ্য যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারে। আপনি কোনো তথ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেটি দেখতে পাবে।
ইন্টারনেটে তাৎক্ষণিক কোনো কিছু করতে যদি আপনাকে অনুরোধ করা হয়, যেমনঃ বড় কোনো সুযোগ গ্রহণের আমন্ত্রণ, লোভনীয় অফার ইত্যাদি। এবং এসব ব্যাপারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হলে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। অনলাইনে সব সময় সতর্কতাই নিরাপদ থাকার উপায়।
প্রায় প্রত্যেকটি ওয়েব সাইটে সাইন আপ করার আগে প্রাইভেসি পলিসি পড়ার জন্য বলে। আপনি অবশ্যই প্রাইভেসি পলিসি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে তারপর সে ওয়েব সাইটে সাইন আপ করবেন। আপনি সেই ওয়েব সাইটে সাইন আপ করার পর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য তারা কোন কাজে ব্যবহার করবে তা অবশ্যই সেখানে পড়ে নিবেন। তাদের শর্তের সাথে যদি আপনার মিলে যায় তাহলে আপনি সেই সাইটে সাইন আপ করতে পারেন।
আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং সাইবার নিরাপত্তার জন্য আপনার ফোন এবং অ্যাপগুলোকে সবসময় আপডেট করে নিবেন। কেননা কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি একমাত্র ডেভলপারেরাই ঠিক করে দিতে পারে। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সুরক্ষা হিসেবে আপডেটেড নিরাপত্তা সফটওয়্যার (এন্টি ভাইরাস), ওয়েব ব্রাউজার ও অপারেটিং সিস্টেম সবসময় ব্যবহার করুন।
এছাড়া আপনি অটো সফটওয়্যার আপডেট চালু রাখতে পারেন। এতে করে সফটওয়্যার এর কোনো আপডেট আসলে সেটি অটোমেটিক আপডেট হবে।
সর্বশেষে আপনাকে যেটি বলতে হয় তা হলো অনলাইনে সাইবার নিরাপত্তায় আপনাকে অবশ্যই সবচাইতে বেশি সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় যদি আপনি একটু সচেতন হয়ে ব্রাউজ করেন তাহলে আপনি হ্যাকিং এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরির হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন।
বন্ধুরা এই ছিল আজকের টিউন। সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)