টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে।
স্মার্টফোনের গুরুত্ব আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না। অতিতে যে কাজ গুলো করতে পিসি দরকার হতো সেই সমস্ত কাজ এখন করা যায় ফোন দিয়েই আর তাই আমাদের ফোনে থাকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা। সাধারণ একটা উদাহরণ দেই, কিছু দিন আগেও কোন ওয়ার্ড ডকুমেন্ট তৈরি এডিট ইত্যাদি কাজের জন্য আমরা পিসি ব্যবহার করতাম আর এখন সেগুলো ফোনেই করতে পারি। এই এক্সেসিবিলিটির জন্য আমাদের ফোনে ব্যক্তিগত ডেটার পাশাপাশি আজ কাল থাকে ওয়ার্কপ্লেসের বিভিন্ন তথ্য। আর কখনো যদি এই স্মার্টফোনটি হারিয়ে যায়! ভাবতে পারেন আপনার প্রাইভেসি কতটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে?
আপনার ফোন সবসময় হারিয়ে গেলেই কেবল আপনার ডেটা অন্যকেউ ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যাবে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আপনার কাছে থেকেও ফোনের সব তথ্য চলে যেতে পারে কোন তৃতীয় পক্ষের কাছে। কখনো কখনো আপনার ফোন হ্যাকারের কাছে বিভিন্ন তথ্য পাঠানোর মাধ্যম হিসেবেও কাজ করতে পারে। আর এই ঘটনা গুলো তখনই ঘটবে যখন আপনার ফোনে কোন ম্যালওয়্যার প্রবেশ করবে। বিভিন্ন ম্যালওয়্যার আপনার অজান্তেই সকল ডেটা প্রেরণ করতে থাকবে ভিন্ন কোন সোর্সে।
তো কিভাবে বুঝবেন আপনার ফোনটিতে কোন ম্যালওয়্যার আছে কিনা বা আপনার প্রাইভেসি ঝুঁকিতে কিনা এই বিষয় গুলোই আজকে আমরা দেখব। ফোনে ম্যালওয়্যার বা অন্য কোন Spy অ্যাপ ইন্সটল থাকলে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে তা আপনি ডিটেক্ট করতে পারবেন,
আমরা যখন অনেকদিন কোন ফোন ব্যবহার করি তখন স্বাভাবিকভাবেই এটি কিছুটা স্লো হয়ে যায় বা ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়। কিন্তু হটাৎ করেই যখন এমন লক্ষ্মণ আপনার চোখে পড়বে তখন বুঝবেন ফোনে সমস্যা হয়েছে। ম্যালওয়্যার যখন আপনার ডেটা গুলো অন্য জায়গায় পাঠাতে থাকে তখন ফোন খুব বেশি স্লো কাজ করে এবং ব্যাটারি ইউজও বেড়ে যায়।
তাছাড়া আপনি খেয়াল করে দেখবেন আপনি ফোন ব্যবহার না করলেও ফোন গরম হয়ে যাচ্ছে। কোন ধরনের ইন্টারনেট কানেকশন চলমান না থাকলেও দেখবেন ডেটা ইউজ হচ্ছে। আপনার ফোনের বয়স অনেক বেশি হয়ে গেলে ভিন্ন কথা, তবে যদি হটাত করে এমন কিছু লক্ষ্য করেন তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার এটাক করেছে।
আপনি যদি আনলিমিটেড ডাটা প্যাক ইউজ করেন তাহলে ভিন্ন কথা কিন্তু যখন লিমিটেড ডেটা প্যাক ইউজ করবেন এবং খেয়াল করে দেখবে খুব দ্রুত ডেটা শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন বুঝে নেবেন আপনার ফোনটি হ্যাক হয়েছে।
হ্যাকার যদি ফোনের ওয়েবক্যাম দিয়ে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই অতিরিক্ত ডেটা বা ইন্টারনেট খরচ হতে পারে। আপনি Data Usages ও চেক করে দেখতে পারেন।
আপনার ফোনে যদি এড সাপোর্টেড কোন অ্যাপ ইন্সটল দেয়া থাকে তাহলে কখনো কখনো আপনি Pop Up এড দেখতে পারেন। সেই সমস্ত এড গুলো সাধারণত গুগলের হয়ে থাকে। তবে যদি গুগলের এড ব্যতীত অন্য কোন এড শো করে তখন বুঝে নেবেন ঝামেলা আছে।
আপনার ফোন হ্যাক হলে এমন এমন পপআপ এড শো করাবে যেখানে আপনাকে ভয় দেখানো হবে, হতে পারে বলা হবে, আপনার ফোনে ভাইরাস আছে স্ক্যান করুন, ফোনের স্টোরেজ ফুল হয়ে হয়ে গেছে ক্লিন করুন অথবা কখনো কখনো বিভিন্ন লটারির অফারও আসতে পারে। এই ধরনের ফাঁদে পড়ে কখনো লিংক গুলোতে ক্লিক করবেন না কারণ এটি আপনাকে কোন ফিশিং ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারে, হ্যাক হতে পারে আপনার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট!
আপনার অ্যাপ ড্রয়ারে কখনো আপনি এমন কোন অ্যাপ খেয়াল করতে পারেন যা আপনি নিজে কখনো ইন্সটল দেন নি। কখনো কখনো এমন অ্যাপের সংখ্যা অনেক বেশিও হতে পারে।
ম্যালওয়্যার অ্যাপ গুলো সব সময় শো করবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। কখনো অ্যাপ ড্রয়ারে অ্যাপ গুলো শো নাও করতে পারে। এজন্য সেটিংস থেকে App এ গিয়ে চেক করুন।
আপনার ফোনের ব্রাউজার যাবার সাথে সাথে যদি ভিন্ন কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে ল্যান্ড করে বা অপরিচিত কোন সার্চ ইঞ্জিন শো করায় তাহলে বড় সম্ভাবনা আছে যে আপনার ফোনটি হ্যাক হয়েছে।
কখনো কখনো আপনাকে ফিশিং ওয়েবসাইটেও নিয়ে যেতে পারে সেটা হতে পারে, ফেসবুক পেজ, জিমেইল লগইন অথবা পেপালের সাইন ইন পেজ।
সব সময় আপনার কল লগ চেক করুন। যদি দেখেন আপনার অজান্তেই বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বারে কল যাচ্ছে একই সাথে টেক্সট সেন্ড হয়েছে তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনে ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি রয়েছে।
আমাদের স্মার্টফোনে ফেসবুক, টুইটার, গুগল ইত্যাদি বিভিন্ন একাউন্ট লগইন করা থাকে। যখন ফোনে কোন ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে তখন হ্যাকাররা আগে এই একাউন্ট গুলোকে টার্গেট করে। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে যদি অস্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ দেখা যায় যা আপনি করেন নি, ভিন্ন জায়গা থেকে লগইন নোটিফিকেশন আসে, পাসওয়ার্ড রিসেট কোড আসে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফোনটি হ্যাকিং এর স্বীকার হয়েছে।
উপরে উল্লেখিত আচরণ গুলো থেকে আপনি যখন নিশ্চিত হবেন আপনার ফোনটি হ্যাক হয়েছে বা ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হয়েছে তখন আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে,
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপরের ধাপ গুলো ফলো করলেই আপনার ফোন পুরোপুরি ভাইরাস মুক্ত বা ম্যালওয়্যার মুক্ত হয়ে যেতে পারে, তবে যদি আর ভয়াবহ ম্যালওয়্যার হয় সেক্ষেত্রে রিসেটের পরেও সেগুলো ফোনে থাকতে পারে। রিসেট দেবার পরেও অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে আপনার ফোনটি নতুন Firmware দিয়ে ফ্ল্যাশ দিন।
আপনার ফোনটি ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হয়ে গেলে সেটা আপনি বুঝতে এবং ফিক্স করতে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে সুতরাং সব সময় সতর্ক থাকা উচিৎ যেন ম্যালওয়্যার ফোনে প্রবেশ করতে না পারে। চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে আপনার ফোনটিকে ম্যালওয়্যার মুক্ত রাখবেন,
বর্তমানে আমাদের স্মার্টফোন গুলোতে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা থাকে। সুতরাং আপনার কোন ভুল আপনার প্রাইভেসি কে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আর তাই সব সময় সচেতন থাকুন। ফোন ব্যবহারে আরও সচেতন হোন।
আজকের মত এই পর্যন্তই, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।