বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি এই ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত করে ক্রিপ্টো অর্জন করতে চায়। কিন্তু, অন্যান্য সকল বিষয়ের মত যখন প্রযুক্তির জগতের কোন একটি বিষয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এটি ঘিরেই সাইবার অপরাধীরা নানা প্রতারণা করার উপায় খুঁজতে থাকেন।
Cryptocurrency প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটালে ও এই প্রযুক্তির সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে অনেক অসাধু ব্যক্তিরা নানা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। বর্তমানে, বিভিন্ন দেশে Crypto Mining এর নামে যে ৫ পদ্ধতিতে স্ক্যাম হচ্ছে সেগুলো না জানলে আপনি পরবর্তীতে কোন বিপদে পড়তে পারেন।
তাই, আজকের এই টিউনে আমি সাইবার অপরাধীদের ক্রিপ্টো মাইনিং এর নামে এরকম কিছু প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে বলবো, যেগুলো জানার মাধ্যমে আপনি সতর্ক থাকতে পারবেন।
ক্রিপ্টোজ্যাকিং হলো একটি জটিল ধরনের সাইবার অপরাধ, যে অপরাধ পদ্ধতিতে অন্য কোন মানুষের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা হয়। এ ধরনের আক্রমণের ক্ষেত্রে আক্রমণকারীরা বিভিন্ন ব্যক্তিদের ডিভাইস বা নির্দিষ্ট মাইনিং হার্ডওয়্যার গুলো সংক্রমিত করে এবং তাদের নিজেদের জন্য ক্রিপ্টো মাইনিং করে।
এ ধরনের আক্রমণের জন্য সাধারণত একটি টার্গেটেড ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করার প্রয়োজন পড়ে। এটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড, ইমেইল Attachment, ফিশিং কিংবা অন্য কোন পদ্ধতিতে টার্গেট করা ব্যক্তির ডিভাইসে প্রবেশ করানো হতে পারে। আর একবার ক্রিপ্টোজ্যাকিং ম্যালওয়্যার টি কোন ডিভাইসে ইন্সটল করা সম্ভব হলে, ব্যবহারকারীর অজান্তেই এটি অটোমেটিক্যালি কার্যকর হতে পারে।
এ অবস্থাতে সেই সাইবার আক্রমণকারী টার্গেট করা ব্যক্তির ডিভাইসে ক্রিপ্টো মাইনিং করার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পায় এবং সেই ব্যক্তির ডিভাইস ব্যবহার করেই সে লাভ করতে থাকে। বড় ধরনের ক্রিপ্টোজ্যাকিং অপারেশনকে আপনি এক ধরনের বট নেট হিসেবে ও ভাবতে পারেন, যা সাধারণত DDoS আক্রমণ এবং স্প্যাম ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। ক্রিপ্টোজ্যাকিং এর ক্ষেত্রে ও একাধিক সংক্রমিত ডিভাইস ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা হয়।
ক্রিপ্টোজ্যাকিং এর প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে, আক্রান্ত হওয়া ডিভাইস গুলোর ধীরগতির পারফরম্যান্স, অতিরিক্ত গরম হওয়া, ক্র্যাশ হওয়া এবং অস্বাভাবিকভাবে বেশি পাওয়ার খরচ করা। আপনি যদি আপনার ডিভাইসে এরকম লক্ষণ গুলোর সম্মুখীন হন, তাহলে একটি এন্টিভাইরাস দিয়ে আপনার ডিভাইসের পুরো সিস্টেম স্ক্যান করুন এবং কোন Malicious Files থাকলে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
ক্রিপ্টো মাইনিং এর হার্ডওয়্যার গুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয় এবং মাইনিং এর সাথে জড়িত কিছু পণ্য আপনাকে লক্ষাধিক টাকার ও বেশি দামে কিনতে হবে। ক্রিপ্টো মাইনিং হার্ডওয়্যারের এই খরচের কারণে অনেকের কাছে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া অসাধ্য হয়ে পড়েছে। আর এই সমস্যার সমাধানের জন্য ক্লাউড মাইনিং নামক একটি নতুন ধারণার জন্ম হয়েছে।
ক্লাউড মাইনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী থার্ড পার্টি কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করার জন্য তাদেরকে অর্থ প্রদান করেন। এক্ষেত্রে, সেই গ্রাহককে মাইনিং এর জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হার্ডওয়্যার ব্যবহারের জন্য মাসিক ফি প্রদান করতে হয়। বিনিয়োগকারীদের নেওয়া প্যাকেজ অনুসারে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয় কিংবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হার্ডওয়্যার তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা দিয়ে সে ঘরে বসেই মাইনিং করার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু, ক্লাউড মাইনিং এর নামেই মার্কেটে সাইবার অপরাধীরা বর্তমানে অনেক প্রতারণা করছে। যেখানে তারা বিশেষ করে ভুয়া ওয়েবসাইট কিংবা অনেক কম দামে ক্লাউড মাইনিং থেকে আয় করার লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে, এসব ব্যক্তিরা ক্লাউড মাইনিং ফি সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে তাদের বিনিয়োগ থেকে অর্থ দেয় না।
ক্লাউড মাইনিং সম্পর্কে বলতে গেলে, বর্তমানে এই স্ক্যাম এর ঘটনা বেশি প্রচলিত। তাই, আপনি কোন ক্লাউড মানিং প্ল্যাটফর্মে তথ্য কিংবা অর্থ প্রদান করার আগে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরী।
ক্রিপ্টো মাইনিং পুল ক্রিপ্টো মাইনারদের জন্য একটি জনপ্রিয় পছন্দ। ক্রিপ্টো মাইনিং পুল হল এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে একাধিক মাইনার একসাথে হয়ে কাজ করার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করে। এটি সাধারণত এজন্যই করা হয়, কারণ একক মাইনারদের জন্য ব্লক মাইন করা এবং Reward জেতা কঠিন হতে পারে। আর এজন্যই মাইনিং পুলে অনেক মাইনার একত্রিত হয় এবং প্রতিটি মাইনার তাদের নিজস্ব কমপ্লিটিং পাওয়ার বা হ্যাশ রেট একত্রিত করে মাইনিং করে।
সকল মাইনারদের হ্যাশ রেট একত্রিত করে বড় ধরনের হ্যাশ রেট তৈরি করা হয় এবং এই সম্মিলিত হ্যাশ রেট টি ব্লক মাইন করার সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এরপর মাইনিং কার্যক্রমের পর সেই পুলের সকল সদস্যদের মধ্যে Reward ভাগ করা হয়। এটি সাধারণত সেই পুলের সদস্যদের কম্পিউটিং পাওয়ার অনুযায়ী ভাগ করে নেওয়া হয়।
যাইহোক, এ ধরনের একটি মাইনিং পুলে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে প্রায়ই একটি Membership Fee দিতে হবে। বিশাল সম্মিলিত হ্যাশ পাওয়ার ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণ করার জন্য এই সদস্যের ফি পুল অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
যদিও বর্তমানে অনেক বিশ্বস্ত মাইনিং পুল রয়েছে। তবে, এগুলোর সাথে আরো অসংখ্য প্রতারণামূলক পুল ও রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারকারীদের অর্থ এবং হ্যাশ পাওয়ার থেকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা। সময়ের সাথে সাথে সাইবার অপরাধীরা ও এই মাইনিং পুল এর মাধ্যমে প্রতারণা করে। এক্ষেত্রে তারা নকল মাইনিং পুল তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তিদের হ্যাশ পাওয়ার ব্যবহার করে নিজেদের জন্য ক্রিপ্টো মাইন করতে পারে এবং এমনকি মেম্বারশিপ ফি নিয়ে ও প্রতারণা করতে পারে।
ভুয়া মাইনিং পুল গুলো প্রথম দেখাতেই সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। আর তাই, আপনার Cryptocurrency Maining এর জন্য একটি সেরা মাইনে পুল নির্বাচন করার জন্য গবেষণা করাও উচিত, যাতে করে এ ধরনের স্ক্যামে না জড়ান।
যদি একটি মাইন-যোগ্য পয়েন্টকে সঠিকভাবে ডিজাইন এবং সেটির মার্কেটিং করা হয়, তাহলে এটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা কিছু স্ক্যাম করে থাকে। যেখানে তারা কিছু প্রতারণামূলক মাইনিং কয়েনের উদ্ভব ঘটায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বেশি লাভের কথা বলে মাইনারদের সেসব কয়েন মাইনিং করতে প্রলুদ্ধ করতে পারে।
এর ফলে, সেই কয়েনটির মোড় চাহিদা বাড়ে এবং এক্ষেত্রে কয়েনটির দাম ও বেড়ে যায়। যদিও এটি সেই কয়েনের ডেভলপারদের জন্য বিশেষভাবে ভালো একটি খবর হতে পারে। বিশেষত, তারা যদি নিজেদের জন্য সেই কয়েন এর একটি বড় অংশ রেখে দেয়, যা তারা দাম বাড়লে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু, তাদের উদ্দেশ্য যদি স্ক্যাম করার হয়, তাহলে আপনি এরকম প্রতারণামূলক মাইনিং কয়েন এর সাথে জড়িত হলে, সেখান থেকে সম্ভবত খুব সামান্যই আর্থিক লাভ করতে পারবেন, যা আপনার পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম।
এছাড়াও, এ ধরনের কয়েন গুলোর মাইনিং করার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবেই মাইনিং কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা কিংবা বেশি আর্থিক লাভের জন্য মাইনারদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে অর্থ নেওয়া হতে পারে। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, এখানে যে সময় এবং অর্থ ইনভেস্ট করা হয়েছিল, তার তুলনায় কয়েনগুলোর দাম অনেক কম। এমনকি, মাইনিং করা সেসব কয়েনগুলো কোন ট্রাস্টেড Cryptocurrency Exchange প্ল্যাটফর্মে ও তালিকাভুক্ত হয় না।
এ ধরনের প্রতারণামূলক মাইনিং পয়েন্টগুলো মাইনাদের জন্য প্রচুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। সুতরাং, মার্কেটে কোন নতুন কয়েন মাইনিং করার আগে, এটির পেছনে থাকা প্রকল্প এবং ডেভলপার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে গবেষণা করা জরুরী।
অনেকেই মাইনিং করতে আগ্রহী হওয়ার কারণে গুগল প্লে স্টোরে বা অ্যাপ স্টোরে ও অনেক নকল মাইনিং অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায়। এই অ্যাপগুলো মূলত ব্যবহারকারীদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি অথবা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশন ফি এর মাধ্যমে টাকা আদায় করে, যেখানে প্রকৃতপক্ষে তারা কোন মাইনিং কার্যক্রম পরিচালনা করে না।
ফেইক মাইনিং অ্যাপস এর এরকম প্রতারণা করার কারণেই ২০২০ সালের গুগল প্লে স্টোর থেকে এরকম একাধিক মাইনিং অ্যাপ রিমুভ করা হয়েছিল, যেগুলো ব্যবহারকারীদের থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার চুরি করেছিল। এসব অ্যাপস গুলো বিভিন্ন নকল মাইনিং পরিসংখ্যান গুলো দেখিয়ে ব্যবহারকারীদেরকে এটি বিশ্বাস করিয়েছিল যে, তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করছে, যেখানে আসলে প্রকৃতপক্ষে তাদের ডিভাইস কোন মাইনিং কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।
প্রতারণা কৌশল হিসেবে পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে স্ক্যামাররা নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং তা পুরাতন বিনিয়োগকারীদেরকে লাভ হিসেবে দিয়ে থাকে। যেখানে, তারা ক্রিপ্টো মাইনিং এর কথা বললেও, এর পেছনে পঞ্জি স্কিম কাজ করে।
এরকম ক্ষেত্রে তাদের আসল মাইনিং কার্যক্রম না থাকায়, এক সময়ে এই স্কিম ধসে পড়ে এবং ক্রিপ্টো মাইনিং এ বিনিয়োগ করা ব্যক্তিরা তাদের অর্থ হারায়। তাই, কোন একটি ক্রিপ্টো মাইনিং এ বিনিয়োগ করার আগে, অবশ্যই তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া জরুরী।
ক্রিপ্টো মাইনিং নিয়ে অনেকের কৌতুহল এবং জিজ্ঞাসা রয়েছে। আর অনেকেই এই কৌতুহল থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি এর প্রতি আগ্রহী হয় এবং বিভিন্নভাবে ক্রিপ্টো মাইনিং করে আয় করতে চান। কিন্তু, বর্তমানে এই ক্রিপ্টো মাইনিং এর নামেই অনেক স্ক্যাম হয়ে থাকে, যেগুলো সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
ক্রিপ্টো মাইনিং নিয়ে যেসব প্রতারণা হয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্য থেকে আজকের আলোচনা করা ৬ টি প্রতারণা অন্যতম, যেসব স্ক্যাম গুলো সাইবার অপরাধীরা বেশি করে থাকে। তবে, এখন থেকে আপনি এসব বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে সতর্ক থাকতে পারবেন।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)