ক্রিপ্টোকারেন্সী নিয়ে চারিদিকে হৈচৈ! নানান ধরনের গালগল্প অহরহ চলছে। আসলে ক্রিপ্টোকারেন্সী কি তা জেনে নেওয়া যাক। ক্রিপ্টোকারেন্সী হল অনলাইন ভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা যা ইনক্রিপ্টেড বাইনারি কোড এবং ব্লক-চেইন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। ব্লক-চেইন নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করব। শুধু জেনে রাখা যাক ব্লক-চেইন প্রযুক্তি এতোই সিকিউরড যে কোন হ্যাকার বা হ্যাকার টিম দ্বারা হ্যাক্ড করা সম্ভব না। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সী কখনও হ্যাক্ড করা সম্ভব না মানে এখন পর্যন্ত কোন হ্যাকার বা প্রোগ্রামার এই সিস্টেম হ্যাক্ড করার মেথড বের করতে পারে নি। এবং ভবিষ্যতের সকল প্রযুক্তিই ব্লক-চেইনের মাধ্যমে রিপ্লেস হয়ে যাবে।
প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সী তৈরি করে সাতোশি নাকামোতো নামের কোন ছদ্মবেশী দল বা কোন ব্যক্তি। তাদের পরিচয় আজ পর্যন্ত অজানা। এরা ২০০৯ সালে প্রথম বিট-কয়েন (BitCoin) নামে ক্রিপ্টোকারেন্সী প্রকাশ করেন তিনি বা তারা। তারপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সংস্থা, প্রোগ্রামার বিভিন্ন নামে তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সী বাজারে নিয়ে এসেছে। যেমন: btc, Litecoin, Ethereum, dogecoin etc.
যত ক্রিপ্টোকারেন্সী আছে তার মধ্যে প্রথম বিখ্যাত হয়েছিল বিট-কয়েন। বিট-কয়েন প্রথমে তৈরি করা হয় তারপর বাকিগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। নিচে আমরা কয়েক প্রকারের ক্রিপ্টোকারেন্সী নিয়ে আলোচনা করব।
ক্রিপ্টোকারেন্সী সম্পর্কে কথা বলতে গেলে বিট-কয়েন কে সবার আগে রাখতে হবে। কারণ সবার আগে বিট-কয়েনই ক্রিপ্টোকারেন্সী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি ডিসেন্ট্রালাইজ্ড মুদ্রা ব্যবস্থা যাতে কোন প্রতিষ্ঠান বা সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বর্তমানে এর মূল্য অনেক বেড়ে গেছে।
ইথেরিয়াম একটি অপেনসোর্স ডিসেন্ট্রালাইজ্ড ব্লক-চেইন ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সী। এর প্রতিষ্ঠাতার নাম ভিটালিক বুটেরিন। এটার ক্রিপ্টোকারেন্সী টোকেনকে ইথার নামেও ডাকা হয়। এই প্লাটফর্মটি তাদের ইউজারদের একটি ডিজিটাল টোকেন প্রদান করে যা অনলাইন মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ইথেরেম (ETH) এবং ইথেরিয়াম ক্লাসিক (ETC) দুই ভাগে বিভক্ত বর্তমানে। বিট-কয়েনের পর সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় হলো ইথেরিয়াম।
লাইট-কয়েন একটি ডি-সেন্ট্রালাইজড পিয়ার-টু-পিয়ার ওপেন-সোর্স ক্রিপ্টোকারেন্সী সফটওয়্যার। যা MIT/X11 লাইসেন্সের অধীনে অক্টোবর ২০১১ সালে চার্লস লি প্রকাশ করেছিল। যিনি আগে একজন গুগলের কর্মচারী ছিলেন। লাইট-কয়েন ব্লক জেনারেশন টাইম বিট-কয়েন এর থেকে চার গুন কম। এটাতে মাইনিং করতে Scrypt Algotithm ব্যবহার করা হয়।
যে প্রোগ্রামার ডজকয়েন তৈরি করেছিল তা নিছক মজা করার জন্য তিনি তৈরি করেছিল। তিনি একটি ক্রিপ্টোকারেন্সী প্রজেক্ট শেষ করে সেই প্রজেক্টের সোর্স কোডকে হালকা পাতলা মডিফাই করে তৈরি করেন ডজকয়েন। কুকুর এবং বিট-কয়েনকে একসাথে করে ডজকয়েন নাম রাখেন তিনি। ডজকয়েনকে প্রকাশ করার পর সবাই মজা করে ডজকয়েনে ইনভেস্ট করা শুরু করেছিল। সেই মজার বিষয়টিই আজকে বেশ জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সী হয়ে উঠেছে। অবশ্য ডজকয়েনের মালিক কিন্তু বলেই দিয়েছিল এখানে বিনিয়োগ করে কোন ফায়দা হবে না কারণ এটা নিছক মজা করার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা সবাই আরও বেশী বেশী বিনিয়োগ করা শুরু করল ডজকয়েনে যা আজকে অনেক পাওয়ার-ফুল ক্রিপ্টোকান্সেীতে রূপান্তর হয়েছে।
ফেয়ার কয়েন একটি স্পেন ভিত্তিক কোওপারেটিভ সংস্থা এবং কাতালান ইন্টিগ্রাল কো অপারেটিভ বা CIC নামে পরিচিত। এটি বিট-কয়েন ব্লক-চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সীর মতো ফেয়ার কয়েন মাইনিং বা নতুন কয়েন উৎপাদনের উপর নির্ভর করে না। তারা ব্লক জেনারেশনের জন্য সার্টিফাইড ভ্যালিডেশন নোড বা CDN ব্যবহার করে।
এক্সচেঞ্জ হল একটি মাধ্যম বা প্লাটফর্ম যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সী ক্রয় বিক্রয় করা হয়।
আপনার কাছে যদি কোন ক্রিপ্টোকারেন্সী থেকে থাকে, তবে তার বিনিময়ে আপনি অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সী কিনতে পারবেন। নিম্নে ক্রিপ্টোকারেন্সীতে বিনিয়োগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সীতে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলি হলঃ
এই কোম্পানিগুলো প্রাইভেটলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কোম্পানি গুলো একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যা দ্বারা পাবলিক ক্রিপ্টো কারেন্সি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন। এটার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কোম্পানির কাছে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ – Binance, Zebpay
এই মেথডে এক্সচেঞ্জের সবরকম প্রসেসিং সিস্টেম কোডিং দ্বারা পরিচালিত করা হয়। কাস্টমর বা ইউজার তার ওয়ালেট থেকে সরাসরি ক্রয় বিক্রয় করতে পারে। এই সিস্টেমটি একটি পুরোপুরি অটোমেটিক। উদাহরণ- etherdelta, idex
এই এক্সচেঞ্জের সাথে কোন ব্যাংক ডিটেলস থাকে না। সরাসরি ইউজারের কাছ থেকে ক্রয় বিক্রয় করা হয়। উদাহরনস্বরুপ- Wazirx, local bitcoins
এই পদ্ধতিতে একটি ক্রিপ্টো-কারেন্সি থেকে অন্য ক্রিপ্টো-কারেন্সি ক্রয় এবং বিক্রয় করা যায়। উদাহরণ- Shapeshift, changelly
Centralized & decentralized এই দুই সিস্টেমের কম্বিনেশনে তৈরি হয় তাই এই নাম করণ।
ক্রিপ্টোতে যদি আপনারা কাজ করতে চান অথবা বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে বিভিন্ন প্রকার ক্রিপ্টোকারেন্সী প্লাটফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভালভাবে জেনে নিতে হবে। কোন মতেই হুট-হাট করে যেখানে সেখানে বিনিয়োগ করলে অবশ্যই ঠকে যেতে হবে অথবা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সীতে বিনিয়োগ বিনিয়োগ বিষয়ে আরও বিস্তারিত ভাবে টিউন প্রকাশ করব ইনশাআল্লাহ। কোন প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্টে জানাতে পারেন যথা সাধ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আমি মো সাদ্দাম হোসাইন। Student, ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি), ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 5 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ব্লকচেইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন প্লিজ