আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।
বিশ্বব্যাপী ক্রিপটোকারেন্সি ট্রেডিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বছর গুলোতে এর মোট এসেস্ট এর ভ্যালুয়েশন দাঁড়িয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলারে। এই ক্রিপটোকারেন্সি বিনিময়ে Decentralized Exchange বেশি জনপ্রিয়। এর জনপ্রিয়তার পেছনে একাধিক কারণও রয়েছে। এটি সাধারণত Decentralized Cryptocurrency Exchange (DEX) নামে পরিচিত। Bitcoin এবং Ethereum সহ অধিকাংশ কারেন্সিই ডিসেন্ট্রালাইজড কারেন্সি।
বর্তমানে অধিকাংশ ক্রিপটোকারেন্সির ট্রেডিং সেল্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জে সংগঠিত হয়। এটি এমন একটি এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থা যেখানে মধ্যস্থকারী, থার্ডপার্টি থাকে অন্যদিকে ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যবস্থায় এমন কোন পক্ষ থাকে না।
সেই দিন বেশি দূরে নয় যখন কোন ধরনের একচেটিয়া কোম্পানি ছাড়াই Decentralized Exchange এর মাধ্যমে আপনি ট্রেডিং করতে পারবেন।
Decentralized Exchange, দুটি পক্ষকে এক করতে এবং তাদের চুক্তির শর্ত পূরণে একটি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে। এর নামের মতই এটি একটি ডিজিটাল ব্লকচেইন বেসড কন্ট্রাক্ট, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তি ভেরিফাই করে এবং এক্সিকিউট করে। Decentralized Exchange ব্যবস্থায় Smart Contract এর মাধ্যমে টেম্পোরারি ট্রেডারদের ফান্ড হোল্ড করে রাখা হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যে উভয় পক্ষ চুক্তিতে রাজি আছে।
স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এ মানুষের কোন ধরনের হস্তক্ষেপ থাকে না। এর ফলে এখানে কোন ম্যালেসিয়াস এক্টিভিটি, জালিয়াতির সুযোগ থাকে না। ফলে Decentralized Exchange হবে পুরোপুরি মধ্যস্থকারী ব্যতীত।
যতক্ষণ ক্রিপটোকারেন্সি নেটওয়ার্কে Smart Contract লাইভ আছে ততক্ষণ Decentralized Exchange এ কোন ডাউনটাইম থাকবে না। সকল ডেটা পার্মানেন্টলি ব্লকচেনে রেকর্ড থাকবে, যেখানে পুরোপুরি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
চলুন এবার Centralized এবং Decentralized Exchange এর কিছু পার্থক্য দেখে নেয়া যাক।
দুইটি এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে Decentralized Exchange আপনার সম্পদের হেফাজত করবে না হোক সেটা ফিয়াট অথবা ক্রিপটোকারেন্সি। আর তাই Decentralized Exchange কে নন-কাস্টোডিয়াল এক্সচেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অধিকাংশ এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থায় ট্রেডিং এর আগে এসেস্ট ডিপোজিট করতে হয় আর এর ফলে Centralized Exchange এ ইউজাররা সিকিউরিটি ঝুঁকিতে থাকে এবং হ্যাকারের টার্গেট হয়।
ইতিমধ্যে এই ধরনের অনেক এক্সচেঞ্জ গত কয়েক বছরে ম্যাসিভ হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে। আর এই ধরনের হ্যাকিং এ ফান্ড ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
২০১৪, সালে হ্যাকের শিকার হওয়া একক বৃহত্তম এক্সচেঞ্জ ছিল মাউন্ট গক্স৷ সেই সময়, এক্সচেঞ্জটি এককভাবে বিশ্বব্যাপী বিটকয়েন বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ দখল করে ছিল। যা তাকে ক্রিপটোকারেন্সি বিশ্বে বৃহত্তম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
২০১৪ সালের মার্চ নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং জানায় হ্যাকাররা তাদের ওয়ালেটে অনুপ্রবেশ করেছে এবং ৪৬০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রিপটোকারেন্সি নিয়ে গেছে।
এরপর থেকে বিভিন্ন ভাবে টোকিও ভিত্তিক Coincheck থেকে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক Kucoin পর্যন্ত, প্রায় সকল বড় Centralized Exchange মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রিপটোকারেন্সি হারিয়েছে।
Decentralized Exchange, আপনার কারেন্সির কন্ট্রোল অন্য কারো হাতে দিতে হবে না। সুতরাং ট্রেড ফাইনাল হবার আগ পর্যন্ত আপনি নিজের প্রাইভেট ওয়ালেটে কারেন্সি জমা করতে পারবেন। তাছাড়া উল্লিখিত নিরাপত্তা সুবিধা ছাড়াও, Decentralized Exchange স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা দেয়।
যেখানে Centralized Exchange এ সকল লেনদেন বা অর্ডার প্রসেসিং নির্দিষ্ট মালিকানাধিন সফটওয়্যার ব্যবস্থায় পরিচালিত হয় সেখানে Decentralized Exchange এর সম্পূর্ণ বিপরীত। Decentralized Exchanges, একটি ওপেন সোর্স। মানে এর কোড পাবলিকলি যাচাইযোগ্য। কোন অর্ডার ম্যাচিং এ ভালনারেবল কিছু পেলে সেটা ক্রিপ্টোকমিউনিটি ডিটেক্ট করে ফেলে এবং দ্রুত ফিক্স করে ফেলে।
Coinbase এবং Kraken এর মত Centralized Exchange গুলো তাদের কোম্পানি গঠনই করেছে মুনাফার জন্য। ফিয়াট ডিপোজিট, ক্রিপটোকারেন্সি উইথড্র এবং ক্রয়/বিক্রয় অর্ডার সহ ট্রেডিং প্রক্রিয়ার প্রায় প্রতিটি ধাপে ফি চার্জ করে তারা। যদিও রেগুলার বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ছাড় পায় তবে বেশির ভাগ ট্রেডারদেরই এই চার্জ গুলো পরিশোধ করতে হয়।
অন্যদিকে Decentralized Exchange চেষ্টা করে ট্রেডিং ফি যতটা সম্ভব শূন্যের কাছাকাছি রাখার। তাদের দাবী, তারা প্ল্যাটফর্ম ফি চার্জ করে না।
যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো, Centralized Exchange এ স্থানীয় ল ও রেগুলেশন মেনে চলতে হয়। সেখানে ব্যক্তি তথ্য এবং ট্যাক্স সম্পর্কিত কাগজ পত্র জমা দিতে হয়। Know Your Customer (KYC) এবং Anti-Money Laundering (AML) আইনের জন্য এই কাগজপত্র জমা দেয়া বাধ্যতামূলক।
অন্যদিকে, Decentralized Exchange এই সকল KYC এবং AML থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। Decentralized Exchange ব্যবস্থায় যেকেউ বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক্সেস পেতে পারবে। সেন্ট্রাল কোন কর্তৃপক্ষ না থাকায় কোন দেশের সরকার কোন ট্রেডারের আইডেন্টি প্রকাশ করতে বাধ্য করতে পারবে না।
Decentralized Exchanges ট্রেডারদের মিনিমাম ফি তে ট্রেডিং এ স্বাধীনতা দিলেও কিছু ফ্যাক্টরের জন্য অনেক এর প্রতি আগ্রহী হয় না। এর কারণ অধিকাংশ Decentralized Exchange প্ল্যাটফর্মে তারল্য সংকট রয়েছে।
যেহেতু এখানে ট্রেড পিয়ার-টু-পিয়ার হয়, তাই এক্সচেঞ্জে আপনি সব সময় ভাল মূল্য নাও পেতে পারেন। তবে Centralized Exchange এ এই ধরনের কোন সমস্যা নেই।
ধীর গতির বাণিজ্য নিষ্পত্তি জন্যও Decentralized Exchange কিছু ট্রেডারের আকর্ষণীয় নাও হতে পারে। Decentralized Exchange এ লেনদেন ফাইনাল হতেও বেশ কয়েক মিনিট লাগে।
আশার কথা হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে Decentralized Exchange এর এই সমস্যা গুলো নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে অনেকটাই কমে আসছে। তাছাড়া এখনি, Decentralized Exchange প্ল্যাটফর্ম গুলো
তো আজকে এই পর্যন্তই আশা করছি এই টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। কোন মতামত থাকলে টিউমেন্ট করুন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।