মাথা রয়েছে, আর মাথা ব্যাথা থাকবে না এমনটা কি হয়? (জানি, এটা কোন ভালো উদাহরণ হলো না, কিন্তু…) ঠিক তেমনি, কম্পিউটার থাকলে কম্পিউটার প্রবলেম ও থাকবে, এমনকি আপনার ব্র্যান্ড নিউ কম্পিউটারটিতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে, আর এটা একেবারেই এলিয়েন কোন ব্যাপার নয়। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বহুদিন যাবত কম্পিউটার ব্যবহার করে আসছেন, তারা নিজেরায় এতোদিনে টুকিটাকি ফিক্স আবিস্কার করে ফেলেছেন, কিন্তু অনেকেই একেবারে নতুন কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। আর নতুন কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে, কম্পিউটারের সামান্য সমস্যাও জেনো রাত না ফুরানো স্বপ্নের মতোই, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার সার্ভিস সেন্টারই একমাত্র উপায় হয়ে দাড়ায়। কিন্তু শুনে অনেকটা আজব মনে হলেও সত্যি, অনেক টাইপের কম্পিউটার প্রবলেম কেবল কম্পিউটার রিস্টার্ট করেই ফিক্স করে ফেলা যায়। — এই আর্টিকেলে তেমনি ৪টি সাধারণ ফিক্স নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলোর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারকে ডাক্তার খানায়, মানে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার আগে নিজে নিজেই ফিক্স করার চেস্টা করতে পারেন।
আর্টিকেল শুরুর পূর্বে বলে রাখি, যদি আপনার কম্পিউটারকে নিজে ফিক্স করায় আগ্রহি হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু যদি আপনার কাছে আপনার মেশিনটি কিডনির চেয়েও বেশি দামি হয়ে থাকে, মানে নিজে থেকে কম্পিউটার ফিক্স করার যদি সম্পূর্ণ বিপক্ষে হয়ে থাকেন, তো মনে কোন চাপ নেওয়ার দরকার নেই, জাস্ট এই আর্টিকেলটি স্কিপ করে আরো আর্টিকেল রয়েছে সেগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
এই বিষয়ের উপর পূর্বে আমি একটি ডেডিকেটেড আর্টিকেল পাবলিশ করেছিলাম, “কেন শুধু কম্পিউটার রিবুট করার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব?” — অনেকের কাছে বিষয়টি হাস্যকর মনে হলেও সত্যি, অনেক কম্পিউটার সমস্যা কেবল রিবুট করার মাধ্যমেই ফিক্স করে ফেলা যায়। এরকম আমার নিজের সাথেও অনেকবার ঘটেছে, এমন এরর ম্যাসেজ বা এমন কিছু উল্টাপাল্টা ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল কম্পিউটারের সাথে যেটা অনেক আর্টিকেল পড়েও ফিক্স করতে পারছিলাম না, তারপরে কম্পিউটার রিস্টার্ট করেই দেখি সমস্যা ঠিক হয়ে গেছে। আবার অনেকের এমনটাও হয় শুনেছি, কম্পিউটার প্রবলেম করছিল, তারপরে সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে কম্পিউটার অন করে দেখে প্রবলেম বিদায়। মানে শুধু একটা রিস্টার্ট প্রয়োজনীয় ছিল আর কি!
এখন কম্পিউটার রিস্টার্ট করতে জেনো ডাইরেক্ট ওয়াল সকেট থেকে লাইন বিছিন্ন করে কম্পিউটার অফ করবেন না! — তাহলে আপনার কম্পিউটারে আলাদা হার্ডওয়্যারে সমস্যা চলে আসতে পারে। আমি রেকোমেন্ড করবো, সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে অন্তত একবার প্রপার রিস্টার্ট করে দেখুন সমস্যার সমাধান হলো কিনা। অনেক সময় কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়, তখন রিস্টার্ট করার জন্য পাওয়ার বাটনটি প্রেস করে ধরে থাকলে কতিপয় সেকেন্ডের মধ্যে পিসি ফোর্স রিস্টার্ট নিয়ে নেবে। আর হ্যাঁ, পিসি অফ করে অন করা আর রিস্টার্ট করা একই জিনিষ!
কয়েক বছর আগে কম্পিউটারে খুব কম ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা থাকলেও, আজকের দিনে সেই সংখ্যা কিন্তু মোটেও আর অল্পের ঘরে নেই। আর আপনি যদি আমার মতো হয়ে থাকেন, মানে কম্পিউটার অন করেই ব্রাউজারে ঢুকে পরে তারপরে সারাদিন সেখানেই কাটিয়ে দেন, সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট প্রবলেম আপনার কাছে ব্যাপক রুপ ধারন করতে পারে। কম্পিউটারে ইন্টারনেট রিলেটেড নানান প্রকারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি ইন্টারনেটই কানেক্ট না হয়, সেক্ষেত্রে ব্রাউজার বেচারার কোন দোষ নেই, কিন্তু যদি কোন নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট না ওপেন হয়, কোন সাইটে লগইন না করা যায়, কিংবা কোন কাঙ্ক্ষিত পেজে যদি আক্সেস না করতে পারেন, সেক্ষেত্রে ব্রাউজার বাবাজীকে একটু নাড়িয়ে দেখা প্রয়োজনীয়।
সত্যি বলতে উপরের বর্ণিত ইন্টারনেট প্রবলেম গুলো যে ব্রাউজারের জন্যই হয় এমনটা নয়, কিন্তু ব্রাউজার ক্যাশ ক্লিন করে প্রবলেম ফিক্স করার চেষ্টা সর্বদা কাজের হয়ে থাকে, এতে কিছু না কিছু উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। এখন কোন ওয়েবসাইট সার্ভারই যদি ডাউন থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারের উইন্ডোজ ৯৯ বার রিইন্সটল করলেও কাজ হবে না। কিন্তু অনে করুন, কোন ওয়েবসাইটের সার্ভার পরিবর্তন করেছে, আর আপনার ব্রাউজার ক্যাশ থেকে আগের সার্ভার আইপি থেকেই ডাটা ফেচ করার চেষ্টা করছে সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইট’টি ওপেন হবে না। যদি আপনার ব্রাউজার ক্যাশ সাথে ডিএনএস ক্যাশ পরিস্কার করে দেন, সেক্ষেত্রে ব্রাউজার ডোমেইন থেকে নতুন আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে পাবে এবং নতুন সার্ভার থেকে ডাটা ফেচ করবে, এতে সাইটি আবার আপনার কাছে আক্সেসেবল হয়ে উঠবে।
তবে, মনে রাখতে হবে ব্রাউজারের ক্যাশ, কুকিজ ডিলিট করে দিলে, আপনার ইন্টারনেট হিস্টোরি, লগইন সেশন, ইত্যাদি রিমুভ হয়ে যাবে। আর যেহেতু অনেক ওয়েব সাইট আপনার ব্রাউজারে ডাটা ক্যাশ রেখে নিজেদের ফাস্ট হিসেবে প্রমানিত করে, তাই ব্রাউজার ক্যাশ রিমুভ করার পরে অনেক ওয়েবসাইট সাময়িক একটু স্লো কাজ করতে পারে।
আমি এ বিষয়ে একেবারে হাতেনাতে প্রমানিত যে, অনেক সাধারণ ইউজারের কাছে কম্পিউটারের সামান্য কোন সমস্যা হলেই তারা মনে করেন, কম্পিউটার ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। ধরুন, কম্পিউটার স্লো কাজ করছে, অনেকেই কিছু না ভেবেই বলে দেয়, “নাহ! কম্পিউটারে নিশ্চয় ম্যালওয়্যার অ্যাটাক করেছে!” — তবে কথাটা একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়, ম্যালওয়্যার অ্যাটাক হলেও আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়, কিন্তু সর্বদা কেস কিন্তু এক নয়। যাই হোক, কম্পিউটারে কোন আজব সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমেই অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করিয়ে নেওয়া উত্তম।
যদিও কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া, মাঝে মাঝে কম্পিউটার হাং হয়ে যাওয়া, উল্টাপাল্টা এরর ম্যাসেজ শো করানো ইত্যাদি প্রবলেম গুলো আলাদা সমস্যার জন্যও হতে পারে, কিন্তু অনেক সময় ম্যালওয়্যার ঘটিত কারনেও এরকমটা হতে পারে। তাই উল্টাপাল্টা যেকোনো প্রবলেম দেখলে কম্পিউটারটি আপডেটেড অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম দ্বারা ভালোভাবে স্ক্যান করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি অ্যান্টিভাইরাস নাকি অ্যান্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করবেন, কোন ফ্রী অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো কতোটা ভালো, এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অনেক সময় অনেক প্রবলেম শুধু স্পেসিফিক সফটওয়্যারের কারণে ঘটতে পারে, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে সম্পূর্ণ কম্পিউটারের সমস্যা, হতে পারে ঐ নির্দিষ্ট সফটওয়্যারটি যখন রান হচ্ছে, সে সময় কম্পিউটার স্লো বা ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছে। আবার নির্দিষ্ট কোন প্রোগ্রাম থেকে বারবার এরর ম্যাসেজ আসতে পারে। এরকম প্রবলেমে আমি অনেকবার পড়েছি। কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করার পরে র্যাম সংক্রান্ত বা কম্পিউটার আলাদা হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত এরর ম্যাসেজ আসতে থাকে, কিন্তু যখন সফটওয়্যারটি রি-ইন্সটল করা হয় বা আপডেট করে নেওয়া হয়, তখন দেখা যায় সকল সমস্যা স্বয়ংক্রিয় ফিক্স হয়ে যায়।
প্রোগ্রাম রি-ইন্সটল করা মানে, প্রোগ্রামটি প্রথমে আন-ইন্সটল করে দিন, তারপরে আবার ইন্সটল করুন। অনেক সময় আপনার সেটআপ ফাইলটির মধ্যেই সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে ডিভিডি থেকে প্রোগ্রামটি আবার কপি করুন বা ইন্টারনেট থেকে প্রোগ্রামটির লেটেস্ট ভার্সন ডাউনলোড করুন তারপরে রি-ইন্সটল করুন। কিছুদিন আগেই আমার কম্পিউটারে হঠাৎ অ্যাডবি ফটোশপ ওপেন হচ্ছিল না, ডাবল ক্লিক করলে জাস্ট কিছুই হচ্ছিল না। আমি সিমপ্লি সফটওয়্যারটি রি-ইন্সটল করলাম আর পূর্বের মতো কাজ করার পজিশনে ফেরত চলে আসলো।
হ্যাঁ, উপরের ফিক্স গুলো অ্যাপ্লাই করার মাধ্যমে আপনার সমস্যা দূর হবেই এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই, তবে এগুলো এমন কিছু বেসিক স্টেপ যেগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজনীয়। অনেক সময় সার্ভিস সেন্টারে প্রথমে এগুলোই করে আপনার কম্পিউটার ফিক্স করার চেষ্টা করে, আর যদি এগুলোতে ফিক্স হয়ে যায়, যদিও প্রসেস গুলো ফ্রী কিন্তু যেহেতু আপনি সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গেছেন তাই আপনাকে পে করতেই হয়। এখন অবশ্যই আপনার কম্পিউটারে আলাদা প্রবলেম থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে, তবে এগুলো ট্র্যায় করার ফলে আপনি মনের দিক থেকে প্রশান্তি অনুভব করবেন, কেননা আপনি তো আপনার যথাসাধ্য চেস্টা করেছেন।
আর্টিকেল ক্রেডিটঃ TecHubs.Net
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!