যদিও আজকের কম্পিউটিং এর বিশাল এক চাহিদা পকেট কম্পিউটার ডিভাইজ তথা স্মার্টফোনই মিটিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু কম্পিউটার তো কম্পিউটারই তাই না? — আমি জানি, এই ব্লগে অনেক হার্ডকোর কম্পিউটার/ল্যাপটপ ইউজার রয়েছে, যারা দিনের বেশিরভাগ সময় কম্পিউটিং করেই কাটিয়ে দেন। অবশ্যই ল্যাপটপ একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটিং ডিভাইজ, যেটা যেকোনো হাই-এন্ড স্মার্টফোন থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী, তাই অসাধারণ এই কম্পিউটিং ডিভাইজটির লাইফ টাইম এক্সটেন্ড করতে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ টার্ম সম্পর্কে ভালো এবং পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজনীয়। আর এটা একেবারেই কমন প্রশ্ন, “ল্যাপটপে কি সর্বদা চার্জার প্লাগইন করে রাখা উচিৎ?” নাকি ব্যাটারি চার্জ ফুল হয়ে গেলে চার্জার আনপ্লাগ করে নেওয়া উচিৎ? কোনটি ল্যাপটপ ব্যাটারি জন্য বেস্ট প্র্যাকটিস? চলুন এসকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান, সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকছে, তো দেরি কীসের?
সেটা পুরাতন আমলের ইলেকট্রনিক ডিভাইজের কথা, যখন ব্যাটারি ওভার চার্জিং নিয়ে বিশেষ ভয় করা হতো। যদিও এখনো অনেকের মনেই এই ভিতি কাজ করে, কিন্তু আবারো আপনাকে নিশ্চিত করে বলে রাখছি, স্মার্টফোন হোক আর ল্যাপটপ, সকল পোর্টেবল ইলেকট্রনিক ডিভাইজ গুলোকে ব্যাটারি ওভার চার্জিং সার্কিট লাগানো থাকে, তো অবশ্যই ওভার চার্জ হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না!
আপনাকে একটি কথা মস্তিষ্কের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে হবে, লিথিয়াম আয়ন এবং লিথিয়াম পলিমার — যে টেকনোলজিরই ব্যাটারি আপনার ডিভাইজটিতে থাকুক না কেন, অবশ্যই সেটা অনেক ভালো একটি টেকনোলজি এবং ব্যাটারি ওভারচার্জিং হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। যখন ডিভাইজে চার্জার লাগানো থাকবে এবং ব্যাটারি ১০০% পর্যন্ত চার্জ হয়ে যাবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাটারি চার্জ গ্রহন করা বন্ধ করে দেবে। এরপরে ল্যাপটপ ব্যাটারির উপরই চলবে, একদিকে একটু চার্জ কমবে আরেকদিকে একটু চার্জ হবে, এভাবেই চলবে। তবে কিছু ল্যাপটপ ১০০% চার্জ হওয়ার পরে যদি চার্জার লাগানোই থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাটারি থেকে পাওয়ার না নিয়ে চার্জার থেকে পাওয়ার নিয়ে রান থাকে। আর কিছু ল্যাপটপ অন-লাইন ইউপিএস এর মতো কাজ করে।
সাথে আপনাকে অবশ্যই এই সত্যতা মেনে নিতেই হবে, আপনি যতোদামী ডিভাইজই ব্যবহার করুন না কেন, আপনার ফোনের বা ল্যাপটপ বা যেকোনো ডিভাইজের ব্যাটারি সময়ের সাথে সাথে পারফর্মেন্স ড্রপ করা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এটা হওয়া থেকে আপনি কোন ভাবেই বাঁচাতে পাড়বেন না। হয়তো সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে ব্যাটারি ডেড হওয়ার প্রসেস স্লো হয়ে যায়, কিন্তু হবেই। ল্যাপটপ ব্যাটারি অবশ্যই ধীরেধীরে ডাউন হয়ে যাবে, যদি ল্যাপটপ ব্যবহার করা কমপক্ষে ৬ মাস বা ১ বছর হয়ে থাকে, অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন, ব্যাটারি ব্যাকআপ আর আগের মতো নেই। যদিও আলাদা ল্যাপটপ, আলাদা ব্র্যান্ড, আলাদা ব্যাটারি অনুসারে ধিরে বা দ্রুত পারফর্মেন্স খারাপ হয়, কিন্তু মোটামুটি ৫০০ রিচার্জ সাইকেল এই ব্যাটারি থেকে কাম্য হতে পারে।
রিচার্জ সাইকেল বলতে ব্যাটারি ১০০% থেকে ০% এ নেমে আসা এবং আবার চার্জে লাগিয়ে দেওয়া। এভাবে ৫০০ বার পর্যন্ত ব্যাটারি ভালো থাকতে পারে। এখন নিশ্চয় চিন্তা করছেন, “তাহলে তো ব্যাটারি ডিসচার্জ করতেই দেবো না” — না, এমনটাও করা যাবে না। ব্যাটারিতে সর্বদা হাই চার্জ স্টোর করে রাখাও একদিক থেকে ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর। আবার ফুল চার্জ করা মানে ব্যাটারি অনেক উত্তপ্ত হয়ে যায়, আর অনেক ব্যাটারি সংক্রান্ত আর্টিকেলে আমি এটা পরিষ্কার করেছি, অবশ্যই ওভারহিটিং প্রবলেম ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়।
আমার মতে বেস্ট ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জিং লেভেল হচ্ছে ৮০% বা তার আশেপাশে রেখে দেওয়া, এবং অবশ্যই ল্যাপটপ গরম হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখা। ল্যাপটপ ইউজারদের আমি রেকমেন্ড করবো, বাজার থেকে একটি কুলার কিনে নিতে। আজকের ল্যাপটপ গুলো দিনে দিনে আরোবেশি স্লিম হয়ে যাচ্ছে, এতে কুলিং সিস্টেম অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাচ্ছে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ল্যাপটপ কুলার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, ল্যাপটপ ঠাণ্ডা রেখে আপনি একে তো অনেক ভালো কম্পিউটিং পারফর্মেন্স পেতে পাড়বেন এবং দ্বিতীয়ত ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধিও করতে পাড়বেন।
যদি আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি খুলে ফেলা সম্ভব হয়, অবশ্যই ল্যাপটপ হিট হয়ে গেলে ব্যাটারি খুলে ফেলে চার্জার লাগিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করুন। যদি সত্যিই ল্যাপটপ ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা থাকে অবশ্যই ব্যাটারিকে গরম পরিবেশে রাখা যাবে না। যদি ব্যাটারি না খুলতে চান, অবশ্যই একটি ভালো কুলারে টাকা ইনভেস্ট করুন, মোটামুটি ১০০০ টাকা খরচ করলে অনেক ভালোমানের কুলার পেতে পাড়বেন। যাদের গেমিং ল্যাপটপ রয়েছে, বিশেষ করে তাদের কুলার কিনতেই হবে, অথবা ল্যাপটপ গরম হয়ে গেলে ব্যাটারি মডিউল খুলে ফেলতে হবে। যদিও আজকের অনেক মডার্ন ল্যাপটপ থেকে ব্যাটারি খুলতে পাড়বেন না, তো সেখানে তো এই পদ্ধতি খাটবে না।
আসলে বিষয়টি মোটেও এতো সহজ নয় যে এক কথায় আপনাকে উত্তর দিয়ে দেবো। যেখানে উপরে বললাম, বেস্ট হবে ৮০% এর মধ্যে বা আশেপাশে চার্জ রাখা, এর মানে আপনাকে ঘনঘন ব্যাটারি চার্জ করতে হবে আর বেশি চার্জিং সাইকেল ব্যবহার করলে ব্যাটারি আয়ু এমনিতেই কমে যাবে। আবার এটাও সত্যি ১০০% চার্জ সর্বদা রেখে দিলেও ব্যাটারি আয়ু কমে যায়। মানে আপনি যেভাবেই চলুন না কেন, আপনার ব্যাটারি লাইফ খারাপ হবেই, আর এটাই সত্যতা। কিন্তু আপনি চাইলে ব্যাটারি খারাপ হওয়াকে ধির গতির বানিয়ে দিতে পারেন।
অনেক ল্যাপটপ প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা কিছুই বলে না, আপনি চার্জার লাগিয়েই রাখবেন নাকি খুলে ফেলবেন। আবার অনেকে বলে চার্জার লাগিয়ে রাখলেও কোন সমস্যা নেই। তাহলে আপনি করবেন কোনটি? আসলে এর উত্তর অনেক কনফিউজিং। তবে আমি রেকমেন্ড করবো, আপনি চাইলে চার্জার লাগিয়েই রাখতে পারেন, ব্যাট যদি কম্পিউটার অনেক গরম হয়ে যায় অবশ্যই ব্যাটারিটি সরিয়ে নেবেন। মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১ বার ১০০% থেকে ০% পর্যন্ত ব্যাটারি ডিসচার্জ করবেন। যতোটা সম্ভব ল্যাপটপ ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করবেন, কখনোই বেডে বা কোলে ল্যাপটপ রেখে ব্যবহার করবেন না। অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, যাতে পর্যাপ্ত বাতাস ল্যাপটপে সরবরাহ হতে পারে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, ল্যাপটপ ডিফল্ট কুলিং ফ্যান যেন কিছু দ্বারা কভার না হয়ে থাকে।
আমি অনেক অনলাইন রিসার্স থেকে জানতে পেড়েছি, ৮০% পর্যন্ত ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জ করা বেস্ট এর পরে বিশেষজ্ঞগনের মতে ৪০% পর্যন্ত চার্জ খরচ করতে পাড়বেন এবং আবার চার্জার লাগিয়ে নেবেন। ব্যাটারি সেলের মধ্যে যতোবেশি চার্জ একত্র করা হয় এর ভোল্টেজ লেভেল ততো বেড়ে যায় আর ব্যাটারির স্ট্রেস লেভেলও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞগনের মতে দিনে ৪ বার পর্যন্ত রিচার্জ-ডিসচার্জ করা স্বাভাবিক, এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এর অধিক ব্যবহারে, আমি রেকমেন্ড করবো অবশ্যই ব্যাটারি খুলে নিয়ে চার্জারের উপর ল্যাপটপ ব্যবহার করা, যদি আপনি হার্ডকোর কম্পিউটিং করেন সারাদিন। ১০০% ফুল চার্জে ব্যাটারি ব্যবহার করলে ৩০০-৫০০ সাইকেল পাবেন, যেখানে ৭০-৮০% চার্জে ব্যাটারি ব্যবহার করলে কমপক্ষে ১২০০-২০০০ সাইকেল পর্যন্ত পেতে পারেন।
আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি আজীবন লাস্টিং করতে চলছে না, আর এই সত্যতা আপনাকে মেনে নিতেই হবে। আপনি যেভাবেই ব্যবহার করুন, একসময় ব্যাটারি ডেড হয়ে যাবে, তবে উপরের বর্ণিত বিষয় গুলো অনুসরণ করলে ডেড প্রসেসকে স্লো করতে পাড়বেন।
কোনই সমস্যা নেই, ব্যাটারি ডেড হওয়ার পরেও আপনি ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পাড়বেন, জাস্ট চার্জার প্লাগ করুন আর ব্যবহার করুন, অনেকটা ডেক্সটপ কম্পিউটারের মতো। আবার চাইলে বেটার ব্যাটারিও কিনতে পারেন। আজকাল যেকোনো ল্যাপটপ ব্যাটারিই কিনতে পাওয়া যায়। যারা পোর্টেবল কাজ করতে পছন্দ করেন, তাদের অবশ্যই ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রয়োজনীয় হয়।
আর্টিকেল ক্রেডিটঃ TecHubs.Net
[বিনা অনুমতিতে কপি, পেস্ট, এডিট, রিমিক্স, রি-পাবলিশ, প্রিন্টিং নিষিদ্ধ!]
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
Sundor post.