আপনি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করেন তখন অন করেন আবার কাজ না থাকলে কম্পিউটার অফ করে দেন। কিন্তু যদি সবসময়ই আপনার কম্পিউটার অন করে রাখেন, সেক্ষেত্রে কি কোন সমস্যা হবে? যদি আপনি একজন গেমার হোন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনেক বড় বড় সাইজের গেম ডাউনলোড করতে হয়, হতে পারে আপনার ইন্টারনেট স্পীড তেমন ফাস্ট নয় (সর্বোপরি আমরা বাংলাদেশে বাস করি)
আর এই ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার’কে ২-৩ দিন একটানা অন করে রাখার প্রয়োজন পড়তে পারে। অনেকে তাদের কম্পিউটার অফ করতেই চান না। আবার অনেকে কাজ না থাকলেই কম্পিউটার বন্ধ করে দেন ভয়ে, “হাই রে, অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার’টা অন আছে, এই বুঝি কি নষ্ট হলো!” তো সঠিক সিদ্ধান্ত কোনটি? এই আর্টিকেল থেকে এই প্রশ্নের উত্তরটিই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবো
দেখুন, আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন, আপনি চাইলে আপনার কম্পিউটার’কে অন/অফ করেও ব্যবহার করতে পারেন আবার আপনি চাইলে ২৪/৭ অন রেখেও কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোনই সমস্যা নেই, তবে আপনাকে কিছু ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
যদি ২৪/৭ কম্পিউটার অন করে রাখতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটি ইউপিএস থাকা প্রয়োজনীয় হবে। তবে আগেই বলে নিচ্ছি, কম্পিউটার অন/অফ করে ইউজ করা বা সর্বদা অন করে রেখে ইউজ করা; উভয় ক্ষেত্রেই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমি সকল বিষয় গুলোকে কভার করার চেষ্টা করেছি, এবং আশা করছি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। এই ব্যাপারে অনলাইন রিসার্স করার সময়, অনেক বিশেষজ্ঞ’দের মতামত দেখেছি।
এক কম্পিউটার গীকের মতে, কম্পিউটার অন/অফ করে ব্যবহার করবেন, নাকি সারাদিন রাত অন করে রাখবেন, সেটা নির্ভর করে আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করার অভ্যাসের উপর। যদি আপনি সারাদিনে ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা কেবল কম্পিউটার ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই অপ্রয়োজনের সময় কম্পিউটার অফ করে দেওয়াই ভালো হবে।
আর যদি আপনি দিনে কয়েকবার কম্পিউটার ব্যবহার করেন, বা একটানা ৫-৬ ঘণ্টার উপর কম্পিউটার ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার ২৪/৭ অন করে রাখায় ভালো হবে। দেখুন, যদি টেকনিকালি কথা বলি, আর সেখানে যদি আপনার কম্পিউটার হেলথ নিয়ে কথা আসে, তো অবশ্যই সবসময় আপনার কম্পিউটার’কে অন করে রাখায় ভালো সিদ্ধান্ত। যখন আপনি দিনের মধ্যে কয়েকবার কম্পিউটার অন/অফ করবেন; অন হওয়ার সময় কম্পিউটার হীট জেনারেট করে, আর হীট সত্যিই ইলেকট্রনিক ডিভাইজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাপার।
তবে আপনার কম্পিউটারে কিছু এমন যন্ত্রাংশ রয়েছে, যেগুলো জীবন সীমা লিমিটেড। যেমন, হার্ড ড্রাইভ, এসএসডি, ডিস্ক ড্রাইভ —ইত্যাদি। যদি আপনার এলসিডি প্যানেল মনিটর‘কে ২৪/৭ অন করে রাখেন, তো সেটা কেবল ২ বছর পর্যন্তই কাজ করবে। আবার ডেস্কটপ হার্ড ড্রাইভ গুলোকে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা চলার জন্য তৈরি করা হয়।
যদি ২৪ ঘণ্টা সেটা’কে চালান সেক্ষেত্রে গড় আয়ু কমে যাবে। যদিও এন্টারপ্রাইজ ড্রাইভলাগানো থাকলে সেটা ২৪/৭ চলার জন্য প্রস্তুত। সাথে আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারির লাইফও সীমিত হয়ে থাকে। অপর’দিকে যদি আপনার বিদ্যুতের সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সবসময় কম্পিউটার অন রাখা ভালো বুদ্ধি হবে না।
পাওয়ার ফেইলর আপনার কম্পিউটারের অনেক গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। হতে পারে আপনার হার্ড ড্রাইভে ব্যাড সেক্টর তৈরি করে দেবে। তো অবশ্যই একটি ইউপিএস থাকা প্রয়োজনীয়, যেটা কারেন্ট’কে সর্বদা নিয়ন্ত্রিত রাখে, আচানক কারেন্ট চলে যাওয়া বা হাই ভোল্টেজ লো ভোল্টেজ প্রবলেম থেকে রক্ষা করবে।
প্রথমে কম্পিউটার শাটডাউন করার সুবিধা নিয়ে আলোচনা করে নেওয়া যাক। দেখুন, কম্পিউটার সর্বদা অন করে রাখা মানে কিন্তু অনেক পাওয়ার কনজিউম করা। অঝথাই আপনার অনেক বৈদ্যুতিক বিল চলে আসবে। প্রয়োজনের সময় কম্পিউটার অন আর প্রয়োজন শেষে কম্পিউটার অফ করার মাধ্যমে আপনি অনেকটা এনার্জি সেভ করতে সক্ষম হবেন।
প্রতিনিয়ত কম্পিউটার শাটডাউন করার মাধ্যমে লিমিটেড লাইফের হার্ডওয়্যার যেমন হার্ড ডিস্ক, এসএসডি, মনিটর, ডিস্ক ড্রাইভ ইত্যাদির লাইফ টাইম বাড়ানো যেতে পারে। যদিও শুধু কম্পিউটার শাটডাউন করলেই হবে না, যন্ত্রাংশ গুলোর লাইফ টাইম বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সেগুলোকে নিয়মিত মুছতে হবে এবং ধুলোবালি থেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। তাছাড়া অপ্রয়োজনের সময় আপনার কম্পিউটার’কে শাটডাউন করলে বৈদ্যুতিক সমস্যা, বাজ পড়া, লো/হাই ভোল্টেজ প্রবলেম থেকে আপনার কম্পিউটার’কে বাঁচানো সম্ভব হবে।
যদি কথা বলি অসুবিধা নিয়ে, তো প্রত্যেকবার কম্পিউটার অফ করার পরে আবার সময় ধরে কম্পিউটার অন হওয়া অনেকের জন্যই বিরক্তিকর ব্যাপার হতে পারে। আপনি ইনস্ট্যান্টলি আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন না, আপনাকে প্রথমে বিরক্তিকর অন হওয়ার প্রসেস কমপ্লিট করতে হবে। কম্পিউটার অন হওয়ার সময় অনেক হীট জেনারেট করে, ফলে প্রসেসর, র্যাম, জিপিইউ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। বারবার পাওয়ার অন/অফ আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ, অপটিক্যাল ড্রাইভ, প্রিন্টার ইত্যাদিরও ক্ষতি করতে পারে।
কম্পিউটার সবসময়ই অন রাখার আসল সুবিধা হচ্ছে, আপনার কম্পিউটার সর্বদা যেকোনো কিছু করার জন্য রেডি থাকে। জাস্ট আপনার মেশিনের সামনে বসে পড়ুন আর যা ইচ্ছা কাজ করতে আরম্ভ করে দিন। হ্যাঁ, কম্পিউটার সর্বদা অন রাখার জন্য হয়তো আপনার ইলেক্ট্রিসিটি বিল বেড়ে যাবে, কিন্তু আপনার প্রয়োজনই যদি সেই রকমের হয়ে থাকে, তো এখানে বিল কোন ব্যাপার নয়।
কম্পিউটার সবসময় অন রাখার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখনো আপনার কম্পিউটার আপনার টাস্ক গুলো পুরন করার কাজে নিয়োজিত থাকবে। আপনি ফাইল ডাউনলোড, আপলোড, ব্যাকআপ, ভিডিও এনকোডিং, গ্রাফিক্স রেন্ডারিং ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার’কে লাগিয়ে রাখতে পারবেন।
মানে আপনি বসে বা শুয়ে রেস্ট করবেন, কিন্তু আপনার কম্পিউটার আপনার হয়ে কাজ করেই যাবে। সাথে আপনার কম্পিউটার সর্বদা আপডেটেড থাকবে, সবসময়ই লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম আপডেট, এন্টিভাইরাস আপডেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কম্পিউটারে অ্যাপ্লাই হয়ে যাবে, আর আপনি অনেক বড় সিকিউরিটি রিস্ক থেকে বেঁচে যাবেন।
যদি কথা বলা হয় ২৪/৭ কম্পিউটার অন রাখার অসুবিধা নিয়ে, সেক্ষেত্রে হেভি ইউজ করার জন্য অবশ্যই আপনার ইলেক্ট্রিসিটি বিল অনেক বেড়ে যাবে। যদি আপনার সেই পরিমানের কোন কাজ না থাকে তো এতে আপনার অনেক টাকার অপচয় ঘটতে পারে।
সাথে সর্বদা কম্পিউটার অন রেখে অনেক সফটওয়্যার রান করিয়ে রেখে যদি কোন কারণে আপনার কম্পিউটার রি-বুট করার দরকার হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। সফটওয়্যার গুলোকে বন্ধ করে দেওয়া বা টাস্ক গুলোকে সাসপেন্ড করে দেওয়া সত্যিই অনেক ঝামেলার ব্যাপার হতে পারে। ম্যাক ওএস এক্স এ অ্যাডভান্স ফিচার রয়েছে, কম্পিউটার রিবুট করার পরেও সকল কাজ গুলোকে রিজিউম করা যায়।
এবার আসা যাক শেষ সিদ্ধান্তে, আপনার কম্পিউটার’কে অফ করা যাবে, এতে কোন ক্ষতি হবে না তো? —হ্যাঁ অবশ্যই আপনার কম্পিউটার’কে অফ করতে পারবেন, আগেই বলেছি যদি আপনি কম্পিউটার খুববেশি ব্যবহার না করেন, তো অফ করে রাখায় ভালো হবে। এতে অনেক হার্ডওয়্যারের লাইফ টাইম বৃদ্ধি পাবে।
যদি আপনার কম্পিউটার’কে ২৪/৭ অন করেই রাখেন সেক্ষেত্রে কি হবে? কোন ক্ষতি হবে না তো? না, কোনই ক্ষতি হবে না। তবে অবশ্যই পাওয়ারের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, সাথে কম্পিউটার কুলিং সিস্টেম ঠিকঠাক থাকতে হবে, আর আমার মতে ওয়্যারান্টি পার হয়ে যাওয়ার পরে কম্পিউটার সবসময় অন করে রাখায় ভালো হবে। তারপরও সবকিছুই নির্ভর করে আপনার চাহিদা এবং আপনার অভ্যাসের উপর। আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার জন্য যথেষ্ট সাহায্য পূর্ণ ছিল।
ক্রেডিট; TecHubs.Net
ইউটিউব; TecHubs TV
ফেসবুক; TecHubs
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!