যদি আপনি একজন ডেস্কটপ ব্যবহারকারী হোন তবে অবশ্যই আপনার একটি মনিটর থাকা প্রয়োজনীয়, অথবা আপনি নতুন কম্পিউটার কিনতে চাইলেও মনিটর নিয়ে ভাবতে হবে। বর্তমান বাজারে বিভিন্নদামের এবং বিভিন্ন প্যানেলের মনিটর দেখতে এবং কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু আপনার সঠিক কাজের জন্য আপনি কোন কম্পিউটার মনিটর প্যানেল টি পছন্দ করবেন, সেটা নিয়েই আজকের আর্টিকেল। টিএন (TN), আইপিএস (IPS), ভিএ (VA), ওলেড (OLED) এই জনপ্রিয় কিছু প্যানেল নিয়ে আজ আলোচনা করবো। তো পরবর্তী সময়ে আপনি যখন কোন কম্পিউটার মনিটর কিনতে যাবেন, অবশ্যই আপনি জানবেন, কোন মনিটর প্যানেলটি আপনার জন্য পারফেক্ট।
টিএন প্যানেল এলসিডি মনিটরের পূর্ণ নাম হচ্ছে টুইস্টেড নেম্যাটিক (Twisted Nematic)। আজকের দিনে বেশিরভাগ মনিটরে এবং বিশেষকরে সস্তা মনিটর গুলোতে টিএন প্যানেল দেখতে পাওয়া যায়। সস্তা মনিটরে থাকে বলেই এটি খারাপ হবে এমনটা কিন্তু নয়; এর বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে। কিছু কিছু কাজের জন্য এই প্যানেল প্রযুক্তিকে হাই এন্ড মনিটরেও ব্যবহার করা হয়। যেমন- গেমিং; টিএন প্যানেল মনিটর অনেক ফাস্ট হয়ে থাকে, মানে এর রেসপন্স টাইম অনেক দ্রুত হয়ে থাকে এবং প্রায়ই এই প্যানেলের মনিটরে হাই রিফ্রেস রেট পাওয়া যায়। এলইডি ব্যাকলাইটের ফিচার থাকার কারণে এই প্যানেলের মনিটর অনেকবেশি ব্রাইটনেস দিতে সক্ষম এবং অন্যান্য প্রযুক্তির মনিটরের তুলনায় এটি অনেক বেশি এনার্জি সেভ করে। আপনি যদি একজন গেমার হোন এবং আপনার যদি অনেক ফাস্ট টাইমিং এর প্রয়োজন হয়, টিএন প্যানেল মনিটর আপনার জন্য বেস্ট হতে পারে। তাছাড়া এই প্যানেল মনিটরে অনেক কম ইনপুট ল্যাগ দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ আপনার কম্পিউটার জিপিইউ কোন গ্রাফিক্স রেন্ডার করার প্রায় সাথে সাথেই বলতে পারেন অনেকটা ইনস্ট্যান্টলি এই মনিটরে প্রদর্শিত হয়ে যায়।
টিএন প্যানেল মনিটরের সবচাইতে খারাপ বিষয় হলো এর কালার রিপ্রেজেন্টেশন এবং খারাপ ভিউইং অ্যাঙ্গেল। বেশিরভাগ আইপিএস মনিটরে ৮-বিট কালার ব্যবহার করা হয় কিন্তু টিএন এ মাত্র ৬-বিট কালার ব্যবহার করা হয়। কালার বিট নিয়ে পরে একটি আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করবো, তবে জেনে রাখুন যতোবেশি কালার বিট হয় ততোবেশি কালার প্রদর্শন করার ক্ষমতা থাকে। ৬-বিট কালার নিয়ে এই প্রযুক্তির মনিটর ১৬.৭ মিলিয়ন ট্র্যু কালার দেখাতে সক্ষম হয় না। তাই আপনি যদি প্রফেশনাল ফটো এডিটিং বা ভিডিও এডিটিং এর জন্য টিএন প্যানেল মনিটর কেনেন এটা আপনার টাকার উত্তম অপচয় হবে। আপনি মনিটরে এক ধরনের কালার দেখবেন কিন্তু যখন প্রিন্ট করবেন বা মোবাইল ফোনের আইপিএস ডিসপ্লে তে সেটি প্লে করা হবে, আপনার কালার অন্যরকম হয়ে যাবে।
এবার চলুন ভিএ কম্পিউটার মনিটর প্যানেল নিয়ে আলোচনা করি, এর পূর্ণ নাম ভার্টিক্যাল আল্যাইনমেন্ট (Vertical Alignment)। এটি মুটামুটি মাঝারি প্রযুক্তির মনিটর প্যানেল। এর দাম টিএন প্যানেল থেকে একটু বেশি তবে আইপিএস থেকে খুব দামী হয়। টিএন প্যানেল থেকে এর সুবিধা হচ্ছে, ভিএ প্যানেলে আপনি আরো ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেল পাবেন এবং এর কালার প্রদর্শন করার ক্ষমতাও অনেক ভালো। বড় ভিউইং অ্যাঙ্গেল এবং বেটার কালার প্রদর্শন করার সুবিধা থাকলেও এটি আইপিএস এর মতো উন্নত নয় এবং এর রেসপন্স টাইম টিএন প্যানেলের চেয়ে খারাপ। অনেক ভিএ প্যানেল মনিটর ইউজাররা দাবি করেন, এতে অনেক বেশি ইনপুট ল্যাগ রয়েছে। তো গেমারদের জন্য এই মনিটরের তো প্রশ্নই আসে না।
তবে আপনি যদি একজন সাধরন ইউজার হোন, বেশি টাকা ইনভেস্ট না করে ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেল এবং মুটামুটি কালার রিপ্রেজেন্টেশন পেতে চান তবে টিএন প্যানেল মনিটর আপনার জন্য ভালো হতে পারে। যদিও এটা একেবারে প্রিমিয়াম নয়, তারপরেও এটি মাঝারি এক্সপেরিএন্স দিতে সক্ষম। আর আপনি যদি বাজেটের কথা ভাবেন, তবে এই প্যানেল আপনার জন্য উত্তম পছন্দ হতে পারে।
আইপিএস (ইন-প্লেন সুইচিং) মনিটর প্যানেল বর্তমান এলসিডি প্রযুক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ খোঁজ। এটি সর্বউত্তম ইমেজ কোয়ালিটি সাথে বেস্ট কালার সঠিকতা এবং বেস্ট ভিউইং অ্যাঙ্গেল দিতে সক্ষম। এই প্যানেলের মনিটর বিশেষ করে গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং সেসকল কাজের জন্য উত্তম যেখানে বেস্ট কালার প্রদর্শন করার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমান এলসিডি মনিটর প্যানেল প্রযুক্তিতে আইপিএস সর্বশ্রেষ্ঠ ভিউইং অ্যাঙ্গেল প্রদান করে এবং সর্বাধিক ওয়াইড অ্যাঙ্গেল প্রদান করে যা সর্বউচ্চ ১৭৮ ডিগ্রি পর্যন্ত।
এই প্যানেলের এতো অসাধারণ ভিউইং অ্যাঙ্গেল থাকার জন্য এটিকে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, এবং স্মার্টফোনে সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়—কেনোনা বেশিরভাগ সময়ই আমরা ফোনের স্ক্রীনের দিকে সরাসরি বা মাঝখান থেকে দৃষ্টিপাত করি না। অত্যন্তবেশি সুবিধা এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটি হওয়ার জন্য এই প্যানেলের মনিটরের দাম ভিএ প্যানেল বা টিএন প্যানেল থেকে বেশি হয়ে থাকে। তবে প্রচন্ড জনপ্রিয়তা থাকার কারণে, অনেক সময় অনেক প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা বাজেটের মধ্যেও আইপিএস প্যানেল মনিটর তৈরি করে।
তবে টিএন প্যানেল বা ভিএ প্যানেল থেকে আইপিএস প্যানেল মনিটরের রেসপন্স টাইম অনেকটা স্ল্যো। এর রেসপস টাইম রেঞ্জ ৬ মিলিসেকেন্ড থেকে ১৬ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত; যেখানে টিএন প্যানেল মনিটরের রেসপন্স টাইম মাত্র ২ মিলিসেকেন্ড থেকে ৫ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত। সুতরাং বেশিরভাগ হাই এন্ড গেমার এই রেসপন্স টাইমের সাথে খুব ভালো ফল পাবেন না, হতে পারে হাই স্পীড গেম গুলো দেখতে হালকা ঘোলা মনে হতে পারে, যদিও অনেকে এটাকে কোন সমস্যাই মনে করেন না। তবে বর্তমানে কিছু হাই এন্ড আইপিএস মনিটরে রিফ্রেস রেট এবং রেপন্স টাইমে অনেক উন্নতি আনা হয়েছে। হতে পারে খুব শিগ্রি এই প্যানেলের মনিটর টিএন প্যানেলকে টেক্কা দিয়ে উপরে উঠে আসবে, সাথে অসাধারণ সব ফিচার তো থাকবেই।
অসুবিধা বলতে একটিই আর সেটা “দাম”। যেহেতু এটি একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির মনিটর তাই দামের দিক থেকে আপনাকে অনেক বেশি টাকা গুনতে হতে পারে যেখানে টিএন প্যানেল অসম্ভব সস্তা দাম অফার করে। যেহেতু আইপিএস অনেক ভালো কালার রিপ্রেজেন্ট করে তাই প্রফেশনাল কাজের জন্য এটি ব্যতিত আর কোন প্যানেল কল্পনা করা যায় না, বিশেষ করে এর নিজের গ্রেডের প্যানেল।
আইপিএস মনিটরেরও আবার কিছু টাইপ রয়েছে, যেমন- পিএলএস আইপিএস বা এএইচভিএ আইপিএস। এগুলোর এতো বিশেষ কোন মর্ম নেই যা নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো, এগুলো মুটামুটি আইপিএস এর মতোই কাজ করে তবে কিছু উন্নতি আনা হয়েছে। যেমন- পিএলএস আইপিএস মনিটরে সাধারন আইপিএস থেকে আরো ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেল আনা হয়েছে।
সর্বশেষ আলোচনা করবো ওলেড কম্পিউটার মনিটর প্যানেল নিয়ে; যার পূর্ণ নাম অর্গ্যানিক এলইডি (Organic LED)। আজকের দিনের খুব বেশি মনিটরে এই প্যানেল ব্যবহার করতে দেখা যায় না, তবে আজকের অনেক টিভি গুলোতে এই প্যানেল ব্যবহার করে সুবিধা দেওয়া হয়। এলসিডি প্যানেল গুলোর মতো ওলেড প্যানেলে ব্যাক লাইট ব্যবহার করা হয় না। এলসিডি মনিটরে কোন ছোট্ট বস্তুর ছবি প্রদর্শন করার জন্যও সম্পূর্ণ স্ক্রীনের ব্যাক লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয় কিন্তু এই প্যানেলের প্রত্যেকটি পিক্সেলকেই এক একটি লাইট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ধরুন স্ক্রীনের মাঝখানে একটি লাল রঙ বলের ছবি আসলো তবে শুধু ঐ জায়গার পিক্সেল গুলোই জ্বলমান থাকবে ঐ পিকচারটিকে দেখানো জন্য। কালো কালার দেখানোর জন্য ঐ পিক্সেল গুলো একেবারে বন্ধই হয়ে থাকে, ফলে সবচাইতে বেটার কালো কালার পাওয়া সম্ভব। আইপিএস বা যেকোনো এলসিডি মনিটরে কালো কালার দেখানোর সময় পিক্সেল কালো হয়ে যায় কিন্তু ব্যাক লাইট তখনও জ্বলার কারণে কমপ্লিট ব্ল্যাক কালার পাওয়া যায় না। এলইডিতে যেহেতু কোন ব্যাক লাইট জ্বলে না এবং কালো কালার দেখাতে পিক্সেল গুলো অফ হয়ে যায় তাই বেটার কালো কালার রিপ্রেজেন্ট করা সম্ভব হয়। মুভি দেখার জন্য এই প্যানেল মনিটর সবচাইতে উত্তম কোয়ালিটি দিতে পারে, ফলে বেশিরভাগ টিভিতে এই প্যানেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে আমি আমার আইপিএস মনিটরটিতে দেখেছি, ডিসপ্লে জুড়ে সম্পূর্ণ কালো দৃশ্য আসলে মনিটরটি একেবারে বন্ধ হয়ে যায় ফলে বেটার কালো কালার প্রদর্শিত হয়, আবার রঙের দৃশ্য আসা মাত্রই মনিটরটি অন হয়ে যায়। এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে আইপিএস প্যানেল মনিটর গুলোতেও বেটার ব্ল্যাক কালার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা শুধু তখনই হয়, যখন সম্পূর্ণ স্ক্রীনে কাল দৃশ্য আসে।
ওলেড মনিটর প্যানেলের ভিউইং অ্যাঙ্গেল অসাধারণ এবং এটি অসাধারণ সুন্দর কালার রিপ্রেজেন্ট করতে পারে। যদিও এটি কতটা ভালো কালার প্রদর্শিত করবে তা নির্ভর করে আপনার মনিটরটি ঠিক কোন কোন প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তবে যেকোনো ওলেড মনিটর অসাধারণ কালার প্রদর্শিত করতে পারে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
তো আপনার জন্য কোন কম্পিউটার মনিটর প্যানেলটি বেস্ট এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার ব্যবহারের উপর। যদি আপনি সিরিয়াস গেমার হয়ে থাকেন এবং আপনার গেমিং এ বেস্ট পারফর্মেন্স পেতে চান তবে টিএন প্যানেলের মতো পারফর্মেন্স এই মুহুর্তে অন্য কোন প্যানেল দিতে পারবে না; একে তো এই অসম্ভব সস্তা আর দ্বিতীয়ত এতে হাই রিফ্রেস রেট রয়েছে। আপনি যদি প্রফেশনাল কাজের জন্য আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করেন, যেমন- ফটো অথবা ভিডিও এডিটিং তবে আইপিএস প্যানেল আপনার জন্য উত্তম হবে। তাছাড়া আজকের বাজারে আইপিএস মনিটরের অনেক কদর রয়েছে, বাজারে মাত্র কয়েক মিনিটেই আপনি অনেক মনিটর অপশন পেয়ে যেতে পারেন। সাধারন কাজ যেমন মুভি দেখা, ফটো ব্রাউজ করা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা; আপনি যদি কোন প্রফেশনাল কাজ বা গেমিং না করেন তবে ভিএ প্যানেল মনিটর কিনতে পারে। এতে আপনার আইপিএস এর মতো খরচ হয়ে না কিন্তু ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেল সাথে মুটামুটি ভালো কালার প্রদর্শন উপভোগ করতে পারবেন। আর টিভির জন্য অবশ্যই ওলেড প্যানেল আপনার বেস্ট পছন্দ হতে পারে।
এই ছিল মুটামুটি আজকের আর্টিকেলে, আশা করছি এই তথ্য গুলো কাজে লাগিয়ে আপনি সহজেই আপনার জন্য বেস্ট কম্পিউটার মনিটর প্যানেল পছন্দ করতে পারবেন। তো আপনি কোন প্যানেলের মনিটর বর্তমানে ব্যবহার করছেন? আর নতুন মনিটর কিনতে চাইলে কোন প্যানেল কেনার সিদ্ধান্ত নিলেন, আমাদের সবকিছু নিচে টিউমেন্ট করে জানান।
Credit- TecHubs.Net
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
টিউনটি অবশ্যই শেয়ার করুন, কোন প্রশ্নে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান!
উপযুক্ত মনে হলে টিউনটিকে নির্বাচিতটিউন মনোনয়ন করুন 🙂
ধন্যবাদ 🙂