আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইউজার এটা কেয়ারই করে না, তাদের কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে। আমরা বাজার থেকে নতুন কম্পিউটার কিনে আনি; ওএস ইন্সটল করি আর ব্যবহার করতে আরম্ভ করি। অপারেটিং সিস্টেমকে একটি বিল্ডিং তৈরি ঠিকাদারের সাথে তুলনা করুন; যেখানে অন্যান্য সফটওয়্যার গুলো তাদের নির্দিষ্ট কাজ করতে ব্যস্ত থাকে (শ্রমিকেরা নল ঠিক করা, ইট ভাঙ্গা, ইলেক্ট্রিক্যাল তার জোড়া দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে); আপনার কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম তখন তাদের সকলের উপর নজরদারি করে এবং কার কোন কাজ করতে কতোটুকু প্রসেসিং পাওয়ার প্রয়োজনীয় সেগুলো বন্টন করে দেয়। কিন্তু আপনার কম্পিউটার তো নিজেই অনেক শক্তিশালি মেশিন এবং ভার্চুয়ালি প্রায় সকল কাজ করার ক্ষমতা রাখে; তাহলে এতে ওএস এর প্রয়োজন কতটুকু? অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কি আপনার কম্পিউটার চালানো সম্ভব? চলুন বিষয়টি বিশদভাবে খতিয়ে দেখা যাক…
মনে মনে ১৯৭০ সালের দিকে ফেরত যান, যখন কেবল কম্পিউটার প্রোগ্রাম উদ্ভবিত হয়েছিলো। সে সময় কোন নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য কেবল ঐ কাজের জন্য কম্পিউটারকে প্রোগ্রাম করার প্রয়োজন পড়তো। ধরুন আপনার কম্পিউটার দিয়ে ওয়ার্ড প্রসেসিং এর কাজ করতে চাচ্ছেন আপনি নতুন কোন একটি বই লিখবেন তাই। তাহলে আপনার কম্পিউটারকে ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রামের জন্য প্রোগ্রাম করতে হতো। আবার ধরুন আপনি ১ মাস পরে কম্পিউটারের সাথে দাবা খেলতে চান—তাহলে আপনার মেশিনকে আবার দাবা খেলার জন্য রি-প্রোগ্রাম করতে হবে। আবার আপনার মেশিনে ফটো সংরক্ষন এবং ভিউ করতে চাইলে তার জন্য আলাদা প্রোগ্রাম করতে হবে। প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম দিয়ে আপনি নতুন নতুন কাজ করতে পারবেন কিন্তু এগুলো প্রত্যেকে আবার অনেক একই কাজ বারবার করে। যেমন আপনার প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম আলাদা হলেও এগুলোর প্রত্যেকের কিন্তু আপনি কীবোর্ডে কোন “কী” প্রেস করছেন তা রীড করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, মেমোরিতে ডাটা স্টোর করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, ডাটা গুলোকে উদ্ধার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এবং প্রোগ্রামটি কীভাবে কাজ করছে তা ডিসপ্লেতে দেখানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তো আপনি যখনই কোন নতুন প্রোগ্রাম লিখবেন, বারবার আপনাকে এই একই প্রসেস গুলো যুক্ত করতে হবে। তো কেমন হয়, যদি এই বেসিক ফাংশন গুলো দিয়ে আলাদা প্রোগ্রাম তৈরি করা হয় এবং সকল প্রোগ্রামকে ঐ প্রোগ্রামের উপরে চালানো হয়, একে একই ফিচার বারবার সব প্রোগ্রামে যুক্ত করার প্রয়োজন হবে না।
এই বেসিক আইডিয়া নিয়েই অপারেটিং সিস্টেমের যাত্রা শুরু হয়; এটি আপনার কম্পিউটারের একটি কোর সফটওয়্যার যেটি কম্পিউটারের ইনপুট, আউটপুট, স্টোরেজ, প্রসেসিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। অপারেটিং সিস্টেম কে আপনি অন্যান্য সফটওয়্যার (অ্যাপ্লিকেশন) গুলোর বস মনে করতে পারেন, যেখানে সবাই বসের আন্ডারে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং বস সকলের কাজের উপর নজর রাখে। অপারেটিং সিস্টেম আবার আরেক বসের উপর নির্ভরশীল আর একে বাইওস (BIOS) (বেসিক ইনপুট আউটপুট সিস্টেম) বলা হয়, যেটা অপারেটিং সিস্টেমকে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সাথে সম্পর্ক যুক্ত করতে সাহায্য করে, ঠিক যেমনটা কার্নেল করে থাকে। কার্নেল প্রত্যেকটা অপারেটিং সিস্টেমের সাথেই থাকে, কিন্তু বাইওস কোন সফটওয়্যার নয়, এটি মূলত কম্পিউটার হার্ডওয়্যার চিপের সাথে থাকে, যাকে ফার্মওয়্যার বলা হয়। সকল কম্পিউটারে একই অপারেটিং সিস্টেম এবং কার্নেল কাজ করতে পারলেও বাইওস কিন্তু কম্পিউটার হার্ডওয়্যার মডেল, প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইত্যাদি অনুসারে আলাদা হয়ে থাকে।
আপনার কম্পিউটার মেশিনে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া আপনার কম্পিউটার কীসের মতো কাজ করবে, কীভাবে কাজ করবে? কাজ করা কি সম্ভব? যদি কোন কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম সকল কাজ নিয়ন্ত্রিত করে থাকে, অবশ্যই করে, তাহলে অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কোন কম্পিউটার চলা অসম্ভব, তাই না?
কিন্তু আগের কম্পিউটার গুলোর দিকে দেখা হয়, সেগুলতে কোন অপারেটিং সিস্টেম ছিল না। তখনকার মেশিন গুলোর আঁকার দৈত্যাকার হলেও এতে এক সময়ে মাত্র একটিই প্রোগ্রাম চালানো যেতো। ধরুন আপনি কোন বিশেষ একটি বা দুইটি কাজ করার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করছেন, তাহলে সত্যিই আপনার কোন অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন পড়বে না। ধরুন আপনি শুধু ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারে কাজ করতে চান, তাহলে সরাসরি আপনার কম্পিউটারে টার্গেট করে এই সফটওয়্যারটি প্রোগ্রাম করতে হবে এবং আপনার অপারেটিং সিস্টেম লাগবে না। অন্যান্য সফটওয়্যার গুলো কম্পিউটারকে টার্গেট না করে অপারেটিং সিস্টেম এবং কার্নেলকে টার্গেট করে বানানো হয়।
ওএস ছাড়া কম্পিউটার চালানো তো যাবে, কিন্তু আপনাকে একসাথে বহু কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। প্রথমে আপনার কম্পিউটার সরাসরি বুঝতে পারে এমন প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সফটওয়্যারকে প্রোগ্রাম করতে হবে। ধরুন আপনি একটি ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার তৈরি করলেন, তবে কম্পিউটারকে বলে দিতে হবে আপনি কোন “কী” প্রেস করলে কোন অক্ষরটি টাইপ হবে, আপনাকে আরো বলে দিতে হবে অক্ষরটি দেখতে কেমন হবে এবং কীভাবে আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে। একটি ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে, আপনাকে সেগুলো ম্যানুয়ালি করার প্রয়োজন পড়বে। আবার আপনি কম্পিউটার অফ করতে চাইলে বা কোন হার্ডওয়্যার ডিস্কানেক্ট করতে চাইলে সেটা ফিজিক্যালি ডিস্কানেক্ট করতে হবে।
আবার সেই বিল্ডিং এর ঠিকাদারের উদাহরণে ফেরত যাওয়া যাক; আমরা যদি একটি বাড়ি বিল্ড করতে চাই সেখানে অনেক ফিচার থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যেমন পানির নল, ইলেক্ট্রিসিটি, জানালা তৈরি ইত্যাদি। তেমনি কম্পিউটারে কোন প্রোগ্রাম রান করাতে অনেক ফিচার অ্যাক্সেস করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কোন সফটওয়্যার ডকুমেন্ট তৈরি করে, কোনটির ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজনীয় হয় আবার কোনটির ডাটা স্টোর করার জন্য হার্ডড্রাইভ অ্যাক্সেস করার দরকার পড়ে। অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কম্পিউটার মানে মিস্ত্রি আর ঠিকাদার ছাড়া বিল্ডিং তৈরি; যেখানে কম্পিউটার জানে না কোন সফটওয়্যার কীভাবে কাজ করবে আর কার কোন ফিচার অ্যাক্সেস করা প্রয়োজনীয়। আপনাকে সবকিছু ম্যানুয়ালি প্রোগ্রাম করতে হবে এবং কম্পিউটারকে বোঝতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া আপনার কম্পিউটারে একটি সময়ে মাত্র একটিই কাজ করা সম্ভব হবে। বর্তমানেও কম্পিউটার একটি সময়ে একটিই প্রসেস সম্পূর্ণ করে কিন্তু ওএস এই প্রসেসকে এতোদ্রুত সম্পূর্ণ করে যে, আপনি ম্যাল্টি ট্যাস্কিং করার সময় বুঝতেই পারেন না, কম্পিউটার একটি একটি করে কাজ করছে। তো এতক্ষণে নিশ্চয় পরিষ্কারভাবে বুঝে গেছেন, অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কোন কম্পিউটারের কেমন হাল হতে পারে।
আপনি কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন? কেন আপনার অপারেটিং সিস্টেমকে আপনি এতো পছন্দ করেন? আমাদের নিচে টিউমেন্ট করে সবকিছু জানিয়ে দিন।
সম্পূর্ণ ক্রেডিট — TecHubs.Net
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
টিউনটি পড়ে কিছু শিখতে পারলে এবং আপনার কাছে উপযুক্ত মনে হলে অবশ্যই নির্বাচিতটিউন হিসেবে মনোনয়ন করুন।
এরকম আরো টিউন পড়তে চাইলে আমার ব্লগ ভিসিট করতে পারেন, সেখানে আমি নিয়মিত টিউন আপডেট করি।
ধন্যবাদ 🙂