সময়ের সাথে প্রযুক্তি দিন দিন এগিয়ে চলেছে। সেই সাথে প্রসেসরের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩২ বিট থেকে ৬৪ বিটের পিসির ব্যবহার বাড়ছে।
প্রথমেই একটা ছোট্ট একটা প্রশ্ন করি?
মনে করুন, একটি কাজ করতে ৩২ জন লোকের ২ দিন সময় লাগে। তাহলে ৬৪ জন লোকের কত দিন লাগবে?
৩২ বিটের নাম কেন x86 আর ৬৪বিট কেন x64?
1979 এর প্রথম সফলতম প্রসেসর ইন্টেল 8086,80286,80386 (১৬বিট) আর্কিটেকচার এর উপর ভিত্তি করেই ৩২ বিট কে x86 ডাকা হয়। বর্তমানের কোর i7-5960X ৩২ বিটের হলেও আর্কিটেকচার সেই মান্ধাতার 8086’র।
৬৪বিটের ধারনা প্রথম শুরু হয় ১৯৬৪ সালের IBM 7030 Stretch supercomputer থেকে। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে ব্যক্তিগত বা হোম ইউজের জন্য ৬৪বিটের প্রচলন হয়। আর Intel 64 / AMD64 অনুসারে ৬৪ বিট ডাকা হয়।
কে কতটুকু মেমোরি এলোক্যাশোন করে ?
মেমোরি | ৬৪ বিট উইন্ডোজ | ৩২ বিট উইন্ডোজ |
ভার্চুয়াল মেমোরি | ১৬ টেরাবাইট | ৪ গিগাবাইট |
পেজ ফাইল | ২৫৬ টেরাবাইট | ১৬ টেরাবাইট |
হাইপারস্পেস | ৮ গিগাবাইট | ৪ মেগাবাইট |
পেজ পুল | ১২৮ গিগাবাইট | ৪৭০ মেগাবাইট |
নন-পেজ পুল | ১২৮ গিগাবাইট | ২৫৬ মেগাবাইট |
সিস্টেম ক্যাশ | ১ টেরাবাইট | ১ গিগাবাইট |
সিস্টেম PTE | ১২৮ গিগাবাইট | ৬৬০ মেগাবাইট |
ফাইল কম্প্রেস করার জন্য উইনরার এর ফলাফলঃ
এবার বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, ৬৪ বিট কেন এতো শক্তিশালি ?
সফটওয়্যার লিমিটেশন
৩২ বিটের পিসিতে আপনি সর্বোচ্চ ৪ গিগাবাইট র্যাম ব্যবহার করতে পারবেন। এর চেয়েও বেশি লাগাতে পারবেন কিন্তু ৪ গি.বা. এর ব্যবহার হবে বাকিটুকু শুধু শুধু পড়ে থাকবে। কারন ৩২ বিটের প্রসেসর ৪ গি.বা. র্যামের বেশি ব্যবহার করতে পারে না।
প্যারালিজম প্রসেসের জন্য ৩২বিটের একটি পিসিতে আপনি একাধিক ব্রাউজারে ৩৫ টি ট্যাব ওপেন করতে পারবেন বা হাই রেজুলেশনের ৩০ টি ছবি এডিট করার জন্য ওপেন করতে পারবেন একই সাথে। ৪ গি.বা . র্যাম ইন্সটল করলে আপনি সর্বোচ্চ ৩.২ গি.বা. র্যাম ব্যবহার করতে পারবেন।
কিন্তু ৬৪ বিটের (যেমন-উইন্ডোজ ৮) পিসির ক্ষেত্রে আপনার জন্য সর্বনিম্ন ৪গি.বা. র্যাম ও সর্বোচ্চ ৮ টেরাবাইট র্যাম ও সার্ভারের ক্ষেত্রে ১২৮ টেরাবাইট র্যাম ব্যবহার করতে পারেন।
৬৪বিটের পিসিতে ২টি কমন ইন্সটলেশন ফোল্ডার থাকে Program Files (x86) ৩২বিট Program Files তে ৬৪ বিটের সফটওয়্যার ইন্সটল হয়।
উইন্ডোজ এক্স-পি থেকে ৬৪বিটের উইন্ডোজ বাজারে ছেড়েছে মাইক্রোসফট। এখন উইন্ডোজ সকল ৩২বিটের পাশাপাশি ৬৪ বিট ভার্সন পাবেন। XP’র আগের উইন্ডোজ গুলোর সবই ৩২ বিটের ছিলো। ৬৪বিটের উইন্ডজের আসল সুবিধা হলো মাইক্রোসফটের ডিজিটাল সাইন ছাড়া এটি সঠিকভাবে কাজ করে না, এর মানে হলো পর্যাপ্ত র্যাম থাকলে সফটওয়্যার ক্রাশ করবে না। এতে কিছুটা হলেও নিরাপত্তাবোধ করা যায়। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া Karnel Patch Protection (KPP) নামে একটি বিশেষ কার্নেল প্যাচ গার্ড ফিচার পাবেন ৬৪বিটের উইন্ডোজে।
ড্রাইভার সফটওয়্যার এর ক্ষেত্রেও ৬৪বিটের জন্য ৬৪বিটের ড্রাইভার ইন্সটল করতে হবে, অন্যথায় হার্ডওয়ার কাজ নাও করতে পারে।
ইন্টারনাল সিস্টেম (৩২/৬৪) কানেকশন
একটি কম্পিউটারের মুলত তিনটি অংশ একে অপরের সাথে কানেক্টেড হয়ে কাজ করে। প্রসেসর(হার্ডওয়ার), অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার। সংযুক্ত হার্ডওয়ার সামগ্রী (প্রসেসর, র্যাম, হার্ডডিক্স...) পরিচালনা ও আমরা কাজের জন্য যে সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করি এর মাঝে মেলবন্ধন বা যোগাযোগ করার মুল কাজটি সম্পাদন করে থাকে অপারেটিং সিস্টেম।
সুতরাং ৬৪ বিটের সফটওয়্যার রান করাতে ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেম ও ৬৪ বিটের প্রসেসর লাগবে। আর ৩২ বিটের সফটওয়্যার অনায়াসেই ৬৪ বিটের পিসিতে রান করে। ৬৪ বিটের পিসিতে ১৬ বিটের প্রোগ্রাম রান করবে না।
কিভাবে বুঝবেন আপনার বর্তমান পিসি ৩২ নাকি ৬৪ বিটের?
স্টার্ট > কম্পিউটার > প্রোপারটিজ এ যান, এখানে সিস্টেম টাইপে দেখতে পাবেন আপনার পিসি কত বিটের। x86=32bit, x64=64bit।
অথবা রান মেনু থেকে cmd লিখে কমান্ড প্রম্পট চালু করুন systeminfo লিখে এন্টার দিন।
নতুন কিনবেন ? আপনি কোনটি নিবেন, ৩২বিট নাকি ৬৪ বিট?
আপনি ৩২বিট ব্যবহার করবেন নাকি ৬৪বিট ব্যবহার করবেন এটা নির্ভর করছে আপনার কাজের ধরনের উপরে। আপনি যদি সাধারন ব্যবহারকারী হোন মানে ছোটখাটো কাজ করেন তাহলে ৩২ বিট পিসি-ই আপনার জন্য যথেষ্ট। আর যদি গেমার হোন তাহলে ৬৪বিট পিসির কোন বিকল্প নেই। এছাড়া যদি 3D রেন্ডারিং এর কাজ করেন, VFX ডিজাইন বা WQHD, qHD, 4K/UDH ভিডিও ভালভাবে উপভোগ করতে চান তাহলে ৬৪বিটের পিসির কোন বিকল্প হয় না।
এডোবির গ্রাফিক্সের সফটওয়্যার গুলো, CAD এছাড়াও অনেক সফটওয়ার আছে যেগুলো রান করাতে ৪ গি.বা. এর উপরে র্যাম লাগে সেগুলোর জন্য ৬৪বিটের পিসি প্রয়োজন হবে। ডাটাবেজের ইন্ডেক্স ক্রিয়েশন অপারেশনের ভালো ফলাফল পেতে ৬৪বিটের বিকল্প নেই। আর এখন তো অনেক স্মার্টফোনও ৬৪ বিটের পাওয়া যায়।
এছাড়া মাল্টিটাস্কিং এর জন্য ৬৪ বিট পিসি সবচেয়ে ভালো। অর্থাৎ একই সময়ে একাধিক সফটওয়্যার রান করতে ও একে অপরের সাথে সুইচিং পারবেন অনায়াসেই।
সুতরাং আপনার যদি ৬৪ বিটের প্রসেসর থেকে থাকে অর্থাৎ Intel Core 2 Duo বা এরচেয়ে হাই হয় তাহলে আর সময় নষ্ট না করে এক্ষুনি ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করুন। আরো নিশ্চিত হতে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে Performance Information and Tools থেকে আপনার প্রসেসরের বিট দেখে নিতে পারেন।
আর নতুন কিনতে চাইলে অবশ্যই ৬৪ বিটের পিসি কিনবেন, কারন দামের তেমন কোন পার্থক্য নেই।
Update: ৬৪বিটের পিসিতে ৩২বিটের সফটওয়ার রান না করলে কি করবেন?
৬৪বিটের পিসিতে ৩২বিটের সফটওয়ার নরমালি ইন্সটল ও রান হয়। কখনো যদি সমস্যা হয় বা ইন্সটল না হয় তাহলে সফটওয়ারের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে আপনার ৬৪বিট পিসির জন্য ৬৪বিটের ভার্সন খুজে নিন। আর ৬৪ বিটের কোন সফটওয়ার না পেলে নিচের ছবির মত করে সেটিং করুন ও ইন্সটল করুন আরামছে...
নোটঃ
প্রথম প্রশ্নের উত্তর - ১দিন লাগবে।
উপরে দেয়া সকল তথ্যই উইন্ডোজ ভিত্তিক, অপারেটিং সিস্টেম ভেদে পার্থক্য হতে পারে।
এখানে দেখুন মাইক্রোসফট এর ৩২বিট/৬৪বিট উইন্ডোজ এর পার্থক্য।
আজ এ পর্যন্তই- ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
সৌজন্য - MyHome
আমি জনি আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 25 টি টিউন ও 301 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
valo hoice