সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফরমেট তথা পিডিএফ ফাইল এডিটিং কিংবা পড়ার জন্য বিশ্বসেরা ৬টি টুলসের সমন্বয়ে আমার আজকের টিউন।
পিডিএফ ফাইল সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয় ভালোই অবগত আছেন। ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রায় সবার এই ফরমেটটির সাথে পরিচিতি থাকা বাধ্যতামূলক। কারন পিডিএফ হলো ডকুমেন্ট জগতের একটি গোল্ডেন ফরমেট। ফাইলের কন্টেন্ট অক্ষুন্ন রেখে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বহন করার জন্য পিডিএফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ধারনা একটি পিডিএফ ফাইল তৈরী করার পরে সেটাকে আর এডিট করা যায় না। এক্ষেত্রে অনেক মানুষকে দেখেছি যারা কোন ওয়ার্ড ফাইল থেকে পিডিএফ করতে গেলে যদি সেখানে কোন ভুল দেখা যেতো তাহলে ওয়ার্ড ফাইলকে পরিবর্তন করে সেটাকে আবার পিডিএফ করতো। অজ্ঞতার কারনে এভাবে সময়ের অপচয় যে আপনারা অনেকেই করেন এ ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। কারন আমি নিজেও এই কাজটিই আগে করতাম। বর্তমানে পিডিএফ ফাইল পড়া, এডিট কিংবা মার্জ করার জন্য সহস্রাধিক সফটওয়্যার বাজারে থাকলেও সেখান থেকে বেছে আমি ৬টি সফটওয়্যার আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। যেগুলো থাকলে সারা জীবনে পিডিএফ ফাইলের যেকোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন কিংবা সাধারনভাবে পড়ার জন্য আপনাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে না। যাহোক, টিউনের পরবর্তি অংশে যাবার আগে চলুন পিডিএফ ফাইল ফরমেট সম্পর্কে কিছু জানি, নাহলে নতুন যারা আছেন তারা হয়তো সারা রাত গীতা পাঠ করে সকালে বলবে সীতা কার বাপ?
PDF মানে হলো Portable Document Format. যেসব ডকুমেন্ট কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া এবং ফাইলের পরিবর্তন ব্যতিরেকে এক পিসি থেকে অন্য পিসিতে স্থানান্তরিত করা যায় সেগুলোই পিডিএফ (অবশ্যই ফরমেট হিসাবে .pdf থাকবে)। সাধারনত পিসিতে ওয়ার্ড ফাইলের ভার্সন এবং ফন্টে সমস্যার কারনে সেগুলো পরিবর্তন ছাড়া স্থানান্তরিত করা কষ্টসাধ্য। একারনে পিডিএফ ফাইল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে উক্ত ফাইলটি পড়তে কিংবা প্রিন্ট করতে সুবিধা হয়।
শুধুমাত্র কোন ডকুমেন্টই না, যেকোন ছবিকেও আপনি পিডিএফ ফাইলে রূপান্তরিত করতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ইবুক তৈরীতে পিডিএফ ফাইলের কোন বিকল্প নেই। অধ্যায় ভিত্তিক হাইপারলিংক, সহজ এবং পাঠযোগ্য হওয়াতে বর্তমানে পিডিএফ ফরমেট ডকুমেন্ট জগতে সব চেয়ে জনপ্রিয়। এবার আসুন তাহলে এই পিডিএফ ফাইল সম্পর্কিত কিছু সফটওয়্যার এবং তাদের কাজ জেনে নিই।
আপনি কি শুধুমাত্র পিডিএফ ফাইল যেমন ইবুক বা অন্য কোন ডকুমেন্ট শুধুই পড়তে বা কম্পিউটারে দেখতে চান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আপনার জন্য এডোবি রিডার হলো সর্বশ্রেষ্ট সফটওয়্যার। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং এতে রয়েছে পিডিএফ পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ফিচার যেমন- টেক্সট হাইলাইটিং, স্টিকি নোটস, কিংবা উচ্চারণ পড়ে শোনানোর সুবিধা। পিডিএফ পড়ার জন্য সফটওয়্যারটিতে পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলেও এর চেয়ে বেশি কিছু চাইলে আপনাকে এর বিকল্প ভাবতে হবে।
ফ্রিতে এডোবি রিডারের লেটেস্ট ভার্সনটি ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন, সাইজ মাত্র ৪৮ মেগাবাইট। যদি কম্পিউটারে এতো বড় ফাইল চালাতে না চান তাহলে আপনার জন্য পিডিএফ ফাইলকে আরও সুন্দর ভাবে পড়ার জন্য রয়েছে সুমাত্রা রিডার। আমার ব্যক্তিগত দারুন পছন্দের এই রিডারটি সম্পর্কে বাংলায় পূর্ণ রিভিউ সহ ফ্রি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি এই সফটওয়্যারটির সাহায্যে যেমন পিডিএফ ফাইল পড়তে পারবেন তেমনি বড় বড় পিডিএফ ফাইলকে একাধিক ফাইলে স্প্লিটিং করতে পারবেন। অথবা একাধিক পিডিএফ ফাইলকে একটি ফাইলে মার্জ করতে পারবেন। শুধু অফলাইনেই নয় আপনি চাইলে অনলাইনেও একই কাজ খুবই সুন্দর ভাবে করতে পারবেন। সফটওয়্যারটির বেসিক ব্যবহার সম্পূর্ণ ফ্রি।
এই সফটওয়্যারটি বিষয়ে বিশেষ ভাবে বলার কিছু নেই। ৮৯ ডলার মূল্যের এই সফটওয়্যারটি আমার দেখা সেরা সফটওয়্যার। কোন পিডিএফ ফাইলের যেকোন ধরনের পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং কিংবা বিয়োজন করতে পারবেন। সেই সাথে যেকোন ধরনের অংশ এডিট করতে পারবেন। পিডিএফ ফন্ট পরিবর্তন, লেখার কালার পরিবর্তন, কোন লেখা মুখে ফেলা থেকে শুরু করে আপনার কল্পনায় যা কিছু আসে সব করতে পারবেন।
যদিও পিডিএফ ফাইল এডিটিং সম্পর্কিত যতো সফটওয়্যার আছে তাদের মাঝে Foxit PhantomPDF Standard 7 হলো সবার সেরা কিন্তু এটাকে লিগ্যাল পন্থায় ব্যবহার করতে যে পরিমান খরচ করতে হয় তাতে সেটা অনেকেই ব্যবহার করতে চাইবে না। টেকটিউনস পরিবারের জন্য সফটওয়্যারটি ফ্রিতে দেওয়া হলেও এমন অনেকেই আছেন যারা পাইরেটেড সফটওয়্যার পছন্দ করেন না। তাদের জন্য ফক্সিটের কাছাকাছি ফিচার সম্বলিত PDFescape সফটওয়্যারটিই সবচেয়ে উপযুক্ত। আশা করছি ফক্সিটের সব সুবিধা এটি দিতে না পারলেও কাছাকাছি অনেক কিছুই পাবেন।
আপনি কী পিডিএফ ফাইলকে ওয়ার্ড ফাইলে কনভার্ট করতে চান? তাহলে আপনার জন্য এই সফটওয়্যারটিই প্রয়োজন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যেকোন পিডিএফ ফাইলকে ওয়ার্ড ফাইলে কনভার্ট করতে পারবেন। অধিকাংশ সফটওয়্যারের একটা বড় সীমাবদ্ধতা থাকে যে বড় বড় ফাইলগুলোকে কনভার্ট করা যায় না। কিন্তু এই সফটওয়্যারটি দিয়ে যেকোন সাইজের পিডিএফ ফাইলকে ওয়ার্ড ফাইলে রূপান্তরিত করতে পারবেন।
যদিও মাইক্রোসফট অফিস ২০১০ এবং অফিস ২০১৩ তে ডিফল্ট ভাবে পিডিএফ তৈরীর অপশন আছে তারপরেও যারা আগের ভার্সনগুলো ব্যবহার করেন তাদের জন্য পিডিএফ ফাইল তৈরী করার জন্য এটি সর্বশ্রেষ্ট সফটওয়্যার। এর সাহায্যে খুব সহজে ফন্ট এমবেডিং সুবিধাযুক্ত পিডিএফ ফাইল তৈরী করতে পারবেন। শুধুমাত্র পিডিএফ ফাইল তৈরীর উদ্দেশ্যে হলে এই সফটওয়্যারটি আপনার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হবে।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
Super