ওয়াল্ট ডিজনি! বিশ্ববিখ্যাত পার্ক Disney Land সহ Disney কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। আজ আমি টেকটিউনসে উনার সম্পর্কে অজানা ১৫টি তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।
উনার পুরো নাম ছিলো ওয়াল্টার ইলিয়াস ডিজনি। তিনি ১৯০১ সালের ডিসেম্বর ১ তারিখে আমেরিকার শিকাগোতে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন একাধারে বিনোদনকমী, এনিমেটর, ভয়েস এক্টর এবং ফিল্ম পরিচালক! তাঁকে আমেরিকার এনিমেশন ইন্ড্রাস্টির pioneer হিসেবে খ্যাত করা হয়। তার প্রতিষ্ঠিত ডিজনি কোম্পানি একক ভাবে সবোর্চ্চ বেশি অস্কার প্রাপ্তের রেকর্ড বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় ৫৯টি নমিনেশনের থেকে ২২টি অস্কার রয়েছে ডিজনি কোম্পানির ছবিগুলোর উপর। তিনি সারাজীবন হেভি স্মোকার হিসেবে ছিলেন তাই মাত্র ৬৫ বছর বয়সে তিনি ১৯৬৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তো চলুন তার সম্পর্কে ১৫টি তথ্য জেনে নেই যেগুলো হয়তো আপনি আগে জানতেন না।
ডিজনি যখন প্রথম হলিউডে আসেন ১৯২৩ সালে তখন তিনি তার অসুস্থ ভাইকে দেখার জন্য এসেছিলেন। হলিউড বিশ্বের সকল ফিল্ম ইন্ড্রাট্রির প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে ছিলো এবং এখনো রয়েছে। কিন্তু ডিজনির প্রথম হলিউডে আসাটা কিন্তু কোনো ছবি বা কার্টুনের জন্য নয় বরং তার অসুস্থ ভাইকে দেখার জন্য তার হলিউডে আসার দরকার পড়ে। হাসপাতালে ভাইকে দেখতে এসে ভাই সুস্থ হবার পর তিনি আর তার ভাই মিলে ডিজনি ব্রাদারস স্টুডিও চালু করে ফেলেন!
১৯৩৭ সালে তার snow white কার্টুন ছবিটি মুক্তি পেলে রিভিউ বোর্ডের একজনের মতামত ছিলো “Frankly, Badly Drawn!"! তিনি বিশ্বব্যাপী সেরা কার্টুনিস্টের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন। কিন্তু তারপরেও নিন্দুকের হাত থেকে রক্ষা পান নি তিনি! তবে নিন্দুকের কথায় কান না দিয়ে তিনি তার মতো করে কাজ করে গেছেন!
তার অন্যতম জনপ্রিয় কাটুর্ন চরিত্র মিকি মাউসের সৃস্টির সময় এর নাম রাখা হয়েছিল mortimer mouse। তবে প্রকাশের আগে ডিজনির স্ত্রী চেয়েছিলেন আরো কিউট এবং শুনতে সুন্দর শোনায় এমন কোনো নাম পছন্দ করতে। তার স্ত্রীও ছিলেন একজন কাস্টুনিস্ট এবং একটি ট্রেন জার্নির সময় তারা এই মিকি মাউসের নামকরণ করে ফেলেন। কথিত আছে মিকি মাউসটি ডিজনির একটি পালিত ইঁদুরের থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
১৯৩৫ সাল পর্যন্ত একমাত্র ডিজনিই ছিলেন একমাত্র এনিমেটর যিনি Technicolor য়ে তার কার্টুন ফিল্ম তৈরি লাইসেন্স পেয়েছিলেন! কারণ টেকনিকালারের সাথে ডিজনির একটি এক্সক্লুসিভ চুক্তি ছিল। তাই ১৯৩৫ সালের আগ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই টেকনিকালার প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্টন তৈরি করতে পারতেন। এর আগে শুধুমাত্র হলিউডের ছবিগুলোতে টেকনিকালার ব্যবহৃত হতো, কার্টুনে শুধুমাত্র ডিজনিই ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত একাই লাইসেন্স পেতেন। তবে মজার ব্যাপার হলে পরবর্তীতে কার্টুনে তিনি তার মূল প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানকেও টেকনিকালার ব্যবহারের সুযোগ করে দেন!
১৯৩১ সালে তিনি মাত্রারিক্ত কাজের কারণে নার্ভাস ব্রেকডাউনের শিকার হন। তার বায়োগ্রাফার তাকে মাত্রারিক্ত কাজপ্রিয় বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। কথিত আছে তিনি দিনে ২০ ঘন্টা স্টুডিওতে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তাকে স্বাভাবিক করার জন্য সাউথ আফ্রিকায় ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।
ডিজনি তার প্রথম ডিজনিল্যান্ডের জন্য ডেনমার্কের একটি থিম পার্ক থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। ডেনমার্কের টিভোলি গার্ডেন পার্কের ডিজাইন এবং স্টাফদের ব্যবহারিক দক্ষতা ডিজনিকে এতটাই মুগ্ধ করেছিলো যে তিনি তার ডিজনিল্যান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় অনুপ্রেরণা এই পার্কেই পেয়েছিলেন। তিনি তার সমস্ত ডিজনিল্যান্ডে এত টাকাই ইনভেস্ট করেছিলেন বর্তমান পর্যন্ত ডিজনি কোম্পানির সকল মুভির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণের মুনাফা তারা তাদের পার্কগুলো থেকে করে থাকে।
ডিজনি রেকর্ড সংখ্যক ২৬টি অস্কার পুরস্কার লাভ করেন এবং মোট ৫৯ বার অস্কারে নমিনেট প্রাপ্ত হন। আর এই রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙ্গতে পারেনি! তিনি তার প্রথম অস্কারটি ১৯৩২ সালে একটি শর্ট ফিল্মের জন্য জিতে নেন আর তার ক্যারিয়ারের অধিকাংশ বছরেই তিনি অস্কারে নমিনেট প্রাপ্ত হয়ে আসছিলেন!
পাবলিকে তিনি বোল্ড লুকে থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বড়ই লাজুক প্রকৃতির। তিনি পাবলিক প্লেসে এক ধরনের মেন্টালিটি ধরে রাখতেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের পুরোটাই অন্যরকম আরেকটি মেন্টালিটিতে থাকতেন। এছাড়াও জীবনে প্রচুর সাফল্য পেলেও তিনি কখনো সন্তুষ্ট থাকতেন না! মজার ব্যাপার হলো তিনি তার কার্টুন চরিত্রগুলোতেও আর এই ডিপ্রেশনগুলোকে তুলে ধরতেন। Lions কার্টুন ছবিটি মুক্তির পর একজন বায়োলজিস্ট তার বিরুদ্ধে হায়নাদেরকে অন্যরকম ভাবে উপস্থাপন করার জন্য মামলা ঢুকে দেয়!
কেউ কেউ মনে করেন ডিজনির মরদেহ পুরোটাকে সম্পূর্ণরূপে বরফে পরিণত করে তার মূল ডিজনিপার্কের কোথাও গোপনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটি সত্য নয়। তার মরদেহ কে তার ইচ্ছে অনুযায়ী পোড়ানো হয় এবং দেহাবংশের ছাঁইকে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি লেকে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সারাজীবন হেভি স্মোকিংয়ের কারণে মাত্র ৬৫ বছর বয়সের ফুসফুসের ক্যানসারের কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৬০ সালের উইন্টার অলিম্পিকস যেটি ক্যালিফোর্নিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেটার ওপেনিং এবং ক্লোজিং অনুষ্ঠানের ডিজাইনার হিসেবে ডিজনি কাজ করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো তাকে অনুষ্ঠানটির দায়িত্ব পালনের জন্য ইনভাইট পেয়েছিলেন। অনুষ্ঠান দুটিতে তিনি তার কার্টুন এবং থিম পার্ক ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি দক্ষ ডিজাইনিংয়ের ঝলসাও দেখিয়েছিলেন।
১৯৩৮ সালে তিনি একজন Nazi কে তার স্টুডিওতে ট্যুর দিয়েছিলেন। তার নাম ছিলো Leni Riefenstahl। ১৯৩৬ সালের হিটলারের অলিম্পিক গেমে তিনি এই সুযোগটি পেয়েছিলেন। তাই ভদ্র লোক হিসেবেও ডিজনির খ্যাতি ছিলো। তিনি নাজির বিরুদ্ধে কোনো অভদ্র আচরণ করেননি।
Mary Poppins এর নির্মাতা PL Travers তার চরিত্রের উপর নির্মিত ডিজনির কার্টুন ছবিকে তেমন প্রশংসা করেননি। তিনি তার চরিত্র নিয়ে কোনো কার্টুন ফিল্ম তৈরি হোক তিনি এটা চান নি। তাই প্রায়ই তিনি তার চরিত্রটিকে ডিজনির কাছে বেঁচে নিয়ে ভুল করেছেন বলে বলতে শোনা যায়।
ডিজনির অন্যতম ব্যবস্যাসফল কার্টুন ছবি Snow White & The Seven Dwarves এর সম্পর্কে প্রথম দিকে তাকে বহু কথা শুনতে হয়েছিল। ফিল্ম ইন্ড্রট্রির অধিকাংশ মানুষই বলেছিলেন এই ছবিটি ডিজনির পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আসলে কি হয়েছিল তা আমরা সবাই জানি! অস্কার পেয়েছিলেন তিনি এই কার্টুন ছবির কারণে! কারণ ছায়াছবির মতো লম্বা দৈর্ঘ্যের কার্টুন নির্মাণে কেউ টাকা ইনভেস্ট করতে চাইতেন না সেই সময়ে।
১৯৬৬ সালে মৃত্যুবরণের সময় ডিজনি তার সমস্ত সম্পদকে তিনটি ভাগে ৪৫%, ৪৫% এবং ১০% ভাগে ভাগ করে রেখে গিয়েছিলেন। ৪৫% তিনি তার স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের জন্য রেখে গেছেন। পরবর্তী ৪৫% সম্পদ তিনি দান করে গিয়েছিলেন চ্যারিটিতে। এবং শেষ ১০% ভাগ সম্পদ তার বোন এবং বোনের ছেলেমেয়েদের জন্য দিয়ে যান।
আপনি জানেন কি?! ডিজনি খোদ নিজেই একটি কোম্পানি হয়েও বিশ্বের অনেকগুলো বড় বড় কোম্পানিকে কিনে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে! হয়তো তাদের প্রচারে ডিজনির কথা শুনতে পারেন না আপনি কিন্তু ডিজনি দুনিয়ার বড় বড় বেশ কটি কোম্পানি কে নিয়ন্ত্রণ করে। এদের মধ্যে রয়েছে pixar, Vice, abc, ZSPN, Lucas Film, Marvel, Touchstone Home entertainment, The Muppetsm Hollowood Records, Lifetime, History Channel Network, Maker সহ বিভিন্ন কোম্পানি ডিজনি নিয়ন্ত্রিত করে থাকে।
তো ওয়াল্ট ডিজনি ছিলেন একজন চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী। খুবই কর্মঠ এবং ভদ্রত চরিত্রে অধিকারী। কিন্তু তিনি বেশ ধুমপায়ী ছিলেন যেটার জন্য তাকে মাত্র ৬৫ বছর বয়সেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। তো আশা করবো আজকের টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। তিনি যদি ধুমপায়ী না হতেন তাহলে আরো অনেককিছু দুনিয়াকে দিয়ে যেতে পারতেন।
আজকের টিউনটি শেষ করছি একটি চমৎপ্রদক তথ্য দিয়ে। আপনি ২০০৯ সালের জেমস ক্যামেরনের Avatar ছবিটি নিশ্চয় দেখেছেন? তার নির্মাণ খরচ জানেন? Avatar এর নির্মাণ খরচ প্রায় ২৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
অন্যদিকে ডিজনি স্টুডিও Tangled এনিমেশন মুভিটিও হয়তো আপনি দেখেছেন? চমৎকার এই মুভির নির্মাণ খরছ জানেন? এই এনিমেশন মুভির নির্মাণ খরচ Avatar এর থেকেও বেশি! Tangled এনিমেশন মুভিটির নির্মাণ ব্যায় প্রায় ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
very nice tune. waiting for the next one, Man