একটি অসাধান জীবনগাথাঁ : আমি চাই, সবাই আমাকে মনে রাখুক একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই-টিম বার্নাস লি

"আমি চাই, সবাই আমাকে মনে রাখুক একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই। আমি একজন সাদাসিধে কম্পিউটার প্রোগ্রামার ছিলাম, আমি একটা প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলাম, যেটা মানুষের কাজে লেগেছিল। এবং আমি যদি সেই প্রোগ্রামটা তৈরি না করতাম, তাহলে অন্য কোনো মানুষ করত সেটা।"

খুব ভাল লাগল আমার উপরের কথাগুলো। এইকথাগুলো থেকে বুঝা যায় মানুষটা কত সাদাসিধে।আগে মানুষটা সম্পকে জানতাম না খুব একটা। শুধু জানতাম ওনি www এই আবিষ্কার করেছে। নেই তেমন কোন প্রচারনা। আজ প্রথম আলোতে টিম বার্নাস লি নিয়ে লেখা পড়ে খুব ভাল লাগল। ইদানিং আমার ব্লগে খুব বেশি কপি -পেষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কি করব সংবাদপএ এর কিছু কিছু লেখা এত ভাল লেগে যায় তা নিজের সংগ্রহ রাখার লোভে এবং অনেক হয়ত সংবাদপএ পড়া হয় না তাই মাঝে মাঝে খুব ভাল এবং উৎসাহপূন লেখা হারিয়ে যায় না পড়ে। লেখাগুলো শেয়ার করি। যখন মাঝে মাঝে নিজেকে একটু দিশেহার মনে হয় কিছু ভাল লেখা পড়লে আমাদের মনকে মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে।আমি এমনটা করি। যখন একটু উদাসীন ভাব চলে আছে, দিশেহার মনে হয় তখন কিছু প্রিয় বই এবং প্রিয় কিছু লেখা পড়ি, মন তখন ভাল হয়ে যায় মোটামুটি। যাক এই নিয়ে কোন আর একদিন লিখব। আমার প্রিয় কিছু লেখা এবং বই শেয়ার করব।এই রকম একটি লেখা এটি। ভাল লাগবে সবার ।

  • টিম বার্নাস লিটিম বার্নাস লি

স্যার টিম বার্নাস লি ১৯৫৫ সালের ৮ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে বলা হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ) জনক। তাঁর কারণেই আজ আমরা ঘরে বসেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দুনিয়া চষে বেড়াতে পারি

১৯৮০ সালের দিকে আমি তখন সুইজারল্যান্ডের ইউওএনআরে কাজ করতাম। ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চে (ইউওএনআর) আমার কাজ ছিল তথ্য বিভাগে। ওখানকার কাজটা যে খুব কঠিন ছিল, তা নয়, কিন্তু তবু আমি মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে যেতাম। কারণ, দেখা যেত একই ধরনের সমস্যা নিয়ে একই ধরনের তথ্য জানতে চাইছে সবাই। বারবার একই প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা খুবই একঘেয়েমি ছিল। কিন্তু ওই একঘেয়েমি থেকেই আসলে নতুন এক ইতিহাসের শুরু হয়েছিল। হাজারো বার একই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজতাম আমি সব সময়। তখন আমার মাথায় প্রথম আসে, এমনটা যদি হতো যে আমাদের প্রতিষ্ঠানে না এসে বা আমাদের ফোন না করে, ঘরে বসেই যদি সব তথ্য পাওয়া যায় বা সব প্রশ্নের উত্তর মেলে, তাহলে মন্দ হয় না।
অনেক প্রতিষ্ঠানই লিফলেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করত। সে ক্ষেত্রে বারবার নতুন লিফলেট ছাপতে হতো। যার মানে সময়, অর্থ—দুইয়ের অপচয়। এতে আসলে শেষ পর্যন্ত সমস্যা কমে না বাড়ে, সেটা বোঝাও দায়। এসব চিন্তা করতে করতেই আমার মনে হলো, এমন একটা ব্যবস্থা যদি করা যায় যে মানুষ তার প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য একটা নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক থেকেই সংগ্রহ করে নিতে পারবে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা, তাহলে তা দারুণ হয়। এভাবেই ১৯৮৯ সালের দিকে আমার প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের নিয়ে আমি তৈরি করে ফেলি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা সংক্ষেপে ওয়েব।
অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করার সময় ওখানকার নেটওয়ার্ক প্রিন্টার হ্যাক করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলাম একবার, তখন আমার শাস্তিও হয়েছিল। কিন্তু সেই শাস্তিও আমাকে যেন আরেকটু এগিয়ে নিয়ে গেল। আমার মনে ইচ্ছা করতে থাকল, আমার যদি নিজের একটা কম্পিউটার থাকে, তাহলে মন্দ হয় না। তখন গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমি একটা করাতকলে কাজ করছিলাম। ওখানে ক্যালকুলেটরের মতো একটা বড় অকেজো যন্ত্র খুঁজে পেলাম একদিন। এরপর করাতকলের মালিকের অনুমতি নিয়ে ওই অকেজো যন্ত্রটা নিজের বাসায় নিয়ে এলাম। ওই ক্যালকুলেটরের বোতাম সব তুলে ফেলে কম্পিউটারের মতো বোতাম লাগিয়ে ফেললাম খুব সহজেই। এরপর কম্পিউটারের মনিটরের জন্য একটা পুরোনো টিভির দোকানে গেলাম। গিয়ে মাত্র পাঁচ পাউন্ড দিয়ে একটা টিভি কিনে ফেললাম। এরপর অক্সফোর্ডের এক বন্ধুর কাছ থেকে টিভি কীভাবে কাজ করে, সেটা বুঝে নিয়ে ওই যন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দিলাম, আর তাতেই আমি পেয়ে গেলাম আমার নিজের একটা কম্পিউটার। তখন সবাই অবাক হতো আমার কাণ্ড দেখে। তবে এসব ব্যাপারে আমি কখনোই আটকাইনি।
আমার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন গণিতবিদ। আমরা ছিলাম চার ভাই। আমি ছিলাম সবার বড়। আমরা সব জায়গায়ই গণিতের মজা খুঁজে ফিরতাম। একটা পুডিং বানাতে গেলেও গণিতের হিসাব-নিকাশ করতাম মজা করার জন্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়কার কথা। অন্যরা যখন দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াত, আমরা তিন বন্ধু তখন বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতাম। চুম্বক নিয়ে মজার কাণ্ড ঘটাতে চাইতাম। সেই ছোট্ট বয়সেই আমরা ঠিক করে ফেলেছিলাম, আমরা বিজ্ঞান নিয়ে একটা বই লিখব। বইটা যেহেতু হবে গবেষণামূলক, তাই বিভিন্ন বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা করার জন্য আমাদের বাসার পেছনে মাটির নিচে একটা গবেষণাগার বানানোর চিন্তাও এসেছিল আমাদের মাথায়!
সায়েন্স ফিকশন পড়ার অভ্যাস আমার খুব ছোটকাল থেকেই। আর্থার সি ক্লার্ক, আগাথা ক্রিস্টি, জন উইন্ডহ্যাম ছিলেন আমার প্রিয় লেখক। আমি যখন হাইস্কুলে ভর্তি হলাম, তখন আমাদের স্কুলটা ছিল দুই রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায়। তখন স্টেশনে ট্রেন থামলেই আমি খেয়াল করে দেখার চেষ্টা করতাম ট্রেনের ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতিগুলো। আমার মনে হয়, ছোটবেলার এসব অভিজ্ঞতাই আজ আমাকে বিজ্ঞানী বানিয়েছে।
অনেকে আমাকে বলে, আমি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্যবহার করে অনেক বড়লোক হতে পারতাম। আমি নিজেও সেটা জানি। আমি যদি আমার আবিষ্কার সবার জন্য উন্মুক্ত না করে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করতাম, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, আমি আজ অনেক পয়সা কামাতে পারতাম, রাজকীয় জীবন যাপন করতে পারতাম। কিন্তু তাহলে ওয়েব এভাবে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারতাম না। আমি সব সময় চেয়েছি, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব যেন দুনিয়ার সব মানুষের কাজে আসে। আর তা আজ সত্যি হয়েছে। ওয়েব এখন আর শুধু কয়েকটি কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক নয়, ওয়েব এখন অসংখ্য মানুষের নেটওয়ার্ক। আমি চাই না মানুষ আমাকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবক হিসেবে মনে রাখুক। আমি চাই, সবাই আমাকে মনে রাখুক একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই। আমি একজন সাদাসিধে কম্পিউটার প্রোগ্রামার ছিলাম, আমি একটা প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলাম, যেটা মানুষের কাজে লেগেছিল। এবং আমি যদি সেই প্রোগ্রামটা তৈরি না করতাম, তাহলে অন্য কোনো মানুষ করত সেটা।

লেখাটি পূবে আমার ব্লগে প্রকাশিত
"তুসিনের জল জোছনায়"
উৎস : সহায়ক এক

Level 0

আমি তুসিন আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 49 টি টিউন ও 555 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি তুসিন আহমেদ । আমার ব্লগ http://tusin.wordpress.com/ফেইসবুকে আমি facebook.com/tusin.ahmed and yahoo তে [email protected]


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অনেকদিন পর আপনার টিউন পেলাম 🙂

“অন্যরা যখন দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াত, আমরা তিন বন্ধু তখন বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতাম”

    @সাইফুল ইসলাম:
    সাইফুল ভাই নাকি। কেমন আছেন আপনি?
    টিউন করার কিছু খুব একটা কিছু পাই না। তাই আপাতত আপনাদেরটাই পড়ি।
    ভাল থাকুন……..

Level 0

tune e plus
amader jobbar kagu jodi ei team lee er messsage ta bujhto, tahole kotoi na valo hoto 😛

    @learner:
    আপনাকেও প্লাস।
    জব্বার কাগুরে নিয়ে এটা লেখা লেখালাম। টিটিতে দিব কিনা ভাবতাছি;)
    কি কন আপনে দিয়ে দিমু?

আজ পত্রিকার পাতাটা আলাদা করি রেখেছিলাম এই লেখাটা পড়ার জন্য। কিন্তু তি আর হয়ে ইঠেনি। অফিসে কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনার মাধ্যমে পড়া হল। ধন্যবাদ….

    @মহসিন:
    ভাই আমার জেনে ভাল লাগল একজনের হলেও উপকার হয়েছে। আসলে লেখাটা শেয়ার করার উদ্দেশ্য এটাই ছিল আমার।
    ভাল থাকুন এই কামনা…..
    মান্তব্য করে জানানো জন্য ধন্যবাদ

tarmoto kaaz na korte pari. tar moto attitude peleo shanti

একজন অসাধারণ মানুষ

Level 0

অসাধারণ