বিগত কয়েক বছরে বাংলায় কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে যে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে তা আমরা সবাই জানি। একটা সময় ছিল যখন ভাবতাম ‘ইস! বাংলায় যদি ইমেইল করা যেত’ অথবা ‘ইস! বাংলা কি বোর্ড লে-আউটটা যদি আরও সহজ হত’। আমাদের সেই স্বপ্ন আজ অনেক বাংলা-প্রেমী প্রোগ্রামারের নিরলস পরিশ্রমে সফল হয়েছে। কি বোর্ড লে-আউট মুখস্থ না করে phonetic কি বোর্ড দিয়ে অনায়াসেই ইউনিকোড ব্যবহার করে আমরা আজ কত সহজেই বাংলা লিখছি। যে আমি, মুনীর অপটিমা কি বোর্ডে সারাদিনে এক প্যারাগ্রাফ লিখতে পারতাম – সেই আমিই কিনা ঘন্টাখানেকের মধ্যে একটা টিউন করে ফেলছি।
সব কিছুর প্রারম্ভে তাই বাংলায় কম্পিউটিং এ যারা সামান্যতম অবদান রেখেছেন তাঁদের প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা। তাঁদের প্রতি আমাদের ঋণ শোধ হবার নয় – এক কথায় তাঁরাও আমাদের প্রযুক্তির ভাষা-সৈনিক।
বর্ণ – প্রবর্তন – লেখনী – বিজয় ইত্যাদি প্রসিদ্ধ প্রোগ্রামের গণ্ডী পেরিয়ে বাংলা ইউনিকোডের প্রোগ্রাম অভ্র ২০০৩ সালে আমাদের সবার মন জয় করে ফেলেছিল খুব সহজেই। বাংলা ইউনিকোডকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মেহেদি হাসান খান এর অভ্র সবারই প্রিয় – অভ্র আমাদের সবারই গর্ব।
অনেকদিন আমি অভ্র ব্যবহার করেছি আর মুগ্ধ হয়েছি এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য। কিন্তু যখন শাব্দিকের সাথে পরিচয় হল, তখন পেলাম আরও স্বস্তি আর শান্তি। সত্যি কথা বলতে, শাব্দিককেই আমি এখন বাংলা লিখার জন্য বেছে নিয়েছি। এই লেখাটি অভ্র আর শাব্দিকের কোন তুলনা নয় – বরং শাব্দিককে পরিচয় করিয়ে দেবার একটা প্রয়াস।
ইনফর্মেশন ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসালটেন্টস বাংলাদেশ (আই ই সি বি) লিমিটেড নামের বাংলাদেশী এক প্রতিষ্ঠানের তৈরি শাব্দিক এর শেষ ভার্সন ৬.০.১। ২০০১ সালে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। শাব্দিক সি++ ও সি# প্রোগ্রামিং প্লাটফর্মে তৈরি করা একটি সফটওয়্যার।
- একাধিক কি বোর্ড লে-আউট (ইক্সপ্যাড, ইউনিজয়, জাতীয়, মুনীর, প্রভাত, রুপালী, টপটাইপ, ইনস্ক্রিপ্ট, মুনীর ইউনিকোড)
[প্রায় সবক’টি পরিচিত লে-আউট শাব্দিকে আছে]
- ডিকশনারির সহায়তায় টাইপিং।
[আপনি শুধু লিখে যান, শাব্দিক তার ডিকশনারি থেকে অনেক শব্দের সাজেশনসহ সবচেয়ে কাছের শব্দটি দেখিয়ে যাবে]
- সিংগেল লেয়ার কি বোর্ড এবং লেটার-মোড টাইপিং যা অনেক জটিল যুক্তাক্ষর লিখতে সাহায্য করে।
[আকস্মিকতা শব্দটি ডিকশনারিতে না থাকার কারণে লেটার-মোডে যেয়ে প্রতিটি অক্ষর লিখে টাইপ করা যাচ্ছে]
[ক্যাস্পার্স্কির মত এমন একটি জটিল যুক্তাক্ষর শাব্দিকের লেটার-মোডের মাধ্যমে লিখা খুব সহজ]
- মাত্র দু-একটি কি প্রেস করেই অটোকমপ্লিট ফিচারের মাধ্যমে লিখতে পারা।
[শাব্দিকের শক্তিশালী ডিকশনারির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরো শব্দের বানান টাইপ করা লাগে না]
- সহজ বাংলা-ইংরেজি মিক্সড মোড টাইপিং
[দুবার শিফট অথবা F11 অথবা Ctrl+Alt+B প্রেস করেই বাংলা থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে বাংলায় যাওয়া যায়]
- অটো লার্নিং ইঞ্জিন – যা ব্যবহারকারীর টাইপিং অভ্যাসকে সহজে শিখে নিয়ে সে অনুযায়ী টাইপ করে।
শাব্দিকের সাজেস্ট করা একাধিক শব্দ থেকে প্রতিবার আপনি যে শব্দটি বেছে নেবেন, পরবর্তীতে সে অনুযায়ী আপনার শব্দটি টাইপ হবে। অর্থাৎ, আপনি যদি ক্রমাগত সাজেস্ট করা শব্দগুলো থেকে প্রথমটি না নিয়ে তৃতীয়টি বেছে নেন, তবে একসময় শাব্দিক এই তৃতীয় শব্দটিকেই প্রথম চয়েস হিসাবে দেখাতে থাকবে।
- ডিকশনারির বাইরে নতুন শব্দ যোগ করার ক্ষমতা।
[এখানে টেকটিউনস শব্দটি আমি প্রথমে লেটার-মোডে লিখেছিলাম এবং শাব্দিক বন্ধ করার সময় সেভ করতে চাওয়ার অপশনে সেভ করেছিলাম যা নতুন শব্দ হিসাবে শাব্দিকের ডিকশনারিতে যোগ হয়েছিল। পরবর্তীতে, মাত্র tektiu লিখতেই টেকটিউনসকে দেখাচ্ছে]
- বিশাল ইন-বিল্ট ডিকশনারি।
শাব্দিকের ডিকশনারি বিশাল। প্রায়শঃ ব্যবহৃত বাংলা শব্দ ছাড়া এতে রয়েছে অনেক বিদেশী শব্দ। আর কোন শব্দ যদি না থাকে তাহলে তাকে যোগ করার অপশন তো আছেই।
অনেক তো বললাম, এবার আসুন জেনে নেই শাব্দিক ডাউনলোড আর ইন্সটল পদ্ধতি। আমি শাব্দিক কিনেছিলাম ৫০ টাকা দিয়ে। কিন্তু সম্ভবত সম্পূর্ণ কর্মক্ষম শাব্দিক ভার্সন ৬.০.১ পাওয়া যাচ্ছে আই ই সি বির ওয়েব সাইটে।
- ডাউনলোড করে ইন্সটল করুন।
- ইন্সটলের শেষের দিকে আপনার কম্পিউটার কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট সাপোর্ট করে কিনা তা ভেরিফাই করে দেখতে চাবে। টেকটিউনস এর লিখা যদি আপনি “ঝকঝকে তক্তকে বাংলা পড়ুন” শীর্ষক সাহায্য নিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আপনার কম্পিউটার ভেরিফাইড হবে। আপনি যদি নিশ্চিত না হন, তাহলে এখান থেকে iComplex Bangla ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন। অথবা উইন্ডোজ ইন্সটলেশনের সিডিটি সিডি ড্রাইভে রাখুন।
- কম্পিউটার রি-স্টার্ট করুন। ডিফল্ট কি বোর্ড হিসাবে রুপালী আসবে, ফোনেটিক টাইপের জন্য ইক্সপ্যাড বেছে নিন।
- ব্যাস অনায়াসে আরও দ্রুতগতিতে লিখতে থাকুন বাংলা।
ব্যবহার করে আপনার অভিজ্ঞতা জানালে খুশি হব। সবাই ভাল থাকবেন, বাংলা আর বাংলাদেশকে বেশি ভালবাসবেন। দরিদ্র এই দেশটা আমাদের সবার অকৃত্রিম ভালবাসার জন্যই আজও টিকে আছে সবার মাঝে।
আমি মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 1053 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নতুন জিনিস ভালই হতে পারে , তবে অভ্র আমি ইউজ করিনা, যদিও আমি ফনেটিক এ লিখি,
নরমালি যেসব বাংলা ব্লগে যাই সেখানে লে-আউট থাকে আর সেটা দিয়েই আমার কাজ হয়ে যায় ,