কম্পিউটার অ্যানিমেশন কী? কেন? কিভাবে? 3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করার বিস্তারিত পদ্ধতি জানুন এবং হারিয়ে যান স্বপ্নের রাজ্যে

কেমন আছেন সবাই? বর্তমানে আমি যে টপিক নিয়ে মজে গেছি সেটা হলো কম্পিউটার অ্যানিমেশন। অনেক দিন হলো ব্লগ লিখা হয় না। তাই চিন্তা করলাম কম্পিউটার অ্যানিমেশন নিয়ে বাংলা ব্লগগুলোতে খুব বেশি লিখা লিখি হয় না যেহেতু আমি নিজেই কিছু একটা লিখার চেষ্টা করি। 😀

প্রথমে অ্যানিমেশন সম্পর্কে কিছুটা জানি। আমরা প্রতিনিয়ত অহরহ অ্যানিমেশন দেখে যাচ্ছি। অ্যানিমেশন কত রকমের হতে পারে তার কোন ধারণাই হয়তো সাধারণ মানুষের নেই। সোজা বাংলায় অ্যানিমেশন হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অনেকগুলো ইমেজ সিকোয়েন্সকে ধারাবাহিকভাবে রান করে যে মুভিং পিকচার তৈরি করা হয় সেটাই হলো অ্যানিমেশন। অর্থাৎ অনেকগুলো স্থির ইমেজকে একটার পর একটা রান করে অ্যানিমেশন তৈরি করা হয়।

তো এই অ্যানিমেশন অনেক ধরনের হতে পারে। 2D, 3D, স্টপ মোশন সহ অনেক রকম পদ্ধতি রয়েছে অ্যানিমেশন তৈরি করার। তবে অন্যতম প্রধান এবং আমরা এখন সচরাচর যে দুই ধরনের অ্যানিমেশনগুলো টিভি কিংবা ইন্টারনেটে দেখে থাকি তা হলোঃ

  • 2D কিংবা ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশন।
  • 3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন।


2D অ্যানিমেশন পরিচিতিঃ
আমরা ছোট বেলায় যে টম এন্ড জেরি, টারজান, মীনা সহ যত রকম কার্টুন দেখেছি সেগুলোই হচ্ছে 2D অ্যানিমেশন কিংবা ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশন। হাতে ড্রয়িং করে এই অ্যানিমেশনগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। ডিজনি এই 2D অ্যানিমেশন স্টুডিও থেকেই বিশ্ববিখ্যাত সব ফিল্ম তৈরি করেছে। যদিও এখন ডিজনি 3D অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করে থাকে। কম্পিউটার 3D অ্যানিমেশন আসার আগে এই ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশনগুলোই ছিল বিশ্বসেরা। আরো বিস্তারিত জানতে হলে গুগলে দেখুন।

2D অ্যানিমেশন

3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন পরিচিতিঃ

বর্তমানে যে অ্যানিমেশনের জয়জয়কার সর্বত্র সেটা হলো ৩ডি কম্পিউটার অ্যানিমেশন। এই টিউনে এই কম্পিউটার অ্যানিমেশন সম্পর্কেই বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো। কম্পিউটার অ্যানিমেশন অনেকগুলো সফটওয়্যার দিয়ে বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। আমরা বর্তমানে হলিউডের যত জনপ্রিয় ৩ডি অ্যানিমেশন ফিল্মগুলো দেখি সবই হচ্ছে কম্পিউটার ৩ডি অ্যানিমেশন। কুং ফু পান্ডা, ফাইন্ডিং নিমো, টয় স্টোরি সহ জনপ্রিয় সবগুলো অ্যানিমেশন ফিল্মই হলো এই কম্পিউটার অ্যানিমেশন। আমরা ছোট বেলায় মন্টু মিয়ার অভিযান যে অ্যানিমেশনটি দেখেছিলাম সেটাও এই ৩ডি কম্পিউটার অ্যানিমেশনই ছিল!

3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন

সংক্ষেপে আমরা ২ডি এবং ৩ডি অ্যানিমেশন সম্পর্কে জানলাম। আরো বিস্তারিত জানতে গুগলে দেখে নিবেন। আমি টেকনিক্যাল অংশগুলো যত পারছি এভয়েড করছি। সহজ বাংলায় বিষয়গুলো বুঝানোর চেষ্টা করছি। তাই অভিজ্ঞ যারা আছেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।

২ডি এবং ৩ডি অ্যানিমেশন ছাড়াও আরেকটি বিষয় রয়েছে যেটা সম্পর্কেও কিছুটা আমাদের জানা উচিত। সেটা হচ্ছে CG (Computer Graphics) অথবা VFX (Vissual Effect)। এটা অনেকটা 3D অ্যানিমেশনের খালাত ভাই। 😀 অর্থাৎ CG এবং ৩ডি অ্যানিমেশন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা হলিউডের যত অ্যাকশন, সুপার হিরো মুভি দেখি যেগুলোর ৫০% কাজই হচ্ছে CG কিংবা VFX। আর CG তে যত কাজ রয়েছে তার ৭০% কাজই হচ্ছে 3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন। অর্থাৎ যে কম্পিউটার অ্যানিমেশন এর কাজ পারবে সে ইচ্ছে করলে VFX সেক্টরেও কাজ করতে পারবে। যদিও দুটি সেক্টরই অনেক অনেক বড়।

সহজ বাংলায় CG বলতে বুঝায় একটি রিয়েল শটের সাথে কম্পিউটারে তৈরি সেট কিংবা অ্যানিমেশন ম্যাচ করার পদ্ধতিই হচ্ছে CG(Computer Graphics) কিংবা VFX। ধরুন সুপারম্যান ১০০ তলা উপর থেকে লাফ দিল এবং উড়তে উড়তে নিচে পড়ছে। এখন এই ভিডিওটি কিভাবে তৈরি হয়? সত্যি সত্যি ১০০ তলা থেকে লাফ দেয়? মোটেও না! বাস্তবে সুপারম্যান চেয়ার থেকে লাফ দেয় আর বাকি যে অংশ রয়েছে যেমন ১০০ তলা বিল্ডিং, আশে পাশের পরিবেশ, সুপারম্যানের আধ্যাত্মিক সুপার পাওয়ার সব কিছুই 3D এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। তারপর সেই কম্পিউটার 3D এবং বাস্তব সুপারম্যানের ভিডিও ক্লিপ যেভাবে মার্জ করা হয় সেটাই হচ্ছে VFX কারিশমা! নিচের গিফ ইমেজ ফাইলটি দেখুন তাহলেই আইডিয়া পাবেন VFX আর্টিস্ট ছাড়া হলিউডের সুপার হিরোরা কতটা অচল! নায়কের অভিনয়ের পাশাপাশি শত শত VFX আর্টিস্টের পরিশ্রমের ফসলই হচ্ছে হলিউডের ব্লক ব্লাস্টার সব মুভি!

VFX ছাড়া হলিউড মুভি ক্লিপ!

এবার চলে আসি আমাদের প্রধান টপিক 3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন ফিল্ম যেভাবে তৈরি হয়ে তার বিস্তারিত পদ্ধতি। টেকনিক্যাল ভাষায় কম্পিউটার অ্যানিমেশনের পাইপলাইনের বিস্তারিত।

কম্পিউটার অ্যানিমেশন পাইপলাইনঃ

কম্পিউটার অ্যানিমেশন ওয়ার্কফ্লো বেশ বড় এবং জটিল। আমি এখানে প্রধান স্টেপগুলো বর্ণনা করবো। এগুলোর আবার সাব ক্যাটাগরি রয়েছে যেগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কোনদিন বলবো।

  • গল্প
  • স্টোরিবোর্ড
  • 3D মডেল
  • রিগ
  • অ্যানিমেশন
  • লাইট সেটআপ
  • কম্পোজিট
  • ফাইনাল রেন্ডার

অ্যানিমেশন ফিল্মের গল্পঃ

বাস্তব ফিল্মের মত অ্যানিমেশন ফিল্মের গল্পও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে অনেক ভাল কোয়ালিটির অ্যানিমেশন ফিল্ম শুধুমাত্র গল্পের জন্য বক্স অফিসে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। অনেক আগের ফাইন্ডিং নিমো কিংবা শ্রেক অ্যানিমেশন ফিল্ম অথবা আমাদের দেশের তৈরি মন্টু মিয়ার অভিযান সবগুলোই গল্পের জন্য সে সময় যেমন সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিল তেমনি এখন অনেক অনেক অ্যানিমেশন ফিল্মের মধ্যেও এগুলোর নাম আমাদের মাঝে বেচে রয়েছে।

স্টোরিবোর্ড এবং অ্যানিমেটিকঃ

স্টোরিবোর্ড হচ্ছে গল্পের রাফ ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন। ফিল্মের জন্য যে গল্পটি ফাইনাল হিসেবে সিলেক্ট হয় সেই গল্পটি পেন্সিল স্কেচ অথবা গ্রাফিক্স ট্যাবলেট দিয়ে রাফ স্কেচের মাধ্যবে প্রকাশ করার নামই হচ্ছে স্টোরিবোর্ড। সোজা বাংলায় আমরা ছোট বেলায় কমিকস পড়েছি সেগুলোই অনেকটা ফিল্মের স্টোরিবোর্ড। উম্মাদ পত্রিকার কার্টুন, চাঁচাঁ চৌধুরি সহ অনেক জনপ্রিয় কমিকস আমরা ছোট বেলায় পড়েছি সেগুলোই হচ্ছে স্টোরিবোর্ডের অন্যতম উদাহরণ। স্টোরিবোর্ড শুধু অ্যানিমেশন মুভির জন্যেই নয়; রিয়েল ফিল্মেও থাকে।

স্টোরিবোর্ড

অ্যানিমেটিক হচ্ছে এই স্টোরিবোর্ডের প্রতিটি পেজকে একটার পর একটি রেখে ফিল্মের ভয়েস ওভারের সাথে সাথে যে রাফ অ্যানিমেশন তৈরি করা হয় সেটার নামই হচ্ছে অ্যানিমেটিক। স্টোরিবোর্ড এবং অ্যানিমেটিক সবকিছুই করা হয় গল্পের ভিজ্যুয়াল রুপ দেয়ার জন্য। গল্পকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে স্টোরিবোর্ডের বিকল্প নেই। আরো ভাল আইডিয়া পেতে দেখতে পারেন বিখ্যাত মুভি র‍্যাটাটুলির নিচের অ্যানিমেটিক ভিডিওটি।

3D মডেলিংঃ

স্টোরিবোর্ড, কনসেপ্ট আর্ট হয়ে যাওয়ার পর সেগুলোর ৩ডি রুপ দেয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। এবার থ্রিডি আর্টিস্টরা অ্যানিমেশন ফিল্মের ক্যারেকটার মডেল করে থাকে। শুধু ক্যারেকটারই নয় ফিল্মের এনভায়রন্টমেন্ট, প্রফস এগুলো বিভিন্ন থ্রিডি সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি করে থাকে। বিশ্বব্যাপি অটোডেস্ক মায়া সফটওয়্যারটি সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও 3DS MAX, Zbrush সহ অনেক ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার হয়ে থাকে। কেউ যদি থ্রিডি শিখতে চান তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে অটোডেস্ক মায়া দিয়ে শেখা শুরু করুন। যদিও আমাদের দেশে ম্যাক্স বেশি জনপ্রিয়।

প্রযুক্তি টিম
থ্রিডি মডেল। তৈরি করেছেনঃ তানভীর আহমেদ।

আপনি যদি থ্রিডি তে কাজ করতে চান তাহলে মডেলিং দিয়েই শুরু করতে পারেন। এটাই শেখার প্রথম ধাপ। সাধারনত যারা আর্ট ভাল পারে তারাই থ্রিডি মডেলিং এ ভাল করে থাকে। বিশেষ করে ক্যারেকটার মডেলিং এ আর্টের বিকল্প নেই। তবে আর্ট না জানলেও কাজ করা যায় যদি সে রকম চেষ্টা থাকে। কিভাবে এই ধরনের থ্রিডি ক্যারেকটার তৈরি করা হয় সেটার স্যাম্পল দেখুন নিচের স্পীডআর্ট ভিডিওতে। ভিডিওটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশি মডেলার তানবিন আমীন।

রিগ (Rig):

ক্যারেকটার মডেল তৈরি করার পর যে ধাপটি সম্পন্ন করতে হয় সেটার নাম হচ্ছে রিগ। যত ধরনের ক্যারেকটার অ্যানিমেশন আমরা দেখি সব কিছুই বিহাইন্ড দ্যা সিনে এই রিগিং এর অবদান সব চেয়ে বেশি। শুধু মানুষের ক্যারেকটারে রিগ থাকে তা নয়; যে কোন ধরনের অ্যানিমেটেড বস্তুর জীবন্ত অ্যানিমেশন করার জন্য রিগের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সোজা বাংলায় রিগ হচ্ছে ক্যারেকটারের কংকাল কিংবা হাড়। যার মাধ্যমে ক্যারেকটারের সব ধরনের মুভমেন্ট কন্ট্রোল করা হয়। আমার নিজের করা রিগ এবং অ্যানিমেশন ভিডিও একটি শেয়ার করছি। 😛 যদিও আমি তখন নতুন মাত্র শিখেছিলাম এবং এটাই ছিল আমার প্রথম রিগ। ভিডিওর শেষ দিকে রিগ সহ ক্যারেকটারের ছবি রয়েছে। ভিডিও দেখুন নিচেঃ

অ্যানিমেশনের সবগুলো বিভাগে আর্টিস্টিক ব্যাপার থাকলেও ব্যাতিক্রম হচ্ছে এই রিগ বিভাগে। এখানে আর্টিস্টিক তেমন কোন বিষয় নেই পুরোটাই টেকনিক্যাল। এখানে সব চেয়ে বেশি ভাল করে যাদের কোডিং জ্ঞান রয়েছে। কারণ রিগ তৈরি করার সময় অনেক ধরনের স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা যায় যেগুলো কোডাররা খুব সহজেই তৈরি করতে পারে। পাইথন, মেল স্ক্রিপ্ট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কোডিং জ্ঞান ছাড়াও রিগ করা যায়। কোড জানা থাকলে সেটা এডভান্সটেজ। রিগ এর ডেমো রিল কেমন হয়ে থাকে সেটা জানতে দেখুন নিচের ভিডিওটি।

অ্যানিমেশনঃ

আমার সব চেয়ে প্রিয় এবং কঠিন যে বিভাগ রয়েছে সেটা হচ্ছে এই অ্যানিমেশন। এটা কঠিন বলছি কারণ একটি অ্যানিমেশন ফিল্মের কোয়ালিটি অনেকটাই অ্যানিমেশন কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। হলিউডের অ্যানিমেশন ফিল্ম এত ভাল লাগে কারণ একটাই! ওদের ক্যারেকটারগুলো পুরো জীবন্ত মনে হয়; এগুলো থ্রিডি অবজেক্ট সেটা আমাদের মনেই হয় না। মনে হয় আসলেই ফাইন্ডিং নিমোর সেই মাছটি বাস্তবে এভাবেই হয়তো কথা বলে! এটাই হচ্ছে একজন অ্যানিমেটরের সব চেয়ে বড় কৃতিত্ত্ব। বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র ক্যারেকটার অ্যানিমেটর রয়েছে। অ্যানিমেশন শিখতে অনেক দিন সময় লাগে এবং বছরের পর বছর অনুশীলন করতে হয়।

ক্যারেকটার অ্যানিমেশন হচ্ছে ক্যারেকটারকে প্রাণ দেয়া। অর্থাৎ রিগ করা থ্রিডি মডেলকে অ্যানিমেট করে বিভিন্ন মুভমেন্টের মাধ্যমে জীবন্ত করে ফেলা। একজন অ্যানিমেটরকে ড্রয়িং সেন্স, অভিনয় জ্ঞান এবং সফটওয়্যার সম্পর্কে বেশ ভাল জ্ঞান থাকতে হয়। চলুন দেখে নেই বাংলাদেশের একটি স্টুডিওর অ্যানিমেশন ভিডিও ক্লিপ যেখানে অ্যানিমেশন তৈরি করার আগের স্টেপগুলো সহ অ্যানিমেশন ক্লিপ দেখানো হয়েছেঃ

If you've always wanted to dive into Autodesk Maya but didn't know where to start, this training program is for you! All you need are basic computing skill and true enthusiasm. The possibility is endless here. Learn form the best and show the world what you are capable of. Take the next step.We promise, you won’t regret it later.

Posted by Cycore Studios on 12 ಜನವರಿ 2015

লাইট সেটআপঃ

বাস্তব ফিল্মে যেমন লাইট ক্যামেরা একশন রয়েছে তেমনি অ্যানিমেশন ফিল্মেও লাইট ক্যামেরা রয়েছে। পার্থক্য হচ্ছে পুরোটাই সফটওয়্যারের ভিতরেই করতে হয়। বাস্তবে যেমন সূর্যের আলো রয়েছে তেমনি অ্যানিমেশন ফিল্মেও সূর্যের মত লাইট সেট আপ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের লাইট দিয়ে সাধারণ একটি থ্রিডি এনভায়রনমেন্টকেও অসাধারণ পরিবেশে রুপান্তর করা সম্ভব। আমরা অ্যানিমেশন মুভিতে ক্যারেকটারগুলোকে যে সফট একটি ভাব দেখি মানে মনে হয় যেন নরম শরীর তা পুরোটাই লাইটিং এর কারসাজি। ফিল্মি লুক আনার জন্য চমৎকার লাইটিং এর বিকল্প নেই। চলুন দেখে নেই লাইটিং এর ডেমো রিলঃ

কম্পোজিটিং এবং ফাইনাল রেন্ডারঃ

লাইট সেটআপ হয়ে যাওয়ার পর ফাইনাল টাচ হিসেবে কম্পোজিটের কাজ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের স্পেশাল ইফেক্ট, কালার কারেকশন সহ অনেক ধরনের কাজই রয়েছে যেগুলো ফাইনাল অ্যানিমেশন ফিল্মকে করে তুলে আরো অসাধারণ।

রেন্ডার হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা অনেকের কাছে দুঃস্বপ্ন। আমাদের দেশে অ্যানিমেশন ফিল্ম হয়তো তৈরি করা সম্ভব কিন্তু সেটা বাংলাদেশে রেন্ডার করা মনে হয় সম্ভব না। 😛 সে যাই হোক রেন্ডার হচ্ছে থ্রিডি ফাইলের ফাইনাল আউটপুট এবং সেটিকে মুভি হিসেবে দেখার জন্য ভিডিও ফাইলে রুপান্তর করা। রেন্ডার করতে কেমন সময় লাগে তার ছোট একটি উদাহরণ দেই। ধরা যাক একটি ইমেজ রেন্ডার করতে সময় লাগবে ১০ মিনিট যদিও সেটা অবশ্যই হাই কনফিগারের কম্পিউটারে। তো একটি ইমেজ রেন্ডার করতে যদি ১০ মিনিট সময় লাগে তাহলে ১ সেকেন্ড অ্যানিমেশন এর জন্য সময় লাগবে ২৪ ফ্রেম অর্থাৎ ২৪টি ইমেজ x ১০ মিনিট সময়। অর্থাৎ ১ সেকেন্ড অ্যানিমেশন রেন্ডারের জন্য লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। তাহলে দেড় ঘন্টার অ্যানিমেশন ফিল্ম রেন্ডার করতে কেমন সময় প্রয়োজন? যদিও হলিউড অ্যানিমেশন ফিল্ম রেন্ডার প্রতি ফ্রেমে আরো অনেক বেশি সময় লাগে। তাহলে সমাধান? সমাধান হচ্ছে রেন্ডার ফার্ম। যেখানে শত শত কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে একসাথে কানেকটেড থাকে এবং রেন্ডার করে থাকে। নিচের দেখুন রেন্ডার ফার্মের ছবিঃ

প্রযুক্তি টিম
রেন্ডার ফার্ম

এই হচ্ছে অ্যানিমেশন ফিল্মের সংক্ষেপ পদ্ধতি। এগুলোর মধ্যেও অনেক ভাগ, বিভাগ রয়েছে তবে এখানে প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অ্যানিমেশন ফিল্মের সঠিক পাইপলাইন সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে বিশ্ব বিখ্যাত ড্রিমস ওয়ার্কের এই পাইপ লাইন অ্যানিমেশনটি দেখুন তাহলে বুঝতে পারবেন কেন হলিউড ফিল্মে শত শত আর্টিস্ট কাজ করে!

সবশেষে এত এত সুন্দর সুন্দর কাজ শেয়ার পরে আমার নিজের একটি খুবই সাধারণ একটি কাজ শেয়ার করলাম। আমি খুব বেশি দিন হয়নি এই অ্যানিমেশন ফিল্ডে আছি। তাই ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দরভাবে দেখবেন। এই নগন্য অ্যানিমেশনটি আপনাদের দোয়ায় একটি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে পুরস্কার পায়। তো চলুন দেখে নেই পানি সমস্যা নিয়ে তৈরি আমার অ্যানিমেশন ফিল্মটিঃ

বেশ সময় নিয়ে টিউনটি করার চেষ্টা করলাম। যে কোন ধরনের মতামত জানাতে পারেন।

ধন্যবাদ সবাইকে। 🙂

পূর্বে প্রযুক্তি টিমে প্রকাশিত।

Level 7

আমি হাসান যোবায়ের। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 4939 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 166 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

নতুন কিছু করার দারুন আকাঙ্ক্ষা!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অসাধরণ টিউন ভাই ।

    ধন্যবাদ মাহমুদুল ভাই। 🙂

      ভাই, আমার একটা সমস্যা আছে । টেকোটিউনস থেকেই আমাকে টিউমেন্ট এর মাধ্যমে জানানো হয়েছিলো যে টেকটিউনসের কমিউনিটি ম্যানেজার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং আগ্রহী থাকলে আমি যেন একটা CV পাঠাই। তারপর, আমি আমার একটা CV পাঠিয়েছি অনেক দিন হলো(প্রায় ১-১.৫ সপ্তাহ) কোনো reply পাই নি । এক্ষেত্রে আপনার কাছে কি কোনো তথ্য আছে এই বিষয়ে ? অর্থাৎ জবটি ফুল টাইম? একটু সাহায্যের আশাবাদী ।

        সেক্ষেত্রে মনে হচ্ছে আপনাকে সিলেক্ট করা হয়নি। কারণ সিলেক্ট করা হলে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হতো। তবে অপেক্ষায় থাকতে পারেন। পরবর্তিতে যদি লাগে তখন হয়তো যোগাযোগ করা হবে।
        ধন্যবাদ।

দারুন টিউন করেছেন হাসান যোবায়ের ভাই। তবে টিউনের চাইতে টিউনার এর উপস্থিতিটা বেশি ভালো লাগলো। মাঝে মাঝে এমন ধুমকেতুর মতো উদয় হবেন ইনশাল্লাহ্। টেকটিউনসে আপনাদের মানসম্মত টিউনগুলোকে খুব মিস করি। পরবর্তি টিউনের অপেক্ষায় থাকলাম।

    ধন্যবাদ ফাহাদ ভাই। আপনার টিউনগুলোও আমি মাঝে মাঝে পড়ি। যেমন আজকে পড়লাম ওভার ক্লকিং টিউনটি। এখন ব্লগে তেমন সময় দেয়া হয় না। তবে কখনোই পুরোপুরি ছেড়ে দিবো না। কারণ আমার অনলাইন জীবনের মূল শিকড় ব্লগ থেকেই শুরু হয়েছে। 🙂

ধন্যবাদ ফাহাদ ভাই

http://www.incomeusd.com

যেমনটা লিখেছেন তেমন করে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়েই পয়েন্টগুলো পড়লাম অার দেখলাম- অ্যানিমেশন পারি অার না পারি, ললিপপ চেটে দেখার স্বাদও খুব কম না……অাগেও এই ধাপগুলো সম্বন্ধে খানিকটা জানলেও বাংলায় বর্ণনা অনেকটা রসমালাইয়ের রসের মত- ডুবে না থাকলে ছানা কিন্তু বেশ নিরসই লাগে 😉

অামেরিকা যে ধাঁচের অ্যানিমেশন ডেলিভারি দেয়, দু:খের বিষয় অামাদের প্রফেশনাল কাজগুলোই এখনও তার ধারেকাছেও নেই……ওদের ডিরেক্টরগুলোও বেশ বয়স্ক অার এতদিনে অনেক অনেক অভিজ্ঞ…….এমনকি ভারতও অাজকাল মুভিগুলোতে যে সব পারফর্ম্যান্স দেয় সেসবও যথেষ্ট ইমপ্রেসিভ!
অাপনাদের অ্যানিমেশনটা স্টুডেন্ট লাইফের প্রজেক্ট হিসেবে মোটামুটি ভাল হয়েছে- তবে প্রফেশনালি তো বুঝতেই পারছেন- টিকে থাকতে হলে অারও কত জীবন্ত হতে হবে 😉 স্টোরি টেলিংটা অার একটু ভাল হতে পারত বোধহয়…..তবে ওই সাইটে বাকি প্রজেক্টগুলো দেখে রক্ত হিম হয়ে গেছে!!

টিউনের জন্য ধইন্যা……পারলে অারেকটু নিয়মিত হন :mrgreen:

    অনেক ধন্যবাদ এত বড় এবং চমৎকার মন্তব্যের জন্য। হুম আমি কিছুদিন হলো শিখতেছি। এখনো অনেক অনেক শেখা বাকি। হলিউডের কোয়ালিটি দেয়া সম্ভব তবে সেটা টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এবং আমাদের আরো বেশি স্কিলড হওয়ার পরে। ইন শা আল্লাহ এক সময় আমরা ঠিকই সেই কোয়ালিটি দিতে পারবো।
    ধন্যবাদ সাথেই থাকুন। 🙂

যোবায়ের ভাই অসাধারন লিখেছেন যার তুলনাই হয়না। 3d অ্যানিমেশনে আপনি অনেক অভিজ্ঞ। যোবায়ের আপনি বাংলাদেশের অ্যানিমেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন আশা করছি। আমি অ্যানিমেশন শিখতে খুবই আগ্রহী মায়া, 3ds ম্যাক্স, Cinema 4D, Daz3D, Blender সবগুলোই ইনস্টল করেছি আমার কম্পিউটারে তার মধ্যে শুধু মায়া আর Cinema 4D এই দুটি সফটওয়ার ভালভাবে চলে আর অন্যগুলো গ্রাফিক্স কার্ড চায়, আমার কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ড নেই। টরেন্ট থেকে অনেক গুলো টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করে মায়া আর Cinema 4D বাসায় প্র্যাকট্রিস করছি ।

    হুম। আসলে শেখার জন্য এত সফটওয়্যার এর প্রয়োজন নেই। আপনি যদি মায়া শিখেন তাহলে অন্য সফটওয়্যারগুলো এখন নাহলেও চলবে। তাই এটাই ভাল মত শিখুন।
    ধন্যবাদ। 🙂

kotha theke 3d animation professionally shikte pari? kono Institution best Dhaka or Ctg?

mx player for pc Thanks for sharing it.

অসাধারণ পোস্ট,
গুরু, আসলামু আলাইকুম
আমি এ্যানিমেশন/কার্টুন মুভি শিখতে চাই। ইন্টারনেটে ঘেটে বহুত ইংরেজী পোষ্ট পরেছি। কিন্তু ”বিনে স্বদেশী ভাষা, মিটে কি আশা?” তাই আপনার লিখাটির মাধ্যমে আমি অনেক কিছু বুঝলাম ও শিখলাম।
দয়া করে আমাকে হেল্প করবেন প্লিজ: আমি “মায়া” দিয়ে এ্যানিমেশন শিখতে চাই, এ জন্য আমাকে প্রথমে কিভাবে শুরু করতে হবে। আর নিচে আমার পিসি কনফিগারেশন দিলাম।

মনিটর : 21.5″
Process: cor i3
Mother board: Gigabyte M61
Ram: DDR3 , 2GB
HDD: 1TB
Windows: Win7, X64 bit

এই কনফিগারেশন দিয়ে কি কাজ করা যাবে নাকি আরো কিছু বর্ধন করা লাগবে।

উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম..
মো: হারুন উর রশিদ,
01723-742011.

    র‍্যাম যতটুকু পারেন বাড়ান। শেখার জন্য হলে এই পিসিতেই শুরু করে দিন। পরে আস্তে আস্তে ভাল কনফিগারের কম্পিউটার কিনে নিয়েন।

    আর শুরুতেই মায়া শেখা বেশ কঠিনই মনে হতে পারে। তাই শুরুটা ফটোশপ দিয়ে করতে পারেন। আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন প্রফেশনাল সফটওয়্যার কিভাবে কাজ করে। তারপর মায়া তে ডুব দিন।

ফটোশপে ইনশাআল্লাহ কোন প্রকার সমস্যা নাই। শুধু বলেন এ্যানিমেশন তৈরিতে ফটোশক দিয়ে কি কাজ করতে হবে।

ফটোশপে ইনশাআল্লাহ কোন প্রকার সমস্যা নাই। শুধু বলেন এ্যানিমেশন তৈরিতে ফটোশপ দিয়ে কি কাজ করতে হবে।