ওপেন এআই সম্প্রতি তাদের লেটেস্ট ও সবথেকে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রযুক্তি GPT-4o (GPT-4 Omni) কে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। ওপেন এআই এর এই পাওয়ারফুল নতুন ভার্সন নিয়ে চলছে নানান আলোচনা এবং সমালোচনা। কেউ কেউ ভাবছে এই শক্তিশালী এআই প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব ফেলবে। কর্মসংস্থান কমতে পারে আশঙ্কাজনক ভাবে। বিশেষ করে শিক্ষা, কাস্টমার সার্ভিস এবং অনুবাদ এই তিন সেক্টরে GPT-4o (GPT-4 Omni) সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয় বরং কর্মক্ষেত্রে GPT-4o (GPT-4 Omni) এর আগমন ঘটবে সহায়ক হিসেবে। GPT-4o (GPT-4 Omni) সত্যিই কি সহায়ক হিসেবে আসছে নাকি কর্মসংস্থানের সংকট নিয়ে আসছে? জানতে হলে পুরো টিউনটি পড়তে হবে। চলুন ধারণা নেয়া যাক GPT-4o (GPT-4 Omni) এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
GPT-4o (GPT-4 Omni) হলো ChatGPT এর নতুন সংস্করণ যাকে ভয়েস ও ভিডিও ইন্সট্রাকশন এর মাধ্যমে পরিচালনা করা যায়। অর্থাৎ ChatGPT এর টেক্সট ভার্সন এর সাথে এখানে ভয়েস ও ভিডিও এক্সট্রা ফিচার হিসেবে যুক্ত হয়েছে। তাছাড়া এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কথা এবং কন্ঠস্বর শুনে মানুষের অনুভূতি, আবেগ বুঝতে পারে। এমনকি সে নিজেও বাস্তব মানুষের মতো আবেগ প্রদর্শন করতে পারে। হ্যাঁ, অবাস্তব মনে হলেও এটাই সত্যি।
তাছাড়া এটি রিয়াল টাইম ক্যামেরার মাধ্যমে দৃশ্যপট দেখতে সক্ষম। ফলে ভিডিও ফুটেজ এর মাধ্যমে GPT-4o (GPT-4 Omni) কে ইনপুট দেয়া সম্ভব। ঠিক তেমনই ইনপুট এর সাথে তাল মিলিয়ে লেটেস্ট এই এআই ভয়েস, টেক্সট কিংবা ভিডিও আকারে আউটপুট দিতে পারে। এই বিশেষ আবিষ্কারকে তুলনা করা যেতে পারে ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া Scarlett Johansson এর ‘Her’ সিনেমার ভয়েস এআই এর সাথে। এক সময়ের কল্পকাহিনি বর্তমানে বাস্তবে রূপ নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে!
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ GPT-4o (GPT-4 Omni)
ইন্টারনেটে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে GPT-4o (GPT-4 Omni) এর ডেমো প্রদর্শন করেছে ChatGPT কর্তৃপক্ষ। যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে GPT-4o (GPT-4 Omni) এর ব্যবহারের গুরুত্ব উঠে এসেছে৷ এছাড়া যে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস এর জন্য এখন GPT-4o (GPT-4 Omni) এর ব্যহার করা যাবে। তাছাড়া একাধিক ভাষায় অনুবাদের জন্য আপনি পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে পারবেন এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী টেকনোলজির ওপরে।
তাছাড়া যে কেউ ব্যক্তিগত কাজকে আরও বেশি সহজ করার জন্য ওপেন এআই এর এই আপডেট ভার্সন ব্যবহার করতে পারবে। যেমন নিজের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে GPT-4o (GPT-4 Omni) কে কাজে লাগাতে পারবে। যেমন ফোনকল পরিচালনা, দৈনন্দিন কাজের রুটিন তৈরি, সিদ্ধান্ত গ্রহন, ডকুমেন্টস সেটআপ ইত্যাদি কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে এই ওপেন এআই এর সাহায্যে। তাছাড়া পড়াশোনা বিষয়ক কোনো সমস্যা সমাধানে সরাসরি ওপেন এআই এর সহায়তা নিতে পারবেন। বিভিন্ন গানিতিক সমস্যার সমাধান, যে কোনো টপিক বিশ্লেষন করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে GPT-4o (GPT-4 Omni) এর থেকে।
সবমিলিয়ে বলা যায় সময়সাপেক্ষ যে কোনো জটিল কাজ GPT-4o (GPT-4 Omni) এর মাধ্যমে খুব সহজেই সম্পন্ন করা যাবে। মানুষের সময় বাঁচিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। ফলে এই সময়টুকু নতুন কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের পেছনে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বহুল ব্যবহৃত জনপ্রিয় টুল হিসেবে কাজ করবে GPT-4o (GPT-4 Omni)। কিন্তু তারমানে এই না যে শিক্ষকদের আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। শিক্ষকের অনুপস্থিততে শিক্ষার্থীরা যে কোনো জটিল সমস্যা সমাধানে GPT-4o (GPT-4 Omni) এর শরণাপন্ন হতে পারবে৷ যে কোনো জটিল সমস্যা ধাপে ধাপে সমাধান করতে পারে বিশেষ এই ওপেন এআই টুল। তবে যে কোনো টেকনোলজির একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে আর এজন্যই প্রয়োজন হবে আমাদের বাস্তব শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের ডেইলি রুটিন তৈরি, জটিল পাঠ্যসূচিকে সহজ ভাবে উপস্থাপন, ইংরেজি পাঠকে ট্রান্সলেট করে সহজ ভাবে বুঝতে সহায়তা করবে GPT-4o (GPT-4 Omni)। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওপেন এআই এর সমাধান বুঝতে কষ্ট হতে পারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তাদের এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে একজন শিক্ষক। তাছাড়া শিক্ষক হচ্ছেন ছাত্র ছাত্রীর আইডল। তারা পড়াশেনার পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষা দেন, , সদাচরণ শেখান, সঠিক গুনাবলি অর্জন করতে জোড় দেন, সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পড়া আদায় করে নেন।
পড়া বুঝতে সহায়তা করলেও ওপেন এআই শিক্ষকদের মতো আদর্শ শিক্ষা দিতে পারে না। জোরপূর্বক পড়া আদায় করতে পারে না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহী হওয়ার জন্য মোটিভেশান দিতে পারে না। সুতরাং ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি শিক্ষকের গুরুত্ব সব সময়ই বহাল থাকবে। কেননা একজন শিক্ষক ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব কল্পনা করাই অসম্ভব।
GPT-4o (GPT-4 Omni) কাস্টমার সর্ভিস এর জন্য আদর্শ একটি টেকনোলজি। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টাই এই প্রযুক্তি কাস্টমার সার্ভিস দিতে পারবে। যথাযথ তথ্য সরবরাহ করা থেকে শুরু করে যে কোনো সমস্যার সমাধান তুলনামূলক কম সময়ে করতে পারবে GPT-4o (GPT-4 Omni)। এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এই সেক্টরে যে মানুষগুলো কাজ করছে তাদের কী হবে? আসলে GPT-4o (GPT-4 Omni) কাজের ধরন পরিবর্তন করবে কিন্তু কর্মসংস্থান ধ্বংস করবে না। কারন কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি এর থেকেও কোনো ভালো সেক্টরে কাজ করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর সুযোগ পাবে৷
কাস্টমার সার্ভিস দেয়া আসলে ক্রিয়েটিভ কোনো কাজ নয়৷ একজন কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি শুধু তার সময়ের মূল্য পাচ্ছে। মানুষের সময়ের মূল্য এতো কম হওয়া আসলে বাঞ্ছনীয় নয়। তাদের দ্বারা পৃথিবী আরও প্রোডাক্টিভ কিছু আশা করে। তাই এই সেক্টরে সময় অপচয় না করে একজন কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি ক্রিয়েটিভ কোনো সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
এদিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায় GPT-4o (GPT-4 Omni) কর্মক্ষেত্রকে শুধু পরিবর্তন করছে। মানুষ যতো বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হবে টেকনিক্যাল সেক্টরে ততোই লোকবল বেশি প্রয়োজন হবে। তাই সাধারণ কর্মসংস্থান গুলো পরিবর্তিত হয়ে চলে যাচ্ছে টেকনিক্যাল সেক্টরে। সুতরাং এটা বলা যেতেই পারে যে GPT-4o (GPT-4 Omni) কর্মসংস্থান নষ্ট করছে না বরং কাজের নতুন নতুন সেক্টর তৈরি করছে।
GPT-4o (GPT-4 Omni) এর ৫০ টিরও বেশি ভাষার ওপরে দখল রয়েছে৷ তাই এই প্রযুক্তি খুব দ্রুত ট্রান্সলেশন করতে পারে৷ এক ভাষা থেকে পুরো একটি স্ক্রিপ্ট খুব দ্রুত অন্য ভাষায় রূপান্তর করে দিতে পারে GPT-4o (GPT-4 Omni)। তাহলে কি অনুবাদক দের কর্মসংস্থান নিয়েও টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেল? কী হবে অনুবাদক দের ভবিষ্যৎ?
আসলে মেশিন ট্রান্সলেশন কখনোই হিউম্যান ট্রান্সলেশন এর অনুরূপ হয় না। হিউম্যান ট্রান্সলেশন এর প্রয়োজন আজীবন থাকবে৷ হয়তো তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হলে আমরা GPT-4o (GPT-4 Omni) এর সহায়তা নিতে পারি। কিন্তু অনুবাদের ভাষাকে প্রাণোচ্ছল ভাবে প্রকাশ করতে একজন অনুবাদক এর বিকল্প নেই। বিশেষ করে একটি আঞ্চলিক লেখার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো অনুবাদের মাধ্যমে এআই কখনও পরিপূর্ণ রূপ দিতে পারে না।
তাই অনুবাদের জগতে GPT-4o (GPT-4 Omni) বিল্পব নিয়ে আসলেও অনুবাদক দের কর্মসংস্থানে এর প্রভাব খুব বেশি পড়বে না বলেই আশা করা যায়। তবে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত কাজ চালানোর জন্য GPT-4o (GPT-4 Omni) এর বিকল্প নেই। এর সাথে প্রতিযোগিতায় নামবে এমন প্রযুক্তি এখনও উদ্ভাবন হয়নি। তবে মানব মস্তিষ্ক ও অভিজ্ঞতার থেকে এর অভিজ্ঞতা নেহায়েত কম।
আপনি এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে GPT-4o (GPT-4 Omni) আপনার জব কিলার হতে যাচ্ছে না। এআই বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে GPT-4o (GPT-4 Omni) এর ব্যবহার করেও থাকে তবুও খুব শীঘ্রই কর্মক্ষেত্রে মানুষের চাহিদা কমার সম্ভাবনা নেই। এটা নিশ্চিত যে কাজের ক্ষেত্র ও পরিধি দিন দিন পরিবর্তন হবে। সময়সাপেক্ষ কাজগুলো এআই এর সহায়তায় দ্রুত করিয়ে নিতে পারলে মানুষ তার গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু অন্যান্য ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যয় করতে পারবে। তাই GPT-4o (GPT-4 Omni) কে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে ভুল করা উচিত না৷
বরং GPT-4o (GPT-4 Omni) হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহায্যকারী টুল যা আমাদের ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাজকে আরও সহজ করে তুলবে। সুতরাং GPT-4o (GPT-4 Omni) কে সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। পাশাপাশি টেকনিক্যাল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে ভবিষ্যৎ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। কেননা দিন দিন কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়ে তা টেকনিক্যাল সেক্টরের দিকে বেশি অগ্রসর হচ্ছে। তাই আপনি যতো নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন ততোই আপনার চাকরির নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে।
আশাকরি GPT-4o (GPT-4 Omni) সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারণা পেয়ে গেছেন৷ শিক্ষা, পরিসেবা এবং অনুবাদ সেক্টরে যদিও এই প্রযুক্তি বৈপ্লবিক প্রভাব ফেলবে কিন্তু এটা কোনো ভাবেই জব কিলার হয়ে উঠবে না। বরং আমাদের জীবনের জন্য একটি সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহৃত হবে GPT-4o (GPT-4 Omni)। তাই প্রযুক্তির এই নতুন যাত্রায় নিজেকে সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।