বর্তমান সময়ে আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কথা প্রায়ই শুনে থাকি। কম্পিউটার সাইন্স এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যাকে সংক্ষেপে AI বলা হয়। বাংলায় এটিকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এআই এর আগমনের ফলে বর্তমানে অসংখ্য কাজ কম্পিউটার এর সাহায্যে অনায়াসেই করিয়ে নেয়া যায়। এটি মানুষের মতো জ্ঞান খাটিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত করতে পারে।
তবে অনেকেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাথে এখনও তেমন ভাবে পরিচিত না। হয়তো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এআই এর ব্যবহার আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি করে থাকি কিন্তু এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই অবগত নই। আজকের টিউনের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ যে বুদ্ধিমত্তা মানুষের হাতেই তৈরি হয়েছে। অথচ এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের থেকেও ভালো কাজ করতে পারে। ২০২০ সালের পর থেকে চালু হওয়া প্রায় প্রতিটি ডিজিটাল প্রোডাক্টেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই ব্যবহার করা হয়েছে। যে কোনো জটিল সমস্যার কারণ উদঘাটন করে এটির সম্ভাব্য সমাধান এক মুহূর্তেই বের করতে পারে এআই। অর্থাৎ মানুষ যেমন নতুন নতুন পরিবেশে অভিনব কৌশলে সমস্যার সমাধান করে ঠিক একই ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও নিজে থেকেই যে কোনো পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান বের করতে পারে।
কম্পিউটার সফটওয়্যার, মোবাইল এপ্লিকেশন, রোবোটিকস সহ সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসে এখন কমবেশি এআই এর ব্যবহার রয়েছে। এখন ডিজিটাল ডিভাইস এর বেশিরভাগ কাজের ক্ষেত্রেই বার বার কম্পিউটার প্রোগ্রামকে নির্দেশনা দিতে হয় না। এআই নিজে থেকেই সম্ভাব্য কাজের ধারণা নিয়ে তা করতে থাকে৷ ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব কোডিং, লেখালেখি সহ প্রায় সকল কাজেই এআই এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ভবিষ্যতে মানবজীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে চলেছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
ইতোমধ্যে আমাদের জীবনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যপক প্রভাব পড়েছে। জানা অজানা অনেক কাজেই আমরা এআই এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছি। চলুন এআই এর কয়েকটি অভিনব ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এআই এর যে সেক্টর টি সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় তা হলো ChatGpt। ChatGpt ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বিষয়ক যে কোনো জটিল সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করতে পারে। যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বের করে নিতে পারে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার শিডিউল তৈরি, নোট তৈরি ও অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির মতো সৃজনশীল কাজগুলোও এআই এর সাহায্যে করিয়ে নেয়া যায়। ফলে পড়াশোনা বিষয়ক সমস্যা গুলো সহজেই সমাধান করা যায় তাও আবার মানব মস্তিষ্কের কোনো প্রকার প্রয়োগ ছাড়াই।
তাছাড়া গুগল বর্তমানে এর অধিকাংশ ফিচার এআই এর মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে। যেমন ট্রান্সলেশন, টেক্সট টু ভয়েস ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত এই সকল ফিচার ব্যবহার করে পড়াশোনাকে আরও সহজ করে নিয়েছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে এআই খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও ইতোমধ্যে পুরো বিশ্বজুড়ে এটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। তবে বর্তমানে এআই এর সাহায্যে রোগীর অতীতের চিকিৎসা রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া রোগীর ওপর নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি রাখতে এআই এর বিকল্প নেই বললেই চলে। ক্লিনিক্যাল পরিক্ষার রিপোর্ট ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার ফলাফল যাচাই করার ক্ষেত্রেও বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান এআই ব্যবহার করছে। কেননা মানুষের চোখে অনেক কিছুই ধরা নাও পড়তে পারে যা এআই খুব সহজেই ধরে ফলেতে পারে।
মেডিসিন সেক্টরে খুব শীঘ্রই এআই এর ব্যবহার শুরু হতে যাচ্ছে বলে আশা করা যায়। রোগীর লক্ষণ ও রিপোর্ট দেখে তার সাথে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ সাজেস্ট করতে পারবে এআই। এভাবে সার্জারিতে যেখানে রোবোটিকস এর সহায়তা নেয়া হয় সেখানে এআই এর সুবিধা জুড়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। বলা যায় অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এআই চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ায় এআই এর ঝড় সবথেকে বেশি লক্ষ করা যায়। যে কোনো সাধারণ মানুষ এআই সফটওয়্যার ব্যবহার করে চমৎকার সব ফটো এডিট করে নিচ্ছে। কেউবা সরাসরি একটি নতুন ছবি তৈরি করে ফেলছে। যেখানে আগে একটা পারফেক্ট ফটো এডিটিং করতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগতো সেখানে এখন কয়েক সেকেন্ডেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেটি করে দিচ্ছে।
Cotout, Adobe Firefly, Clipdrop সহ অনেক ফটো এডিটিং ওয়েবসাইট রয়েছে। এই ওয়েবসাইট এর বেশিরভাগ ফিচার এআই দ্বারা পরিচালিত। তাই এসকল ওয়েবসাইট ব্যবহার করে খুব সহজেই ফটো এডিট করা যায়।
এআই দিয়ে ভিডিও তৈরি করা এখন অভিনব কোনো বিষয় নয় বললেই চলে। এখন যে কেউ চাইলেই এআই দিয়ে এনিমেশন ভিডিও, ব্লগ ভিডিও, গেমিং ভিডিও সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিডিও তৈরি করতে পারে। সার্চ ইঞ্জিনে প্রবেশ করে এআই ভিডিও এডিটিং টুল লিখে সার্চ দিলেই নানান ওয়েবসাইট ও ভিডিও এডিটিং App আপনার সামনে চলে আসবে। সুবিধামতো যে কোনো টুল ব্যবহার করে আপনি ভিডিও এডিট করতে পারবেন এবং একদম নতুন নতুন ভিডিও তৈরিও করতে পারবেন৷
বর্তমান সময়ে লেখালেখির কাজে সবথেকে বেশি এআই এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ChatGpt হলো এর সবথেকে ভালো উদাহরণ। এটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ব্লগ সাইটের জন্য আর্টিকেল লেখাতে পারবেন, অফিসের রিপোর্ট, এসাইনমেন্ট তৈরি বা যে কোনো লেখালেখির কাজ করে দেবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এমনকি এটি ব্যবহার করে আপনি গল্প, কবিতা কিংবা গানও লিখিয়ে নিতে পারবেন৷
ChatGpt আপনার ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করবে। যে কোনো সমস্যা সম্পর্কে অবগত করলে এটি আপনার সমস্যার জন্য একটি উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও আপনি এআই এর সাহায্য নিয়ে আইডিয়া সংগ্রহ করতে পারবেন৷ মোটকথা যে সমস্যা গুলো লিখিত আকারে সমাধান করা যায় বা যে কাজগুলো লেখালেখি সম্পর্কিত তার সবকিছুই আপনি ChatGpt ব্যবহার করে সম্পন্ন করতে পারবেন।
এই তো গেলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাধারণ কিছু কাজ যা সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে। তাছাড়া গুগল ম্যাপ থেকে লোকেশন খুঁজে বের করা, জিপিএস সিস্টেম পরিচালনা, একই ধরনের কাজ বারবার রিপিট করা সহ অনেক কাজ রয়েছে যা এআই এর সাহায্যে ইতোমধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। মোটকথা বর্তমান সময়ের প্রায় বেশিরভাগ কাজেই এআই এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা সম্পর্কে হয়তো ইতোমধ্যেই অনেকে জেনে গেছেন। কোননা এতো এতো কাজে এআই ব্যবহার করা হয় মূলত এর সুবিধার কারনেই। তাই আলাদা করে উল্লেখ না করলেও হয়তো বুঝতে পারছেন এর সুবিধা গুলো কী কী হতে পারে। তবুও এর উল্লেখযোগ্য সুবিধা গুলো সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেয়া যাক।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সবথেকে বড় সুবিধা হলো এটি কাজের মধ্যে কখনও ভুল করে না। শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে সম্পূর্ণ কাজটি সম্পাদনা করে সঠিক আউটপুট দিতে পারে। যেখানে মানব মস্তিষ্ক কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে ভুল করার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনোই এই ধরনের ভুল করে না। এটি সত্যিই একটি সময়োপযোগী আবিষ্কার বলা চলে।
বিগত কয়েকটি বিষয়বস্তু বা ঘটনার রিপোর্ট দিলে তা বিশ্লেষণ করে এআই আপনাকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করবে। কিংবা কোনো কাজের নির্দেশনা সঠিক ভাবে দিলে ঐ নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক উপায়ে অনবরত কাজ করতেই থাকবে। তাই এআই দিয়ে যে কেউ নিশ্চিন্তে কাজ করিয়ে নিতে পারবে তাও আবার শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে।
মানব মস্তিষ্ক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগে শতবার চিন্তা করে। চিন্তা করতে করতে একটা সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না। আবার জীবনের জটিল মুহূর্ত গুলোতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষের পক্ষে একেবারে অসম্ভব বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে এআই আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। যথাযথভাবে তথ্য ইনপুট করলে এআই সহজেই আপনাকে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
তাছাড়া এআই দিয়ে কোনো সিস্টেম পরিচালনা করা হলে সে বিগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন কোনো পরিস্থিতিতে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবে। এদিক থেকে বলা যায় এআই মানব মস্তিষ্ককে কিছুটা হলেও ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেহেতু একটি কৃত্রিম যন্ত্র বিশেষ তাই এর কোনো ক্লান্তি নেই। একে দিয়ে আপনি দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করাতে পারবেন৷ মানুষ একটানা বেশিক্ষণ কাজ করলে আর কাজ করার শক্তি পায় না। কাজ করলেও শুরুর মতো শতভাগ পারফেক্ট ও নির্ভুল কাজ করতে পারে না৷ কিন্তু এআই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ভাবে একটানা কাজ করতে পারে। এতে তার কাজের কোয়ালিটি কখনোই খারাপ হবে না কিংবা কাজের গতিও কমবে না।
তাই যে সকল প্রতিষ্ঠানে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা প্রোডাক্টিভিটি প্রয়োজন তাদের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুবই উপযোগী একটি প্রযুক্তি৷ এই প্রযুক্তির কল্যানে শতভাগ নির্ভুল ও কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ পাবেন তাও আবার বিরতিহীন ভাবে।
পৃথিবীতে এমন অনেক কাজ রয়েছে যা মানুষের পক্ষে করা একদমই ঝুকিপূর্ণ। যেমন পারমানবিক বিক্রিয়া ঘটানো, আগ্নেয়গিরির ভেতরে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করা, সমুদ্রের গভীর তলদেশ থেকে কোনো বস্তু বা তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আাসা। এই কাজগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব সহজেই করে দিতে পারবে। মানুষের ক্ষেত্রে এই কাজগুলো শতভাগ ঝুকিপূর্ণ হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে সব কাজই এক সমান। তাই রোবোটিকস এর সাথে এআই এর চমৎকার কম্বিনেশন করে এই সকল ঝুকিপূর্ণ কাজ অনায়াসেই করে নেওয়া সম্ভব।
একই কাজ বারবার রিপিট করা সত্যিই খুব বিরক্তিকর বিষয়। মানুষ তো কখনোই এক কাজ বার বার করতে চায় না। যেমন ক্লিনিক্যাল পরিক্ষার রিপোর্ট তৈরি, অফিসের ডকুমেন্টস তৈরি, এসাইনমেন্ট তৈরি, ফটো বা ডিজাইন তৈরি, ভিডিও তৈরি বা যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজ। দেখা যায় এই একই কাজ প্রতিদিন একই ভাবে রিপিট করার প্রয়োজন হয়। আর কাজের সাথে রিলেটেড কর্মীরা বারবার পুনরাবৃত্তি মূলক কাজ করতে করতে বিরক্ত পাশাপাশি সময়েরও অপচয় হতে থাকে।
কিন্তু এআই ক্লান্তিহীন ভাবে এই কাজগুলো সারাদিন রাত ধরেও করতে পারবে। এতে করে মানুষের বিরক্তি যেমন কমবে তেমই মূল্যবান সময়ও বেঁচে যাবে। সুতরাং বলা যায় যে কাজগুলো মানুষের কাছে বিরক্তিকর বা অসম্ভব সেই সকল কাজ এআই এর সাহায্যে এক নিমিষেই করিয়ে নেয়া সম্ভব।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধার যেমন শেষ নেই ঠিক তেমনই এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। সকল সুবিধা প্রদানকারী আবিষ্কারেরই কিছু কিছু অসুবিধা থাকে৷ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-ও এর ব্যতিক্রম কিছু না। তাই চলুন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অসুবিধা সমূহ জেনে নেয়া যাক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমানে কয়েক মিনিটে এমন সব কাজ করছে যা করতে মানুষের আগে এক দিন কিংবা এক সপ্তাহ লেগে যেত। আর এই কাজগুলো করানোর জন্য বিভিন্ন কোম্পানি বেতনভুক্ত কর্মী রাখতো৷ এআই এর আগমনের ফলে এই কাজগুলো যেহেতু এআই দ্বারা করানো হচ্ছে তাই কোম্পানি গুলো এখন আর কর্মী হায়ার করছে না। ফলে অনেক চাকরিজীবী তার কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।
তবে আশার বিষয় হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনার জন্য আবার অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে প্রয়োজন হবে উচ্চ টেকনিক্যাল দক্ষতা ও এআই সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান। তাই কর্মসংস্থান এর এই পরিবর্তনের যুগে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প কিছু নেই।
এআই দিয়ে কোনো কাজ করানোর জন্য চাই শক্তিশালী কম্পিউটার সফটওয়্যার ও এর পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ কর্মী। সেই সাথে উচ্চ মূল্যাের হার্ডওয়্যার সামগ্রী তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে এটি পরিচালনা তুলনামূলক অনেক ব্যয়বহুল। কোনো প্রতিষ্ঠান তার ডিজিটাল প্রোডাক্টে এআই স্থাপন করতে চাইলে তাকে মোটা অঙ্কের মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে। এরপরে সেখান থেকে ধীরে ধীরে সুফল আসা শুরু করবে
এআই এতোদিনে আরও অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হতো কিন্তু এর উচ্চ খরচের কারনে চাইলেই যে কোনো প্রতিষ্ঠান এআই এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না।
এআই এর কাজের মধ্যে নতুন নতুন সৃজনশীলতা আসবে এর সম্ভাবনা পুরোপুরি শূন্য পারসেন্ট। কেননা এআই নিজের বুদ্ধি দিয়ে কোনো কাজই করতে পারে না৷ এটি শুধু ততোটুকুই কাজ করবে ঠিক যতোটুকু এর সিস্টেমে আগে থেকে ইনপুট করা আছে। তাই কাজ করতে করতে নতুন নতুন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন হবে এটা এআই এর কাছ থেকে কখনোই আশা করা যায় না।
অন্যদিকে মানুষ একটি কাজ করার পাশাপাশি কাজটিকে কীভাবে আরেকটু ইউনিক করা যায়, সহজ উপায়ে করা যায়, সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় সেই প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। ফলে তার কাজের মধ্যে থেকে নতুন নতুন সৃজনশীলতা বেরিয়ে আসে৷ কিন্তু এআই এর কাছ থেকে ধরাবাঁধা কাজ ছাড়া আর কিছুই আশা করা যাবে না।
এআই যে কোনো বিষয় সম্পর্কে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ঠিকই কিন্তু তার পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে বিশাল এক কৃত্রিমতা লক্ষ করতে পারবেন। মানুষ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কিংবা কাজ করার আগে যুক্তি তর্কের পাশাপাশি মানবিকতাকে প্রাধান্য দেয়। যার ফলে পৃথিবীটা এখনও এতো সুন্দর। উচিত অনুচিত বিচার করার আগে আবেগ তাড়িত হয়ে মানুষ অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে৷ কিন্তু এআই কখনোই এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কোনো কাজ করবে না কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।
তাই মানুষের পরিবর্তে সকল কাজেই যে এআই ব্যবহার করা যাবে এই চিন্তাভাবনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সবকিছুই যে কৃত্রিমতা দিয়ে করা সম্ভব না তা আমাদের বুঝতে হবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারনে মানুষ দিন দিন অলস হয়ে পড়ছে। বুদ্ধিবল কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন আর কোনো কাজ করতে চাইছে না। ফলে ধীরে ধীরে মানবজাতি অলসতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করল মুহূর্তেই একটি কাজ সম্পাদন করা যাচ্ছে সেখানে কেন বুদ্ধির প্রয়োগ করা হবে, এই হলো বর্তমান যুক্তি।
কিন্তু অলস জাতি কখনোই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারবে না। একটা কাজের পেছনে যখন মানুষ শারিরীক ও মানসিক পরিশ্রম করে তখন এই কাজের মাধ্যমে নতুন নতুন সৃজনশীলতা বেরিয়ে আসে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে এআই এর ওপর নির্ভরশীলতা এই সম্ভাবনাকে কয়েক গুন কমিয়ে দিয়েছে। এটা মানব জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভবিষ্যৎ খুবই সম্ভাবনাময়। ধারণা করা হয়, একটা সময় আসবে যখন বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এআই ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারবে না। এমন সব প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে তৈরি হতে চলেছে যেখানে চব্বিশ ঘণ্টাই প্রোডাকশন চলবে এআই এর মাধ্যমে। মানুষের কাজ হবে শুধু এআই কে পরিচালনা করা। শারিরীক ও মানসিক কসরত এর সিংহভাগ করবে এআই সম্বলিত রোবট।
সুতরাং ভবিষ্যতে এআই প্রজন্মের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে এখন থেকেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে বিস্তর ধারণা ও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। ভবিষ্যত কর্মসংস্থান এর ধরন যেহেতু পাল্টে যাবে এআই এর কল্যাণে তাই আপনাকেও প্রস্তুত থাকতে হবে চ্যালেঞ্জিং এই প্রক্রিয়ার সাথে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য। ক্যারিয়ার নিয়ে সংকটে পড়তে না চাইলে জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি এখন থেকেই কম্পিউটার সাইন্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ওপরে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। কেননা যুগের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করা এখন সময়ের দাবি।
ভালো খারাপ মিলিয়েই এক একটা নতুন বিষয় আমাদের সামনে দিন দিন আসছে। তাই বলে যে আমরা খারাপ দিকগুলো ধরে বসে থাকবো তা কিন্তু নয়৷ খারাপ গুলোকে পেছনে ফেলে ভালোর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারাটাই আসল বিষয়। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভালো দিক গুলোকে সাদরে গ্রহন করে নতুন এক যুগের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে৷
আশাকরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই সম্পর্কে ইতোমধ্যে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। পাশাপাশি এর ব্যবহার সম্পর্কেও অবগত হতে পেরেছেন। নতুন নতুন টেকনিক্যাল বিষয়বস্তু নিয়ে টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন৷ কোনো বিষয় সম্পর্কে জানার থাকলে বা কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই টিউনমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।