এআই AI কী বিপজ্জনক? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ৪ টি তাৎক্ষণিক ঝুঁকি, যেগুলো আপনার জানা উচিত!

Level 15
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বর্তমান সময়ে এআই আমাদের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে হাজির হয়েছে। আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ডিজিটাল গেজেট, মহাকাশ, গবেষণা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং আরো বিভিন্ন সেক্টরে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বুদ্ধিমত্তার এই অভূতপূর্ব বিকাশের ফলে অনেকেই এআই প্রযুক্তিকে বিপদজ্জনক মনে করছেন।

আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে বিপজ্জনক মনে করার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। কেননা, এআই প্রযুক্তির অনেক সুবিধা থাকলেও, এটি মানবজাতির জন্য বেশ কিছু তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নিয়ে এসেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক সুবিধা থাকলেও এটি প্রায় প্রতিটি শিল্পকে ব্যাহত করছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাচ্ছে। তবে, উন্নত প্রযুক্তির ফলে জীবনের অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে উন্নতি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু, তবুও এআই এর কিছু ঝুঁকি রয়ে গিয়েছে। আর তাই, এআই এর সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত গুলোকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, অনেকেই এটি দাবি করেন যে, এগুলো এক ধরনের আশঙ্কাজনক দৃষ্টিভঙ্গি এবং এআই প্রযুক্তির কারণে তাৎক্ষণিক কোন বিপদ নেই।

আজকের এই টিউনে আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এরকম পাঁচটি প্রধান ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো বর্তমানে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

কীভাবে এআই বিপদজনক হতে পারে?

কীভাবে এআই বিপদজনক হতে পারে?

এআই বর্তমানে প্রতিনিয়ত আরো বেশি উন্নত হয়েই যাচ্ছে। আর যে কারণে, অনেকেই এটিকে ঝুঁকি মনে করছেন এবং এআই প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেকের ঐকমতে ঘাটতি রয়েছে।

অনেকেই সাধারণত যে দুইটি কারণে এআইকে বিপজ্জনক মনে করে কিংবা যে দুটি কারণেই এই বিপজ্জনক হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

Malicious কোন কিছু করার জন্য AI কে প্রোগ্রাম করা হয়েছে।

এআই কে উপকারী কোন কিছু করার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে, কিন্তু অনেকেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এটি দিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজ করে নিতে পারে।

যদিও অনেকেই এমনটি মনে করেন যে, যদি এই প্রযুক্তি সুপার ইনটেলিজেন্ট হয়ে যায়, ‌তাহলে এটি সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কিন্তু, এটি একটি কাল্পনিক ভাবনা, যা আসলে সত্য না। ‌কিন্তু আমরা এআই প্রযুক্তির এই ভাবনা নিয়ে কথা বলছি না। বরং, বর্তমানে যে আমাদের কাছে এআই রয়েছে, সেগুলোর কারণে ও আমরা কিছু তাৎক্ষণিক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি। ‌তাহলে, ‌এআই এর কারণে আমরা কোন ঝুঁকি গুলোর সম্মুখীন হই এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে আমাদের সামনে কী কী বিপদজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে, চলুন সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।

১. কাজের অটোমেশন এবং চাকরির ব্যাঘাত

কাজের অটোমেশন এবং চাকরির ব্যাঘাত

অটোমেশন হলো এআই এর একটি বিপদ, যা ইতিমধ্যেই বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। বর্তমানে উৎপাদনমূখী কারখানা গুলো তাদের ব্যাপক উৎপাদনের জন্য Self-serve Checkouts থেকে শুরু করে Self-driving গাড়ি পর্যন্ত এআই ব্যবহার করছে। আর কয়েক দশক ধরে অটোমেশন এর প্রক্রিয়াটি অনেক ত্বরান্বিত হয়েছে।

২০১৯ সালে Brookings Institution এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আগামী বছরগুলোতে অটোমেশনের কারণে ৩৬ মিলিয়ন চাকরি উচ্চ ঝুঁকিতে থাকতে পারে। এর অন্যতম বড় কারণ হলো, এমন অনেক কাজে এআই সিস্টেমগুলো মানুষকেও ছাড়িয়ে যায়। আর এটি একবার ফ্যাক্টরিতে স্থাপন করা হলে, এগুলো মানুষের চেয়ে সস্তা এবং আরো দক্ষ উপায়ে সঠিক কাজটি করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে এআই চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে এবং বিভিন্ন জালিয়াতি সনাক্তকরণে দারুণভাবে দক্ষ হয়ে উঠেছে।

অনেকেই এমনটি বলে থাকেন যে, এআই প্রযুক্তি এর কারণে যে চাকরির বাজার হারাচ্ছে, এক্ষেত্রে আবার নতুন চাকরির বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে যাদের চাকরীচ্যুত হচ্ছে, তারা প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে এআই সেক্টরে নতুন চাকরির জন্য অযোগ্য থেকে যাচ্ছে। সেজন্য অবশ্যই সেসব মানুষকে নতুন করে আরো দক্ষ হওয়া প্রয়োজন, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করা সম্ভব হচ্ছে না।

এআই সিস্টেমের উন্নতি অব্যাহত থাকার কারণে, তারা মানুষের তুলনায় অনেক বেশি কাজে পারদর্শী হয়ে উঠবে। তবে, সকল কাজে কিন্তু এআই প্রযুক্তির প্রভাব পড়বে না। তবে, যে সেক্টরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেকে চাকরি যাবে এবং তারা প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না, এক্ষেত্রে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কাজের ব্যাঘাতের ফলে সামাজিক বৈষম্য বাড়তে পারে এবং এমনকি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও হতে পারে।

২. এআই ম্যালওয়্যার

এআই ম্যালওয়্যার

এআই সিস্টেমগুলো বর্তমানে সিকিউরিটি সিস্টেম এবং এনক্রিপশন ক্রাকিং এ আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠছে। এমনটি ঘটনার পেছনে অন্যতম কারণ হলো, বেশিরভাগই এই সিস্টেমগুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়, যা নতুন প্রাপ্ত ডেটা থেকে নিজে শিখতে পারে। আর এ কারণেই এটি অনেক কারণে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কেননা, অনেকেই বিভিন্ন ম্যালওয়্যার ও প্রোগ্রামগুলোর ত্রুটি খোঁজার জন্য এআই এর সাহায্য‌ নেয়।

কিন্তু, এই সুযোগে এআই নতুন করে শিখছে। এক্ষেত্রে, এআই যখন নতুন করে দূষিত প্রোগ্রাম গুলো শিখে নেয়, তখন অনেক প্রোগ্রামার বিভিন্নভাবে এর প্রাইভেসি সিস্টেমকে ভুল বুঝিয়ে নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য দূষিত প্রোগ্রাম লিখে নিতে পারে। এমনকি, সাইবার অপরাধীরা ম্যালওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে এআই কে ব্যবহার করতে পারে। যা, এআই প্রযুক্তির একটি বিপজ্জনক দিক।

৩. অটোমেটেড অস্ত্র তৈরিতে এআই এর ব্যবহার

অটোমেটেড অস্ত্র তৈরিতে এআই এর ব্যবহার

বর্তমানে এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত বিশ্বের সামরিক বাহিনীরা যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করছে। আর এআই প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি করা অটোমেটেড যুদ্ধাস্ত্র গুলো মানবতার বিরুদ্ধে যায়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর ইতিমধ্যেই তাদের সামরিক ড্রোনের মত বিভিন্ন অস্ত্রগুলোতে এআই নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম ব্যবহার করছে।

আর এসব অস্ত্রগুলোতে এ আই সিস্টেম ব্যবহার করার কারণে, এগুলো পূর্বে চাইতে আরো বেশি ধ্বংসাত্মক এবং মানব বিপর্যয় ডেকে আনছে। কেননা, এগুলো পূর্বের চাইতে আরো অনেক বেশি কার্যকর, যা তাদের টার্গেট করা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সফল হয়।

তাহলে কল্পনা করুন, আমরা যখন AI কে কোন মানবিক ইনপুট ছাড়াই জীবন ও মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দেওয়া শুরু করি, তখন এটি কতটা জঘন্য কাজ হতে পারে? কোনভাবে যদি এই প্রযুক্তি ভুল লোকের কাছে যায় কিংবা অন্যায় ভাবে এরকম প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়, তাহলে কোন একটি জাতি কিংবা দেশের জন্য কীরকম নিরাপত্তা ঝুঁকি হতে পারে?

অটোমেটেড যুদ্ধাস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি সত্যিই অনেক বিপদজ্জনক। যা কোন এলাকা বা দেশের মানব সমাজকে একেবারে ধংস্ব করে দিতে পারে।

৪. ডিপফেক এবং ফেক নিউজ তৈরি

ডিপফেক এবং ফেক নিউজ তৈরি

এআই প্রযুক্তির কারণে এবং ফেক নিউজ এর পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কোন একজন মানুষের হুবহু নকল ভিডিও তৈরি করা সম্ভব হয়, যা অনেককেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। ডিপফেক এর কারণে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সেলিব্রিটি এবং বিশ্ব নেতারা প্রভাবিত হয়েছে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অনেকের নকল ভিডিও তৈরি করা হয়েছে, যা তাদের নিয়ে অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

যদিও সাধারণ মানুষেরা এখনো পর্যন্ত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিপফেক ভিডিও এর সম্মুখীন হচ্ছেন না। কিন্তু, স্ক্যামাররা ইতিমধ্যেই ফেসবুক প্রোফাইলের মতো ছবি ব্যবহার করে ভিডিও এবং নকল ফটো তৈরি করে লোকদেরকে ব্ল্যাকমেইল করছে। ‌তাহলে, এবার কল্পনা করুন যে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি আপনার ভিডিও বা ফটো ব্যবহার করে একটি নকল বিব্রতকর ভিডিও তৈরি করা হয়, তাহলে বিষয়টি কেমন হবে?

এআই ফটো দিয়ে আরো একটি নতুন ফটো এবং সেটির যাবতীয় এডিট করতে পারে। এমনকি এটি মানুষের ভয়েস নকল করতে পারে। আর আমরা ইতিমধ্যেই ডিপফেক এবং ভয়েস ক্লোনিং এর মত বিষয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি।

শেষ কথা

প্রত্যেক প্রযুক্তির ভালো দিক এবং খারাপ দিক গুলোর মতো এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ও অনেক বিপদজ্জনক দিক রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে এ ধরনের ঝুঁকি গুলো সবসময় আমাদের সামনে রয়েছ। যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের বিভিন্ন কাজের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্য প্রযুক্তির মতো এই শক্তিশালী প্রযুক্তি ও সবসময় অপব্যবহার এর ঝুঁকিতে রয়েছে।

আর যে কারণে, এআই এর কারণে এ ধরনের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপজ্জনক হবে কিনা, এটি নির্ভর করছে, আমরা এটিকে কোথায় ব্যবহার করব।

Level 15

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস