নির্মাণ শিল্পে অত্যাধুনিক পাঁচ প্রযুক্তি

নির্মাণ শিল্প দিন দিন প্রসার লাভ করছে। পরিবর্তনের ধারায় এ শিল্পেও দিন দিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। নির্মাণ কোম্পানীগুলোও প্রতিযোগিতায় নিজেদের পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে কর্মযজ্ঞে প্রতিনিয়তই যোগ করছে নানা প্রযুক্তি। সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক জীবনযাত্রায় এসব প্রযুক্তি নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ।

এক্ষেত্রে এই শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক, মালিক এবং ব্যবস্থাপকদেরও নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারে হালনাগাদ থাকতে হবে। কোম্পানীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইওটি, বিগ ডাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগুলোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগ ও চর্চা করতে হবে।

এই আধুনিক সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত থাকলে কোম্পানীর বিশেষ কোন উপকার না হলেও কিছু কম লাভ হওয়ার সম্ভাবনাতো থাকছেই।

মডিউলার পদ্ধতিতে বিল্ডিং নির্মাণ

এক.
মডিউলার বিল্ডিং পদ্ধতি
মডিউলার বিল্ডিং পদ্ধতি বলতে আসলে বিশেষ কিছুই নয়। এটি এক ধরনের সংযোজন পদ্ধতি বলা যেতে পারে। ভবন নির্মাণে আমরা সাধারণত যে উপায় অবলম্বন করে থাকি তার মধ্যে প্রথমেই বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা হয় তারপর কাঙ্খিত ডিজাইন অনুযায়ী তা ধীরে ধীরে নির্মাণ করা হয়। প্রথমে নীচতলা, পরে দ্বিতীয় তলা এভাবে যত খুশি তত। এটিই হলো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি। এতে অনেক সময় দরকার। দরকার প্রচুর লোকবল। আবাহাওয়ার উপর নির্ভর করা দরকার। ফাউন্ডেশন তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার এবং আরো অনেক কিছু। প্রযুক্তি আমাদের এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে বর্তমানে কোন ভবন নির্মাণে এত কিছু করার কোন দরকারই নেই। তাই সময়, ব্যয় এবং বাড়তি নিরাপত্তার জন্য মডিউলার পদ্ধতি অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন। এ পদ্ধতি হলো বিল্ডিংয়ের ছোট ছোট পার্ট আলাদা আলাদা করে নির্মাণ করে পরে একসাথে জুড়ে দেয়ার পদ্ধতি। তাই নির্মাণ পদ্ধতি একই থাকে শুধু ডিজাইন এবং সংযোজন করতে হয় বুঝে শুনে। ধরে নেয়া যাক একটি ফ্লোর বানানো হবে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ইউনিট এবং সিড়ি আলাদা আলাদা নির্মাণ করতে হবে। ততক্ষণে ফাউন্ডেশনও হয়ে যাবে। ফাউন্ডেশন সম্পন্ন হলে আলাদা বানানো সিড়ি ও ইউনিটগুলো ডিজাইন অনুযায়ী ফাউন্ডেশনের উপর প্রতিস্থাপন করতে হবে। তাই এই পদ্ধতি অবলম্বনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৌশলগত নকশা করা। ডিজাইনার যত কৌশলী হবে কনস্ট্রাকশন তত সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে। এ পদ্ধতি অনেক সুবিধা রয়েছে:

  • সময় সাশ্রয়ী। এই পদ্ধতি ঐহিত্যবাহী নির্মাণ পদ্ধতির চেয়ে কমপক্ষে ৩০-৪০ শতাংশ সময় বাঁচাবে। এই পদ্ধতি অফ সাইট নির্মাণ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। যেখানে বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে ছোট ছোট পার্টগুলো সেখানে নির্মাণ না করে অন্যস্থানে নির্মাণ করা হবে তাই ঝামেলা অনেক কম থাকে।
  • কারখানা, ইনস্টিটিউট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কাজের কোন ক্ষতি হয় না মডিউলার পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে। এর জন্য ব্যবসা, কারখানা, স্কুল কলেজ কিংবা যে কোন নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয় না। গবেষণা অনুযায়ী প্রায় ৮০ শতাংশ কার্যক্রম চালু রেখেই এই পদ্ধতিতে নুতন নতুন ভবন নির্মাণ করা যায়।
  • এই পদ্ধতিতে নির্মিত ভবনগুলোর প্রত্যেক অংশ আলাদা আলাদা থাকে। তাই ভূমিকম্প কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই ধরনের ভবনের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
  • প্রত্যেকটি অংশ আলাদা আলাদা স্থানে নির্মাণ করায় এক অংশের বেচে যাওয়া উপকরণ অন্য অংশে ব্যবহার করা যায় তাই অপচয় রোধ করে ব্যয় কমানো যায়।
থ্রিডি প্রিণ্টারে নির্মাণাধীন বাড়ি

দুই.
থ্রিডি প্রিন্টার
ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কেউ ভাবছে ভবিষ্যতে কী হবে আর কেউ ভাবছে ভবিষ্যতে কী করবে। দিন দিন বাড়ছে প্রযুক্তির উৎকর্ষ। রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। এই শতাব্দীতেও বাড়ছে রোবটের নানাবিধ ব্যবহার। নির্মাণ কাজেও কম ব্যবহার হয় না তবে এতদিন রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ভাস্কর্য নির্মাণে সীমাবদ্ধ ছিলো রোবটিক যন্ত্রপাতি। নির্মাণের সাথে জড়িত সবচেয়ে আধুনিক যন্ত্রের নাম থ্রিডি প্রিণ্টার। থ্রিডি প্রিণ্টারে খুব কম সময় আর স্বল্প খরচেই নির্মাণ করা যায় উন্নতমানের রাস্তা, ব্রিজ। তবে এবার বিল্ডিং নির্মাণেও ব্যবহার হচ্ছে থ্রিডি প্রিণ্টার। প্রযুক্তি দিন দিন অগ্রগামী। বিল্ডিং নির্মাণে থ্রিডির ব্যবহারে আরও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত গবেষক, নির্মাতা ও প্রকৌশলীদের অভিজ্ঞতায় থ্রিডি প্রিণ্টেড বাড়ির রয়েছে অনেক সুবিধা। কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশালাকৃতির এই প্রিণ্টার সময়ের সাথেই আরও উন্নত হবে। নির্মাণ শিল্পে যুক্ত হবে নতুন নতুন মাত্রা।

থ্রিডি প্রিণ্টেড বাড়ির সুবিধা:
থ্রিডি প্রিণ্টেড বাড়ির অনেক সুবিধার মধ্যে একটি হলো ব্যয় সাশ্রয়ী। খরচ গতানুগতির নির্মাণ পদ্ধতির চেয়ে কম হওয়া থ্রিডি প্রিণ্টিং প্রযুক্তির চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। এই প্রযুক্তি নানাভাবে ব্যয় হ্রাস করে থাকে। এই প্রযুক্তিতে একটি মেশিনই যেহেতু সবচেয়ে বেশি কাজ করে থাকে তাই বিশেষ লোকবলের প্রয়োজন হয় না। বাঁচে মজুরী।

সময় সাশ্রয়ী
একটি মেশিন দিনরাত কাজ করে কনস্ট্রাকশনের সব কাজ সম্পন্ন করে। শ্রমিকের কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট থাকায় প্রথাগত নিয়মে ভবন নির্মাণে অনেক সময় দরকার হয়। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তিতে যন্ত্রের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন হওয়ায় যন্ত্রের বিরতিহীন কাজের ফলে ততটাই সময় সাশ্রয় হবে যতটা ভাবা যায় না। পাশাপাশি কন্সট্রাকশন প্রসেস হয় অনেক দ্রুত এবং নির্ভুল। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি দিয়ে একদিনের মধ্যেই একটি স্ট্রাকচার দাঁড় করানো যায় যা প্রথাগত উপায়ে কমপক্ষে কয়েকমাস দরকার। আমেরিকার টেক্সাসে থাকা একটি কন্সট্রাকশন স্টার্ট-আপ, আইকন, এমন প্রযুক্তি ডেভেলপ করেছে যাতে ৬৫০ বর্গফুটের একতলা একটি থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি প্রিন্ট করা যাবে মাত্র ২৪ ঘন্টায়। রাশিয়া, চায়নার মত দেশেও শুরু হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টেন্ড প্রযুক্তির ব্যবহার।

অজস্র ডিজাইনের সম্ভাবনা
এই প্রযুক্তি শুধু যে সময় আর খরচ বাঁচাবে তাই না, থ্রিডি প্রিন্টিং আসছে আরেকটি বড় সম্ভাবনা নিয়ে। পুরাতন পদ্ধতিতে যখন সমস্ত নির্মাণকাজ করতে হত হাতে, তখন ডিজাইনে কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যেত। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দূর করেছে সেই সীমাবদ্ধতাও। নিত্যনতুন, সৃষ্টিশীল যে সব নকশা এখন তৈরি করছেন স্থপতিরা, থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিই সেগুলো করতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে।

থ্রিডি প্রিণ্টেড বাড়ির অসুবিধা
তবে থ্রিডি প্রিণ্টেড বাড়ির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অনেক সুবিধাজনক দিক থাকার পরও আবাসন শিল্পে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি এখনো নতুন। থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরি করতে গেলে এখনো মুখোমুখি হতে হয় নানান প্রতিবন্ধকতার।

কাচামালের সহজলভ্যতা
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি আবাসন শিল্পে আসার পরপরই যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা হল উপযুক্ত নির্মাণ সামগ্রীর অভাব। প্রথাগত বাড়ি তৈরির কাচামাল আর থ্রিডি প্রিন্টারের কাচামাল কখনই এক নয়। বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টারে যেসব কাচামাল ব্যবহার করা যায় তার সংখ্যা খুবই সীমিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিটি প্রিন্টারের জন্য থাকে নির্দিষ্ট ম্যাটেরিয়াল, অর্থ্যাৎ এক প্রিন্টারের কাচামাল অন্য প্রিন্টারে ব্যবহার করে থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব হয় না।

বেকারত্ব
ডিজিটাল যুগে মানুষের অনেক কাজ চলে আসছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের দখলে। থ্রিডি প্রিন্টিারের ব্যবহার ভালোভাবে শুরু হলে তার প্রভাব পড়বে বর্তমানের জনশক্তি ও আবাসন শিল্পে সাথে জড়িত মানুষের উপর। বর্তমানে প্রথাগত নির্মাণে যে দক্ষতা প্রয়োজন তার দাম কমে যাবে, হুমকির মুখে পড়বে নির্মাণ শ্রমিকরা। যারা কন্সট্রাকশনের জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর বিপণনের সাথে জড়িত তারাও পড়বেন বিপদে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্সের এক বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেন আমাদের শ্রমিকরা। নির্মাণ কাজ করতে তাদের তেমন স্পেশালাইজড কোন দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু, থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ির জন্য দরকার পরবে নির্দিষ্ট দক্ষতার যা আমাদের সাধারণ শ্রমিকদের নেই। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রেমিটেন্সের উপরও।

পরিবহন সমস্যা
বিল্ডিং নির্মাণে ব্যবহৃত থ্রিডি প্রিণ্টার অন্য সাধারণ প্রিন্টারের মতো ছোট আকৃতির না হওয়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তাছাড়া কন্সট্রাকশন সাইটে নিরাপদে অপারেট করা আরও কঠিন। তাই আকৃতিগত কারণে এই প্রিণ্টার ব্যবহারে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে।

ডিজাইন সংশোধন
থ্রিডি প্রিণ্টারের সবচেয়ে সমস্যা হলো ভুল প্রিণ্ট হলে সংশোধন করা যাবে না। স্থপতিদের করা ডিজাইন ভুল হলে তার জন্য পুরো বাড়িটিই আবার নতুন করে প্রিণ্ট করতে হয়। তবে সম্ভাবনাময় ব্যাপার হলো, প্রিণ্ট করার আগে মডেল তৈরি করলে ভুলের ঝুঁকি কিছু কম হতে পারে। অপরদিকে গতানুগতিক নিয়মে ইট, বালু সিমেন্ট ব্যবহার করে যে কোন ডিজাইনে বাড়ি বানালে তা যে কোন সময় মূল ডিজাইন ঠিক রেখে পরিবর্তন করা যায় কিন্তু নির্মাণ উপকরণ ও প্রযুক্তি সীমিত ও ভিন্ন হওয়ায় থ্রিডি প্রিণ্টেড বাড়ির ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।

স্বয়ংক্রিয় নির্মাণ যন্ত্র

তিন.
স্বয়ংক্রিয় নির্মাণ যন্ত্র
স্বয়ংক্রিয় নির্মাণ যন্ত্র বলতে এমন সব যন্ত্রকে বুঝায় যা নিজে থেকে চলতে পারে। প্রথমেই প্রশ্ন জাগতে পারে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র কিভাবে নির্মাণ ভবন নির্মাণ করবে। ভবন নির্মাণের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। কোন কোন ধাপে গাড়িও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডজার, ক্রেন, ডাম্প ট্রাক এবং এক্সকেভেটরের মতো অনেক গাড়ি আছে যা নির্মাণ কৌশলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গাড়িগুলো ভারি হওয়ায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন অনেক লোকবল। সময়ের ব্যবধানে নির্মাণের সাথে সংশ্লিস্ট গাড়ি ও যন্ত্রপাতি রোবটের সাহায্যে চালানোর সুযোগ হয়েছে। তাই শিল্পে উৎকর্ষতা বাড়াতে, বাণিজ্য প্রসারে উন্নত প্রযুক্তির রোটটিক ইকুইপমেন্টের ব্যবহারও বাড়ছে নির্মাণ শিল্পে। সম্ভাবনাময় এই প্রযুক্তির চাহিদা নির্মাণশিল্পে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই প্রযুক্তির তিনটি বিশেষ সুবিধা নির্মাতাদের আকৃষ্ট করেছে:

নিরাপত্তা
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনেক বড় একটি ব্যাপার। নির্মাণ কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গতানুগতিক পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণে প্রতিদিনই শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় খবরে। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ভারি ভারি এনালগ বিভিন্ন যন্ত্র ও গাড়ী ব্যবহারে শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকি বহুগুণ বেশি। একজন শ্রমিকের মৃত্যু হলে কোম্পানী মালিককে গুণতে হয় অনেক টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ধও হয়ে যায় নির্মাণ প্রকল্প। তাই স্বয়ংক্রিয় নির্মাণ যন্ত্রের ব্যবহারে শ্রমিকা বা অপারেটরের কোন প্রয়োজন পড়ে না বলে নির্মাতা ও কন্ট্রাক্টরদের কাছে এ পদ্ধতির অনেক চাহিদা রয়েছে।

নির্ভুল নির্মাণ কাজ
এ পদ্ধতি যেহেতু কোন অপারেটর থাকে না তাই কোন কিছু বলে দিলেও ভুল হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। রোবটিক যন্ত্রকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া থাকে সে সেভাবেই কাজ করতে থাকে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই যন্ত্র একইভাবে কাজ করতে থাকে তাই ভুলের সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়।

ব্যয় সাশ্রয়ী
নির্মাণের সাথে শ্রমিক ও শ্রমঘণ্টা অত্যন্ত সাধারণ একটি ব্যাপার। একটি কাজ ৫ জন শ্রমিক যে সময়ে করতে পারবে সেক্ষেত্রে একটি রোবটিক মেশিন সেই কাজটি বহুগুণ কম সময়ে করতে পারবে তাই মালিকদের বাড়তি টাকা গুণতে হয় না।

ওয়্যারলেস সেন্সরড নির্মাণ পদ্ধতি

চার.
ওয়্যারলেস মনিটরিং সেন্সর
ওয়্যারলেস মনিটরিং সেন্সর বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র। এটি ব্যবহারের প্রচলন আমাদের দেশে খুব বেশি না হলেও উন্নত দেশে এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। এই মনিটরিং সেন্সরের কাজ হলো বিল্ডিংয়ের স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কে বিল্ডিং মালিককে অবগত করানো। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বিল্ডিংয়ের ফিজিক্যাল স্ট্রেংথ দিন দিন কমে আসে। দিন দিন কমতে কমতে এক পর্যায়ে বিল্ডিংটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলেও আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। এজন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়। সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনা এদেশের সংশ্লিষ্টদের অনেক ভাবিয়েছে। নগরকর্তারা শেষ পর্যন্ত রাজধানী শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করেন। বিল্ডিংসহ সকল ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সময় তাতে ওয়্যারলেস মনিটরিং সেন্সর ব্যবহার করলে স্থাপনাটির স্থিতিস্থাপকতা কমে আসলে তা সহজেই বুঝা যাবে। এতে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে সেন্সরগুলো ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের সেন্সর বাজারে সহজলভ্য তাই বাড়তি সতর্কতার এবং সুরক্ষার জন্য এই প্রযুক্তিটি এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

ক্লাউডবেইজড নির্মাণ পদ্ধতি

পাঁচ.
ক্লাউড এবং সরাসরি পর্যবেক্ষন
ক্লাউড এবং সরাসরি পর্যবেক্ষণ মনিটরিংয়ের আরেকটি উন্নত প্রযুক্তি। আমাদের দেশেও এই প্রযুক্তি চাহিদা ও ব্যবহার বর্তমান সময়ে খুব বেশি জনপ্রিয়। এই প্রযুক্তি নির্মাতা, ডিজাইনার ও স্থপতিদের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক। সহজভাবে বলতে গেলে বিষয়টি হলো নির্মাণ প্রকল্প ও দাপ্তরিক কার্যক্রম নখদর্পনে রাখতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা। ব্যবহার করা হয়ে থাকে ড্রোনও। এটিও এক ধরনে ওয়্যারলেস মনিটরিং সিস্টেম। তবে এ প্রযুক্তিতে শুধু নির্মাণাধীন প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভালো ফলদায়ক। প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়মানুযায়ী হচ্ছে কি না, শ্রমিকরা ফাঁকি দিচ্ছে কি না, কোথাও অপচয় হচ্ছে কি না তা মনিটরিংয়ে এই প্রযুক্তির জুড়ি নেই। তবে ছোট প্রকল্পের চেয়ে বড় বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে একই সময় বিভিন্ন প্রকল্প মনিটরিং করা সম্ভব। ফলে নির্মাতা এবং কন্ট্রাক্টরদের ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে। নিখুঁত ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। কোন কাজে ভুল হলে তাও খুঁজে বের করা যাবে সহজেই।

সর্বোপরি সময় এখন প্রযুক্তির দখলে। মানুষ সভ্য আর উন্নত হওয়ার সাথে সাথে আবির্ভাব ঘটছে নতুন নতুন প্রযুক্তির। আমরা চাই আর না চাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রায় সবকিছুতেই আছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সহজতর হয়ে গেছে আমাদের জীবন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যখন প্রযুক্তির এতো ছড়াছড়ি তখন নির্মাণ শিল্পই বা পিছিয়ে থাকবে কেন?

 

Level 1

আমি সারোয়ার আলম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

শুন্য থেকে যাত্রা শুরু, শুন্যেই হবে শেষ...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস