টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে। আজকে আমি আলোচনা করব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে। এমন একটি AI দেখাতে চলেছি যা, আর্টিকেল থেকে শুরু করে লিখতে পারবে কম্পিউটার কোড।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে একদল গবেষক নিজেদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কখনো কি AI কম্পিউটার কোড লিখতে পারবে? তারা অনুমান করেছিলেন ২০৪০ সালের দিকে এটি সম্ভব হতে পারে। কিন্তু আমরা এখনি সেই বিষয় টি কিন্তু গুগল এর Cloud AutoML এর মধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। Cloud AutoML একটি AI যা কম্পিউটার কোড লিখতে পারে। আপনি জেনে খুশি হবেন এর চেয়েও এডভান্সড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও কিন্তু রয়েছে। আর সেটা হল GPT-3।
GPT-3 বা Generative Pre-Trained Transformer 3 হচ্ছে একটি ডিপ লার্নিং এলগোরিদম যা মানুষের মত টেক্সট লিখতে পারে। এটি একটি Third Generation Language Prediction মডেল যা সান ফ্রেঞ্চিস্কো স্টার্ট-আপ OpenAI দ্বারা নির্মিত, Elon Musk ছিলেন স্টার্ট-আপটির একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
OpenAI এর এই প্রোগ্রামটি কোন লেখনী তৈরিতে পূর্ববর্তী যেকোনো প্রোগ্রামের চেয়ে অনেক ভাল কাজ করে। এটি এমন ভাবে মানুষের লেখা কপি করতে পারে যা অবিশ্বাস্য! বিভিন্ন কোম্পানির অটোমেশন টাস্ক সম্পাদন করতে GPT-3 এর দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। ধরুন আপনি কোন কবিতা এখানে ইনপুট দিলেন, এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তা এনালাইসিস করে একই ছন্দে সম্পূর্ণ নতুন কবিতা লিখে ফেলতে পারবে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল এটি এমন ভাবে লিখে, যে মনে হবে কোন মানুষ লিখেছে।
GPT-3 একই সাথে লিখতে পারে নিউজ আর্টিকেল। এটি এমন ভাবে আর্টিকেল লিখবে তা দেখে যেকেউ ভাববে এটা কোন মানুষের লিখা,
হ্যাঁ, Guardian এ প্রকাশিত এই আর্টিকেলটি এই AI দ্বারাই প্রকাশিত।
এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সবচেয়ে কার্যকরী সুবিধা হচ্ছে এটি দিয়ে যেকোনো ভাষায় কম্পিউটার কোড লিখা যায়। নির্দিষ্ট আর্টিকেল থেকে প্রশ্নের উত্তর বের করা থেকে শুরু করে, যেকোনো আর্টিকেলের সামারি তৈরি করতে পারবে এই GPT-3 AI। এটি যেকোনো টেক্সট কে রূপান্তর করতে পারে ছবিতে।
প্রকাশ পাবার পর থেকে ইন্টারনেটে GPT-3 নিয়ে দারুণ আলোচনা শুরু হয়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা AI ইন্ডাস্ট্রিতে একে বেশ সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে। David Chalmers একজন অস্ট্রেলিয়ার দার্শনিক GPT-3 কে বর্ণনা করেছেন, "এখন পর্যন্ত এটি উৎপাদিত সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ আই সিস্টেমগুলির মধ্যে একটি"। National law Review বলে, "এটি সাধারণ বুদ্ধিমত্তার দিকে বৃহত্তর প্রক্রিয়ার একটি চিত্তাকর্ষক পদক্ষেপ"।
চলুন টুইটারে বিটা পরীক্ষকদের কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক, দেখুন টেক্সট লিখার পর এটি তাকে Java কোডে কনভার্ট করে ফেলছে।
কিছু টেক্সট লিখে নির্দেশনা দেয়ার পর এটি একটি Mock-up ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলেছে।
কিভাবে একটা বোর্ড মিটিং আরও কার্যকর করা যায় এ ব্যাপারে একটি আর্টিকেল লিখেছিল এটি, লিখাটি এতটাই চমৎকার হয়েছিল যে পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ এটিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। GPT-3 এমনকি আপনার কম্পিউটার কোডের ইংলিশ ব্যাখ্যাও দিতে পারবে।
কমন সেন্স চেক করার জন্য এই AI এর সাথে একটি কনভারসেশন করা হয়েছিল, ফলাফল দেখুন। সাধারণত AI গুলোতে এই ধরনের দক্ষতা খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না।
এটি টেক্সট ডেসক্রিপশন এনালাইসিস করে বিভিন্ন ফেস তৈরি করতে পারে। দেখুন ইনপুটে যেমন বর্ণনা করা হচ্ছে সেটি তেমনি ফেস তৈরি করছে।
GPT-3 একটি বিশাল নিউরাল নেটওয়ার্ক যা ১৭৫ বিলিয়নের বেশি মেশিন লার্নিং প্যারামিটারের ক্ষমতা রাখে। এটিকে কয়েকশো বিলিয়ন বই, উইকিপিডিয়া, এবং সাধারণ ওয়েব এর শব্দের উপর ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। যাতে কোডিংও অন্তর্ভুক্ত আছে সুতরাং নির্দিষ্ট ল্যাংগুয়েজের জন্য আলাদা করে একে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। এটি মানুষের তত্ত্বাবধান ছাড়াই অনেক কিছুতে যা শিখেছে তা প্রয়োগ করতে পারে। এটি আগের মাইক্রোসফটের বৃহত্তম Language Learning মডেল এর চেয়ে 10 গুণ বড়। মাইক্রোসফট দ্বারা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে যেটি তৈরি করা হয়েছিল। GPT-3 কখনো কখনো অসম্পূর্ণ বাক্যকে সম্পূর্ণ করতে পারে যাকে বলা হয়, Conditional Probability of Words। এর মানে আপনি যখন অর্ধেক কোন বাক্য লিখবেন বা বলবেন এটি তা সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারবে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মাইক্রোসফ্ট ঘোষণা করে তারা GPT-3 এর একচেটিয়া ব্যবহারের লাইসেন্স পেয়েছে। জনগণ এখনও আউটপুট পেতে এটি ব্যবহার করতে পারে তবে সোর্স কোডের নিয়ন্ত্রণ কেবল মাইক্রোসফটেরই থাকবে। OpenAI, GPT -3 ক্লাউড-ভিত্তিক পরিষেবা তৈরি করেছে এবং জুলাই থেকে এটি বিটা পরীক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। Open AI দাবি করে, তারা ইন্টারনেটে থাকা মন্দ পক্ষ গুলোকে সীমাবদ্ধ করার জন্য এবং লাভ অর্জন করার জন্যই এটি তৈরি করেছে। এটা স্পষ্ট যে এই প্রযুক্তি কাজকে সহজতর করতে পারে এবং প্রচুর ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ের জন্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে। এমনকি বড় সংস্থাগুলিও এর মাধ্যমে লাভবান হতে পারে। ইতিমধ্যে OpenAI কয়েক হাজার আবেদনকারীকে পেয়েছে। এই দারুণ AI এর অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য তারা সবাই দরজায় কড়া নাড়ছে।
OpenAI এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অ্যাক্সেস সম্পর্কে সতর্ক করছে। তারা বলছে এটি বাস্তব জগতে প্রকাশিত হওয়ার পরে এর মাধ্যমে মানুষ কী করতে পারে তা নিশ্চিত নয়। AI দ্বারা তৈরি একটি আর্টিকেলের গুণগতমান এত বেশি হতে পারে যে এটিকে মানুষের থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
GPT-3 এর একই সাথে সুবিধা এবং ঝুঁকি রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩১ জন OpenAI গবেষক এবং প্রকৌশলী সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে জিপিটি -৩ এস সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। এবং তারা সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য গবেষণার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারা ভুল তথ্য, ফেক নিউজ আর্টিকেল, সামাজিক প্রকৌশল, স্প্যাম ফিশিং এবং প্রতারণামূলক একাডেমিক রচনা লিখন সহ এর আরও ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর অর্পিত বিভিন্ন রিসার্চ এবং এসাইমেন্ট এই AI ব্যবহার স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে ফেলতে পারে যা তাদের রিয়েল টাইম গবেষণাকে ব্যাহত করতে পারে। এমনকি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের এমন একটি ঘটনাও ঘটেছে যেখানে সে AI ব্যবহার করে আর্টিকেল লিখতো কিন্তু কেউ তা বুঝতে পারে নি এবং তার হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য রিডার এবং সাবস্ক্রাইবার। তাছাড়া বিভিন্ন হ্যাকার কমিউনিউটিতেও বিষয়টি নিয়ে বেশ মাতামাতি হয়েছে।
আসছে দিন গুলোর জন্য দুর্দান্ত একটি AI হলেও বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞরা এটিকে হুমকি হিসেবেও দেখছে।
খোলামেলাভাবে বলতে গেলে এই AI কোন প্রসঙ্গ বুঝতে পারে না। এটি শুধুমাত্র ভাষার বিধিগুলি বোঝে এবং এগুলিকেই আয়ত্ত করেছে। এটি জানে না এটি আসলে কি বলছে, আসলেই কি তা সম্ভব কিনা। MIT Technology Review, এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর বেশ কিছু ত্রুটিগুলিকে পর্যালোচনা করে দেখেছে। তারা জানিয়েছে GPT-3 শুধু মাত্র ট্রেনিং এর উপর ভিত্তি করে ফলাফল প্রদর্শন করে কখনো কখনো সিচুয়েশন অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য ভুল ভাবে উপস্থাপন করে ফেলে।
সকল প্রযুক্তির ভাল দিক মন্দ দিক উভয়ই রয়েছে। নিঃসন্দেহে GPT-3, ২০২০ সালের দুর্দান্ত এক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যা বিভিন্ন কঠিন টাস্ককে আরও সহজ করে দিতে পারবে। কোডিং এর মত কাজ গুলো নির্ভুল ভাবে করতে পারবে তবে এর ব্যবহার নিয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কর্তৃপক্ষের উচিত এর এক্সেস কিছুটা লিমিট করে দেয়া যেন এটি ব্যবহার করে মানুষকে বিক্রান্ত না করা যায়।
আজকের মত এই পর্যন্তই, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।