উইন্ডোজ ১০ এর জন্য বেস্ট এন্টিভাইরাস ২০১৭ | উইন্ডোজ ডিফেন্ডার বনাম ফ্রী অ্যান্টিভাইরাস

যে পন্ডিতেরা মনে করেন, আপনি নিজেই এক বিশাল বড় গীক, আপনার কখনোই এন্টিভাইরাসের প্রয়োজনীয়তা নেই—এই টিউনে আমি তাদের কেউ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হ্যাঁ, আপনি সিকিউরিটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন, কিভাবে হ্যাক হয়, কিভাবে অ্যাকাউন্ট নিরাপদে রাখতে হয়, সব কিছুই হয়তো আপনার মুখস্ত। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে, আপনার কম্পিউটারে এন্টিভাইরাসের প্রয়োজনীয়তা নেই। আপনি অনেক কিছু জানেন, সেটা আপনার প্লাস পয়েন্ট কিন্তু আপনি যদি উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হোন অবশ্যই এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা গ্রেট আইডিয়া। লিনাক্স ব্যবহার করলে এন্টিভাইরাস দরকার পড়বে না।

এই টিউনে আমি এন্টিভাইরাসের প্রয়োজনীয়তা এবং বেস্ট এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো সম্পর্কে আপনার সাথে আলোচনা করবো। পাশাপাশি অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে, "ভাই পেইড এন্টিভাইরাস কেন কিনতে হবে, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার কি যথেষ্ট ভালো নয়?"—আপনি এই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পাবেন, এই টিউন থেকে।

উইন্ডোজ কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস কেন প্রয়োজনীয়?

আসলে এন্টিভাইরাস থাকা এমন একটি ব্যাপার, যেটা না থাকলেও নয় আবার শুধু এন্টিভাইরাস ইন্সটল করেই আরামে বসে থাকবেন সেটা করলেও হবে না। আপনার সর্বউচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবশ্যই সিকিউরিটি প্র্যাকটিস গুলো নিয়মিত করতে হবে। আপনাকে জেনে বুঝে কখনোই ভুল করা যাবে না। আপনার কম্পিউটার কোন সময় কিভাবে হ্যাক হয়ে যাবে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনি হয়তো মেইলে কোন ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক ক্লিক করেন না, বা অবৈধ সফটওয়্যার ব্যবহার করেন না, ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করা থেকে বিরত থাকেন, কিন্তু তারপরেও আপনার কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার চলে আসতে পারে। জিরো-ডে ভালনেরাবিলিটি বলে একটি টার্ম রয়েছে—কোন সফটওয়্যারের কোন অজানা ত্রুটি যদি ঐ সফটওয়্যার কোম্পানি বা ইথিক্যাল হ্যাকার জানার আগে একজন ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার জানতে পেরে যায় এবং তার মাধ্যমে অ্যাটাক করে সেটাকে জিরো-ডে ভালনেরাবিলিটি বলে হয়। অর্থাৎ অ্যাটাক হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা দুনিয়ার কেউ জানতই না, এরকম কোন ত্রুটি কোন সফটওয়্যারে মজুদ থাকতে পারে।

এই ক্ষেত্রে আপনি গীক হয়েও কি করবেন? হ্যাঁ, অনেক সময় এন্টিভাইরাসও এই অ্যাটাক আটকাতে পারে না, কিন্তু অনেক মডার্ন এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম অজানা কোন প্রসেস কম্পিউটারে দেখলেই সেটাকে ব্লক করে দেয়, এভাবেও আপনি জিরো-ডে অ্যাটাক থেকে বেঁচে যেতে পারেন। অনেক টাইপের ম্যালওয়্যার রয়েছে, হয়তো আপনি জানেনই এরকম কোন ম্যালওয়্যার মজুদ থাকতে পারে, কিন্তু এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলোর কাছে বিশাল ডাটাবেজ থাকে, আর তারা সেটাকে নিয়মিতই আপডেট করে, একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার অবশ্যই আপনার চেয়ে বেশি ভালো ম্যালওয়্যার চিনতে পারবে এবং আপনার পিসিকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারবে। আজকাল শুধু কোন ওয়েবসাইটের লিঙ্ক ওপেন করেই আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে, আপনি সেটা ম্যানুয়ালি কখনোই ঠেকাতে পারবেন না। তাই অবশ্যই আপনি যতোবড়ই গীক হোন না কেন, আপনার এন্টিভাইরাস থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

উইন্ডোজ ডিফেন্ডার

এখন আপনি যখন উপরের আলোচনা বিবেচনা করে এন্টিভাইরাস ইন্সটল করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন, আপনার সামনে ৩টি অপশন এসে দাঁড়াবে। উইন্ডোজের ডিফল্ট এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন, নাকি পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন, নাকি ফ্রী কিন্তু তৃতীয়পক্ষ এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন। আপনি এই পর্যায়ে এসে নিশ্চয় কনফিউজ, তাই না? হ্যাঁ, আমি মোটেও চমৎকৃত হয় নি, এখানে কনফিউশন থাকা স্বাভাবিক। প্রথমে আলোচনা করে নেওয়া যাক উইন্ডোজ ডিফেন্ডার সম্পর্কে। অনেক গীক এবং টেক রিভিউয়ারের মতে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার অনেক ভালো একটি প্রোগ্রাম, বিশেষ করে এর সবচাইতে ভালো দিক হচ্ছে, এটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথেই প্রিলোড হয়ে আসে আর সিস্টেমকে মটেও স্লো করে না, যদিও আজকাল কোন এন্টিভাইরাসই সিস্টেম তেমন স্লো করে না। যাই হোক, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার সত্যিই অনেক ভালো সফটওয়্যার, যদি সেটাকে নিয়মিত আপডেট করে রাখা হয়। আপনি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম যতোই দামী হোক না কেন, সেটাকে যদি নিয়মিত আপডেট না করেন, তো কখনোই ভালো কাজ করবে না। আপনার প্রোগ্রামের খাতায় যদি ভাইরাসের নামই না লেখা থাকে তো তাকে সে চিনবে কিভাবে। তাই যেকোনো এন্টিভাইরাস আপডেট না রাখলে সেটা কাজ করবে না।

উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ব্যবহার করতে একদমই টাকা খরচ করার দরকার হবে না। অন্তত আপনাকে বারবার টাকা পে করার জন্য নোটিফিকেশন দিয়ে বিরক্ত করবে না। যদি বলি প্রোটেকশনের কথা, তো বেসিক প্রোটেকশনের ক্ষেত্রে এটি খারাপ নয়। সাথে এর ভাইরাস ডাটাবেজও প্রতিনিয়ত আপডেট হতে থাকে। কিন্তু আপনি এটাকে কখনোই বেস্ট সলিউসন বলতে পারবেন না। টেকনিক্যালি দিক থেকে দেখতে গেলে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের একটি এন্টি-ভাইরাস প্রোগ্রাম হিসেবে রেটিং অনেক কম। অন্যান্য সফটওয়্যারের সাথে তুলনা করতে গিয়ে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের স্কোর একেবারেই লো, এভি-টেস্ট থেকে আপনি নিজেই চেক করে দেখুন। তবে বর্তমানে মাইক্রোসফট ম্যালওয়্যার ডিটেকশনের দিকেও অনেক বেশি নজর দিয়েছে। যাই হোক, টেস্টে এর স্কোর যেমনটায় হোক না কেন, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার এতোটাও খারাপ প্রোটেকশন প্রদান করে না। আপনি এটাকে আপডেটেড রাখুন, সাথে নিজের সকল সিকিউরিটি প্র্যাকটিস গুলোকে চালিয়ে যান, সতর্ক থাকুন, এভাবেই আপনি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।

বেস্ট এন্টিভাইরাস ২০১৭

আগেই বলেছি, যদি বেসিক টাইপের প্রোটেকশনের দরকার হয়, সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারই ভালো কাজ করতে পারবে, তবে আপডেটেড রাখতে হবে। কিন্তু আপনি যদি সিকিউরিটি সম্পর্কে অনেক বেশি তৎপর হোন এবং হাই সিকিউরিটি ডিম্যান্ড করেন, সেই ক্ষেত্রে আপনার পেইড এন্টিভাইরাসের দিকে নজর দিতে হবে। যদি এন্টিভাইরাস টেস্ট রেজাল্টের দিকে দেখা হয়,  বিটডিফেন্ডার নিয়মিতই ভালো স্কোর করে আসছে। এর ফ্রী এবং পেইড ভার্সন দুটোই রয়েছে। আপনার যদি টাকা না থাকে, ফ্রী ভার্সনও ব্যবহার করতে পারেন। এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামটির সবচাইতে ভালো ব্যাপার হচ্ছে, এটি লাইটওয়েট একটি প্রোগ্রাম, সাথে এদের প্রচন্ড সুনাম রয়েছে সব জায়গায়। অনেকে প্রথম চয়েজ হিসেবে ক্যাসপারস্কি রেকোমেন্ড করেন, হ্যাঁ, এন্টিভাইরাস টেস্ট রেজাল্ট হিসেবে দেখতে গেলে, এদেরও পারফর্মেন্স এবং রেজাল্ট অনেক ভালো, তবে পার্সোনালি আপান্র এটি এতো ভালো লাগে না। এরা এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের সাথে অনেক আলাদা টুল লাগিয়ে দেয়। ফলে এদের সফটওয়্যারটি একটু হেভি মনে হয়েছে আমার কাছে। আপনার কম্পিউটারটি যদি পুরাতন হয়, এই এন্টিভাইরাসকে চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারে।

আমি পার্সোনালি  ইসেট ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করি, যেটার টেস্ট রেজাল্টও অনেক ভালো সাথে বর্তমান মার্কেটের সবচাইতে জনপ্রিয় এন্টিভাইরাস এটি। এই প্রোগ্রামটিও লাইটওয়েট এবং অনেক ভালো প্রোটেকশন প্রদান করে। আসলে কোন এন্টিভাইরাস ভালো আর কোনটি খারাপ এভাবে ক্রম বানিয়ে লিস্ট তৈরি করা মুশকিলের কাজ। কেনোনা প্রায় প্রত্যেকেরই একই টিপের ফিচার রয়েছে, কিছুটা মাত্র একে অপরের চেয়ে আলাদা ব্যাপার রয়েছে। হাই প্রোটেকশনের জন্য আমি কখনোই ফ্রী এন্টিভাইরাস রেকোমেন্ড করবো না, কেনোনা সেগুলো এতোটা শক্তিশালী হয়না।

আর হ্যাঁ, এন্টিভাইরাস কখনো অবৈধভাবে চালানোর চেষ্টা করবেন না। হ্যাক ভার্সন ডাউনলোড করে ইউজ করবেন না। অবশ্যই একটি লিগ্যাল ভার্সন ব্যবহার করবেন। নতুবা দেখতে পাবেন, আপনা এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামটিই ম্যালওয়্যার হিসেবে কাজ করছে। আপনি আপনার প্রোটেকশনের জন্য একে ইন্সটল করেছেন, কিন্তু সেটা আপনার উল্টা ক্ষতিই করবে। তাই সাবধান থাকবেন।

আরেকটি কথা এখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ্য করতে চাই, একা কোন এন্টিভাইরাসই সকল প্রকারের ভাইরাস ডিটেক্ট করতে পারবে না। তাই আপনার সিস্টেমে সেকেন্ডারি এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার টুল ইন্সটল করে রাখা উপযুক্ত বুদ্ধি। সেকেন্ডারি এন্টি-ম্যালওয়্যার হিসেবে আমি ম্যালওয়্যার বাইটস কে রেকোমেন্ড করবো, এটি সত্যিই অসাধারণ একটি প্রোগ্রাম, বিশেষ করে এন্টি-ভাইরাসের পাশাপাশি একসাথে চলার জন্য এই প্রোগ্রামটিকে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি লাইটওয়েট এবং আমি নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছি, অনেক ম্যালওয়্যার যেটা আমার প্রাইমারি এন্টিভাইরাস ডিটেক্ট করতে পারে না সেগুলোকে ম্যালওয়্যার বাইট সহজেই ধরে ফেলে। অবশ্যই আপনার সেকেন্ডারি টুলটিকেও নিয়মিত আপডেটেড রাখুন।


তো, আপনি কোন এন্টি-ভাইরাস প্রোগ্রামটি ব্যবহার করেন? কেন ব্যবহার করেন? পাশাপাশি এন্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন তো? —আমাদের সবকিছু নিচে টিউমেন্ট করে জানান।

Level 6

আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অতীব প্রয়োজনীয় টিউন। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ম্যালওয়্যার বাইটস ইউটিলিটি ফ্রি হিসাবে কতদিন ব্যবহার করা যাবে?? গতকালকে ডাউনলোড দেবার পর ইনস্টল করে দেখে ফ্রি হিসাবে ১৪ দিনের ট্রায়াল শো করছে!

    ধন্যবাদ 🙂
    ম্যালওয়্যার বাইট ফ্রী টুল, আপনাকে ১৪ দিনের জন্য তাদের প্রিমিয়াম ট্র্যায়েল ব্যবহার করতে সুযোগ দিয়েছে, এর পরে আপনি ফ্রী ভার্সনে চলে যাবেন।