Android Skin কী? কীভাবে ফোন নির্মাতারা Stock Android ভার্সন পরির্তন করে?

Level 15
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড বর্তমান সময়ে বিশাল জনপ্রিয়তার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে এর ওপেন সোর্স প্রকৃতি এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজেশন করে নেওয়ার ক্ষমতার কারণে এটি স্মার্ট ফোন মেনুফ্যাকচারার এবং ব্যবহারকারীদের কাছে বেশি পছন্দের।

এখন, আমরা যখন নতুন একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনি, তখন ফোনের ইউজার ইন্টারফেস, ডিজাইন এবং ফিচারগুলোর অধিকাংশই নির্ভর করে সেই ফোন মেনুফ্যাকচার কোম্পানির কাস্টমাইজ করা অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের উপর। এই কাস্টমাইজ করা অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন কে বলা হয় Android Skin। মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের নিজস্ব চাহিদা ও ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্ড্রয়েড স্কিন তৈরি করে। এক্ষেত্রে তারা স্টক অ্যান্ড্রয়েডের উপর ভিত্তি করে সেটিতে নতুন Features, Visual Effects এবং User Interface যোগ করে।

আজকের এই টিউনে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো যে, কীভাবে মোবাইল ব্র্যান্ড গুলো তাদের নিজস্ব Android Skin তৈরি করে এবং কীভাবে এই পরিবর্তন গুলো ব্যবহারকারীদের ফোন ব্যবহারের এক্সপেরিয়েন্সকে প্রভাবিত করে। সেই সাথে, কিছু জনপ্রিয় মোবাইল ব্র্যান্ড যেমন: স্যামসাং, শাওমি, ওয়ানপ্লাস, এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড স্কিন গুলো সম্পর্কে ও আলোচনা করা হবে আজকের এই টিউনে।

একটি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন (Android Skin) কী?

একটি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন (Android Skin) কী?

iOS ও হলো অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম, যা সম্পূর্ণভাবে তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম হল এটির থেকে আলাদা একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। এর মানে হল যে, যে কেউ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মূল কোড ব্যবহার করতে পারে এবং সেটিকে তাদের নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারে। অ্যান্ড্রয়েডের এই ফিচারটির কারণে Samsung এবং OnePlus এর মত ফোন মেনুফ্যাকচারার ব্র্যান্ডগুলো তাদের ফোনের সফটওয়্যার এক্সপেরিয়েন্স কে নিজেদের মতো পরিবর্তন এবং উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েড স্কিন ঠিক সেভাবেই কাজ করে, যেরকম ভাবে আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে কোন Launcher ডাউনলোড করে আপনার ফোনের ইন্টারফেস পরিবর্তন করতে পারেন। একইভাবে মোবাইল ব্রান্ডগুলো ও তাদের ফোনে নিজস্ব স্টাইল প্রদর্শন করতে এবং প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে অন্যান্যদের চেয়ে আলাদা হতে তাদের ফোনের ইউজার ইন্টারফেস কাস্টমাইজ করে। প্রতিটি ব্রান্ডের কাস্টমাইজ করা অ্যান্ড্রয়েড স্কিন তাদের নিজস্ব ডিজাইন অফিসারগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের এক্সপেরিয়েন্স কে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

অ্যান্ড্রয়েড স্কিনের মাধ্যমেই স্মার্ট ফোন মেনুফ্যাকচাররা তাদের ফোনের ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ইউনিক ও বিশেষ এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে, বিভিন্ন ব্রান্ডের স্কিনগুলো বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন এবং ফিচার যোগ করে, যা স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে পাওয়া যায় না। যেমন: স্যামসাংয়ের One UI, শাওমির MIUI, এবং ওয়ানপ্লাসের OxygenOS ইত্যাদি।

অ্যান্ড্রয়েড স্কিনের ফিচারগুলো শুধুমাত্র ডিজাইনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি ফোনের কার্যক্ষমতা, ব্যাটারি লাইফ এবং বিভিন্ন ইউজার কাস্টমাইজেশন অপশন গুলোকে ও প্রভাবিত করে। ‌এখন ব্যবহারকারীরা তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন পছন্দ করতে পারেন। ‌এক্ষেত্রে যেমন: স্যামসাংয়ের One UI এর সিম্পল এবং ক্লিন ডিজাইন পছন্দ করতে পারে, আবার কেউ ওয়ানপ্লাসের OxygenOS এর স্টক অ্যান্ড্রয়েড এর মতো এক্সপেরিয়েন্স পছন্দ করতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েডের এই কাস্টমাইজেশন সুবিধার কারণে, এটি অত্যন্ত ফ্লাক্সিবল ও বহুমুখী একটি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে প্রতিটি ব্যবহারকারী তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী ফোনটি কাস্টমাইজ করতে পারে।

স্টক অ্যান্ড্রয়েড

Stock Android version

স্টক অ্যান্ড্রয়েড হলো অ্যান্ড্রয়েড এর একটি পিওর ভার্সন। অর্থাৎ, Android এর জন্য এটি হলো মূল ভার্সন, যা মডিফাই করে অন্যান্য রূপ দেওয়া যায়। আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েডের আসল ভার্সন পেতে চান, তাহলে যেটিতে কোন ডিজাইন পরিবর্তন বা সেটিতে পূর্বে কোন বোল্টওয়্যার অ্যাপস ইন্সটল করা নেই, সেটি হল অ্যান্ড্রয়েডের স্টক ভার্সন। এটি হলো এক ধরনের হালকা ও সাদামাটা ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম।

গুগলের তৈরি Android হল একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম, যেটিকে ইচ্ছামতো মডিফাই করে অন্যান্য মোবাইল ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের ফিচার ও সুবিধা যোগ করে। এখন, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি মডিফাই করার আগে যে ভার্সনে থাকে, তাকে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন বলে। স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে কেবলমাত্র বেসিক ফিচার গুলোই পাওয়া যায়। যেখানে, স্যামসাংয়ের One UI বা শাওমির MIUI এর মতো কাস্টমাইজ করা অতিরিক্ত ফিচার থাকেনা।

বর্তমান সময়ে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের ফোন পাওয়া বিরল ব্যাপার। কারণ, বর্তমানে বেশিরভাগই স্মার্ট ফোন ম্যানুফ্যাকচাররা তাদের ফোনে নিজস্ব স্কিন যুক্ত করতে পছন্দ করেন। তাই, আপনি যদি এখন Stock Android সহ একটি ফোন কিনতে চান, তাহলে আপনার জন্য মটোরোলা এবং নকিয়া হল দুইটি প্রধান অপশন। এই ব্রান্ডগুলো তাদের ফোনে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন ব্যবহার করে, যা ব্যবহারকারীদের কাছে একটি খাঁটি এবং প্রাইমারি অ্যান্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে।

মোট কথা বলতে গেলে, স্টক অ্যান্ড্রয়েড একটি ক্লিন ও ফাস্ট এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদেরকে অপ্রয়োজনীয় Apps এবং বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়। তবে, কিছু ব্যবহারকারী যারা অতিরিক্ত ফিচার এবং কাস্টমাইজেশন পছন্দ করেন, তারা হয়তো স্টক অ্যান্ড্রয়েডকে সীমিত ফিচারের এবং ব্যাকডেটেড কোন ফোন বলে মনে করতে পারেন। আর এজন্যই, মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের নিজস্ব স্কিন তৈরি করে, যাতে করে ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করতে পারে।

১. Google এর Pixel UI

Google এর Pixel UI

Pixel UI হল একটি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন, যা আপনি Google Pixel ফোনে দেখতে পাবেন। যদিও, Pixel UI গুগলের দেওয়া অফিশিয়াল নাম নয়, এটি মূলত এর ব্যবহারকারীদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি টার্ম, যা এই ব্রান্ডের ফোন স্কিনকে বোঝাতে ব্যবহার করে।

অনেকেই রয়েছেন, যারা Pixel UI কে স্টক অ্যান্ড্রয়েড এর সমান হিসেবে দেখেন। এর কারণ হলো, এটির চেহারা ও আচরণে স্টক অ্যান্ড্রয়েড এর সাথে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু, শেষমেষ Google নিজেই তো Android এর মূল মালিক। কিন্তু এই সাদৃশ্য সত্বেও, এই দুইটি এক নয়। এদের একটি প্রধান পার্থক্য হল, Pixel UI তে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের তুলনায় বেশি ফিচার রয়েছে এবং এটি ভিজ্যুয়ালি আরো আকর্ষণীয়।

Pixel UI এর সবচেয়ে বড় সেলিং পয়েন্ট হলো, এটি অন্য কোন স্কিনের তুলনায় দ্রুত অপারেটিং সিস্টেম আপডেট পায়। এর মানে হলো যে, আপনার কাছে যদি একটি Pixel ফোন থাকে, তাহলে আপনি অন্যান্যদের আগে অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ফিচার গুলো পাবেন এবং এর পাশাপাশি Pixel এর নতুন বিশেষ ফিচারগুলো তো পাবেনই।

এছাড়াও, Pixel UI অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড স্কিন গুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি গুগল কেন্দ্রিক একটি অপারেটিং সিস্টেম, যা আপনার Google সার্ভিস গুলোর নির্ভরতার পরিমাণ অনুযায়ী ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে যারা গুগলের বিভিন্ন সেবা যেমন: Google Assistant, Google Photos, এবং Google Drive নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা হতে পারে। অন্যদিকে যারা গুগল সার্ভিসের উপর তেমন নির্ভরশীল নন, তাদের জন্য এটি অতিরিক্ত মনে হতে পারে।

সব মিলিয়ে Pixel UI একটি Balanced এবং Rich Android এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হতে পারে। এটি ব্যবহারকারীদের লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড আপডেট এবং গুগলের ইকোসিস্টেমের সাথে গভীর ইন্টিগ্রেশন প্রদান করে, যা অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড স্কিন থেকে এটিকে আলাদা করে তোলে।

২. Samsung এর One UI

Samsung এর One UI

২০১৮ সালের পরে প্রকাশিত Samsung Galaxy এর ফোনে One UI অ্যান্ড্রয়েড স্কিন দেওয়া হয়। এটি মূলত এই কোম্পানিটির পুরনো TouchWiz অ্যান্ড্রয়েড স্কিনের থেকেই আগত। One UI হল আজকের তালিকার অন্যতম শক্তিশালী স্কিন, যা একই সাথে সাধারণ এবং পাওয়ার ইউজারদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়। এই অ্যান্ড্রয়েড স্কিনে এমন সব ফিচার রয়েছে, যা আপনি অন্য কোন ব্র্যান্ডের স্কিনে খুঁজে পাবেন না।

তবে কিছু লোক রয়েছে, যারা One UI তে প্রি-ইন্সটল করা Samsung অ্যাপগুলোর বিষয়ে অভিযোগ করে থাকেন। Samsung অনেক গুগল অ্যাপের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব অ্যাপ তৈরি করে এবং সেগুলো Samsung ফোনে সেট করে দেয়। এসবের মধ্যে রয়েছে, ব্রাউজার, একটি অ্যাপ স্টোর, একটি ক্যালেন্ডার, এবং এমনকি ফোন, মেসেজ, কন্ট্যাক্টস, এবং ক্লকের মতো প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ও।

Samsung ফোনে এই অতিরিক্ত অ্যাপ গুলোর কারণে তাদের সিস্টেমকে কিছুটা ভারী মনে হতে পারে, বিশেষ করে আপনি যদি ডিফল্ট হিসেবে Google অ্যাপ গুলো ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন। তবে, One UI ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনি Samsung Knox সিকিউরিটি আপডেট এবং চার বছর পর্যন্ত দ্রুত সফটওয়্যার আপডেট গুলো পাবেন, যা এমনকি Google Pixel সিরিজের ফোনের তুলনায় বেশি। ‌

সব মিলিয়ে, One UI ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ফিচার সমৃদ্ধ Android Experience প্রদান করে, যা Samsung ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হতে পারে। আর সেই সাথে পেতে থাকা বিভিন্ন ফিচার এবং Samsung এর নিজস্ব অ্যাপ গুলো ও ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিস্তৃত ইকো সিস্টেম তৈরি করে, যা অনেকের কাছে সুবিধাজনক মনে হতে পারে। তাই, যারা আরও বেশি সিকিউরিটি ও দীর্ঘমেয়াদি ফোন আপডেট সাপোর্ট পেতে চান, তাদের জন্য One UI একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে।

৩. OnePlus এর OxygenOS

OnePlus এর OxygenOS

OnePlus এর OxygenOS প্রযুক্তি-প্রেমীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক জনপ্রিয় টেক রিভিউয়ার এটিকে তাদের সেরা Android স্কিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তবে, OnePlus তাদের Oppo এর সাথে মেশার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে, OxygenOS এ কিছু পরিবর্তন আসে, যেখানে এটি Oppo এর ColorOS এর মত দেখতে শুরু করে। এই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই ওয়ানপ্লাস ব্যবহারকারী এবং ভক্তদের মধ্যে একটি বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আর যার ফলে কোম্পানিকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে এবং ভক্তদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করতে বাধ্য হয়।

বর্তমানে, যারা প্রায় স্টক অ্যান্ড্রয়েডের অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাদের জন্য OxygenOS একটি ভালো অপশন হিসেবে রয়ে‌ গেছে। তবে, এটিতে ওয়ানপ্লাস এর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু ফাংশন এবং ফিচার যোগ করা হয়েছে। OxygenOS এর এরকম সহজ ও সাদামাটা ইন্টারফেস এবং দ্রুত কার্যক্ষমতার কারণে অনেক ব্যবহারকারীর কাছে এটি পছন্দের প্রধান কারণ হতে পারে।

যদিও এটি স্টক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের মতো দেখতে এবং কাজ করে, তবে এটিতে অতিরিক্ত কিছু ফিচার যোগ করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীরদের ফোন এক্সপেরিয়েন্স কে আরো উন্নত করে। সেই সাথে, OnePlus এর নিয়মিত আপডেট এবং কমিউনিটির প্রতি তাদের বিশেষ মনোযোগের কারণে এই অ্যান্ড্রয়েড স্কিনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

সব মিলিয়ে, OxygenOS হলো এমন একটি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন, যা ব্যবহারে স্মুথ, দেখতে আকর্ষণীয় এবং প্রায় স্টক অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা অনেক ব্যবহারকারীর কাছে পছন্দনীয় হতে পারে।

৪. Xiaomi এর MIUI

Xiaomi এর MIUI

Xiaomi এর MIUI হল বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক জনপ্রিয় দ্বিতীয় অ্যান্ড্রয়েড স্কিন। ‌শুধুমাত্র Samsung এর One UI এর পরে এটি অনেক এশিয়ান মার্কেটে শীর্ষস্থানীয় অ্যান্ড্রয়েড স্কিন। এই স্কিন টি অ্যাপলের iOS এর ডিজাইন থেকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হওয়ার পাশাপাশি, MIUI হলো সবচেয়ে Heavy Android Skin গুলোর একটি, যা ব্যবহারকারীদের ব্যাপক Customization Options, Widgets, Themes, এবং Icon Packs সাপোর্ট দিয়ে থাকে।

দুঃখজনক-ভাবে বলতে হয় যে, এটিতে অনেক প্রি-ইন্সটল করা বোল্টওয়্যার অ্যাপ এবং বিল্ট-ইন বিজ্ঞাপনও রয়েছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপণ দাতা এবং থার্ড পার্টি ডেভলপারদের সাথে সফটওয়্যার পার্টনারশিপের মাধ্যমে তারা প্রফিট অর্জন করে এবং Xiaomi তাদের ফোনের দাম কমিয়ে বিক্রি করতে পারে। যাইহোক, ব্যবহারকারীরা চাইলে ফোনের সেটিংস থেকে এটি বন্ধ করতে পারেন। প্রায় সব চীনা ফোন নির্মাতারা এই কৌশল ব্যবহার করে কম দামে এশিয়ান মার্কেটে তাদের কর্তৃত্ব লাভ করেছে।

MIUI এর এরকম বৈশিষ্ট্যের কারণে আপনাকে এই Android স্কিনকে কিছুটা বোরিং ও অগোছালো মনে হতে পারে। এছাড়া ও আপনি Xiaomi ফোনে এমন কিছু সিস্টেম অ্যাপ দেখতে পাবেন, যেগুলো অপ্রয়োজনীয় অনুমতি চাইছে, যার মধ্যে রয়েছে Calculator, App Drawer, এবং Cleaner।

তবে, সবমিলিয়ে MIUI হলো একটি শক্তিশালী ও ফিচার সমৃদ্ধ অ্যান্ড্রয়েড স্কিন, যা ব্যবহারকারীদেরকে প্রচুর কাস্টমাইজেশন ফোনটিকে পার্সোনালাইজেশন করার সুযোগ দেয়। যদিও এই ফোনটিতে আসা মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপণের উপস্থিতি কিছু ব্যবহারকারীদের জন্য বিরক্তি কর মনে হতে পারে, তবে এর সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য এটি অনেকের কাছে আকর্ষণীয়। তাই, যারা কাস্টমাইজেশন পছন্দ করেন এবং iOS ডিভাইসের মতো অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাদের জন্য MIUI একমাত্র পছন্দ হতে পারে।

৫. Oppo এর ColorOS

Oppo এর ColorOS

Oppo এর ColorOS হল এমন একটি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন, যা MIUI এবং স্টক অ্যান্ড্রয়েডের সংমিশ্রণ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে বলে দেখা যায়। অন্য কথায় বলতে গেলে, এটি MIUI এর চেয়ে Lightweight, কিন্তু এখনো এটি কাস্টমাইজেবল এবং ফিচার সমৃদ্ধ। অনেকেই এই অ্যান্ড্রয়েড স্কিনকে একটি Mature এবং Polished হিসেবে বর্ণনা করেন, যদিও এটি কিছু ব্যবহারকারীদের কাছে তেমন পছন্দের না। এক্ষেত্রে আপনার নিজেকেই ColorOS ব্যবহার করে দেখতে হবে যে, এটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা।

তবে আমরা এটি বলবো যে, ColorOS এর সাম্প্রতিক ভার্সনগুলো তাদের পূর্ববর্তী ভার্সনের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। বর্তমানে, ColorOS স্কিনে MIUI তুলনায় কম বিজ্ঞাপণ, বাগ এবং বোল্টওয়্যার অ্যাপ রয়েছে। আর এটি সাধারণত Google অ্যাপস গুলোকে ডিফল্ট অপশন হিসেবেই সেট করে। এছাড়াও, ColorOS সাধারণত MIUI এবং OxygenOS এর তুলনায় Faster এবং আরো Stable সফটওয়্যার আপডেট দেয়।

ColorOS এর মর্ডান ভার্সন গুলোতে Google এর অ্যাপস ডিফল্ট হিসেবে থাকে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা দেয়। এই স্কিন টি কাস্টমাইজেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু তবুও, বিবেচনা করতে গেলে, এটি প্রায় স্টক অ্যান্ড্রয়েড এর কাছাকাছি এক্সপেরিয়েন্স দেয়। এই অ্যান্ড্রয়েড স্কিনটির স্মুথ ইউজার ইন্টারফেস এর কারণে অনেকেই এটিকে পছন্দ করে।

সব মিলিয়ে, Oppo এর ColorOS হল একটি শক্তিশালী ও সুসজ্জিত অ্যান্ড্রয়েড স্কিন, যা ব্যবহারকারীদের কাস্টমাইজেশন এবং ফিচার এর একটি সুন্দর সমন্বয় প্রদান করে থাকে। তাই, যারা স্টক অ্যান্ড্রয়েড এবং Balanced Experience পেতে চান, তাদের জন্য ColorOS অন্যতম সেরা একটি পছন্দ হতে পারে।

শেষ কথা

অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন সোর্স প্রকৃতি এবং কাস্টমাইজেশনের ক্ষমতার কারণে ফোন নির্মাতাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ সুযোগ তৈরি করেছে। আর এই সুযোগের সুবিধা নিয়েই তারা স্টক অ্যান্ড্রয়েডকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে নিজেদের জন্য একটি ইউনিক অ্যান্ড্রয়েড স্কিন তৈরি করেছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে।

গুগলের তৈরি স্টক অ্যান্ড্রয়েড বা মূল অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে‌ ব্যবহারকারীর চাহিদার সাথে ফিচারগুলোর অভাব রয়েছে। আর এ কারণেই, Samsung, OnePlus, Xiaomi‌ এবং Oppo সহ বিভিন্ন মোবাইল ব্র্যান্ড তাদের নিজেদের তৈরি অ্যান্ড্রয়েড কাস্টমাইজড ভার্সন তৈরি করেছে। এসব অ্যান্ড্রয়েড স্ক্রিন গুলো ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত ফিচারের ব্যবস্থা করে দেয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি মোবাইল ব্র্যান্ডের তৈরি নিজস্ব স্কিন এর ফিচার এবং দুর্বলতা রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

এখন, আপনি কোন অ্যান্ড্রয়েড স্কিন পছন্দ করবেন এবং এর মাধ্যমে ফোন বেছে নিবেন, তা নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ এবং ফোন ব্যবহারের সময় আপনি কোন ধরনের অভিজ্ঞতা পেতে চান। ‌যাইহোক, একটি মোবাইলের অ্যান্ড্রয়েড স্কিন শুধুমাত্র তার গুনাগুণ প্রকাশ করে না। ফোনটিতে কী ধরনের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে, এটিও ফোনের পারফরম্যান্স এবং ইউনিক ফিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এই বিষয়টি নির্ভর করে অনেকটা ফোনের দামের উপর।

Level 15

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 61 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস