মোবাইলের সফটওয়্যার আপডেটে মূলত তিনধরণের আপডেট দেখা যায়। অপারেটিং সিস্টেম(অ্যান্ড্রয়েড) আপডেট, কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস আপডেট, এবং সিকিউরিটি আপডেট। অপারেটিং সিস্টেম এবং কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস আপডেটগুলো মোবাইলের ইন্টারফেসে বিভিন্ন পরিবর্তন আনে এবং নতুন নতুন ফিচার সংযোজন করে। কিন্তু সিকিউরিটি আপডেটগুলো মোবাইলের ইন্টারফেসে কোন পরিবর্তন আনে না। তাই সিকিউরিটি আপডেট অনেকের কাছে বোরিং মনে হতে পারে, মোবাইলের ডাটা লস, টাইম লস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সিকিউরিটি আপডেট আপনার মোবাইলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের টিউনে আমরা অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি আপডেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। এই আপডেটগুলো মূলত কি কাজ করে, কেন গুরুত্বপুর্ণ, কেন আপনি নিয়মিত আপডেট করবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
যেকোন ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রোগ্রাম লিখতে হয়। এই কাজটি একটু জটিল প্রকৃতির। বড় বড় সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে কোড লিখতে হয়। এই এত এত কোডে ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। মানুষরাই যেহেতু কোড লিখে, ভুল তো হবেই। মানুষ মাত্রই ভুল। প্রোগ্রামিংয়ে ভূলগুলোকে বলা বাগ(Bug)। বাগ’গুলো সংশোধন করাকে বলা হয় ডিবাগিং(Debugging)।
প্রোগ্রামের বাগ’গুলো সংশোধন করা বা ডিবাগিং করা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ কাজ। প্রথমত, প্রোগ্রামের এই বাগ’গুলো খুঁজে বের করতে হয়। তারপর সেগুলোকে ফিক্স করতে হয়।
প্রোগ্রামের এই বাগ’গুলো দুই ধরনের হয়। প্রথম ধরনের বাগের কারণে সফটওয়্যারটি অপ্রত্যাশিত ভুল কাজ করে। উদাহরণস্বরুপ, আপনি যদি কোন ক্যালকুলেটর অ্যাপে “1.300*2.700” এই সংখ্যাটি গুণ করেন তাহলে রেজাল্ট হবে “3.51”। কিন্তু যদি এই “001.300*02.700” সংখ্যাটি গুণ করা হয় তাহলে রেজাল্ট দেখাবে “2.51”। দ্বিতীয় অঙ্কের এই অতিরিক্ত শূন্যগুলোর কারণে সফটওয়্যারটি ভুল কাজ করলো। এই ধরনের বাগ’গুলো ডিভাইসের কোন ক্ষতি করে না।
দ্বিতীয় ধরনের বাগের কারণে সফটওয়্যার এবং ডিভাইসের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরণস্বরুপ, একটা প্রোগ্রাম ব্যবহারকারীর ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড নিয়ে ব্যবহারকারীকে এক্সেস দিয়ে থাকে। কিন্তু তৃতীয় কোন ব্যবহারকারী কোনরকম পাসওয়ার্ড না দিয়ে, শুধুমাত্র ইউজারনেম দিয়ে এক্সেস পেয়ে গেলো। এই যে প্রোগ্রামের সমস্যা এটি হলো সিকিউরিটিজনিত সমস্যা। এই সমস্যার কারণে অনেক গুরুত্বপুর্ণ ডাটা লস বা চুরি হয়ে যেতে পারে।
ডেভেলপাররা যখন তাদের প্রোগ্রামের এই সমস্যাটি খুঁজে বের করে, তখন তারা এটি ফিক্স করে On-The-Air সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের ডিভাইসে পাঠিয়ে দেয়। এটাই হলো কোন ডিভাইসের সিকিউরিটি আপডেট।
তাহলে, অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি আপডেট হলো, অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়ারের সিকিউরিটি জনিত সমস্যাগুলোর সমধান বা বাগ ফিক্সেসের সমষ্টি যেগুলো ডেভেলেপারস কতৃক ইউজারদের ডিভাইসে পাঠানো হয়।
আপনার ফোনে একটা সিকিউরিটি আপডেট আসলো, আপনি সেটা ইন্সটল দিলেন কিন্তু হোয়াট দ্যা কান্ড, আপনার ফোনে কোন পরিবর্তনই হলো না। আপনি ভাবলেন, ধ্যাত্তরি শুধু শুধু টাইম আর ফোনের ডাটা খরচ করলাম। কিন্তু আসলেই পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনটা হয়, সিস্টেমের অনেক ভিতরে, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আজকালকার দিনে ব্যাংকিং, শপিং সবকিছুই হয় মোবাইলে। এই ব্যাপারগুলো যেমন অনেক সহজ, তেমনি এগুলো হ্যাক হওয়াও কিন্তু মোটেও কোন কঠিন ব্যাপার নয়। আপনার মোবাইলের সিকিউরিটি সিস্টেম যদি দুর্বল থাকে তাহলে হ্যাকাররা সহজেই আপনার মোবাইলে এক্সেস পেয়ে যেতে পারে। আর হ্যাকার যদি আপনার মোবাইলের এক্সেস পেয়ে যায় তাহলে কি হবে ভাবুন? আপনার ফেসবুক আইডি, আপনার গুরুত্বপুর্ণ ডাটা, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, আপনার ফটোস, ব্যাংকিং ইনফরমেশন সবকিছুই হারাতে পারেন।
তাই আপনি যদি রেগুলার লেটেস্ট সিকিউরিটি আপডেটগুলো দিয়ে রাখেন তাহলে হ্যাকাররা আপনার ডিভাইসে কোন ইস্যু বা বাগ খুঁজে পাবে না। যার ফলে ডিভাইসের এক্সেসও নিতে পারবে না। আপনার ডিভাইস এবং সর্বোপরি আপনি থাকবেন প্রোটেক্টেড।
আপনারা অবশ্যই জানেন যে অ্যান্ড্রয়েড হলো গুগলের প্রোডাক্ট। সো, অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি আপডেটের কাজটি গুগলই করে থাকে। গুগল এই কাজটিকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখে এবং প্রায় প্রতি মাসেই নতুন আপডেট রিলিজ করে। কিন্তু মূল সমস্যাটি হলো ডিভাইস বা মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডগুলোর।
ব্র্যান্ডগুলি এইক্ষেত্রে কিছুটা গাফিলতি করে। তবে Android One চালিত ডিভাইসগুলোর মেইন্টেইন গুগলের কাছেই থাকে, তাই সেগুলো রেগুলার আপডেট পেতে থাকে। তাছাড়া বড় ব্র্যান্ডগুলোও আপডেট দিতে বেশি দেরি করেনা। কিন্তু ছোটখাট ব্র্যান্ডগুলো খুবই ঝামেলা করে। এমন অনেক স্মার্টফোন ব্র্যান্ড আছে যেগুলো বছরেও সিকিউরিটি আপডেটের কোন খুঁজ খবর রাখে না। তারা শুধুমাত্র স্মার্টফোন বিক্রি করেই ইউজারদের কথা ভুলে যায়। তাই স্মার্টফোন কেনার সময় ব্র্যান্ডের দিকেও নজর দিতে হয়।
রেগুলার আপডেট আসুক আর না আসুক। আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিচের কাজগুলো নিয়মিত ফলো করতে পারেন। সাবধানের মার নেই।
সিকিউরিটি অনেকের কাছে ব্যাকআপের মতোই বোরিং জিনিস। যখন কেউ সব গুরুত্বপুর্ণ ছবি কিংবা ডাটা হারিয়ে বসে তখন ভাবে কেন এগুলোর ব্যাকআপ রাখলাম না। তেমনি, যখন কারও ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায় তখনি মাথায় হাত দিয়ে ভাবে কেন সিকিউরিটি এনশিউর করলাম না।
তাই যখনি কোন সিকিউরিটি আপডেট আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে চলে আসবে তখনি সেটাকে ইন্সটল করে ফেলুন। এটা যে শুধুমাত্র আপনার ডিভাইসের সিকিউরিটি এনশিউর করে তাই না, আপনার ডিভাইসের স্ট্যাবিলিটিও ইমপ্রুভ করে। আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি এটা ফ্রিতেই করতে পারছেন। তাহলে কেন করবেন না?
আমি রাকিব রিয়াদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
কম্পিউটার কিছুই করতে পারে না, জাস্ট আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। -পাবলু পিকাসু