বর্তমানে আমাদের সবার হাতে আইফোন না থাকলেও প্রায় সবারই হাতে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন চলে এসেছে। আর অ্যাপলের আইফোনের থেকে অ্যান্ড্রয়েডের প্রধান সুবিধা বা ফিচার হলো এটায় আপনি বেশি কাস্টমাইজেশনের সুবিধা পাবেন। আর কাস্টমাইজেশনের কথা আসলে প্রথমেই আসে অ্যান্ড্রয়েড লাঞ্চারের কথা। কম্পিউটারে যেমন আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো থীম ব্যবহার করে আমাদের উইন্ডোজকে নিজেদের মতো সাজিয়ে নিতে পারি ঠিক তেমনি অ্যান্ড্রয়েডে আমরা সেটাই করতে পারবো লাঞ্চার ব্যবহার করে। অ্যান্ড্রয়েডের লাঞ্চারের মধ্যে থাকে থীম, আইকন প্যাক, ফ্রন্ট, ওয়ালপেপার এবং লাঞ্চার ভিক্তিক অনান্য সুযোগ সুবিধা। এখন কথা হচ্ছে আপনি কেন লাঞ্চার ব্যবহার করবেন? এর প্রথম উত্তর হচ্ছে, আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আগে থেকেই একটি ডিফল্ট লাঞ্চার দিয়ে দেওয়া থাকে; স্যামসং ডিভাইস হলে স্যামসংয়ের একটি লাঞ্চার দেওয়া থাকবে; Huawei ডিভাইস হলে EMUI লাঞ্চার দেওয়া থাকবে ইত্যাদি। এই ডিফল্ট লাঞ্চারগুলো অনেক সময় আমাদের কাছে বোরিং লাগতে পারে, তাই আপনার স্মার্টফোনে বিচিত্রতা আনার জন্য আপনি লাঞ্চার ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয় উত্তর হচ্ছে, অনেক সময় আমাদের ডিফল্ট লাঞ্চার থেকে আলাদা লাঞ্চারে বিশেষ কিছু এক্সট্রা সুবিধা পাওয়া যায়; সেটার কারণেও আপনি লাঞ্চার ব্যবহার করতে পারেন। যেমন নকিয়া এক্স অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ডিফল্ট Windows ধাঁচের লাঞ্চারে চলমান সকল অ্যাপ একসাথে মুছে দেবার কোনো অপশন নেই; কিন্তু আপনি একটি আলাদা থার্ড পার্টি লাঞ্চার ব্যবহার করে এই ফিচারটিতে আপনার নকিয়া ফোনে নিয়ে আসতে পারেন।
তৃতীয় উত্তর হচ্ছে অনেক সময় আমরা সেকেন্ড হ্যান্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোন কমদামে ব্যবহার করে থাকি। এই সকল সস্তা ডিভাইসগুলোতে পারফরমেন্স ঘাঁটতি থেকেই যায়। অনেক সময় এই সকল ডিভাইসগুলোর ডিফল্ট লাঞ্চারে আপনার কাছে ডিভাইসটিকে স্লো মনে হতে পারে। এক্ষেত্রেও আপনি অন্য কোনো সিম্পল এবং সাধারণ মানের লাঞ্চার ব্যবহার করে আপনার ডিভাইসটিতে আগের থেকে দ্রুততর করে তুলতে পারেন।
আমি টিউনার গেমওয়ালা আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম এ বছরের সেরা কয়েকটি অ্যান্ড্রয়েড লাঞ্চার। যেগুলোকে আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন নিশ্চিন্তে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনে চলে যাচ্ছি :
Action Launcher: বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় লাঞ্চার হচ্ছে একশন লাঞ্চার। এর নতুন আপগ্রেডে আপনি “গুগল পিক্সেল” ডিভাইসের মতো ফিল পাবেন এবং এখানে Google Now ইন্টিগ্রেশন ফিচারকে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও লাঞ্চারটিতে চমৎকার কাস্টমাইজেবল ফিচার রয়েছে যা আপনার ভালো লাগবে। এতে আরো রয়েছে ইন্টিগ্রেটেড Gestures যা আপনার স্মার্টফোনে শর্টকাট সমস্যার একটি চমৎকার সমাধান এনে দেবে। হোম স্ক্রিণে বাম থেকে ডানে swipe করলেই আপনি আপনার ডিভাইসের সকল অ্যাপগুলোর একটি মেন্যু পাবেন।
অন্যদিকে এতে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড অরিও ধাঁচের নোটিফিকেশন ডটস যেটার মাধ্যমে আপনার হোম স্ক্রিণে বিভিন্ন ইনফরমেশন ভিক্তিক তথ্য আপনি পাবে। তাই আপনার ফোনে যদি অফিসিয়ালি অ্যান্ড্রয়েড ওরিও আপডেট না চলে তাহলে এই লাঞ্চারটি ব্যবহার করে আপনি অ্যান্ড্রয়েড ও এর স্বাদ পেতে পারবেন। একশন লাঞ্চারে আরো রয়েছে এনিমেটেড ডক, অ্যাপ ড্রয়ার সহ আরো অনেক ফিচার। গুগল প্লে স্টোরে একশন লাঞ্চারটি আপনি ফ্রিতে ডাউনলোড এবং ইন্সটল করে নিতে পারবেন, তবে এর কিছু কিছু ফিচার উপভোগ করতে হলে আপনাকে এর প্রো সংষ্করণে আপগ্রেড করতে হবে।
AIO Launcher: আপনি যদি প্লে-স্টোরের লাঞ্চার নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে অধিকাংশ লাঞ্চারই হোম স্ক্রিণ টুইকস এবং কাস্টমাইজেশন নিয়েই সাজানো হয়ে থাকে। কিন্তু AIO লাঞ্চারটি এই দিক থেকে একটু আলাদা এবং একটু ইউনিক। এখানে আপনি ফ্যান্সি আইকন প্যাকস কিংবা এনিমেশন পাবেন না কিন্তু এখান আপনি পাবেন একটি তথ্য ভিক্তিক লাঞ্চার এক্সপেরিয়েন্স। হ্যাঁ এটি আপনার স্লো ডিভাইসেও বেশ দ্রুততর ভাবে চলতে পারবে।
আপনার হোম স্ক্রিণে তথ্যের পাশাপাশি ফ্রিকুয়েন্ট ব্যবহৃত অ্যাপস এবং আনরিড টেক্স মেসেজ ও ফ্রিকুয়েন্ট ব্যবহৃত ফোনবুকের Contacts দিয়ে সাজানো হবে। এছাড়াও টাইম এবং আবহাওয়ার তথ্যাবলি, এলার্ম, র্যাম মনিটরিং তথ্যগুলো হোম স্ক্রিণের সবার উপরে থাকবে। আর নিচের দিকে স্ক্রল করে গেলে আপনি ইমেইলস, কল লগ এবং আপনার নিউজ ফিডকে দেখতে পারবেন।
কোনো অ্যাপসকে ম্যানুয়ালি খুঁজতে হলে আপনি সরাসরি সার্চ আইকনে ট্যাপ করুন। এবার সেখানে আপনার কাঙ্খিত অ্যাপের প্রথম দুটি বা তিনটি অক্ষর টাইপ করলে সে অনুযায়ী contacts থেকে অ্যাপস পর্যন্ত সকল সার্চ রেজাল্ট আপনার সামনে এসে হাজির হবে। এই লাঞ্চারটি তাদের জন্য যাদের কাছে স্মার্টফোনে অতিরিক্ত মনোরঞ্জণের সময় নেই এবং যারা একটি সহজ সরল লাঞ্চার চান তাদের জন্য।
ADW Launcher 2: অ্যান্ড্রয়েড লাঞ্চার জগতের শুরু দিকের লাঞ্চার হলো এই ADW Laucher। ২০১৬ সালে এর দ্বিতীয় সংষ্করণ আসার পর এটা নিয়মিত আপগ্রেড হচ্ছে। আর এর চমৎকার ইন্টারফেসের জন্য আমাদের আজকের লিস্টে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাঞ্চারটি।
এতে আপনি কনফিগারেশন করার জন্য বেশ কটি অপশনস পাবেন। লাঞ্চারটির ইন্টারফেস বেশ ফ্লুইড এবং অনান্য লাঞ্চারের মতো এখানেও আপনি ফ্রিতে বেশ কটি আলাদা থীম ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। এই লাঞ্চারটিতে অ্যান্ড্রয়েড কিটক্যাট এবং মার্শম্যালো থিমকে বেইস করে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই আপনি যদি আপনার নতুন ডিভাইসে পুরোনো অ্যান্ড্রয়েডের ডিজাইনকে মিস করে থাকে তাহলে এই লাঞ্চারটি প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে পারেন। এটি একটি ফ্রি লাঞ্চার তবে এর কিছু কিছু ফিচারের জন্য এর পেইড আপগ্রেড প্যাকেজে আপনাকে যেতে হবে।
EVERYTHINGME Laucnher: আপনি যদি আপনার অ্যাপসগুলোকে হোম স্ক্রিণে ছোট ছোট ক্লিন ফোল্ডারে জমা করে রাখার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনার জন্য বেস্ট লাঞ্চার হচ্ছে এই EVERYTHINGME Laucnher। EVERYTHINGME Laucnher হচ্ছে একটি কনটেক্সচুয়াল লাঞ্চার যেখানে আপনার সিস্টেমের সকল অ্যাপসকে তাদের ধরন অনুযায়ী হোম স্ক্রিণে নির্দিষ্ট ফোল্ডারে সাজিয়ে রাখা হয়। আর আপনার ফোনবুক contacts এবং preferrences গুলোকে আলাদা স্মার্ট ফোল্ডারে সাজানো থাকবে। হোম স্ক্রিণের উপরে দিকে রয়েছে Gesture সার্পোট এবং ডাবল ট্যাপ করলে ডিফল্ট ভাবে আপনার ডিভাইসের ক্যামেরা চালু হবে। আর সোয়াইপ ডাউন করলে কুইক সার্চ ফিচারটি চালু হবে। এছাড়াও লঞ্চারটিতে রয়েছে কুইক সার্চ ফিচার যেটা কোনো রকমের ম্যানুয়াল সেটআপ ছাড়াই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
Microsoft Launcher: আপনি জানেন কি মাইক্রোসফটের আলাদা একটি লাঞ্চার রয়েছে? না আপনি উইন্ডোজ ধাঁচের লাঞ্চারের কথা বলছি না, বলছি সাধামাটা এবং সুন্দর Arrow Launcher এর কথা, এটি এখন প্লেস্টোরে মাইক্রোসফট লাঞ্চার নামে রয়েছে। তবে এর অনেকগুলো হিডেন ফিচার আপনি বেটা অপশনে খুঁজে পাবেন। এই লাঞ্চারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর Gesture সার্পোট! হ্যাঁ এই লাঞ্চারে প্রায় সবকিছুই নোটিফিকেশন এক্সপেনশন থেকে শুরু করে আপনার ডিভাইসকে লক করা পর্যন্ত সকল কাজকেই Gesture এর মাধ্যমে করা যাবে। আপনি যদি Gesture প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে একবার লাঞ্চারটিকে ট্রাই করে দেখুন।
Nova Launcher: বেস্ট লাঞ্চারের লিস্ট কখনো সম্পূর্ণ হয় না নোভা লাঞ্চারটির ছাড়া। তাই আমাদের আজকের ২০১৮ সালের বেস্ট লাঞ্চার লিস্টে সর্বশেষে আমি রেখেছি এই নোভা লাঞ্চারকে। নোভা লাঞ্চার নিয়ে নতুন করে তেমন কিছুই বলার নেই। এর রয়েছে চমৎকার থ্রিডি ইফেক্ট এবং কাস্টমাইজেশন ফিচার ও সময়মত আপগ্রেড যার জন্য অ্যান্ড্রয়েড সেক্টরে অন্যতম ইউনিক ও বেস্ট লাঞ্চার হিসেবে নোভা লাঞ্চার র্শীষে রয়েছে। আপনি যদি আগে নোভা লাঞ্চার ব্যবহার না করে থাকেন তাহলে আমি অবশ্যই বলবো একবার হলেও লাঞ্চারটিকে ট্রাই করে নিন। তবে উল্লেখ্য যে এই লাঞ্চারটি একটি হেভি ইফেক্টযুক্ত লাঞ্চার তাই কম পারফরমেন্সের ডিভাইসে এই লাঞ্চারটি ব্যবহার না করাই উত্তম।
এই ছিলো আমাদের আজকের লিস্ট। আশা করবো এই লাঞ্চারগুলো আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। টিউনটি ভালো লাগলে জোস বাটনে ক্লিক করতে ভুলে যাবেন না যেন। জোস বাটন কোথায় পাবেন? টিউনটির উপরের দিকে স্ক্রল করে যান দেখবেন জোস নামের একটি বাটন রয়েছে সেখানে ক্লিক করুন। আর হাঁ টিউনটি সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে তা নির্দ্বিধায় নিচের টিউমেন্ট বক্সে করে ফেলুন। আপনার নিজের কোনো টেক বা বিজ্ঞান বিষায়ক কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকলে সেটা আপনি সরাসরি টেকটিউনস জ্যাকেটে টিউন করে দিতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই থাক। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সোশাল প্ল্যাটফর্ম টেকটিউনস এ। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!