আজকে আমি আপনাদের অ্যান্ড্রয়েড এর কিছু ফিচার নিয়ে কথা বলবো যেগুলো সব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল এ রয়েছে। হয়তো আমরা সবাই সেগুলো ব্যবহার করছিনা না জানার করনে। দেখুন না অ্যান্ড্রয়েড এর ফিচার গুলো একবার ট্রাই করে, হয়তো আপনার প্রাত্যহিক জীবন কে কিছুটা হলেও সহজ করে তুলবে।
১। Android device manager :
মোবাইল হারিয়ে যাওয়া কিংবা চুরি হয়ে যাওয়া খুব সচরাচর একটা ঘটনা। মনে হয় আমরা সবাই এই অভিজ্ঞতাটার সাথে পরিচিত। কিন্তু আপনি জানেন কি Android device manager এর সাহায্যে আপনি আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনের অবস্থান নির্ণয় করতে পারেন? শুধু তাই নয় আপনি চাইলে আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোন লক করতে পারেন, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন, মুছে দিতে পারেন ফোন এ থাকা আপনার সব ডাটা, চাইলে ফোন এ বেজে উঠবে রিং যেখানেই থাকুক না সেটা। তো আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো - আপনার কম্পিউটার এ ব্রাউজার ওপেন করে এই লিংক টা তে ভিসিট করুন http://www.google.com/android/devicemanager এখন আপনি আপনার জিমেইল একাউন্ট দিয়ে লগইন করুন। আপনি অবশ্যই সেই জিমেইল একাউন্ট দিয়ে লগইন করবেন যেই জিমেইল একাউন্ট আপনি আপনার ফোন এ ব্যবহার করেছিলেন। লগইন করার পর আপনি আপনার ডিভাইস (মোবাইল, ট্যাব) এর লিস্ট দেখতে পাবেন। এবং সবগুলো ডিভাইস এর অবস্থান ও জানতে পারবেন। Ring, Lock, Erase নাম তিনটা অপশন পাবেন ডিভাইস নাম এর নিচে। তো প্রথমে আপনি আপনার হারিয়ে ডিভাইস এর অবস্থান দেখতে পারবেন ঠিক কোথায় এটা রয়েছে, আপনি যদি চান আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোন এ রিং বেজে উঠুক তাহলে ring অপশন এ ক্লিক করুন, যদি লক করতে চান তাহলে lock অপশন এ ক্লিক করে পাসওয়ার্ড ইন্সার্ট করে করে লক করে দিতে পারেন। অথবা erase অপশন এ ক্লিক করে আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনের সব ডাটা মুছে ফেলতে পারেন।
২। Smart lock
smart lock অ্যান্ড্রয়েড এর এমন একটা ফিচার যেটা কানেক্টেড ডিভাইস, লোকেশন, ভয়েস এর সাহায্যে আপনার ফোন কে লক এবং আনলক করতে পারে। উদাহরন স্বরূপ আপনি চাচ্ছেন আপনি যখন অফিস এ প্রবেশ করবেন খন আপনার ফোন টা অটোমেটিক্যালি লক হয়ে যাবে আবার যখন বাসায় পৌচাবেন তখন আনলক হয়ে যাবে, অথবা আপনি চাচ্ছেন আপনার কোনো ভয়েস কমান্ড এর মাধ্যমে আপনার ফোন আনলক হয়ে যাবে, smart lock এর সাহায্যে সেটা খুব সহজে করতে পারেন। এই ফিচারটি অন করার জন্য আপনাকে অ্যান্ড্রয়েড এর সেটিংস অপসন এ গিয়ে security / lock screen and security তে ক্লিক করে secure lock settings (সব ফোন এ নাও থাকতে পারে) ওপেন করতে করতে হবে যেখানে আপনি smart lock নামে একটা অপশন খুঁজে পাবেন। smart lock অপশন টি ওপেন করলে আপনি on-body detection, Trusted place, Trusted device, এবং Trusted Voice নামে চারটি অপশন খুঁজে পাবেন।
trusted place : trusted place - add trusted place - লোকেশন সিলেক্ট করুন - লোকেশন নাম রিনেম করুন (যদি চান) - ওকে। অপসন টি এক্টিভেট করার পর আপনি যখনি এই লোকেশন এ অবস্থান করবেন তখন আপনার ফোন অটোমেটিক্যালি আনলক হয়ে যাবে। আপনি চাইলে অনেকগুলো লোকেশন অ্যাড করতে পারবেন
trusted device : (blutooth অন করে নিন) trusted device - add trusted device - সিলেক্ট bluetooth- এখন ডিভাইস সিলেক্ট করে অ্যাড করে নিন। bluetooth ওয়াচ, car bluetooth সিস্টেম অথবা অন্য কোনো ডিভাইস যেটাতে bluetooth কানেক্টিভিটি রয়েছে সেই ডিভাইস গুলো আপনি আপনার ট্রাস্টেড ডিভাইস হিসেবে অ্যাড করতে পারেন। আপনি যখন আপনার ট্রাস্টেড ডিভাইস এর রেঞ্জ এ থাকবেন, যখন আপনার ফোন অটোমেটিক্যালি আনলক হয়ে যাবে।
on -body detection : এই অপসন টি চালু করলে আপনার ফোন ঠিক ততোক্ষণ আনলক থাকবে যতক্ষণ এটি আপনার হাতে থাকবে অর্থ্যাৎ ফোনটি মুভমেন্ট অবস্থায় থাকবে। আপনি যখন ফোন টি কোথাও রেখে দেবেন যেখানে ফোন এর কোনো মুভমেন্ট থাকবেনা সেখানে ফোন অটোমেটিক্যালি লক হয়ে যাবে
৩। Owner information :
আপনার এবং আপনার ফোনের নিরাপত্তার জন্য owner Info অ্যান্ড্রয়েডের বেস্ট একটা ফিচার। এই ফিচার এর মাধ্যমে আপনি আপনার ফোন লক থাকা অবস্থায়ও কাস্টম messgae শো করাতে পারেন, তো আপনাকে যা করতে হবে সেটা হলো সেটিংস - security / lock screen and security - info and app shorcuts (যদি থাকে) - Owner Info - check show Owner Info on lock screen। এখন আপনি আপনার জরুরি ইনফরমেশন গুলো এখানে টাইপ করুন। আপনি আপনার নাম, ইমার্জেন্সসি কন্টাক্ট নাম্বার, ইমেইল এডড্রেস এবং ব্লাড গ্রুপ লিখতে পারেন। এখন যদি আপনার ফোন কখনো হারিয়ে যায় এবং ফোন টি যদি কোনো ভালো মানুষের হাতে পড়ে এবং সেই ভালো মানুষ টি যদি চায় আপনার Owner Info দেখে আপনার সাথে কন্টাক্ট করতে পারে, অথবা আপনি যদি কখনো কোনো দুর্ঘটনায় পড়েন তাহলে আপনার Owner Info থেকে আপনার ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট নাম্বার এবং ব্লাড গ্রুপ দেখে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে।
৪। Monitor and control data usage :
অ্যান্ড্রয়েড এর এই ফিচার টির মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল ডাটা মনিটর এবং কন্ট্রোল করতে পারেন। আপনি দেখতে পারেন আপনি কতটা ডাটা ব্যবহার করেছেন, চাইলে আপনি ডাটা ইউসেজ লিমিট এবং ওয়ার্নিং সেট করতে পারেন। এই ফিচারটি টি অন করতে হলে ফোনের সেটিংস অপশন থেকে data usage অপশন ওপেন করুন। আপনি দেখতে পাবেন কতটা ডাটা আপনি ব্যবহার করেছেন, এবং কোন apps গুলো ঠিক কতটা ডাটা ব্যবহার করেছে, এখন প্রথমে bill cycle সেট করুন অর্থাৎ কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত আপনি ডাটা ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। তারপর আপনার মোবাইল ডাটা লিমিট সেট করে দিতে পারেন যতটা আপনি বেবহার করতে চাচ্ছেন। ধরুন আপনি ৮ জিবি লিমিট সেট করেছেন, যখন আপনার ৮ জিবি ডাটা শেষ হয়ে যাবে আপনার মোবাইল ডাটা কানেকশন অটোমেটিক্যালি অফ হয়ে যাবে যাতে আপনার অতিরিক্ত চার্জ না কাটে। আপনি চাইলে ডাটা ওয়ার্নিং সেট করে দিতে পারেন, যেটা আগেভাগেই আপনাকে জানিয়ে দেবে আপনার মোবাইল ডাটা শেষ হয়ে আসতেছে।
৫। Adjust animation settings :
যখন আমরা কোনো অ্যাপস, সেটিংস অথবা কোনো অপশন open অথবা close করি তখন সেটা কতটা দ্রুত অথবা কতটা স্লো open অথবা close হবে সেটা আমরা এই ফিচার টির মাধ্যমে সেট করে দিতে পারি। অর্থ্যাৎ আপনার ফোনের transition effect এবং animation duration সেট করতে পারেন। তো আপনাকে যেটা করতে হবে - সেটিংস এ গিয়ে ডেভেলপার অপশন অন করতে হবে। ডেভেলপার অপশন অন করার জন্য সেটিংস থেকে about device এ গিয়ে build number এর উপর ককেকবার ক্লিক করতে হবে, তাহলে আপনার developer option অন হয়ে যাবে। developer option অন এবং ওপেন করার পর window animation scale, transition animation scale, animator duration scale নাম তিনটি অপশন খুঁজে পাবেন, এখন এই তিনটি অপশন ওপেন করে আপনার ইচ্ছে মতো স্কেল সিলেক্ট করে দিতে পারেন অথবা অফ করে দিতে পারেন। যত কম স্কেল সিলেক্ট করবেন আপনার ফোনের ট্রান্সিশন / অ্যানিমেশন ইফেক্ট ততো ফাস্ট হবে।
৬। Enable Gpu Rendering :
আপনি যদি আপনার ফোন এ বেস্ট গ্রাপিক্স পারপরমেন্স অথবা গেমিং এক্সপেরিয়েন্স পেতে চান তাহলে অ্যান্ড্রয়েডের এই ফিচারটি টি hardware acceleration থেকে এনাবল করে দিন। সেটিংস থেকে ডেভেলপার অপশন এ গিয়ে hardware acceleration এর নিচে force gpu rendering এবং force 4xMSAA অপশন দুটি এনাবল করে দিন। এই দুটি অপশন এনাবল করে দিলে আপনার ফোনের গ্রাফিক্স পারফর্মেন্স এবং এবং গেমিং এক্সপেরিএন্স আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হবে।
৭। Airplane Mode :
এরোপ্লেন মুড অ্যান্ড্রয়েড ফোনের খুব নরমাল একটা ফিচার কিন্তু এই ফিচারটির কিছু এক্সট্রা সুবিধা রয়েছে। আপনি যদি এরোপ্লেন মোড অন করে মোবাইল চার্জ দেন তাহলে দেখবেন নরমাল মুড এর চেয়ে দ্রুত আপনার মোবাইল এর বেটারী চার্জ হয়ে গেছে। এরোপ্লেন মুড এ আপনার সকল সেলুলার কমুনিকেশন বন্ধ হয়ে যাই কিন্তু Wi-Fi ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি চান কেউ আপনাকে বিরক্ত না করুক তাহলে আপনি এরোপ্লেন মুড অন করে এঁবং Wi-Fi অন করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারেন। এরোপ্লেন মুড অন থাকা অবস্থায় আপনার ফোনের বেটারী চার্জ খুব ধীরে শেষ হবে।
কোন ভুল তথ্য থাকলে দয়া করে টিউমেন্ট করে জানাবেন। ভাল থাকবেন সবাই। আপনার যদি আরো কিছু জানার থাকে আপনি আমার ব্লগ থেকে ঘুরে আস্তে পারেন অথবা facebook এ আমাকে follow করতে পারেন।
আমি sopnilsohan.com। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।