প্রযুক্তি মানুষকে দিন দিন ঘরে আবদ্ধ করে রাখছে। উদাহরণস্বরুপ আমার কথাই ধরুন। আগে বাইরে গিয়ে মাঠে ক্রিকেট খেলতাম। অথচ সেই আমি এখন ল্যাপটপে ক্রিকেট ২০০৭’টাই খেলি। আগে লাফ-ঝাঁপ সবই দিতাম। মজা পেতাম। আর এখন ঘরে বসে ‘প্রিন্স অব পার্সিয়া: ওয়ারিয়র উইদিন’ এর লাফের মজা নিই। দেয়াল বেয়ে হাঁটার মজা নিই। তবে সেটা ওই ১৫ ইঞ্চির একটা স্ক্রিনের সামনে বসেই। ছোটবেলায় বেশ সাইকেল চালানোর ঝোঁক ছিল। আর এখন অ্যান্ড্রয়েড-এ হাজার রকমের রেসিং গেইম খেলি। কোনো সাইকেল-টাইকেলের দরকার হয় না। শুধু এতটুকু হলেই হতো। টাইপিং স্পিডটা বেশি হবার কারণে এখন ডায়েরিও লিখতে ইচ্ছে করে না। এজন্য একটা প্রিন্টারও কিনবো বলে মনস্থির করেছি। প্রতিদিন ডায়েরির লেখাগুলো মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে লিখে সেগুলো প্রিন্ট করবো। পাঞ্চ করে পৃষ্ঠাগুলো এক জায়গায় জমা করবো। সত্যি, আমি নিজেই বলছি, চিন্তাগুলো সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর। দিন দিন এভাবেই আমরা প্রযুক্তির কারণে অলস হয়ে যাচ্ছি। প্রযুক্তির কল্যাণে একটুও আর পরিশ্রম করতে চাই না আমরা।
ছোটবেলায় বৃষ্টির দিনে বাড়ির লোকজন যখন বাইরে যেতে পারতো না, তখন নারিকেল ও মুড়ি মাখা নিয়ে সবাই বসে যেতো লুডু খেলতে। অথচ এখন লুডু গেইমের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও তৈরি হয়েছে। সাপলুডুর অ্যাপতো আরো মজার। আপনাকে সাপের দেহ বেয়ে লেজে আশাকরি।
এসব স্মৃতিচারণ করছি একটা কারণে। সেটা হলো আমরা সত্যি সত্যি কোনো পরিশ্রম করছি না। লিফ্ট আসার পূর্বে মানুষজনকে সিঁড়ি ভেঙেই উপরে উঠতে হতো। আর এখন আমরা লিফ্ট ছাড়া সিঁড়ি দিয়ে ওঠার কথা ভাবতেই পারি না। অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে হয় কম্পিউটারের সামনে বসে। ফাইল-পত্র নিয়ে দৌড়-ঝাঁপ করতে হয় না। মেইলের মাধ্যমেই তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে।
তারমানে আমরা কিন্তু কেউ আর হাঁটছি না। অনেকের শরীরে মেদ বাসা বেঁধেছে। স্থুলতা বেড়েছে। শুধুমাত্র এই পরিশ্রম না করার কারণে। আর এসব কারণেই খুব অল্প বয়সেই এখনকার লোকজন ডায়াবেটিস সহ আরো অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগী হবার পর ডাক্তারি পরামর্শমতো আমাদের ঠিকই হাঁটতে হচ্ছে। তাই কাজটা যাতে পরে করতে না হয় সেজন্য আগে থেকেই হাঁটার অভ্যাস সকলেরই করা উচিত।
তবে যতদিন এই অ্যান্ড্রয়েড, ফেইসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ ইত্যাদি আছে ততদিন আপনাকে ঘর থেকে বের করা একরকম অসম্ভব। আজ তাই কথা বলবো সেসব বিষয় নিয়েই। কীভাবে শুধুমাত্র আপনার ফোন আপনাকে ঘর থেকে বের করার উপায় তৈরি করে দেবে। তো চলুন দেখে নেয়া যাক সে বিষয়গুলো।
প্রথমেই বলে রাখি এটি আপনাকে ঘর থেকে বের করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সেটা চাচ্ছেন। অ্যান্ড্রয়েডের সুবাদে বিভিন্ন ধরনের ফিটনেস ট্র্যাকার অ্যাপ এখন বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি অ্যাপগুলো নিজেরা নিজেদের সাথেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে যাচ্ছে। অ্যাপগুলোর কাজ হচ্ছে আপনি দৈনিক কতটুকু হাঁটলেন সেটা পরিমাপ করা। সেটা পায়ের ভিত্তিতে, সময়ের ভিত্তিতে আর এমনকি দূরত্বের ভিত্তিতেও। একটা মুটামুটি ভাল অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কত পা হাঁটলেন সেটা গণনার জন্য সেন্সর বসানো থাকে। যার মাধ্যমে প্রায় নির্ভুলভাবে প্রতিদিনের হাঁটার পরিমাণ আপনি জানতে পারবেন। এছাড়াও গুগল কর্তৃক নির্মিত একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপ আছে যার নাম ‘গুগল ফিট’। এটি দ্বারাও আপনি এই কাজগুলো করতে পারেন। যদি এখনও না দেখে থাকেন তাহলে আজই দেখে নিন। তবে এটি দ্বারা যে শুধু পা-ই গুণতে পারবেন তা কিন্তু নয়। একই সাথে হাঁটার অভ্যাস বাড়ানোর জন্য দৈনিক ও সাপ্তাহিক হাঁটার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারবেন। একটা অ্যাকটিভ লাইফস্টাইল তৈরিতে এ ধরনের অ্যাপের বিকল্প নেই।
আর আপনাদের মধ্যে যারা স্যামসাং ফোন ব্যবহার করেন তাদের জন্য তো আরো সুবিধা। স্যামসাং ফোনগুলোতে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য একটি অ্যাপ নির্মাণ সময়েই ইন্সটল করা থাকে। অ্যাপটির নাম ‘স্যামসাং হেল্থ’। শুধু তাই নয়, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ এর পরবর্তী প্রায় সব ফোনগুলোতেই হার্ট রেট সেন্সর স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে আমরা আরো সহজভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে পারি। এমনকি স্মার্টওয়াচগুলোতেও এটি বেশ ভালো কাজ করবে।
এছাড়াও এ ধরনের আরো একটি অ্যাপ রয়েছে। আর সেটি হলো ফিট বিট (Fitbit)। এর মাধ্যমে আপনার অন্যান্য বন্ধুদের সাথেও হাঁটা বা স্বাস্থ্য বিষয়ক চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। প্রতিযোগিতা করতে পারেন তাদের সাথে। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার প্রতিযোগিতা করতে কোনো ক্ষতি নেই।
তবে এর পাশাপাশি একটু সময় নিয়ে একটু রিসার্চ করে আপনার দৈনিক খাবারের পুষ্টিতালিকাটা ঠিক করুন। আর সে অনুযায়ী হাঁটুন। কারণ, অনেকেই আছেন যারা দুইদিন হাঁটার পর হাঁটা ছেড়ে দেন। এই দুটো জিনিসের কম্বিনেশন থাকলে আপনার হাঁটতে ইচ্ছা করবেই। এমনকি আপনি আপনার শারীরিক অবস্থা নিজেই বুঝতে পারবেন।
মনে হতে পারে, এটা আবার কেমন কথা? অ্যাপ কীভাবে বাইরে নিয়ে যেতে পারে মানুষকে। যেমন ফটোগ্রাফির শখ থাকলে আপনাকে অবশ্যই বাড়ির বাইরে যেতে হবে। বিভিন্ন অ্যাপে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকে। তাই ফটোগ্রাফির প্রয়োজনে হলেও আপনাকে বাইরে যেতেই হবে। এছাড়া গুগল ম্যাপেও প্রোফাইল তৈরিই করে রাখা যায় আর সে অনুযায়ীও হাঁটা যায়।
এছাড়াও যদি গেইম খেলতে চান তাহলে পোকেমন গো (Pokémon Go)’র মতো গেইমগুলো খেলুন। তাহলে এমনিতেই আপনি বাইরে যাবেন। আর সর্বোপরি কিছু পরামর্শ হলো-
পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম। প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
apnar fb libk kaz kora na