আপনারা হয়তো নিশ্চয়ই জানেন যে, যে কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট থেকে ডিপফেক অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারে এবং এটি ব্যবহার করে নকল ইমেজ বা ভিডিও তৈরি করতে পারে যা দেখতে হুবহু আসলের মতো। এটা কিন্তু এক প্রকারের সমস্যা, ঠিক কী না? আচ্ছা একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি।
এখনকার সময়ে, ইন্টারনেটে যা ঘটছে তা বিশ্বাস করা একটু কঠিন। এখানে যেমন রয়েছে অসংখ্য রিয়েল ভিডিও। ঠিক তেমনি রয়েছে কতিপয় ফেইক ভিডিও যা দেখতে হুবহু আসল ভিডিও বা অরিজিনাল ভিডিও এর মতো। বর্তমানে বাস্তবসম্মত ফেইক ভিডিও এবং ফেইক ফটোগুলো কে আসল বা অরিজিনাল থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফেইক ভিডিও বা ফেইক ফটো তৈরি করার যে টেকনোলজি তা পাবলিকের কাছে উন্মুক্ত অর্থাৎ, অ্যাপ্লিকেশন গুলো পাবলিক কোন পেমেন্ট বা অ্যাক্সেস অনুমতি ছাড়াই অ্যাক্সেস করতে পারে। এসব অ্যাপ্লিকেশন সাধারণত ডিপফেক নামে পরিচিত।
আজকের এই টিউনের মাধ্যমে, আমি আপনাকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেব যে ডিপফেক কী? ডিপফেক এর কারণে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে? ডিপফেক কীভাবে আমাদের জন্য সাইবার হুমকি ডেকে আনতে পারে? অর্থাৎ, ডিপফেক সম্পর্কে যা যা জানা দরকার তা তা জানিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ। আমরা এই টিউনের মাধ্যমে ডিপফেক ভিডিও তৈরির কিছু অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে জানবো এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিও কীভাবে স্পট করতে হয় তা শেখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
ডিপফেক কী তা যদি সহজ ভাষায় বোঝাতে চাই তাহলে আমি বলবো যে, ডিপফেক হল আসলে একটি ফেইক ভিডিও বা ফটো। যা মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ব্যবহার করে আসলের মতো করে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, ভিডিওটি অরিজিনাল ভিডিও বা ফটো এর মতো কিন্তু এটি মূলত নকল ভিডিও বা ফটো। তাছাড়া ভিডিওটি যে নকল বা ফেইক তা সূক্ষ্ম গবেষণা ছাড়া ধরা যায় না। যদিও অধিকাংশ লোকই মজার উদ্দেশ্য নিয়ে Memes বা Reels তৈরির জন্য ডিপফেক টেকনোলজি ব্যবহার করে, কিন্তু বাজে চিন্তাধারার মানুষেরা এটি ব্যবহার করে ভুল ইনফরমেশন দ্রুত বিস্তৃত ভাবে ছড়িয়ে দেয়। যাতে করে সে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারে এবং অনলাইনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ফিতনা ফাসাদ তৈরি করতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে যদি বলি তাহলে এমনটা বলবো যে, ভিডিওতে ফেইমাস কোন ব্যক্তি বা দৃঢ়চরিত্রের কোন সৎ ব্যক্তি উদ্ভট কিছু কথা বলছে। কিন্তু যাচাই বাচাই করলে দেখা যায় যে ঐ ব্যক্তির সাথে ঐ সব কথার কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, ঐ ব্যক্তির সাথে আলাপ করলে ঐ ব্যক্তি বলবে যে, এসব কথার কোন কথাই আমি বলি নি। অর্থাৎ, বাস্তবসম্মত বিশ্বাস যোগ্য ফেইক ভিডিও গুলোই হচ্ছে ডিপফেক। এই ভিডিও গুলো মূলত অত্যন্ত প্রতারণা মূলক ভিজুয়াল এবং অডিও সামগ্রীর সাহায্যে অবিশ্বাস্য ভাবে তৈরি করা ফেইক ভিডিও। যা ইতিবাচক ও নেতিবাচক যেকোনো ধরনের কাজের জন্য ইউজ করা যেতে পারে অর্থাৎ, ভালো কাজে বা খারাপ কাজে ডিপফেক ভিডিও গুলোকে ইউজ করা যেতে পারে।
আমরা আজ পর্যন্ত যতটি টেকনোলজি দেখেছি, তার অধিকাংশরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। অর্থাৎ, ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে। ডিপফেক প্রযুক্তি ঠিক এমনই একটি প্রযুক্তি। এর ও রয়েছে ভালো ও মন্দ দিক। আজকে আমরা এই টিউনের মাধ্যমে ডিপফেক প্রযুক্তির ১০ টি অ্যাপ এবং সফটওয়্যার এর সাথে পরিচিত হবো। চলুন দেখে নেওয়া যাক অ্যাপ ও সফটওয়্যার গুলো।
FaceApp হল ডিপফেক তৈরির একটি জনপ্রিয় অ্যাপ যা AI এর উপর নির্ভর করে কাজ করে। এটিতে রয়েছে নানা ধরনের ইফেক্ট, অসংখ্য ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ফিল্টার যা আপনি আপনার ছবির লুক পরিবর্তন করতে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি অ্যাপ্লিকেশন যা প্লে স্টোরেও পেয়ে যাবেন।
Official Download @ FaceApp
অল্প কয়দিন আগে ভাইরাল হয়েছে এমন একটি অ্যাপ হল Zao। এটির কাজ হল মূলত ফেইস সোয়াপ করা। তবে এটা শুধুমাত্র দুটি ব্যক্তির ফেইস সুইচ করে না বরং কোন ভিডিওতে আপনার ফটো অর্থাৎ, আপনার মুখও যোগ করতে পারে। এটাও এখন সর্বাধিক জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এই অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোরেও খুঁজে পাবেন। প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করার লিংক এই অঅনুচ্ছেদের নিচে দেওয়া হল।
Official Download @ Zao
বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ডিপফেক অ্যাপ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অ্যাপ্লিকেশন হল Reface। এটির কাজ হল দুটি ছবির ফেস সোয়াপ করা। AI ব্যবহার করে ফেইক ফটো তৈরি করা এবং Memes তৈরি করা এবং ফেইস সোয়াপিং AI এর সাহায্যে GIFs তৈরি করা। এই অ্যাপটি প্লে স্টোরেও পেয়ে যাবেন। ডাউনলোড লিংক নিচে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
Official Download @ Reface
ডিপফেক ভিডিও বা ফটো তৈরি করার অন্যতম আরেকটি সেরা অ্যাপ হল SpeakPic। SpeakPic এই নামটি দেখে আরেকটা বিষয় বোঝা যায় যে, এই অ্যাপ তাদের ফটো বা ভিডিওতে AI ব্যবহার করে ক্যারেক্টার গুলোকে কথা বলাতে সক্ষম করে। শুধু রেকর্ড করে নিন বা টেক্সট টাইপ করে নিন। তাহলে আপনি যা চান ক্যারেক্টারটি তাই বলবে। এই অ্যাপ্লিকেশনটিও আপনি গুগল প্লে স্টোরে পেয়ে যাবেন। ডাউনলোড লিংক নিচে দেওয়া হল।
Official Download @ SpeakPic
ডিপফেক ফটো বা ভিডিও ডাউনলোড করার সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একটি সফটওয়্যার হল DeepFaceLab। এই ওয়েবসাইটের ওপেন সোর্স সিস্টেম ডিপফেক ভিডিও বা ছবিতে ছবি সোয়াপ করা ছাড়াও আরো বিশেষ ধরনের কাজে মুখ অদলবদল করতে পারে। এটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে না। কারণ এটি একটি সফটওয়্যার। এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিংক নিচে দেওয়া হল।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ DeepFaceLab
ডিপফেক ভিডিও বা ফটো ক্রিয়েট করার অন্যতম সেরা আরও একটি সফটওয়্যার হল FakeApp। এটি ইউজারদের নিজের বা অন্য কারোর সাথে ফেস বদলাবদলি করার সুবিধা প্রদান করে। এটি মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি সফটওয়্যার। তবে ম্যাক বা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম এর জন্যও সফটওয়্যারটি পাওয়া যেতে পারে। এটার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিংকটা আমি খুঁজে পাই নি। তবে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করার একটি সোর্স লিংক নিচে দিয়ে দিলাম।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ FakeApp
এটি মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি এর উপর ভিত্তি করে তৈরি Lip-sync মোবাইল অ্যাপ। Wombo সেলফি গুলোকে Lip-syncing ডিপফেক ভিডিওতে পরিণত করে। এখানে প্রথমে একটি সেলফি আপলোডের প্রয়োজন পরে। একটি গান ও বেছে নিতে হয়। বাদবাকি কাজ এই অ্যাপ্লিকেশনটি নিজে নিজেই করে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনি প্লে স্টোরে পেয়ে যাবেন। আমি নিচে অ্যাপটি ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিলাম।
Official Download @ Wombo
ডিপফেক ফটো বা ভিডিও মেক করার অন্যতম সেরা একটি ওয়েবসাইট হল Deepfakes Web। এটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকে। এটিও একটি ভিডিওর কোন ক্যারেক্টার এর ফেস অন্য ক্যারেক্টারে সোয়াপ করে অর্থাৎ, অদলবদল করে। এই ওয়েবসাইটের লিংক নিচে দেওয়া হল। ভালো লাগলে বা দরকার পরলে ঘুরে আসবেন ওয়েবসাইটটি থেকে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Deepfakes Web
Instagram DeepFake Bot এটি কোন অ্যাপ বা সফটওয়্যার নয়। এটি মূলত একটা অ্যাকাউন্ট যার মাধ্যমে যে কেউ ডিপফেক ভিডিও তৈরি করতে পারে খুব সহজেই। (এখানে এই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোন তথ্য বা লিংক আমি পাই নি)
Official Download @ Deepfake Studio
ডিপফেক স্টুডিও আপনাকে যে কোন ভিডিও বা সিনেমার দৃশ্য বা মিউজিক ভিডিও এবং আর অনেক ভিডিওতে নিজের চেহারা বা অন্যের চেহারা সোয়াপ করতে দেয়। এখানে Infinite ফেস সোয়াপ এর সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এটি ফেসসেটের সাথে ডিপ লার্নিং ব্যবহার করে থাকে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি গুগল প্লে স্টোর এ পাওয়া যায়। নিচে এর ডাউনলোড লিংক দিয়ে দেয়া হল।
আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে ডিপফেক প্রযুক্তির কোন সুবিধা আছে কী? তাহলে উত্তরে আমি অবশ্যই বলব যে, হ্যাঁ। ডিপফেক প্রযুক্তির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। আপনি ইন্টারনেটে ডিপফেক টেকনোলজির বেশ কিছু বৈধ অ্যাপ্লিকেশন পেয়ে যাবেন। ডিপফেক এর সুবিধাটা চলচিত্রে খুব বেশি খেয়াল করা যায়। যেমন- কোন একটা মুভির হিরো বাইক স্ট্যান্ট জানে না। তখনই স্ট্যান্টম্যান দিয়ে স্ট্যান্ট করে নিয়ে তার চেহারায় হিরোর চেহারা বসানো হয়। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি।
ডিপফেক ভিডিও গুলো এতটাই কার্যকরী যে, এটি কোন ব্যক্তির যৌবনের ক্যারেক্টার Show করতে পারে অথবা যে মারা গেছে তার অভিনয়ও মেইক করতে পারা যায়। তো যাই হোক, সময়ই এক সময় বলে দেবে যে, এই টেকনোলজি ফিল্ম জগতে কতটা বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে বা আনতে পারবে। এই টেকনোলজি ধীরে ধীরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা স্ট্যাবল করে নিচ্ছে এবং CGI (Common Gateway Interface) টেকনিককে ক্রমাগত প্রতিস্থাপন করছে।
The Fashion Retail Industry এই টেকনোলজি ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো Virtually সুন্দরভাবে পোশাক প্রদর্শনের চেষ্টায় বা Fashion উপস্থাপনের চেষ্টায় রয়েছে। অর্থাৎ, ডিপফেক এমন একটি ভিডিও তৈরি করবে যেখানে কোন প্রোডাক্ট এর সুন্দর বাস্তবসম্মত রিভিউ দেয়া থাকবে। যেটা দেখে ক্রেতা দ্বিধা বিহীন ভাবে নির্ধারণ করবে যে সে প্রোডাক্টটি কিনবে কিনা। এটি Fashion Industry এর ক্ষেত্রে হলে অবশ্যই কোন ড্রেস এর রিভিউ হতে পারে অথবা অন্য ফ্যাশান রিলেটেড অন্য কিছু। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি।
আমরা এতক্ষণ দেখলাম যে, ডিপফেক প্রযুক্তির ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিবাচক ব্যবহার রয়েছে। তো এসব ইতিবাচক নানা ব্যবহারের পাশাপাশি ডিপফেকের নানা ধরনের নেতিবাচক ব্যবহার রয়েছে। ডিপফেক ভিডিওর মাধ্যমে উল্টাপাল্টা ইনফরমেশন দিয়ে আক্রমণ করা, সেলিব্রেটিদের নকল ভিডিও বানিয়ে খ্যাতি নষ্ট করা এবং নির্বাচনে ভোট সংখ্যা বৃদ্ধি করার মতো বাজে কাজ গুলো করা যায়। ডিপফেক ব্যবহার করে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্ক্যাম এবং আর্থিক জালিয়াতির উদাহরণও রয়েছে।
২০১৯ সালে ভয়েস সহ ডিপফেক এর মাধ্যমে CEO জালিয়াতি করা হয় এবং একটি নামবিহীন UK কোম্পানি থেকে ২৪৩ ডলার চুরি করা হয়। তো বন্ধুরা, এগুলো ছিল ডিপফেক ব্যবহারের কয়েকটি সম্ভাব্য ঝুঁকি মাত্র। এ ছাড়াও তারা সাইবার নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থায়িত্ব বা স্থিতিশীলতা, কর্পোরেশন ও ব্যক্তিদের সুনাম নষ্ট করার জন্য হুমকি দিতে পারে। এছাড়া আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যেও যেকোনো ব্যাপারে তারা হুমকি দিতে পারে।
আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ডিপফেক ভিডিও বা ফটো কী সনাক্ত করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, হ্যাঁ। ডিপফেক সনাক্ত করা সম্ভব। যদিও কিছু কিছু ডিপফেক ভিডিও আছে যেগুলো খুব বাজে ভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলো খুব সহজেই ধরা যায়, তবুও কিছু কিছু ভিডিও গুলোতে এত নিখুঁতভাবে কাজ করা হয়েছে যে এগুলো ধরা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে যেমন নিখুঁতভাবে ডিপফেক ভিডিও তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ফলে প্রযুক্তির সাহায্যেও ডিপফেক ভিডিও সনাক্ত করা একটু কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে ডিপফেক ভিডিও গুলোরও বেশ কিছু গুনাগুণ রয়েছে বা লক্ষণ রয়েছে যেগুলো খেয়াল করে বলে দেয়া যায় যে, এটা আসলে আসল ভিডিও নাকি ডিপফেক ভিডিও। তো চলুন দেখে নেয়া যাক লক্ষণ গুলো-
ডিপফেক ভিডিও ও ফটোগুলো ব্যবহার করার ফলে ব্যক্তিগত ও বৈশ্বিক লেভেলে যে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে সে ব্যাপারে চিন্তা করে, সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকার এবং কোম্পানি গুলো নতুন নতুন আইন, নিয়ম এবং টেকনোলজির ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিচে কয়েকটি পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Twitter এবং Facebook এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো বা প্লাটফর্ম গুলো ডিপফেক ভিডিও গুলোকে ব্যান করেছে। আর ইউটিউব ২০২০ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে সম্পর্কযুক্ত ডিপফেক ভিডিও গুলো সার্চ করছে ব্যান করার উদ্দেশ্যে।
গবেষণা ল্যাব গুলো ডিপফেক ভিডিও সনাক্তকরণের জন্য অরিজিনাল ভিডিওতে ব্লকচেইন এবং ওয়াটারমার্ক ব্যবহার করছে। ঠিক যেমনটা টাকার উপরে থাকে। তো আসল কথা হচ্ছে, ডিপফেক ভিডিও ডিটেক্টরকে বোকা বানানোর জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, সে প্রযুক্তিও ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে নজর রাখা জরুরী।
সেন্সিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি এবং Deeptrace এর মতো প্রোগ্রাম গুলো ডিপফেক সনাক্তকরণের জন্য ব্যক্তি এবং অর্গানাইজেশন গুলোকে সাহায্য করছে।
কোম্পানি গুলো ডিপফেক থেকে বাঁচার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতেছে। যেমন- তারা ডিপফেক সনাক্তকরণ প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বাস্তবায়ন করতেছে। নতুন নতুন সিকিউরিটি প্রোটকল তৈরি করতেছে এবং ডিপফেকের কারণে কী ধরনের হুমকি হতে পারে সে ব্যাপারে কর্মচারীদের শিক্ষা দান করতেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডিপফেক এর নেতিবাচক ব্যবহার কন্ট্রোল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেছেন। এবং ডিপফেক ভিডিও এর জন্য বিল প্রযোজ্য করেছেন এবং প্রতিটি রাজ্য যেমন- ভার্জিনিয়া, টেক্সাস এবং ক্যালিফোর্নিয়া ডিপফেকের বিরুদ্ধে নিজস্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং করতেছে।
বর্তমান সময়কালের ডিপফেক একটি বহুল আলোচিত প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনার পাশাপাশি রয়েছে প্রচলিত কিছু প্রশ্ন। এমনি কতিপয় প্রশ্ন ও উত্তর আপনাকে নিচে জানিয়ে দেওয়া হল।
ডিপফেক অ্যাপগুলো আসলে অবৈধ নয়। আমাদের দেশে বা অন্য কোন দেশে এমন কোন আইন তৈরি করা হয়নি যেখানে ডিপফেক অ্যাপ গুলোকে সরাসরি ব্যান করা হয়েছে। তো এ কথাটি দ্বারা আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে, যতক্ষণ না আপনি এই অ্যাপটির বা অ্যাপের মাধ্যমে তৈরি ভিডিওর দ্বারা কোন অপকাজ করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি কোন সমস্যায় পড়বেন না। এখানে মূল কথা হচ্ছে, আপনি যদি ডিপফেক ব্যবহার করে তৈরি ভিডিওর মাধ্যমে কোন ব্যক্তির পরিচয় চুরি করতে চান বা কোন ব্যক্তির খ্যাতি নষ্ট করতে চান, তাহলে এর কর্মফলও আপনাকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে। সেটা হতে পারে দেশে তৈরি করা কোন আইনের মাধ্যমে অথবা বিধাতার দণ্ড তো আছেই।
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় "Deepfakes" নামক একজন Reddit ইউজার Deepfake শব্দটি সৃষ্টি করেছিলো। তারা সেলিব্রেটিদের ফেইক ভিডিও তৈরি করার জন্য গুগলের "ওপেন সোর্স ডিপ লার্নিং" প্রযুক্তিটিকে কাজে লাগায় এবং সেই ভিডিও গুলোকে Reddit এ আপলোড করে। ফেস সোয়াপিং নামে পরিচিত একটি টেকনিক ব্যবহার করে ডিপফেক ভিডিও গুলো তৈরি করা হয়েছিলো।
আপনি যদি ডিপফেক অ্যাপ গুলো ডাউনলোড করতে চান অথবা ডিপফেক অ্যাপ গুলো ব্যবহার করে ডিপফেক ভিডিও দায়িত্বের সাথে তৈরি করতে চান, তাহলে বড় বড় অ্যাপ স্টোর গুলোতে ডিপফেক লিখে অনুসন্ধান চালান। তাহলেই আপনি ডিপফেক রিলেটেড বেশ কিছু অ্যাপ পেয়ে যাবেন। আমাদের অতি পরিচিত প্লে স্টোরেও বেশ কয়েকটি আছে। আপনি প্রথমে সার্চ করুন, তারপর অ্যাপটির রিভিউ বা র্যাটিং দেখুন। তারপর ইন্সটল করুন এবং কাজ করা শুরু করে দিন।
ইন্টারনেটে বিনামূল্যের বেশ কয়েকটি ডিপফেক অ্যাপ রয়েছে। অর্থাৎ, এই অ্যাপ গুলো ব্যবহারের জন্য আপনাকে কোন প্রকার পেমেন্ট করতে হবে না। ইন্টারনেটে থাকা সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রি ডিপফেক অ্যাপ গুলো হল- Reface, Wombo ও FaceApp ইত্যাদি। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ফ্রি ডিপফেক অ্যাপ রয়েছে যা আপনি একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।
বর্তমান সময়কালে প্রযুক্তির কল্যাণে ডিপফেক ভিডিও গুলো বা ফটো গুলো তৈরি করা অতটাও কঠিন কাজ নয় ঠিক যতটা আমরা ভাবি। অর্থাৎ, আমি আপনাকে বলতে চাচ্ছি যে, ডিপফেক ভিডিও তৈরি করার জন্য আপনাকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন জ্ঞান অর্জন করতে হবে না। কারণ ইন্টারনেটে খুবই সহজলভ্য ডিপফেক অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই ডিপফেক ভিডিও মেইক করা যায়।
তো বন্ধুরা, এই ছিল আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। একটি জোসস দিয়ে আমাকে উৎসাহিত করবেন পরবর্তী টিউন করার জন্য। সেই সাথে টিউন সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এক টিউনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।