অ্যান্ড্রয়েড সেরা কিছু ভিডিও এডিটিং অ্যাপস ২০১৯

এক সময় ভিডিও এডিটিং এর কথা ভাবলেই মনে হতো এই কাজটি বোধ হয় কম্পিউটার ছাড়া করা সম্ভব নয়। কিন্তু স্মার্টফোন আসার পর থেকে এই ধারণাটি পুরোপুরি বদলে গেছে। বর্তমানে কম্পিউটারের জন্য যেমন প্রচুর সংখ্যক ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার রয়েছে ঠিক তেমনি গুগল প্লে স্টোরে অ্যান্ড্রয়েডের জন্যও ভিডিও এডিটিং অ্যাপের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এ অ্যাপগুলো কাজের দিক দিয়ে অনন্য এবং এগুলোতে রয়েছে অসাধারণ সব ফিচার।

গুগল প্লে স্টোরে থাকা এই ধরনের ভিডিও এডিটিং অ্যাপ দ্বারা খুব সহজেই বেসিক ভিডিও এডিট করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটও করা সম্ভব। এই ভিডিও এডিটর অ্যাপগুলোর সাহায্যে আপনি আপনার ভিডিওগুলো সহজেই এডিট করতে পারবেন এবং তা ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার বা ইউটিউবে আপলোড করতে পারবেন। আজকের টিউনে প্লে স্টোর হতে বাছাইকৃত ২০১৯ সালের সেরা কিছু অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১। ফিল্মোরা গো (FilmoraGo)

ফিল্মোরা গো (FilmoraGo) - অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপফিল্মোরা গো একটি অসাধারণ অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপ যা অনেক ব্যবহারকারীই পছন্দ করেন। ভিডিও ট্রিমিং, ভিডিও কাটিং, থিম এড করা, মিউজিক এড করা ইত্যাদি সকল প্রাথমিক ফাংশন ব্যবহার করে খুব সহজেই একটি ভিডিও এডিট করা যাবে।

ফিল্মোরা গো ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন অনুপাতের ভিডিও এডিট করতে পারবেন। যেমন ইন্সট্যাগ্রামের জন্য ১:১ অনুপাতের, ইউটিউবের জন্য ১৬:৯ অনুপাতের ভিডিও এডিট করা যাবে। এছাড়া ট্রানজিশন, স্লো মোশন, টেক্সট ব্যবহার করে ভিডিওকে আরো আকর্ষণীয় করা যাবে।

ভিডিও এডিট করার পর আপনি চাইলে তা গ্যালারিতে সেভ করতে পারবেন অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি শেয়ার করতে পারবেন। গুগল প্লে স্টোর হতে ফিল্মোরা গো বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। অ্যাপটির ফ্রী ভার্সনেই বেসিক সকল ফিচার রয়েছে। ফিল্মোরা গো অ্যান্ড্রয়েড ৪.৩ থেকে পরবর্তী সকল ভার্সনই সমর্থন করে।

বিশেষ ফিচার:

  • ফিল্মোরা গোতে রয়েছে অসাধারণ সব টেমপ্লেট এবং ইফেক্ট
  • রয়েছে অনেকগুলো প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং টুলস
  • রিয়েল টাইম প্রিভিউ সমর্থিত
  • ডিরেক্টট সোশ্যাল শেয়ারিং সমর্থিত

২। অ্যাকশন ডিরেক্টর (ActionDirector)

 অ্যাকশন ডিরেক্টর (ActionDirector) - অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপ
আজকের লিস্টের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে অ্যাকশন ডিরেক্টর। এটি বেশ জনপ্রিয় একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। অ্যাকশন ডিরেক্টর ব্যবহার করে খুব সহজেই ভিডিও এডিটিং করা সম্ভব। অ্যাপটিতে থাকা ভিডিও ট্রিমিং, ভিডিও কাটিং, থিম, মিউজিক, ফিল্টার, ইফেক্ট, ট্রানজিশন ব্যবহার করে অসাধারণ সব ভিডিও এডিট করতে পারবেন।

4K সাপোর্ট করে এমন ভিডিও এডিটিং অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই অ্যাকশন ডিরেক্টর। অ্যাপটিতে প্রয়োজনীয় ফাংশনগুলোর পাশাপাশি স্পিড এডিট, ভিডিও স্ট্যাবিলাইজার, স্লো মোশন, ফাস্ট মোশন, ভিডিও হাইলাইটিং সহ বেশ কিছু ফাংশন রয়েছে।

গুগল প্লে স্টোর হতে অ্যাকশন ডিরেক্টর ডাউনলোড করা যাবে। এই অ্যাপটির একটি ভালো দিক হলো যে এটি ডেভলপার কর্তৃক খুব ঘন ঘন আপডেট পায়। অ্যাকশন ডিরেক্টর অ্যান্ড্রয়েড ৪.৩ থেকে পরবর্তী সকল ভার্সনই সমর্থন করে।

বিশেষ ফিচার:

  • 4K সমর্থিত ভিডিও এডিটর
  • রয়েছে কালার, ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন এডজাস্টমেন্টের সুবিধা
  • রয়েছে এক ডজনেরও বেশি ট্রানজিশন

৩। পাওয়ার ডিরেক্টর (PowerDirector)

পাওয়ার ডিরেক্টর (PowerDirector) - অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপপাওয়ার ডিরেক্টর একটি ফুলি ফিচার্ড অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপ যার সহজেই ব্যবহারযোগ্য একটি টাইমলাইন ইন্টারফেস রয়েছে। অ্যাপটি ব্যবহার করা সহজ। কিন্ত কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপটি কন্ট্রোল করতে আপনাকে সময় দিতে হতে পারে। তবে একবার পাওয়ার ডিরেক্টর ব্যবহার করাতে এক্সপার্ট হয়ে গেলে, আপনি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ইফেক্ট রিচ এবং প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।

পাওয়ার ডিরেক্টরে ৩০ টিরও বেশি ইফেক্ট রয়েছে যেগুলো ভিডিওতে ব্যবহার করা যাবে। অ্যাপটি ব্যবহার করে গ্রীন স্ক্রীন ভিডিও তৈরি করা যাবে। এছাড়াও এটি দিয়ে টিউটোরিয়াল ভিডিও তৈরি করা যাবে।

পাওয়ার ডিরেক্টর ফ্রী ভার্সনে প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় ফিচারও রয়েছে। তবে একবার ফ্রি ভার্সন আপগ্রেড করে নিলে বাড়তি অনেকগুলো বেনিফিট পাওয়া যাবে। যেমন ওয়াটার মার্ক এবং অ্যাড রিমুভ করা যাবে, 1080P এবং 4K রেজুলেশনে ভিডিও এক্সট্রাক্টও করা যাবে। পাওয়ার ডিরেক্টর অ্যান্ড্রয়েড ৪.৫ থেকে পরবর্তী সকল ভার্সনই সমর্থন করে।

বিশেষ ফিচার:

  • ভিডিও 4K রেজুলেশনে এক্সপোর্ট করা যাবে
  • স্লো মোশন ভিডিও এডিটর
  • 'Chroma' কী সিলেক্টর

৪। কাইনমাস্টার (KineMaster)

কাইনমাস্টার (KineMaster) - অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপভালো ইউজার ইন্টারফেস এবং ফিচার সমৃদ্ধ অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ হলো কাইনমাস্টার। এটি খুবই শক্তিশালী একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। অ্যাপটিতে থাকা ড্র্যাগ-এন-ড্রপ ফিচার ব্যবহার করে খুব সহজে বিভিন্ন মিডিয়া ফাইল ইমপোর্ট করা যাবে। কাইনমাস্টার ব্যবহার করা অনেক সহজ এবং এটি দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করা সম্ভব।

কাইনমাস্টার ফ্রী ভার্সনে ভিডিও এডিট করার জন্য প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় ফিচারই রয়েছে। তবে ভিডিও হতে ওয়াটারমার্ক রিমুভ করতে এবং প্রিমিয়াম ফিচারগুলোতে অ্যাক্সেস করতে আপনাকে অবশ্যই কাইনমাস্টারের প্রিমিয়াম ভার্সনটি কিনতে হবে।

বিশেষ ফিচার:

  • মিডিয়া ফাইল ইমপোর্ট করতে রয়েছে ড্র্যাগ-এন-ড্রপ ফিচার
  • রয়েছে ভিডিওতে মাল্টিপল লেয়ার ব্যবহারের সুবিধা
  • রিয়েল টাইম প্রিভিউ সমর্থিত

৫। ভিডিওশো (VideoShow)

ভিডিওশো (VideoShow) - অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপভিডিওশো রিলিজ হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য পুরষ্কার জিতেছে এবং নিঃসন্দেহে প্লে স্টোরে থাকা বিনামূল্যে উপলব্ধ অ্যান্ড্রয়েডের জন্য সেরা ভিডিও এডিটিং অ্যাপগুলোর মধ্যে একটি। ভিডিওশোর একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস রয়েছে এবং অ্যাপটি ব্যবহার করাও সহজ।

অ্যাপটিতে থাকা প্রয়োজনীয় ফাংশনগুলোর পাশাপাশি আপনি টেক্সট, ইফেক্ট, মিউজিক, সাউন্ড ইফেক্ট বা লাইভ ডাবিং যোগ করে আপনি আপনার ভিডিওটিকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে পারেন।

ভিডিওশোতে ৫০ টিরও অধিক থিম রয়েছে। এছাড়া আপনি ভিডিওশো ব্যবহার করে ভিডিও এর কোয়ালিটি ঠিক রেখে ভিডিও এর সাইজও কমাতে পারবেন। ভিডিওশোকে ফিল্মোরা গোর বেস্ট আল্টারনেটিভ বলা যায় যা প্রায় সমস্ত অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনই সাপোর্ট করে।

বিশেষ ফিচার:

  • ব্লারড ব্যাকগ্রাউন্ড, অডিও স্পিড এডজাস্টমেন্ট, ভয়েস এনহান্সমেন্ট ফিচার
  • ভিডিও বা স্লাইডশো 'beautify' করতে রয়েছে ৫০+ থিম
  • ভিডিও এর সাউন্ড ট্র্যাক mp3 তে রুপান্তর করা যাবে

৬। ভিভাভিডিও (VivaVideo)

ভিভাভিডিও (VivaVideo) - অ্যান্ড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপভিভাভিডিও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। অ্যাপটিতে রয়েছে দারুণ সব ফিচার। ভিভাভিডিওকে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে খুব সহজেই ব্যবহারকারীগণ প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিট করতে পারেন। ভিভাভিডিও ব্যবহার করে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য শর্ট ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।

বিশ্বব্যাপী ভিভাভিডিও এর ২০০ মিলিয়নেরও বেশি ইউজার রয়েছে। অ্যাপটিতে কয়েক শত ইফেক্ট এবং ফিল্টার আছে যা ব্যবহার করে ভিডিওকে করা যাবে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয়। ভিভাভিডিওর একটি ফ্রী ভার্সন প্লে স্টোরে রয়েছে। তবে এতে ওয়াটারমার্ক ও টাইম লিমিটের মতো কিছু লিমিটেশন রয়েছে। তাই প্রিমিয়াম ফিচারগুলোতে অ্যাক্সেস করতে আপনাকে অবশ্যই প্রো ভার্সনটি কিনতে হবে।

বিশেষ ফিচার:

  • বিল্ট-ইন স্লো মোশন ভিডিও মেকার
  • ২০০+ ইফেক্ট এবং ফিল্টার
  • রয়েছে কোলাজ ভিডিও তৈরি করার সুবিধা

আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েডে ভিডিও এডিটের কথা ভেবে থাকেন তাহলে উপরের অ্যাপগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে। আর হ্যা, পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

Level 3

আমি কায়ছারুল আলম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 67 টি টিউন ও 221 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

Student


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস