আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালোই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালোই আছি। আর ভালো আছি বলেই আপনাদের কাছে চলে এসেছি আমার নতুন লেখাটি নিয়ে। আজকের এই লেখাটিতে আমি কি নিয়ে আলোচনা করবো তা আপনারা টাইটেল দেখেই বুঝে গেছেন। টাইটেলে তো আর সব কিছু বলা যায় না- আসলে আমি আমার এই লেখাটিতে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা ১০ জন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের নিয়ে আলোচনা করবো যারা বড় বড় হ্যাকিং এর সাথে জড়িত ছিলেন এবং ধরা খেয়েছেন। চলুন হ্যাকারদের গল্পটা শুরু করি ...
আলবার্ট গঞ্জালেজঃ সেরা হ্যাকারদের তালিকায় ১০ নম্বরে আছেন আলবার্ট গঞ্জালেজ। টানা দুই বছর ধরে তিনি প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার হ্যাক করেছেন এবং সেই ক্রেডিটকার্ডগুলো আসল মূল্যের চাইতে অনেক কম দামে অনলাইনে বিক্রি করেছেন। ক্রেডিট কার্ড হ্যাকের মাধ্যমে তিনি প্রায় ১০০ কোটি ডলার ভিকটিমদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়েছিলেন। একসময় তিনি ধরা পরেন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন। তাকে ৪০ বছরের কারাভোগ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
আসট্রাঃ কি ? নাম শুনে ভড়কে গেলেন? আসট্রা নামে যিনি অনলাইনে হ্যাকিং কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি কখনোই নিজের আসল নাম প্রকাশ করেন নি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যবর্তী পাঁচ বছর সময়ে তার জীবনের সবচাইতে বড় হ্যাকিং কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনির ওয়েবসাইট হ্যাক করে সমস্ত অস্ত্রের ডিজাইন সংক্রান্ত সমস্ত ডাটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসেন এবং সারা বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন কাস্টমারের কাছে সেই ডাটা ৩৬১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন। গ্রীসের এথেন্স শহরের একটি এপার্টমেন্ট থেকে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।
ওউয়েন ওয়াকারঃ ওউয়েন ওয়াকারের বয়স যখন মাত্র ষোল বছর ছিলো তখন তিনি বিশ্বখ্যাত একটি হ্যাকিং দলের সাথে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন কোম্পানির ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেন। তাছাড়া তার তৈরী বট ভাইরাস সারা পৃথিবীর ১৩ লক্ষ কম্পিউটারকে সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলো। যদিও তিনি নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তবুও তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকায় তিনি ছাড়া পেয়ে যান।
গ্যারি ম্যাকিননঃ যারা হ্যাকিং সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন তারা অবশ্যই এই নামটি শুনে থাকবেন। বিশ্বের ইতিহাসের সবচাইতে বড় মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাকের সাথে জড়িয়ে ছিলেন এই ব্যক্তি। তিনি আমেরিকান আর্মড ফোর্স এবং নাসার ৯৭ টি কম্পিউটার হ্যাক করেন। তিনি শুধু হ্যাক করেন শান্ত থাকেননি বরই আর্মড ফোর্সের কম্পিউটার গুলো থেকে অস্ত্র সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য মুছে দিয়েছিলেন।
জেনসন জেমসঃ জেমসই প্রথম হ্যাকার যিনি হ্যাকিং বট তৈরী করেছিলেন এবং তার তৈরি বট দিয়ে যেসব কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিলো সবগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। তার তৈরী বট দিয়ে প্রায় ৫০০,০০০ কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিলো যার মধ্যে ইউএস মিলিটারি কম্পিউটারও ছিলো।
আদ্রিয়ান লোমোঃ আদ্রিয়ান লোমো বিখ্যাত মাইক্রোসফট, ইয়াহু সহ বড় বড় কোম্পানির ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য। তিনি শুধু মাইক্রোসফট কিংবা ইয়াহুর ওয়েবসাইট হ্যাক করেন নাই, তিনি হ্যাক করেছেন ব্যাংক অফ আমেরিকা, সিটি গ্রুপ এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো বিখ্যাত সব ওয়েবসাইট। তাকে আরো বিখ্যাত করে দিয়েছে তার হ্যাক করার পদ্ধতি। তিনি পাবলিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে এসব ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন। পাবলিক ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে হ্যাক করার জন্য তাকে 'হোমলেস হ্যাকার' নামে নতুন উপাধি দেয়া হয়েছিলো। ২০০৪ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তাকে ৬ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তাছাড়া তাকে ৬৫০০০ ডলার অর্থদন্ডও দিতে হয়েছিলো।
মাফিয়াবয়ঃ মাফিয়াবয় একজন কানাডিয়ান হ্যাকার। তিনি ইয়াহু, ফিফা, অ্যামাজন, সিএনএন, ডেল এর মতো বড় বড় ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন। এর পরেও তাকে মাত্র আট মাসের জেল দেয়া হয়। মাত্র আট মাসের জেল দেয়ার কারণ কি বলতে পারেন? কারণ হলো তখন তিনি মাত্র ক্লাস এইটে পড়তেন।
ম্যাথু বেভান এবং রিচার্ড প্রাইসঃ ১৯৯৬ সালে দুজনের বয়স ছিলো যথাক্রমে ২১ এবং ১৭, সেই সময় তারা হ্যাক করেন ইউএস মিলিটারি কম্পিউটার। তারা শুধু ইউএস মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাক করেই শান্ত ছিলেন তা - তারা উত্তর কোরিয়ার সরকারী নিরাপত্তাকাজে নিয়োজিত কম্পিউটারও হ্যাক করেছিলেন।
কেভিন মিটনিকঃ কেভিন মিটনিক হলেন মোস্ট ওয়ান্টেড সাইবার ক্রিমিন্যাল ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। আইবিএম , মটোরোলা এবং বেশ কিছু টেলিকম কোম্পানির ডাটাবেজ হ্যাক করে তিনি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি হানা দিয়েছিলেন আমেরিকান ন্যাশনাল সিকিউরিটি সিস্টেমেও । তিনি দুইবার ধরা পড়েন এবং দুইবারই মুক্তি পেয়ে যান। বর্তমানে তিনি সিকিউরিটি এক্সপার্ট হিসেবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন।
আজকের লেখা এই পর্যন্তই। এর পরে অন্য কোন একদিন হাজির হবো নতুন কোন বিষয় নিয়ে। অপেক্ষায় থাকুন। আমি আসবো আমার ফিরে ... আপনাদেরই মাঝে ...
আমি দেলোয়ার হোসেন দিহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 79 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
thanks