বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে ঘরে ঘরে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৈরি হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ক্যামেরাবন্দী করে ব্লগ ভিডিও তৈরি করছে। ফলে নানান ধরনের ট্রলের শিকার তো হচ্ছেই পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে অনেককেই। আবার প্রাথমিক পর্যারের ভুলের কারণে অনেকেই সফলতার শেষ প্রান্তে এসেও পুরোপুরি ভাইরাল হতে পারছে না।
আর অহরহ এতো এতো ব্লগ ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হচ্ছে যে এখন দর্শক কোয়ালিটি কনটেন্ট খুঁজে পায় না বললেই চলে। একটি কোয়ালিটি কনটেন্ট তৈরি করার জন্য আপনাকে ক্যামেরার সামনে এসে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। কিছু কিছু কাজ থেকে একদমই বিরত থাকতে হবে। আপনি কি জানেন অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত কিছু কাজ বাদ দিলে আপনার ব্লগ ভিডিও তুলনামূলক বেশি কোয়ালিটি সম্পন্ন হবে?
আসুন জেনে নেই ব্লগ ভিডিওতে ক্যামেরার সামনে যে ৫ টি কাজ একদমই করা উচিত না সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
অনেকেই মনে করেন ব্লগ ভিডিও মানেই তা অনেক লম্বা হতে হবে। কেননা বেশিরভাগ সফল ভিডিও ব্লগারদের ভিডিও লেন্থ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হয়ে থাকে। তাই আপনিও বিষয়টি ভালো করে না বুঝে অযথা যে কোনো ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ভিডিও লেন্থ বড় করার চেষ্টা করেন। এতে কিন্তু উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি হয়।
ব্লগ ভিডিও হোক বা যে কোনো ভিডিও তাতে যদি মেইন ফোকাস এর বাইরের বিষয়বস্তু বেশি থাকে তাহলে তা গ্রহনযোগ্যতা হারাবে। যেমন ধরুন আপনি হিমছড়ি ভ্রমণের একটি ভিডিও তৈরি করবেন। সেখানে দর্শকদের মূল ফোকাস থাকবে হিমছড়ি পাহাড়, ঝর্ণা ও ইকোপার্ক। কিন্তু আপনি যদি এই ভিডিওতে ২০ মিনিট শুধু যাত্রাপথের ফুটেজ দেখান তাহলে তো দর্শক অবশ্যই বিরক্ত হবে।
যদি আপনার মূল বিষয় আপনি ১০ মিনিটের মধ্যে তুলে ধরতে পারেন তাহলে সেই ভিডিওকে টেনেটুনে আপনার ৪০ মিনিটে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর আপনি যদি এই সেক্টরে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে তো একদমই এই কাজ থেকে বিরত থাকবেন। আর যদি পুরো ভিডিওতে আপনি কোয়ালিটি ফুটেজ রাখতে পারেন তাহলে ভিডিও লেন্থ বড় হলেও দর্শক আকৃষ্ট হবে৷ তাই অযাচিত ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে ব্লগ ভিডিওর কোয়ালিটি খারাপ করা থেকে বিরত থাকুন।
বর্তমান সময়ে ব্লগারদের সবথেকে বড় খারাপ অভ্যাস হলো পুরো ভিডিও জুড়ে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা তুলে ধরা। যেমন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সাগরের ঢেউ অনেক উত্তাল। তবুও ব্লগার তার ভিডিওতে বার বার বলছে, "দেখুন ভিউয়ারস সাগরের ঢেউ অনেক বেশি উত্তাল"। দেখানে দর্শক নিজেই দেখতে পাচ্ছে যে ঢেউ উত্তাল সেখানে বারবার একই কথা বলার কোনো প্রশ্ন আসে না। এর পরিবর্তে আপনি ঐ জায়গাটির সম্পর্কে অজানা তথ্য তুলে ধরতে পারবেন।
মোট কথা আপনার ভিডিওতে অযথা কোনো কথা না রেখে ইনফরমেটিভ তথ্য তুলে ধরুন। তথ্য বহুল ভিডিও এখন মার্কেটে চলে বেশি। তাই একটা ব্লগ ভিডিও তৈরির আগে ভিডিওর টপিক এর ওপরে যথেষ্ট রিসার্চ করুন ও কনটেন্টটি তথ্যবহুল করুন। এতে করে ভিডিও কোয়ালিটি ভালো হবে যার ফলে আপনি কোনো ট্রলের শিকার না হয়েই লক্ষ লক্ষ ভিউ অর্জন করতে পারবেন।
প্রত্যেকের ব্লগ ভিডিও চ্যানেল বা পেইজের আলাদা একটি টপিক আছে। যেমন কেউ ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগ বানায়, আবার কেউ ফুড ব্লগ করে, আবার কেউ শিক্ষামূলক ব্লগ ভিডিও বানায়৷ তো এসকল ব্লগে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় গুলো তুলে ধরার কোনো কারণ নেই। কিন্তু অনেকেই তার ব্লগ ভিডিওর মধ্যে মেইন টপিক এর পাশাপাশি পার্সোনাল ভিডিও ফুটেজ ঢুকিয়ে দেয়। অনেকেই মনে করেন এতে করে ভিউস বাড়বে।
কিন্তু এই ধরনের কাজ থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত। কেননা এই ধরনের কনটেন্ট নিয়ে সবথেকে বেশি ট্রল হয়। অনেক সময় পারিবারিক অনেক বিষয় সোস্যাল মিডিয়ায় চলে আসে যা আমাদের একান্তই ব্যক্তিগত। এরই ধারাবাহিকতায় অনেকে অযাচিত ঝামেলায় ফেঁসে যায়। তাই ব্লগ ভিডিওর মাঝে এমন ব্যক্তিগত বিষয়বস্তু যতোটা সম্ভব না দেয়ার চেষ্টা করবেন।
ব্লগ ভিডিও বানাচ্ছেন মানে এটা আপনার এক ধরনের প্রফেশন। আর প্রফেশনাল লাইফের সাথে ব্যক্তিগত লাইফ মিলিয়ে ফেলছেন মানেই ঠকেছেন। ব্যক্তিগত জীবন সোস্যাল মিডিয়া থেকে যতোটা আড়ালে রাখতে পারবেন ততোটাই ভালো।
আমরা ব্লগ ভিডিও তৈরি করার জন্য বিভিন্ন স্থানে যাই। যাত্রা পথের ভিডিও গুলোতে আমরা অনেক সময় জেনে অথবা না জেনে অনেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়বস্তু ক্যামেরাবন্দী করে ফেলি। কিন্তু এই ভিডিও ফুটেজ ব্যবহারের ফলে আপনার ব্লগ ভিডিওতে রিপোর্ট আসতে পারে। কেননা কেউ চাইবে না তার অনুমতি ছাড়া কোনো ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা যাক।
আবার অনেক দর্শনীয় স্থান বা জাদুঘরে অভ্যন্তরীণ দৃশ্য ভিডিও করার অনুমতি নেই। তবুও অনেকে চালাকি করে সেসব স্থানের ভিডিও ফুটেজ তার ব্লগে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে। এতে করে আপনি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
তাই যেখানে সেখানে ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন। আর একান্তই ভিডিও করার প্রয়োজন হলে অনুমতি নিয়ে তারপর ভিডিও করা উচিত। বর্তমান ব্লগারদের জন্য এই বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই একটানা অনেকক্ষণ কথা বলতে পারে না। আবার কেউ কেউ তো ক্যামেরার সামনে কথা বলতেই পারে না। তাই ভিডিও চলাকালীন সময়ে সে কথার খেই হারিয়ে ফেলবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু একটি ভিডিওকে পুরোপুরি কোয়ালিটি সম্পন্ন করতে চাইলে অবশ্যই কথার এক্সপ্রেশন একদম উচ্চ পর্যায়ে থাকতে হবে। তাই কথার মাঝখানে খেই হারিয়ে ফেলা যাবে না।
এজন্য ভিডিও তৈরি আগে বারবার কথা বলা প্রাকটিস করতে হবে। তারপরও যদি দেখা যায় আপনি পুরোপুরি এক্সপ্রেশন ধরে রাখে পারছেন না তাহলে প্রথমে ভয়েস ছাড়াই শুধু ভিডিও ফুটেজ নিন এবং পরবর্তীতে আলাদা করে এডিটিং এর সময় ভয়েজ যোগ করুন। আপনি ক্যামেরার সামনে যতোটা না ভালো এক্সপ্রেশনে কথা বলতে পারবেন তার থেকেও কয়েকগুণ বেটার এক্সপ্রেশনে কথা বলতে পারবেন ভিডিও এডিটিং এর সময়। এর পরেও যদি সমস্যা হয় তাহলে পুরো বিষয়টি স্ক্রিপ্ট আকারে লিখে তা দেখে দেখো রেকর্ডিং করে ভিডিওর সাথে যুক্ত করতে পারেন।
কিন্তু কোনো ভাবেই ভিডিওর মাঝখানে কথা বলতে বলতে থেমে যাওয়া যাবে না। কথার স্টাইল বা টোন হারিয়ে ফেলা যাবে না। একই কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বার বার বলা যাবে না। এতে করে একটা কোয়ালিটি কনটেন্ট এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে।
আশাকরি পরবর্তী ব্লগ ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন৷ মনে রাখবেন জনপ্রিয়তা অর্জন করা সহজ কিন্তু তা ধরে রাখা কঠিন। কেননা বর্তমান ব্লগারদের মধ্যে বেশিরভাগই জনপ্রিয়তা অর্জনের পর পরই তাদের নিজস্ব কার্যকলাপের কারণে ট্রলের শিকার হচ্ছে। তাই এই বিষয়গুলোর ওপর পুরোপুরি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।