বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। বন্ধুরা আজ আমরা জানবো ইউটিউবে আয় করার মাধ্যম সম্পর্কে।
বর্তমান সময়ে ইউটিউব এর নাম শুনেনি এমন কাউকে হয়তো বা খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ইউটিউব হচ্ছে ভিডিও শেয়ারিং এর একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। শিক্ষা ও বিনোদন থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের ভিডিও পাওয়া যায় এ প্লাটফর্মে। পড়াশোনা এবং দৈনন্দিন কাজে ইউটিউব এর ব্যবহার অতুলনীয়। তবে ইউটিউব এ যারা ভিডিও পাবলিস্ট করে, তারা কিন্তু ফ্রিতে সেগুলো শেখানোর উদ্দেশ্যে দেয় না। তবে কিছু ভিডিও আছে যেগুলো কোনো স্বার্থ ছাড়াই দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগই থাকে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য।
তবে এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে ইউটিউব থেকে কিভাবে এবং কত উপায়ে আয় করা যায়? আসলে ইউটিউব থেকে অনেক উপায়েই আয় আয় করা যায়। তবে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কত উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়।
ইউটিউব ভিডিও থেকে আয় করার প্রধান উৎস হচ্ছে গুগল এডসেন্স। ইউটিউব থেকে আয় করার সর্বপ্রথম উদ্দেশ্য থাকে বিজ্ঞাপণ থেকে আয়। তবে একটি ইউটিউব ভিডিওতে এড প্রদর্শনের জন্য প্রথমে চ্যানেলটিকে মনিটাইজেশন পেতে হয়। চ্যানেল এ মনিটাইজেশন পেতে ইউটিউব কিছু শর্ত দিয়ে দিয়েছে। কোন চ্যানেলে মনিটাইজেশন পেতে হলে সেই চ্যানেলে সর্বশেষ 12 মাসের মধ্যে 1000 সাবস্ক্রাইবার এবং 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হয়। তবেই একটি চ্যানেল ইউটিউব এর কাছে মনিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে পারে।
কোন চ্যানেল থেকে মনিটাইজেশন এপ্লাই করার পর চ্যানেলটিকে রিভিউ করে মনিটাইজেশন দিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে চ্যানেলে যদি ইউটিউব এর নিয়ম অনুযায়ী ভিডিও পাবলিস্ট করা হয় তবে ইউটিউব সে চ্যানেলকে মনিটাইজেশন দেয়।
একটি চ্যানেল মনিটাইজেশন পাবার পর সে চ্যানেলের ভিডিও গুলো তে গুগল বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন করে। ভিডিওতে বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন থেকে কিছু অর্থ ইউটিউব নেয় এবং কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর দের দিয়ে থাকে। ইউটিউব এর বিজ্ঞাপণ থেকে আয় হয় মূলত বিজ্ঞাপণে ক্লিকের মাধ্যমে। প্রতি ক্লিকে বাংলাদেশ কিংবা ভারত থেকে গড়ে এক সেন্ট করে পাওয়া যায়। নতুন অবস্থায় ইউটিউব চ্যানেলের বিজ্ঞাপণ থেকে খুবই সামান্য পরিমাণ আয় হয়। তবে চ্যানেলের ভিডিও তে যদি ভিউ বেশি হয়, তবে আয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। বড় বড় চ্যানেলগুলো ইউটিউব থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকার ওপরে আয় করে থাকে।
ইউটিউবারেরা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে চ্যানেল থেকে মোটা অংকের টাকা আয় করে থাকে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল কোন প্রতিষ্ঠান এর পণ্য নিজের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া। বাংলাদেশের ও এরকম কয়েকটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ইউটিউবারদের আয় করার সুযোগ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের Daraz এবং BD Shop অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আয় করার সুযোগ দেয়। যে কেউ চাইলেই এসব ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর রেজিস্ট্রেশন করে তাদের পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক নিজের ভিডিও ডেসক্রিপশন এ দিয়ে আয় করতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে কোন পণ্য বিক্রির মাধ্যমে নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন পাওয়া যায়। সেটি হতে পারে ৩% থেকে ১০% পর্যন্ত। তবে কিছু কিছু ডিজিটাল প্রোডাক্ট রয়েছে যেগুলো বিক্রির মাধ্যমে ৫০% পর্যন্তু কমিশন পাওয়া যায়। আপনি যদি আপনার চ্যানেলের দর্শকদের সেসব প্রোডাক্টের লিঙ্ক দিয়ে সেই পণ্যটি ক্রয় করাতে পারেন তবে আপনি মোটা অংকের টাকা আয় করতে পারেন। আপনার দর্শকদের মধ্যে যারা সেই পণ্যটি সম্পর্কে বেশি আগ্রহী তারা সে পণ্যটি কেনার মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন।
ইউটিউবে অনেক চ্যানেল রয়েছে যারা রিভিউ ভিডিও তৈরি করে। রিভিউ ভিডিও এর মাধ্যমে তারা গুগল এডসেন্স থেকেও বেশি আয় করে। রিভিউ ভিডিওতে যদি ভিউ এবং জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় তবে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সেই চ্যানেলের ভিডিও নির্মাতাকে টাকা দিয়ে তাদের পণ্যের রিভিউ করিয়ে নেয়। তবে প্রথম দিকে রিভিউ ভিডিও করতে নিজের অর্থ খরচ করতে হয়। যদি সেই চ্যানেলের ভিডিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তবে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাকে খুঁজে নেবে তাদের পণ্যের রিভিউ করার জন্য।
রিভিউ ভিডিও করে সফলতা অর্জনের জন্য অবশ্যই ভিডিও এর মান অনেক ভালো হতে হবে।
বিজ্ঞাপণ এর পাশাপাশি ইউটিউব থেকে আয় এর অন্যতম উৎস হচ্ছে স্পন্সর ভিডিও। আপনার অনেক সময় ভিডিওতে দেখবেন যে তারা ভিডিও এর মাঝখানে বলে থাকে এই ভিডিওটি স্পন্সর করেছেন এই প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি। স্পন্সর হলো কোন প্রতিষ্ঠান পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গুণগান করা। স্পনসর ভিডিওর মাধ্যমে সেই যারা সেই পণ্য বা সেবায় বেশি আগ্রহী তারা সে পণ্যটি কিনে থাকে।
ইউটিউব চ্যানেলে কেউ যদি বিজ্ঞাপণ থেকে আয় না করে তবে সে চাইলেই স্পন্সর থেকে আয় করতে পারে। স্পনসর ভিডিও যে কোন চ্যানেলে যে কোন ক্যাটাগরির করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা সেবা বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য আপনার চ্যানেলে যোগাযোগ করবে এবং পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা তুলে ধরে একটি স্পন্সর ভিডিও তৈরি করতে হবে। ইউটিউব অ্যাড অথবা অ্যাফিলিয়েট লিংক হতে যে পরিমাণ আয় করা সম্ভব তার থেকেও বেশি আয় করা সম্ভব শুধু স্পন্সরড ভিডিও পাবলিশ করে। তবে স্পন্সর ভিডিও এর অফার অধিক জনপ্রিয় চ্যানেল গুলোই বেশি পেয়ে থাকে।
ইউটিউবে অনেক চ্যানেল রয়েছে যারা নিজের পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে দর্শকদের জানিয়ে সে পণ্যটি ক্রয় করার জন্য উৎসাহিত করে। আপনারও যদি কোনো প্রোডাক্ট থাকে, তবে আপনিও শুরু করে দিতে পারেন নিজের পণ্যের প্রচারণা। তবে এ পদ্ধতিতে বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য আপনাকে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হবে।
আপনারা উপরের পদ্ধতিতে যে কোন কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। বন্ধুরা এই শুধু ইউটিউব থেকে আয় করার কয়েকটি উপায়। যদি টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে জোসস করতে ভুলবেন না। টিউমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো। তবে আজ এ পর্যন্তই, দেখা হচ্ছে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ। ততক্ষণ পর্যন্ত টেকটিউনস এর সঙ্গেই থাকুন।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)