বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমাদের প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রয়োজনীয় একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে ইউটিউব। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে সব সময় আমরা এখান থেকে ভিডিও দেখে থাকি। তাই আজকের আলোচনার বিষয় ইউটিউব সম্বন্ধেই।
আপনি ইউটিউবে যেসব ভিডিও দেখেন সেগুলো কিন্তু ফেসবুক প্রোফাইলে কোন ভিডিও শেয়ার করে like, comment কিংবা share পাওয়ার মতো নয়। আপনারা কিন্তু ফেসবুকে কোন post করেন লাইক পাবার জন্য। কিন্তু ইউটিউবে যারা ভিডিও তৈরি করে থাকে তারা কিন্তু লাইক পাবার জন্য ভিডিও আপলোড করে না। তাদের ভিডিও আপলোড করার উদ্দেশ্য থাকে সেই ভিডিও থেকে আয় করার। তবে কিছু ভিডিও রয়েছে যেগুলো থেকে আয় করার উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়না সেটি অন্য কথা। তবে বেশিরভাগ ভিডিও থাকে আয় করার উদ্দেশ্যে।
এক্ষেত্রে আপনার মনে এসব প্রশ্ন আসতেই পারে যে, কেন আপনি ইউটিউবিং করবেন? কি করতে হবে ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে? কেমন আয় করতে পারবেন? এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো আজকের এ টিউনে। এজন্য সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
আশপাশে ইউটিউবার শব্দটি আজকাল বেশ শোনা যায়। আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে ইউটিউবার কারা? ইউটিউবার হলো যারা ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি করে থাকে। বর্তমানে নানা পেশার মানুষদের ইউটিউবে দেখা যায়। এদের মধ্যে কেউ কমেডিয়ান কেউ রাঁধুনি কেউবা গেমার। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দক্ষতা অনুযায়ী তার ভিডিও শেয়ার করছে। আপনিও চাইলেই নিজের দক্ষতা অনুযায়ী ঘরে বসে ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। ইউটিউবে প্রায় সবাই নিজের শখ বা আগ্রহের বশে ভিডিও শেয়ার করেন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন জনপ্রিয়তা বাড়ছে তেমনি টাকাও আয় হচ্ছে।
আপনার আগ্রহের কোনো চমকানো কাজ থাকলে আপনিও ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন। আপনিও ঘরে বসে ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি করতে পারেন। মোটামুটি মানের একটি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আপনি ইউটিউবিং শুরু করতে পারবেন। তবে বর্তমানে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ব্যতীত শুধুমাত্র মোবাইল দিয়েই ইউটিউবিং শুরু করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইউটিউবিং শুরু করা আপনার আগ্রহ এবং চেস্টার উপর নির্ভর করবে। আপনি মোবাইল দিয়েই শুরু করে দিতে পারেন ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি।
আমি প্রথমেই বলেছি ইউটিউবিং শুরু করা নির্ভর করবে আপনার আগ্রহ এবং চেস্টার উপর। আপনারা যারা ইউটিউবার হতে চান তাদের জন্য যোগ্যতাবলে প্রথম যা লাগবে তা হচ্ছে, আপনার কোন সৃষ্টিশীল কাজ। আপনি যেকোন অভিজ্ঞতার ভিডিও ইউটিউবে শেয়ার করার মাধ্যমে ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন। এককথায় আপনাকে এমন কিছু বানাতে হবে যা মানুষ দেখবে। এক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে কোন ধরনের ভিডিও দর্শক বেশি চাচ্ছে।
ইউটিউবিং করার ক্ষেত্রে আপনাকে শুরুতেই ব্যয়বহুল কোন ভিডিও করতে হবে না। আপনি আস্তে আস্তে প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার ভিডিও সামগ্রী পরবর্তীতে কিনে নিতে পারবেন। শুরুতে আপনি যদি ব্যয়বহুল কোন ভিডিও করেন, এক্ষেত্রে আপনি যদি ইউটিউবে সফল না হন তবে আপনার পুরো অর্থই নষ্ট হবে। তবে আপনি যদি সফল হতে চান এক্ষেত্রে আপনাকে হাল ছেড়ে দেওয়া চলবে না। আপনি মনে রাখবেন সবাই কিন্তু ইউটিউবে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে না। ইউটিউবে সফল হতে আপনার অধিক ধৈর্য থাকতে হবে।
একটি ইউটিউব চ্যানেল এ কাজ করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি দরকার তা হলো সাবস্ক্রাইবার। চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব টানার জন্য প্রত্যেক ইউটিউবার তার ভিডিও তে বলে থাকে। প্রথমদিকে চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার আনতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হবে। তবে বর্তমান সময়ে আপনার ভিডিওতে যদি মূল্যবান কন্টেন্ট থাকে তবে আপনাকে সাবস্ক্রাইব নিয়ে কোন চিন্তাই করতে হবে না। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আস্তে আস্তে আপনার সাবস্ক্রাইব সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
ইউটিউব ভিডিও থেকে আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে বিজ্ঞাপণ। ইউটিউব ভিডিওতে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপণ প্রদর্শনের মাধ্যমে কনটেন্ট থেকে আয় হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনারা যদি বাংলা কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে চান তবে বলে দিচ্ছি আয় কিন্তু খুবই কম। তবে আপনার কনটেন্ট যদি ভালো হয় তবে আস্তে আস্তে আপনার আয় বাড়বে। এক্ষেত্রে আপনার আয় নির্ভর করবে আপনার কাজ এবং ভিডিও এর মানের উপর।
আপনি যদি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করেন, তবে আয়ের বিষটি নির্ভর করবে আপনার ভিডিও এর ভিউ এবং বিজ্ঞাপণে ক্লিক করার মাধ্যমে। ইউটিউবের বিজ্ঞাপণ থেকে আয় হয় মূলত বিজ্ঞাপণে ক্লিক করার মাধ্যমে। তবে ভিডিও তে বিজ্ঞাপণ প্রদর্শনেও সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে থাকে ইউটিউব। এক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে বিজ্ঞাপণে ক্লিক এবং ভিউ এর জন্য খুবই অল্প পরিমাণ অর্থ পাবেন। তবে একই ভিডিও যদি ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশগুলোতে ভিউ হয় এবং বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন হয় তবে সেখান থেকে আপনি অনেক টাকা পাবেন।
এছাড়া আপনি গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপণ প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করার পাশাপাশি ব্রান্ডের পণ্যের ফিচার ভিডিও তৈরি করে আয় করতে পারবেন। ইউটিউব ভিডিওতে বিজ্ঞাপণ প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করার চাইতে এ পদ্ধতিতে বেশি আয় করে থাকে একজন ইউটিউবার। যারা বিভিন্ন গেজেট কিংবা পণ্যের রিভিউ ভিডিও তৈরি করে তারা এডসেন্স এর চাইতে এ সব থেকে বেশি আয় করে। এসব চ্যানেলগুলোকে অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে তাদের পণ্যের রিভিউ করিয়ে নেয়।
ইউটিউবে শুধু বিজ্ঞাপণ এবং পণ্যের রিভিউ থেকেই আয় হয় না। আপনার চ্যানেল যদি জনপ্রিয় হয় তবে আপনাকে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অফার দিবে তাদের পণ্যের প্রচারণার জন্য। যার মাধ্যমেই আপনি শুধুমাত্র কয়েক সেকেন্ড সেই প্রোডাক্টির কথা আপনার ভিডিও এর কোন অংশে বলে মোটা অংকের টাকা আয় করতে পারেন। ইউটিউবে এই পদ্ধতিতে পণ্যের প্রচারকে 'sponsor' বলে। আপনারা অনেক চ্যানেলে ভিডিও এর মাঝে দেখবেন তারা বলে এই ভিডিও টি স্পনসর করেছে এই ওয়েবসাইট বা কোম্পানি ইত্যাদি। এছাড়া আপনি ইউটিউব থেকে অতিরিক্ত আয় করার জন্য আপনার ভিডিও এর ডেসক্রিপশন এ বিভিন্ন পণ্যের এফিলিয়েট লিঙ্ক দিয়ে আয় করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি যদি উপরের কোন কাজেই ইউটিউব না এসে থাকেন, তবে আপনি অন্য উপায়ে আয় করতে পারেন। ইউটিউব ভিডিও তে আপনি আপনার কোনো পণ্য বা সেবার রিভিউ ভিডিও তৈরি করতে পারেন। ভিডিও এর মাধ্যমে সেই পণ্যের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। আপনার পণ্য রিভিউ এর এক পর্যায়ে আপনি সে পণ্যটি ক্রয় করতে দর্শকদের বলতে পারেন। ইউটিউবে এরকম অনেক চ্যানেল রয়েছে যারা তাদের পণ্যের রিভিউ করে তাদের পণ্যই বিক্রি করে।
বন্ধুরা এই ছিল ইউটিউব সম্পর্কে আজকের টিউন। আশা করছি পুরো টিউনটি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। টিউনটি ভালো লাগলে জোসস করতে ভুলবেন না। আজ এ পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)