ব্রাউজার জিনিসটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এখনকার যুগে এসে কিছুসময়ের জন্য হলেও পিসি বা ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করেছে এমন একজন মানুষ ইন্টারনেট ব্রাউজার চিনবে না এটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। যারা ইন্তারনেট ব্রাউজারগুলো নিয়ে মোটামোটি ভাল ধারনা রাখেন তারা সবাই প্রধানত এই ৪ টা ব্রাউজার Prefer করেন। Microsoft Edge, Google Chrome, Opera Browser এবং Firefox Browser।
যদিও এগুলো ছাড়াও আরও অনেক অনেক ব্রাউজার আছে এবং এর থেকে অনেক ভাল ভাল ব্রাউজারও আছে কিন্তু সেগুলো এই ৪ টার মত পপুলার না। এখন সাধারনত ব্রাউজার বলতে আমরা এই ৪ টাকেই বুঝি। Microsoft Edge কে চিনি কারন এটা মাইক্রোসফট আগে থেকেই উইন্ডোজ ১০ এ প্রিলোড করে দিয়েছে তাই না চিনে কোন উপায় নেই। আর Google Chrome হচ্ছে দুনিয়ার সর্বকালের সবথেকে জনপ্রিয় ব্রাউজার কারন এটা গুগলের প্রোডাক্ট এবং প্রায় তুলনামুলকভাবে সবথেকে ফাস্ট এবং রিলায়েবল ব্রাউজার যদিও মাইক্রোসফট দাবি করে যে তাদের Edge ব্রাউজার Chrome এর থেকেও ফাস্ট (এটা শুধুই দাবি)। আর যারা ছোটবেলায় ২/৩ ইঞ্চি স্ক্রিনের নোকিয়া মোবাইলে অপেরা মিনি ব্রাউজার দিয়ে নেট ব্রাউজ করেছে তার পক্ষে Opera নামটা ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
Opera নামটা শুনলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। সেখান থেকেই আজকের মডার্ন Opera Browser। আর Firefox ব্রাউজারটা আমার পারসোনালি ভালো লাগেনি কখনো আর লাগবেও না সম্ভবত। কিভাবে এত জনপ্রিয় হল আমার কোন ধারনাই নেই। আর আরেকটা ব্রাউজার আছে যার নাম Safari। আছে না বলে ছিল বলা ভাল। কারন আমার জানামতে এটা এখন আর Mac ইউজার ছাড়া কেউ ব্যবহার করেনা। তাই Safari নিয়ে কিছুই বলব না। আজকের টিউনটা এটা নিয়েই। এখন এই ২০১৭ সালে এসে কোন ব্রাউজারের অবস্থা কেমন ? কোনটা কতটা ইম্প্রুভড ? কোন ব্রাউজারটি প্রাইমারি ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পারফেক্ট ?
এটার কথা প্রথমেই বলছি কারন এটা উইন্ডোজ ১০ এর ফিচারড ব্রাউজার। প্রথমে উইন্ডোজ ১০ এ এটা ডিফলট ব্রাউজার হিসেবে থাকলেও প্রায় সবাই এটা চেঞ্জ করে অন্য ব্রাউজার ডিফল্ট সেট করে নেয়। অনেকে আবার এই ব্রাউজারটা ব্যবহারই করে শুধুমাত্র অন্য ব্রাউজার ডাউনলোড করার জন্য (আমিও এটাই করি)। কিন্তু তার মানে এই না যে এই ব্রাউজারটা ইউজলেস। ইউজলেস তো না, বরং কয়েকদিক থেকে এই ব্রাউজারটা অন্য যেকোনো ব্রাউজারের থেকে ভাল। প্রথমত, এখনো পর্যন্ত সবথেকে আধুনিক ডিজাইনের ব্রাউজার হচ্ছে Microsoft Edge।
অন্য প্রায় যেকোনো ব্রাউজারের থেকে Microsoft Edge এর ইউজার ইন্টারফেস সুন্দর। এছাড়া কয়েকটি ইউনিক ফিচারসও আছে যা অন্য ব্রাউজারে পাবেন না। তার মধ্যে সবথেকে বড় ফিচার হচ্ছে Deep Integration with Operating System অর্থাৎ শুধুমাত্র Edge ব্রাউজারই উইন্ডোজ ওএস এর সাথে সবথেকে বেশি মিলতে পারবে অন্য যেকোনো ব্রাউজার এর থেকে। এছাড়া মাইক্রোসফট এর আরেকটি বড় ফিচার হচ্ছে Cortana Integration। করটানা প্রায় সবাই কমবেশি চেনেন।
এই ব্রাউজার ইউজ করার সময় আপনি ওয়েবপেইজের যেকোনো ওয়ার্ড এর উপরে লেফট ক্লীক করে চাইলেই Cortana আপনাকে ঐ ওয়ার্ড সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য দেখাবে। এটা সত্যিই অনেক টাইম সেভিং ফিচার। এছাড়া আরো অনেক ফিচারস যেমন অনেকগুলো ট্যাব গ্রুপ করে একপাশে সরিয়ে রাখার ফিচার আছে যদিও এটা তেমন নতুন কিছুনা। Edge ব্রাউজারের বাকি সব ফিচারস প্রায় অন্য ব্রাউজারগুলোতেও আছে।
এবং Edge সবথেকে ফাস্ট ব্রাউজার না হলেও, যথেষ্ট ফাস্ট এবং অন্য ব্রাউজারগুলোর থেকে তুলনামুলকভাবে লাইটওয়েট। কিন্তু মাইক্রোসফট এর নিজের ব্রাউজার হলেও Edge সম্পূর্ণ বাগমুক্ত নয়। ব্রাউজার ফ্রিজিং, ট্যাব ফ্রিজিং, ওয়েবপেইজ আনরেস্পন্সিভ, ফোরস ক্লোজ ইত্যাদি সমস্যাগুলা এখনও অনেক আছে এই ব্রাউজারে। আমি বলব আপনার যদি Cortana Integration জিনিসটা অনেক ভাল লাগে এবং যদি এমন একটা ব্রাউজার চান যেটা তুলনামুলকভাবে হালকা এবং যেটার ইউজার ইন্টারফেস সুন্দর, তবে এটাই হতে পারে আপনার প্রাইমারি ব্রাউজার।
পৃথিবীর প্রায় ৮০% পিসি ইউজারদের প্রাইমারি ব্রাউজার Google Chrome। কারন গুগলের প্রোডাক্ট। আসলে গুগল আমাদের ডেইলি লাইফের সাথে এমনভাবে মিশে গিয়েছে যে আমরা এটা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারিনি। কোন কাজ করার জন্য যদি গুগলের কোন প্রোডাক্ট থাকে, তাহলে ওই কাজটি করার জন্য আমরা অন্য কোন প্রোগ্রামের দিকে তাকিয়েও দেখিনা। কিন্তু ব্রাউজারের ক্ষেত্রে এটা কিছুটা সত্যি হলেও ১০০% সত্যি নয়।
Chrome যে শুধুমাত্র গুগলের প্রোডাক্ট বলেই আমরা ইউজ করি এমনটা না। সত্যি কথা বলতে, এখনও পর্যন্ত সবথেকে রিলায়েবল ব্রাউজার Google Chrome। একই সাথে অনেকটা ফিচার প্যাকড এবং ফাস্ট এবং স্টেবল। Google Chrome এর সবথেকে ভাল জিনিসটা হচ্ছে এর Cross Platform Sync। আপনি আপনার সব Chrome Settings, Browsing History, Saved passwords, Bookmark মানে লিট্রেলি সবকিছুই Sync করতে পারবেন আপনার সব ডিভাইজে যেখানে Google Chrome ইন্সটল করা থাকবে, সেটা আপনার উইন্ডোজ পিসি হোক, ম্যাক হোক, ট্যাবলেট হোক আর এন্ড্রয়েড মোবাইল হোক।
একটা অ্যাকাউন্ট দিয়েই আপনি সব ডিভাইসের সব Chrome ব্রাউজারের ডাটা Sync করে রাখতে পারবেন। এটাই সম্ভবত Chrome ব্রাউজারের কিলার ফিচার। যদিও এই সুবিধা Opera এবং Firefox ব্রাউজারেও আছে কিন্তু টা Chrome এর মত এতটা ইউজফুল না, কিছুটা লিমিটেড। এছাড়াও Google Chrome এর আছে নিজের বৃহৎ অ্যাপস, থিমস এবং এক্সটেনশন্স স্টোর যার নাম ক্রোম ওয়েব স্টোর। তাই Chrome ই একমাত্র ব্রাউজার যেটাকে নিজের ইচ্ছামত হাজার রকম ভাবে কাস্টোমাইজ করতে পারবেন আপনি।
কিন্তু যদি কোন থিম দিয়ে কাস্টোমাইজ না করেন, তাহলে Chrome অন্য যেকোনো ব্রাউজারের থেকে খারাপ দেখতে। মানে Chrome এর ইউজার ইন্টারফেস অন্য ব্রাউজারগুলার মত এত ইম্প্রুভড বা মোটকথা সুন্দর না। আর Chrome ব্রাউজার জিনিসটা এমন, আপনি যদি অনেক দিন ধরে Chrome ব্রাউজার ইউজ করে থাকেন তাহলে আপনি অন্য কোন ব্রাইজারে মুভ করতে চাইবেন না।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, গুগল ক্রোম অন্য ব্রাউজারগুলোর থেকে বেশি র্যাম হাংরি। গুগল ক্রোম প্রত্যেকটি ব্রাউজার ট্যাব এবং প্রত্যেকটি এক্সটেনশনের জন্য আলদা আলদা প্রসেস তৈরি করে যা একটু বেশি র্যাম কিল করে। আপনার পিসি যদি লো এন্ড হয় তাহলে এটা আপনার জন্য একটা বড় ইস্যু হতে পারে।
আমি বলব, আপনি যদি একটি ফুল ফিচারড, ফাস্ট, স্টেবল এবং রিলায়েবল ব্রাউজার চান এবং যদি বেস্ট ক্রস প্লাটফর্ম ব্রাউজার ইউজ করতে চান, তাহলে আপনার জন্য সবথেকে ভাল হবে Chrome Browser।
আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি, ২০১৭ এর সবথেকে মডার্ন আর ফিচারপ্যাকড ব্রাউজার হচ্ছে Opera ব্রাউজার। আপনি যদি আগে কখনো অপেরা ব্রাউজার ইউজ না করে থাকেন তাহলে আমি সাজেস্ট করব অন্তত একবার অপেরা ব্রাউজার ইন্সটল করে দেখবেন। অপেরা তে এমন কিছু মজার ফিচার আছে যা আপনি অন্য ব্রাউজারে পাবেন না। যেমন পিকচার ইন পিকচার ফিচারটি।
আপনি যখন অপেরা ব্রাউজার দিয়ে কোন ওয়েবপেজে কোন ভিডিও দেখবেন তখন আপনি একটা ছোট অপশন পাবেন যার সাহায্যে আপনি ভিডিওটি একটি ছোট পপআপ উইন্ডো তে ওপেন করতে পারবেন যাতে আপনি ব্রাউজারে অন্য যেকোনো কাজ করার সময় ব্রাউজারের কোনায় ভিডিওটিও চালু রাখতে পারেন একসাথে। এটা আপনার কাজগুলোকে আরো একটু সহজ করবে। এছাড়া আরো ভাল একটি ফিচার হচ্ছে বিল্ট ইন ফ্রি আনলিমিটেড ভিপিএন।
মানে অপেরা ব্রাউজার ইউজ করার সময় আপনার কখনো ভিপিএন ইউজ করার দরকার হলে আপনাকে আলাদা কোন থার্ড পার্টি সফটওয়্যার বা এক্সটেনশন ইন্সটল করতে হবেনা। এছাড়াও অপেরা ব্রাউজারে আছে বিল্ট ইন Ad Blocker, তাই থার্ড পার্টি কোন এড ব্লকারও ইউজ করতে হচ্ছেনা। আর অপেরা ব্রাউজারে আরো আছে বিল্ট ইন ফেসবুক মেসেঞ্জার তাই ফেসবুকে কারো সাথে চ্যাট করতে হলে বা কারো মেসেজের রিপ্লাই দিতে হলে ফেসবুক ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে না, ব্রাউজারের কোনায় ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে সহজেই এসব কাজ করতে পারবেন।
আর অপেরা ব্রাউজারের ইউজার ইন্টারফেস Edge ব্রাউজারের মত এতটা সুন্দর না হলেও যথেস্ট মডার্ন এবং সুন্দর। আর অপেরা ব্রাউজার Chromium ইঞ্জিনের হওয়ায় এটা প্রায় Chrome এর মতই ফাস্ট। এছাড়া Chrome এর মত নিজের থিম স্টোর, এক্সটেনশন স্টোর সবই আছে প্রায়। আমি বলব, আপনি যদি এখন সত্যিকারের একটা মডার্ন এবং সবথেকে বেশি ফিচারপ্যাকড এবং ফাস্ট এবং একইসাথে স্টেবল ব্রাউজার চান, তাহলে একমাত্র Opera Browser ই বেস্ট আপনার জন্য। আমি আমার প্রাইমারি ব্রাউজার হিসেবে এটাই ব্যবহার করি এবং এই টিউনটা অপেরা ব্রাউজার ইউজ করেই লেখা।
ফায়ারফক্স ব্রাউজার এর ইন্টারফেসটা মোটামোটি সুন্দর। এটার বিষয়টাও অনেকটা Chrome ব্রাউজারের মত। যারা অনেকদিন ধরে এটা ব্যবহার করেন তারা ছাড়তে চান না। কারন, অভ্যাস। যদিও এই ব্রাউজারের Google Chrome এর মত ফাস্ট স্পিড বা অপেরার মত মজার কোন ফিচার নেই বা Edge এর মত কোন ইউনিক ফিচার নেই, তবুও এখন অনেক পিসি ইউজারই ফায়ারফক্স ব্রাউজার ইউজ করেন।
ফায়ারফক্সের মেমরি ম্যানেজমেন্ট ক্রোম থেকে ভাল মানে ক্রোম এর মত র্যাম হাংরি না। এছাড়া ফায়ারফক্স ওপেন সোর্স ব্রাউজার হওয়ায় ফায়ারফক্সে কখনো কোন প্রবলেম বা বাগস দেখা দিলে টা খুব তাড়াতাড়ি ফিক্স হয়ে যায়।
যারা এটা ইউজ করেন তারা কতটা খুশি এই ব্রাউজারের উপরে সেটা আমি জানিনা কিন্তু আমার একেবারেই ভাল লাগেনা। আমার পিসিতে অন্য যেকোনো ব্রাউজারের থেকে ফায়ারফক্স অনেক স্লো কাজ করে। ফায়ারফক্স ব্রাউজারে একটা ভাল ফিচার ছিল যার নাম " Firefox Hello "। এটা ব্যবহার করা হত হটাত করে কোন থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার না করেই অন্য একজন ফায়ারফক্স ইউজারের সাথে ভিডিও চ্যাট করা যেত। এই ফিচারটা আর নেই।
এটাই ছিল ২০১৭ সালের কয়েকটা জনপ্রিয় ব্রাউজারের শর্ট রিভিউ। এখন এগুলোর মধ্যে কোনটা বেস্ট বা কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে এটা আপনার ব্যাপার। আজকের মত এখানেই টিউন শেষ করছি। যেকোনো ধরনের প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই টিউনমেন্ট করবেন।
You can contact me on Facebook also.
আমি সিয়াম একান্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 40 টি টিউন ও 82 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সিয়াম রউফ একান্ত। অনেকে সিয়াম নামে চেনে আবার অনেক একান্ত নামে। যাইহোক, পড়াশুনা একেবারেই ভাল লাগেনা আমার। ভাল লাগার মধ্যে দুইটা জিনিস , ফটোগ্রাফি আর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রতি ভাললাগা থেকেই টেকটিউন্স চেনা এবং টেকটিউন্সে আইডি খোলা। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়......
সিয়াম একান্ত ভাই,
টিউনটি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন, ভালো লাগলো।
তবে আমি Google Chrome টাই বেশি USE করি।