মাইক্রোসফট কর্পোরেশন উইন্ডোজ ৮ চালু করার পূর্বে অনেক মাতামাতি করেছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই উইন্ডোজ ৮ নিয়ে আলোচনা পরিনত হলো সমালোচনায়। সমালোচনার চাপের মুখে আটমাস পর বের করেছিল উইন্ডোজ ৮ এর সংস্করণ ৮.১ যেখানে স্টার্ট মেনু যুক্ত করার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু পরিবর্তন আনা হয় এবং উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যার সমাধান করা হয়। কিন্তু তারপরেও গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যার ফলে মাইক্রোসফট পরর্বর্তী নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৯ তৈরীর আভাস দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য না আসলেও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের পরবর্তী সংস্করণ হিসেবে উইন্ডোজ ৯ বেশ ভালোই আলোচনায় ছিল। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উইন্ডোজ ৯ এর পরিবর্তে উইন্ডোজ ১০ অবমুক্ত করেছে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন। যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটয়ানার একটি।
উইন্ডোজ ৮ চালুর পূর্বে মাইক্রোসফট অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েছিল। কিন্তু শেষঅব্দি আশানুরুপ ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। তাই উইন্ডোজ ১০ এর ক্ষেত্রে একদম প্রচারনাহীন চমক দিয়ে দিল মাইক্রোসফট। এতে করে উইন্ডোজ ১০ সবার কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হল। আর সেই কৌতুহল থেকেই সবাই উইন্ডোজ ১০ এর দিকে ঝুকে পরেছে। এটাই হচ্ছে তাদের অন্যতম বিকল্প প্রচারণা।
মাইক্রোসফট নতুন অপারেটিং সিস্টেমে ব্যাতিক্রমতা রাখতে বদ্ধপরিকর। এই নতুন পারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফটকর্মীদের কাছে ছিল 'থ্রেশহোল্ড' নামে। মাইক্রোসফট এব্যাপারে কিছু না বললেও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী 'উইন্ডোজ ৯৫' ও 'উইন্ডোজ ৯৮'-এর কোডগুলোর সঙ্গে 'উইন্ডোজ ৯' নামটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই ডেভেলপিং ঝামেলা এড়াতেই 'উইন্ডোজ ৯' অবমুক্ত করেনি মাইক্রোসফট। আবার অল ইন ওয়ান সিস্টেম হিসেবে নাম 'উইন্ডোজ ওয়ান' করা যায় কি না মূলত সেটাই ছিল বিবেচনায়। কিন্তু উইন্ডোজ ১ সেটা তো আবার উলটো ভার্সন। তাই ১ এর সাথে সামঞ্জস্য রাখতে এবং ৯, ৯৫, ৯৮ এর ঝামেলা এড়াতে উইন্ডোজ ১০ নামকরন হয়েছে।
মাইক্ক্রোসফটের একজন কর্মী টেরি মেয়ারসন বলেন, উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম তৈরির প্রকল্পটি অভ্যন্তরীণভাবে দীর্ঘদিন ধরে থ্রেসহোল্ড নামে পরিচিত ছিল। এটি মাইক্রোসফটের নতুন ধরনের একটি পদ্ধতি, যাতে মোবাইল ডিভাইসও সমর্থন করবে। উইন্ডোজ ১০ নামটির অর্থ হচ্ছে- লাফ। এটি এক্সবক্স থেকে পিসি, ফোন, ট্যাবলেট এমনকি ক্ষুদ্র স্মার্টপণ্যগুলোতেও চলবে।
এবার চলুন উইন্ডোজ ১০ এর কিছু নতুন ফিচার দেখে নেইঃ
আগেই বলেছি যে মাইক্রোসফট চেয়েছে তাদের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যাতিক্রমভাবে শুরু করতে। তাই তো এমন একটি অপারেটিং সিস্টেমের সূচনা করল যেটা একই সাথে পিসি, টেবলেট, বড়স্ক্রীন ফোন এবং মুঠোফোনেও ইনস্টল করা যেতে পারে। আর এই কারনেই উইন্ডোজ ১০ সার্বজনীয়।
উইন্ডোজ ১০ এর স্টার্ট মেনুতে উল্লেহযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে উইন্ডোজ ৭ এবং ৮ এর সমন্বয়। এতে উইন্ডোজ ৭ এর মত যেমন সকল প্রোগ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে তেমনি উইন্ডোজ ৮ এর মত ইচ্ছেমত মেট্রো অ্যাপস সহ অন্যান্য অ্যাপস গুলোকেও সাজিয়ে-গুচিয়ে রাখা যাবে।
এর আগে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে মাল্টিপল ডেস্কটপ ব্যবহারের সুযোগ ছিল। এবার 'উইন্ডোজ ১০'-একই সাথে একাধিক কাজ করার সুবিধার্থে যুক্ত হয়েছে 'মাল্টি ডেস্কটপ ফিচার'। 'উইন্ডোজ ৮' ও ৮.১-এ ফিচারটি থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ দুটি পৃথক ডেস্কটপ তৈরি করা যেত। তবে 'উইন্ডোজ ১০' অনায়াসে চারটি কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী তারও বেশি ডেস্কটপ তৈরি করে একসঙ্গে একাধিক কাজ করা যাবে।
'উইন্ডোজ ১০' এর টাস্ক বারে 'টাস্কভিউ' নামের একটি আইকন রয়েছে যেখানে ক্লিক করলে মাল্টিপল ডেস্কটপ তৈরি হবে। 'উইন্ডোজ ১০' মাল্টপল ডেক্সটপ চালু করতে চাইলে win+ctrl+D চাপতে হবে আর বন্ধ করতে চাইলে win+ctrl+F4 চাপতে হবে। আর Windows+TAB চেপে এক ডেস্কটপ থেকে অন্য ডেস্কটপে পরিবর্তন করা যাবে।
বর্তমানে উইন্ডোজ ৮ বা ৮.১ এর তুলোনায় উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার কারীর সংখ্যা অনেক বেশি। একটি অপারেটিং সিস্টেমে অভ্যস্থ হওয়ার কারণে নতুন অপারেটিং সিস্টেমে যাওয়া অনেক ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। তাই উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে উভয় সংস্করণের স্বাদ পাওয়া যাবে।
মাইক্রোসফটের কর্পোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বেলিফ মজা করে বলেন, “আমরা তাদের এই ধারণা দিতে চাই যে গতকাল তারা চালাচ্ছিলেন প্রথম প্রজন্মের প্রিয়াস আর এখন তাদের কাছে আছে উইন্ডোজ ১০, যা হচ্ছে অত্যাধুনিক টেসলা। ”
মাইক্রোসফট টার্চ নির্ভর উইন্ডোজ চালিত ডিভাইসের যাত্রা শুরু উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে। আগের টাচ ফিচারের বেশ কিছু বাগ বা ক্রুটি দূর করে একে সম্পূর্ণ গতিশীল এবং উন্নত মানের সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে নতুন অপারেটিং সিস্টেমে। আঙ্গুলের স্পর্শের সাহায্যে জুম ইন, জুম আউট, স্ক্রল করা, মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ ইত্যাদি করা যাবে খুব সহজে।
কি-বোর্ডের ক্ষেত্রেও উইন্ডোজ ১০ এ রয়েছে নতুনত্ব। কি-বোর্ডের চমৎকার ফিচারটি সারফেস ট্যাবলেট ব্যবহারকারীদের বেশি কাজে লাগবে। এ ফিচারের ফলে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমচালিত ট্যাবে কি-বোর্ড যুক্ত করলে নোটিফিকেশনে দেখা যাবে ব্যবহারকারী কোন মোডে ডিভাইসটি ব্যবহার করতে চান। ট্যাব নাকি ডেক্সটপ মুডে। অসাধারণ এ ফিচার সারফেস ডিভাইসের ব্যবহারকারীদের জন্য আর্শীবাদ স্বরুপ। এখন ব্যবহারকারীরা সহজে মুড পরিবর্তন করে ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারবে। আগে যে সুবিধা ছিল না।
কন্টিনিউয়াম ফিচারতি অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একবারে নতুন ও অত্যাধুনিক একটি ফিচার। উইন্ডোজ ১০-এর কন্টিনাম ফিচারটি কম্পিউটার ব্যবহারের সময় কি-বোর্ড, মাউস, নাকি স্ক্রিন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা চিহ্নিত করে ব্যবহারকারীর সামনে যথাযথ ইন্টারফেইস তুলে ধরবে।
উইন্ডোজ ১০-এ একই ইন্টারফেইস ব্যবহার করে একসঙ্গে ডেস্কটপ কম্পিউটার, উইন্ডোজ ট্যাবলেট এবং উইন্ডোজ স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজন নেই একাধিক অ্যাকাউন্টের।
সব ডিভাইসের জন্য এক উইন্ডোজের একই ভিত্তিতে আসছে ‘ইউনিভার্সাল অ্যাপস’ ফিচারটি। এই ফিচারে উইন্ডোজ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যে কোনো অ্যাপ একইসঙ্গে সবগুলো ডিভাইসেই চলবে।
ইউনিভার্সাল অ্যাপগুলো চালানো যাবে আলাদা আলাদা উইন্ডোতে। উইন্ডোজ ৮-এর ‘মডার্ন’ অ্যাপের সঙ্গে প্রচলিত উইন্ডোজের অনুভূতির সংশ্রিশন ঘটানোর চেষ্টাও করেছে উইন্ডোজ ১০ এ।
পরিবর্তন আনা হয়েছে উইন্ডোজের স্ন্যাপিং ফিচারেও। স্ক্রিনের পুরোটা জুড়ে রাখার জন্য উইন্ডোগুলোকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে রিসাইজ করবে এই ফিচারটি।
বর্তমানে কমান্ড প্রম্পটে (CMD) কি-বোর্ড শর্টকাট করা করে না। ctrl+ v এবং ctrl+c এর মতো শর্টকাটগুলো কাজ করবে উইন্ডোজ ১০ এর কমান্ড প্রম্পটে। ফলে কমান্ড ব্যবহার করা আরও সহজ হবে যে কোন ব্যবহারকারীদের জন্য।
যে সব ডিভাইসে উইন্ডোজ ৮ ব্যবহার করা যায় সেসব ডিভাইসে উইন্ডোজ ১০ চালানো যাবে। আর প্রসেসর হতে হবে ৬৪-বিট। এর ফলে পুরানো পিসিগুলোতে হয়ত চলবে না উইন্ডোজ ১০।
চলুন এবার জেনে নেই উইন্ডোজ ১০ সম্পর্কে কিছু মজার তথ্যঃ
উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমের প্রাক বা প্রিভিউ সংস্করণ পেতে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ডাউনলোড করেছেন। উইন্ডোজ ১০-এর এই কারিগরি প্রিভিউ সংস্করণটি মাইক্রোসফটের পরবর্তী উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম সংস্করণ, যা মাইক্রোসফট তাদের ইনসাইডার প্রোগ্রামের আওতায় নিবন্ধিত ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে পরীক্ষা চালাচ্ছে।
এক ব্লগ টিউনে মাইক্রোসফট কর্মকর্তা জো বেলফিউরি বলেছেন, ‘উইন্ডোজ ১০-এর প্রাথমিক সংস্করণটি ইতিমধ্যে ১০ লাখ বার ডাউনলোড হয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি ফিডব্যাক বা জবাব আমরা পেয়েছি। ’ বেলফিউরি আরও জানিয়েছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর উইন্ডোজ ১০ ঘোষণার সময় উইন্ডোজ বিভাগের প্রধান টেরি মেয়ারসন বলেছিলেন, ‘এই উইন্ডোজ হবে অন্যান্য সংস্করণের চেয়ে আলাদা। তাঁর কথা অনুযায়ী উইন্ডোজ ১০ উন্নত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যা ব্যবহারকারীদের কাছে সত্যিই উপভোগ্য হবে। ’
উইন্ডোজ ১০ এর পরিপূর্ণ ভার্সন এখন ব্যবহার করার কোন সুযোগ নাই। তবে আগামি বছররের শুরুর দিকে সবার জন্য রিলিজ করবে। তবে চাইলে ডেভেলপার প্রিভিউ সংস্করণটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে উইন্ডোজ ১০ এর স্বাদ নিতে পারবেন।
মাইক্রোসফট অফিসিয়ালভাবে এখনো উইন্ডোজ ১০ এর মূল্য সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে বর্তমানে উইন্ডোজ ৮ ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে উইন্ডোজ ১০ আপডেটের সুযোগ পাবেন। তবে পূর্ববর্তী সংস্করণের ব্যবহারকারীদের তা কিনতে হবে পুরো দাম দিয়ে। তার মানে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের তা কিনতে হবে। মাইক্রোসফটের অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী এ সংস্করণের ব্যবহারকারী ২০০ কোটির বেশি। আর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৭ এর সংস্করণের অফিসিয়াল সাপোর্ট বন্ধ করে দেবে ৩০ অক্টোবর থেকে।
আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে দেখা হবে নতুন কোন টিউন নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ।
আমি Mahabub Rajj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 95 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Hello World! I am here for learnig..
Waiting for it যদিও ভার্চুয়াল মেশিনে চালায় দেখসি আসে ভালই