আমরা সবাই জানি, গত ২৯ জুলাই,২০১৫ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এর অফিশিয়াল স্টাবল ভারশন পিসির জন্য রিলিজ করে।আমরা অনেকেই পিসিতে উইন্ডোজ ১০ ইউজ করছি এবং উইন্ডোজ ১০ ইউজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।উইন্ডোজ ১০ মাইক্রোসফট এর সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম।অফিসিয়াল রিলিজের পর থেকে মাইক্রোসফট পিসির উইন্ডোজ ১০ কে আরও বেশি স্মুথ এবং স্টাবল করার চেষ্টার সাথে সাথে কাজ করে যাচ্ছে উইন্ডোজ ১০ মোবাইল নিয়ে।বছরের প্রথম দিক থেকে উইন্ডোজ ফোন অরথাত লুমিয়ার জন্য মাইক্রোসফট অনেকগুলো প্রিভিউ বিল্ড রিলিজ করে আসছে।
প্রায় ১ বছর ধরে টেস্ট করার পরে এবার অফিসিয়াল রিলিজের পালা,যদিও মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এর রিলিজ ডেট নিয়ে কনফার্ম কিছুই বলে নি।তবে উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এর RTM (Reliese To Manufacturer) বিল্ড (প্রিভিউ) কয়েকদিন আগেই ইনসাইডারদের কাছে রিলিজ করা হয়। তাছাড়া মাইক্রোসফট তাদের নতুন দুইটি মোবাইল ডিভাইস, লুমিয়া ৯৫০ এবং লুমিয়া ৯৫০ এক্সএল বাজারে ছাড়ে যেগুলো উইন্ডোজ ১০ মোবাইল প্রিলোডেড। তাই বলা যায়,উইন্ডোজ ১০ মোবাইল অফিসিয়াল রিলিজ বেশি দূরে নয়।২০১৬ এর প্রথমদিকে উইন্ডোজ ১০ মোবাইল সব লুমিয়া আর এইচটিসি ডিভাইস এর জন্য রিলিজ করতে পারে মাইক্রোসফট।
উইন্ডোজ ১০ মোবাইল ভারশনে অসংখ্য ইন্টারফেস চেঞ্জ আনা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি নতুন ফিচারস যোগ করা হয়েছে।এবার দেখা যাক, কি কি থাকছে উইন্ডোজ ১০ মোবাইল ভারশনে।
উইন্ডোজ ১০ এর ফিচারস সম্পরকে বলতে গেলে প্রথমে যেটা বলতে হয় তা হল এটার ইউনিক ইন্টারফেস।উইন্ডোজ ফোন এর ইন্টারফেস আগে থেকেই অনেক আকর্ষণীয় ছিল।কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এ যোগ করা হয়েছে স্টার্ট স্ক্রিন ব্যাকগ্রাউন্ড এবং টাইলস ট্রান্সপিরেসি যার ফলে আপনি আপনার স্টার্ট স্ক্রিনের পেছনে নিজের ইচ্ছামত ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে আপনার স্টার্ট স্ক্রিনকে করতে পারবেন আরও বেশি পারসোনাল এবং আকর্ষণীয়।এছাড়া লকস্ক্রিনেও নতুন ইন্টারফেস দেয়া হয়েছে যা আপনার ভাল লাগবেই।এবং উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এর সেটিংস্ মেনু,ডায়ালার স্ক্রিন,কন্টাক্টস অ্যাপ,ফাইল এক্সপ্লোরার,উইন্ডোজ স্টোর ইত্যাদি সব জায়গাতেই ইম্প্রুভড ইন্টারফেস দেয়া হয়েছে যা আপনার ভাল লাগতে বাধ্য।
উইন্ডোজ ১০ মোবাইল ভারশনে চলবে উইন্ডোজ ইউনিভারসাল অ্যাপস।ইউনিভারসাল অ্যাপ এর বিষয়টা অনেকে বোঝেন না বা ক্লিয়ারলি জানেন না।ডেভেলপাররা উইন্ডোজ ১০ এর জন্য যেসব অ্যাপ ডেভেলপ করবেন সেগুলো একইসাথে উইন্ডোজ ১০ চালিত প্রায় সকল ডিভাইসে চলবে,প্রত্যেকটির জন্য আলাদাভাবে অ্যাপ ডেভেলপ করার দরকার হবে না।এই অ্যাপগুলাকে বলা হবে ইউনিভারসাল অ্যাপস।
এই অ্যাপগুলা স্মার্টফোন,ল্যাপটপ,পিসি,ট্যাবলেট,ট্যাবলেট পিসি সব ডিভাইসেই চলবে।ইউনিভারসাল অ্যাপ এর ডিজাইন,ইন্টারফেস খুবই চমৎকার।ইউনিভারসাল অ্যাপ এর মান নরমাল এন্ড্রইড বা অন্য কোন ওএস এর অ্যাপ থেকে কতটা ভাল হতে পারে এটা Outlook Mail,Perfect Tube,Windows Calculator,Skype Messeging এই ধরনের কয়েকটি ইউনিভারসাল অ্যাপ ট্রাই করলেই বুঝবেন।
আগে উইন্ডোজ ফোন এর জন্য অ্যাপ ডেভেলপ করা ছিল ডেভেলপারদের জন্য অনেক কঠিন একটা কাজ।তাই আগে উইন্ডোজ স্টোরে অ্যাপ এর সংখ্যা ছিল অনেক কম যদিও প্রয়োজনীয় প্রায় সব অ্যাপই ছিল।কিন্তু মাইক্রোসফট এর আশা উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে অ্যাপ এর এই স্বল্পতা আর থাকবেনা।
কারন মাইক্রোসফট ২ টি প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছে যা দ্বারা ডেভেলপারদের উইন্ডোজ ১০ এর অ্যাপ তৈরি করতে নতুন কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে হবে না।তারা তাদের এন্ড্রইড এবং আইওএস অ্যাপ এর প্রোগ্রামিং এর খুব কম পরিবর্তন করে তার প্রোগ্রামিং স্কিল ইউজ করে খুব সহজেই তার এন্ড্রয়েড বা আইওএস এর অ্যাপটি উইন্ডোজ ১০ প্লাটফর্মে আনতে পারবে।ফলে,উইন্ডোজ স্টোরে অ্যাপ এর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বাড়বে এবং প্রায় সব এন্ড্রইড এবং আইফোন এর অ্যাপই উইন্ডোজ ১০ এ পাওয়া যাবে।ইতমধ্যেই অনেক এন্ড্রইড এবং আইওএস এর অ্যাপ উইন্ডোজ ১০ এ পোর্ট করা হয়েছে।তবে প্রোজেক্ট এস্টোরিয়া অর্থাৎ এন্ড্রইড অ্যাপ পোর্টিং এর বিষয়টি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে মাইক্রোসফট।
৪. কন্টিনাম
কন্টিনাম উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি ফিচার।এই ফিচারটি সব ডিভাইসে পাওয়া যাবে না।শুধুমাত্র কম্পিটেবল ডিভাইসগুলাতেই এই ফিচার পাওয়া যাবে।এখন শুধুমাত্র লুমিয়া ৯৫০ এবং লুমিয়া ৯৫০ এক্সএল এই দুইটি ডিভাইসে এই ফিচার আছে।এই ফিচার যেসব ডিভাইসে থাকবে সেগুলো মাইক্রোসফট ডিসপ্লে ডক এর সাহায্যে যেকোনো মনিটর বা ডিসপ্লেতে কানেক্ট করলেই মনিটরটিপরিণত হবে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিসটেমে।
হাতের কাছে পিসি না থাকলে এটার সাহায্যে যেকোনো ডিসপ্লেকে পিসি হিসেবে ইউজ করতে পারবেন যদিও বেসিক কাজগুলো ছাড়া তেমন কোন কাজ এটা দিয়ে করতে পারবেন না অর্থাৎ পিসির সব ধরনের কাজ করতে পারবেন না।কিন্তু মেইল পাঠানো,ওয়ার্ড ডকুমেন্ট এডিট বা ক্রিয়েট করা,প্রেজেন্টেশন ক্রিয়েট করা ইত্যাদি অনেক কাজই কন্টিনাম এর সাহায্যে করতে পারবেন।
৫. মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার
উইন্ডোজ ১০ পিসি ইউজাররা মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার এর সাথে অবশ্যই পরিচিত।এটা মাইক্রোসফট এর তৈরি ওয়েব ব্রাউজার যা তুলনামুলকভাবে অন্যান্য অনেক ওয়েব ব্রাউজার এর থেকে এডভান্সড এবং ফাস্ট।এজ ব্রাউজারে এমন কয়েকটি ফিচার আছে যা অন্যান্য অনেক ওয়েব ব্রাউজারে আপনি পাবেন না।
এটা অনায়াসেই গুগল ক্রোম এবং ফায়ারফক্স ব্রাউজার এর সাথে কম্পেয়ারেবল।উইন্ডোজ ১০ মোবাইল ভারসনেও আপনি এই ব্রাউজারটি পাবেন যা স্মার্টফোন এর অনেক পপুলার ওয়েব ব্রাউজারকে হার মানাতে সক্ষম।
এছারাও উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে আরও অসংখ্য ফিচার আছে যা আপনি ইউজ করলে বুঝতে পারবেন।উইন্ডোজ ১০ মাইক্রোসফট এর সর্বশেষ ওএস হওয়াতে মাইক্রোসফট এটা নিয়ে অনেক আশাবাদী এবং আমার মতে মাইক্রোসফট এই ব্যাপারে অনেকটাই সফল।পিসির ওএস এর বাজারটা মাইক্রোসফট খুব ভালভাবেই ধরে রেখেছে।এখন মাইক্রোসফট এর চিন্তা তাদের মোবাইল এর বাজার নিয়ে।এখন শুধু উইন্ডোজ ১০ মোবাইল অফিশিয়াল রিলিজের অপেক্ষা।
ধন্যবাদ আমার টিউনটা ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য।ভাল থাকবেন।আমার টিউনে কোন ভুল থাকলে টিউনমেন্টে জানাবেন,এছাড়া আপনার কোন মতামত থাকলেও টিউনমেন্টে জানাতে পারেন। 🙂 🙂
আমি সিয়াম একান্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 40 টি টিউন ও 82 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সিয়াম রউফ একান্ত। অনেকে সিয়াম নামে চেনে আবার অনেক একান্ত নামে। যাইহোক, পড়াশুনা একেবারেই ভাল লাগেনা আমার। ভাল লাগার মধ্যে দুইটা জিনিস , ফটোগ্রাফি আর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রতি ভাললাগা থেকেই টেকটিউন্স চেনা এবং টেকটিউন্সে আইডি খোলা। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়......
আমি তো জানতাম উইন্ডোজ ১০ এর ফোন, পিসি, ট্যাভ সবকিছুর জন্য একটাই ভার্সন।