আমরা বিভিন্ন আইএসপির মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। এসব সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হটস্পট থ্রটলিং এর মত সমস্যা। আপনি যদি Hotspot Throttle বাইপাস করতে চান, তাহলে আপনি এটি কয়েকটি উপায়ে করতে পারেন। এজন্য আপনি প্রথমে ভিন্ন সার্ভারে কানেক্ট হওয়ার ট্রাই করুন। যদি এতেও কাজ না হয়, তাহলে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আর আপনার যদি সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়, তাহলে আপনি আপনার আইএসপি এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন এবং তাকে Throttle তোলার জন্য বলতে পারেন। যাইহোক, এবার আমাদের জানার প্রয়োজন যে, ISP থ্রটলিং কি এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ।
Throttling হল, যখন আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি আপনার ইন্টারনেট কানেকশনকে নিজে থেকে ধীর গতির করে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। তারা বিভিন্ন কারণে আপনার ইন্টারনেট সংযোগ কে স্লো করে দিতে পারে। তবে এসবের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, তাদের ব্যান্ডউইথ সংরক্ষণ করা অথবা আপনি আপনার মাসের জন্য আপনার ডেটা ব্যবহারে সর্বোচ্চ লিমিটে পৌঁছে গেছেন। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ব্যান্ডউইথ সংরক্ষণ করার জন্য এই ধরনের পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকে। একজন ব্যবহারকারীর জন্য থ্রটলিং অবশ্যই হতাশাজনক হয়ে থাকে, বিশেষ করে আপনি যদি অনলাইনে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় এরকম সমস্যার সম্মুখীন হন।
আপনি যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, সেই আইএসপি আপনার সংযোগ থ্রোটলিং করেছে কিনা, সেটি দেখার কয়েকটি উপায় রয়েছে। এজন্য আপনি প্রথমেই আপনার ইন্টারনেট সংযোগের গতি চেক করে দেখতে পারেন। আপনার ইন্টারনেট স্পিড চেক করার সময় আপনি যদি দেখেন যে, আপনার প্যাকেজের তুলনায় স্পিড উল্লেখযোগ্য ভাবে কম, তাহলে সম্ভবত আপনার আইএসপি আপনার সংযোগকে থ্রোটল করেছে। এছাড়াও আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে, অনলাইনের কিছু কাজের ক্ষেত্রে ভালো স্পিড পাওয়া যাচ্ছে এবং কিছু কাজের ক্ষেত্রে কম স্পিড দিচ্ছে, তাহলে ও আপনি ধারণা করতে পারেন আপনার আইএসপি ইন্টারনেট স্পিড কমিয়ে দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি ভিডিও স্ট্রিমিং ভালো হয় কিন্তু কোন ফাইল ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়, তাহলে এটি Throttling এর আরেকটি লক্ষণ। তবে, বিভিন্ন আইএসপি তাদের প্যাকেজে ভিডিও স্ট্রিমিং এর ক্ষেত্রে বেশি স্পিড অফার করে থাকতে পারে এবং ফাইল ডাউনলোডের ক্ষেত্রে ভিন্ন স্পিড দিতে পারে। আপনি যদি তাদের ইন্টারনেট নেওয়ার সময় এই বিষয়টি জেনে থাকেন, তাহলে তাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু, আপনার নেওয়া প্যাকেজের চাইতেও যদি আপনি কম স্পিড লক্ষ্য করেন, তাহলে অবশ্যই ধারণা করতে পারেন যে, আপনার কানেকশনকে থ্রোটল করা হয়েছে।
আপনি যদি মনে করেন যে আপনার আইএসপি আপনার Wi-Fi কানেকশন কে থ্রোটল করেছে, তাহলে আপনি এ বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে প্রথমটি হল, ভিন্ন কোন ইন্টারনেট প্রোভাইডার ব্যবহার করার চেষ্টা করা। কিন্তু, আপনার ক্ষেত্রে যদি এটি সম্ভব না হয় অথবা আপনি যদি ইতিমধ্যেই এলাকার সেরা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি একটি ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারেন। একটি ভিপিএন আপনার ট্রাফিককে বিভিন্ন লোকেশনে থাকা সার্ভারের মাধ্যমে রুট করে, যা থ্রোটলিংকে বাইপাস করতে সহায়তা করে।
আপনার আইএসপি আপনার ইন্টারনেট কানেকশন টি Throttle করার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, তারা তাদের নেটওয়ার্কের ট্রাফিক ম্যানেজ করতে চায়। তার মানে হল, তারা ভিডিও স্ট্রিমিং বা গেমিং এর মত নির্দিষ্ট ধরনের ট্রাফিক গুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে পারে এবং ফাইল শেয়ারিং বা Peer-to-Peer Download এর মত অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক কমিয়ে দিতে পারে। যেহেতু, ব্যবহারকারীদের ভেতরে বেশিরভাগই Video streaming এবং Gaming এর বিষয়গুলোতে বেশি ইন্টারনেট ট্রাফিক ব্যবহার করে, তাই একটি ISP এমনটি করে থাকতে পারে।
তবে, কোন একটি আইএসপি এর ইন্টারনেট Throttle করার পেছনে আরো একটি কারণ হলো তাদের পরিচালনার খরচ কমানো। তারা কিছু ধরনের ট্রাফিক কমিয়ে দিয়ে, তারা তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করতে পারে। কম জনপ্রিয় এবং নতুন আইএসপি-রা এরকম কৌশল অবলম্বন করতে পারে, যাতে করে তারা কম ব্যান্ডউইথ দিয়ে বেশি ব্যবহারকারীদের সেবা প্রদান করতে পারে।
এছাড়াও, কিছু আইএসপি তাদের ব্যবহারকারীদের সংযোগ থ্রোটল করার পেছনে আরো একটি অন্যতম কারণ হলো, তারা বিশ্বাস করে যে, এটি তাদের নেটওয়ার্ক যানজট কমাতে সাহায্য করে। যখন সেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের ইন্টারনেট ট্রাফিক কম থাকবে, তখন ইন্টারনেট স্পিড ফাস্ট হবে। এসব কারণই মূলত আপনার ISP আপনার ইন্টারনেটকে স্লো করে দিতে পারে।
তবে, আমাদেরকে এটি মনে রাখতে হবে যে, সব আইএসপি কিন্তু এমনটি করে না। এমনকি আপনার আইএসপি যদি আপনার ইন্টারনেট স্পিডকে ধীরগতির বা থ্রোটল করে, তবে আপনার কাছে এক থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি উপায় রয়েছে।
আপনার কাছে ISP Throttling অনেক সময় বিরক্তির কারণ হতে পারে, তবে আপনি চাইলে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে ও আসতে পারেন। আপনি একটু চেষ্টা করলে আবার পুনরায় আপনার ইন্টারনেটের গতি বেশি করতে পারবেন এবং আপনার সমস্যার সমাধান হবে। চলুন, এবার এরকম কয়েকটি উপায় দেখে নেওয়া যাক, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি হটস্পট থ্রোটল বাইপাস করতে পারেন।
যদি আপনার বর্তমান সার্ভার থ্রোটল করা হয়, তাহলে আপনি অন্য একটিতে সংযোগ করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার ইন্টারনেট থ্রোটল এবং আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের গতিকে Improve করতে সহায়তা করতে পারে।
যদি আপনি একটি মোবাইল হটস্পট ব্যবহার করার চেষ্টা করেন এবং দেখেন যে আপনার সংযোগ কে থ্রোটল করা হচ্ছে, অথবা আপনার ইন্টারনেট স্পিড স্বাভাবিকভাবে ধীর গতির হচ্ছে, তাহলে সেটির সমাধান হিসেবে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। একটি VPN আপনার ডেটাকে Encrypt করে এবং থ্রটলিং বাইপাস করতে সাহায্য করতে পারে। এতে করে আপনার আইএসপি দেখতে পারেন না যে, আপনি কি ব্যবহার করছেন। তার মানে হল যে, আপনি তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে কি করছেন, সেটি দেখার উপর ভিত্তি করে তারা আপনার ইন্টারনেট স্পিডকে থ্রোটল করতে পারে না।
তাই, আপনি যদি ISP Throttling সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে একটি ভিপিএন নির্বাচন করতে হবে। আর এটা করার জন্য আপনি আপনার ডিভাইসে কোন একটি Vpn App ডাউনলোড এবং ইন্সটল করুন। আর এরপর অ্যাপটি ওপেন করুন এবং সেটিকে কোন একটি সার্ভারের সাথে কানেক্ট করুন। আর একবার এটি কানেক্ট হয়ে গেলে, আপনি আবার মোবাইল হটস্পট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এরপর আপনি দেখতে পেতে পারেন যে, আপনার ইন্টারনেট স্পিড পূর্বের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
একটি ভিন্ন সার্ভারের সাথে কানেক্ট এবং ভিপিএন ব্যবহার করার পরেও যদি আপনার সমস্যার উন্নতি না হয়, তাহলে আপনি আপনার ISP এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে Throttle তোলার জন্য বলতে পারেন। আবার কখনো কখনো আইএসপি গুলো তাদের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করার জন্য পিক সময় গুলোতে নির্দিষ্ট কিছু ধরনের ট্রাফিক, যেমন ভিডিও স্ট্রিমিং বা গেমিং কে থ্রোটল করতে পারে। আপনার ব্যবহার করা ISP ও যদি এমনটি করে থাকে, তাহলে তারা Off-Peak সময়ে Throttle তোলার জন্য ইচ্ছুক হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি পিক সময়ের বাহিরে অন্যান্য সময়গুলোতে স্বাভাবিক স্পিড পাবেন।
আপনি যদি এসব পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার হটস্পট থ্রোটল বাইপাস করতে এবং আপনার ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার যদি কখনো মনে হয় যে, আপনার ব্যবহার করা ISP দ্বারা Throttling এর শিকার হচ্ছেন, তাহলে আপনি এটির প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এসব পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে, আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার আপনাকে কোন ভাবে ঠকাচ্ছে কিনা।
এজন্য আপনি প্রথমে একটি ওয়েব ব্রাউজার থেকে Speedtest.net এর মত ওয়েবসাইটে যান এবং তারপর আপনার ইন্টারনেট স্পিড চেক করে দেখুন। ইন্টারনেট স্পিড চেক করার সময় আপনি যদি এখানে দেখেন আপনার ব্যবহৃত ইন্টারনেট প্যাকেজের চাইতে কম স্পিড পাচ্ছেন, তাহলে আপনি সম্ভবত Throttling এর শিকার হচ্ছেন।
আপনি যদি কখনো দেখেন যে আপনার ব্যবহৃত ইন্টারনেট প্যাকেজ এর তুলনায় আপনি কম স্পিড পাচ্ছেন, তাহলে আপনার সর্বপ্রথম ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। আপনার কোন ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে, আপনি আপনার ISP এর সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদেরকে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। এক্ষেত্রে তারা আপনাকে এটি বলতে পারবে যে, তারা আপনার ইন্টারনেট কানেকশন টিকে ধীরগতির করে দিয়েছে কিনা এবং দিলেও, সেটি কেন দিয়েছেন। যাইহোক, সকল পরীক্ষা শেষ করে আপনি আইএসপির সাথে যোগাযোগ করে এটি একটি চূড়ান্ত সমাধান নিন।
যদি আপনি নির্দিষ্ট কোন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবহার করে প্রায়ই এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সেই আইএসপিকে বাদ দিয়ে অন্য কোন প্রোভাইডার এর কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নিতে পারেন। আর, আপনার কাছে যদি এরকম কোন অপশন না থাকে, তাহলে আপনি আপনার ব্যবহৃত ইন্টারনেট প্রোভাইডারের কাছে তথ্য প্রমাণ সহ অভিযোগ করুন। আশা করছি, এতে করে আপনার ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতির মতো সমস্যার সমাধান হবে।
যেসব ব্যবহারকারীগণ তাদের ইন্টারনেট প্রোভাইডার এর কাছ থেকে একেবারে নিখুঁত সার্ভিস পেতে চান, তাদের জন্য Throttling একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হতে পারে। যদিও থ্রটলিংকে বাইপাস করা কঠিন হতে পারে, তবে আপনার আইএসপি আপনার ইন্টারনেট সংযোগ ধীরগতির করে দিচ্ছে কিনা, আপনাকে প্রথমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করার পর, সমস্যার সমাধানে আপনি উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে দেখতে পারেন এবং আপনার ইন্টারনেট স্পিডকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়েছে কিনা, তা বের করতে পারেন।
যাইহোক, স্বাভাবিকভাবে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বিভিন্ন কারণে আপনার ওয়াইফাই এর গতি কমিয়ে দিতে পারে। তবে, স্পিড জনিত সমস্যার ক্ষেত্রে আপনি সর্বপ্রথম তাদের হেল্পলাইনে ও যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান নিতে পারেন। তো, আপনাকে কি কখনো এরকম Throttling মোকাবেলা করতে হয়েছে? আপনার মতামতটি অবশ্যই টিউনমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)