বাংলা হোক বা ইংরেজি, আদতে বিষয়টা হলো ‘কনটেন্ট রাইটিং’। বিশুদ্ধ ক্রিয়েটিভ ব্লগ থেকে শুরু করে সফ্টওয়্যার টেকনিক্যাল রাইটিং—এর মধ্যে সবকিছুই পরে। এমনকী, গোস্টরাইটিংও, যেখানে অন্য কারও বকলমে লিখতে হয়।
এই পেশায় যাঁরা আছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ ওয়েব-এ ‘ওয়র্ক ফ্রম হোম’ মোডে কাজ করেন। অর্থাৎ লেখাজোকা, প্রোজেক্ট ডেলিভারি, টিম মিটিং, মাসমাইনে—সবকিছুই অনলাইন। কেউ কেউ আবার ‘মাস’ হিসেবে নয়, প্রোজেক্ট অনুযায়ী কাজ করতে পছন্দ করেন। সে প্রোজেক্ট এক সপ্তাহেরও হতে পারে, আবার ৬ মাসেরও হতে পারে। এর পাশাপাশি রয়েছেন ফুল-টাইম কনটেন্ট রাইটার্স, যাঁদের নির্দিষ্ট সময়ে অফিস যেতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা ধরে কাজ করতে হয়। বহুদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা বাড়লে, পরে কনটেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
কনটেন্ট রাইটিং-এর সবচেয়ে বড় কাজের বাজার কিন্তু রয়েছে ওয়েব-এই। আর সে বাজার ক্রমশ বাড়ছে। তবে শুধুমাত্র বাংলায় যদি লেখেন, তবে কাজের ক্ষেত্রটা ইংরেজি-র তুলনায় সীমিত। বাড়ি থেকে কাজ করলে প্রথমেই আপনাকে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে ইলান্স-ওডেস্ক(আপওয়র্ক) এবং ফ্রিলান্সার-এ। এ দু’টি ওয়েবসাইট হলো এই ধরনের কাজের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক। এখানে পাবেন দু’ধরনের প্রোফাইল—একদল যাঁরা কাজ করেন এবং অন্যদল, যাঁরা কাজ করান, অর্থাৎ ক্লায়েন্টস। সারা প়ৃথিবী থেকে লোকজন এখানে কাজের খোঁজে আসেন। শুধু কনটেন্ট নয়, ওয়েব ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিং, ডেটা এন্ট্রি, টাইপিং এমনকী অ্যাকাউন্টস-এর কাজও থাকে।
এই দুই দলকেই রেটিং করে এই ওয়েবসাইটগুলি। যিনি লিখবেন, তাঁর জন্য আছে নানা ধরনের স্কিল টেস্ট। তিনি যত বেশি টেস্ট দেবেন এবং ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করবেন, তাঁর ‘বাজারদর’ তত বেশি। ক্লায়েন্ট-রা এই রেটিং-এর উপর ভিত্তি করেই রাইটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, টাকা-পয়সা নিয়ে দর কষাকষি করেন। বাংলা কনটেন্ট রাইটিং-এর উপর কী কী ধরনের কাজ আছে, সেটা ওয়েবসাইটের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন-এ খুঁজতে হবে। ক্লায়েন্টরা কাজগুলি সম্পর্কে দু’চার কথা লিখে প্রোজেক্ট হিসেবে সেগুলি টিউন করেন। পাশে লেখা থাকে টাকার অঙ্ক—প্রতি ঘণ্টা কাজের হিসেবে অথবা সম্পূর্ণ প্রোজেক্ট ধরে। তাছাড়া রয়েছে কুইকার, ইনডিড, নোকরি ডট কম ইত্যাদি জব সাইট্স, যেখানে ফুল-টাইম, পার্ট টাইম দু’ধরনের কাজেরই খবরাখবর থাকে।
বিডিং-নেটওয়র্কিং-কলিং
১. ওয়েবসাইটগুলিতে গিয়ে নেটওয়ার্কিং করুন। ইলান্স-ওডেস্ক এবং ফ্রিলান্সার ছাড়াও বর্তমান সময়ে খুব জরুরি লিঙ্কডইন প্রোফাইল। ওয়েব থেকে যাঁরা নিয়োগ করেন তাঁদের অনেকেই এই সাইটে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে বেছে নেন লেখক-লেখিকাদের। নিজের কাজের অভিজ্ঞতার কথা ফলাও করে লেখা ছাড়াও রাখতে পারেন কিছু লেখার নমুনাও—কোনও ব্লগ বা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত কোনও লেখার স্ক্যানড্ ইমেজ। এছাড়া আজকাল অনেকেই ফেসবুকে একটি পেজ খুলে নিয়ে ব্যক্তিগত প্রোফাইলের মাধ্যমে প্রোমোট করেন।
২. ওয়েব কনটেন্ট রাইটিং-এ উপার্জনের পরিমাণের কোনও সীমা নেই। আর উপার্জন বাড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হলো ‘বিডিং’। নতুন যাঁরা লিখতে আসছেন, তাঁরা প্রথমেই এই খেলায় নামতে যাবেন না। অন্তত এক বছর ইলান্স-ওডেস্ক এবং ফ্রিলান্সার-এর বিডিংগুলি ভাল করে লক্ষ করুন। বিডিং হয় এইভাবে- একজন ক্লায়েন্ট একটি ‘প্রোজেক্ট’ টিউন করে ‘বিডিং’-এর জন্য একটি সময়সীমা দিয়ে দেন। কাজটি কী ধরনের, তার একটা বর্ণনা দেওয়া থাকে।
এর ভিত্তিতে আপনাকে করতে হবে ‘বিড’- অর্থাৎ কাজটি আপনি করলে কতদিনে করবেন এবং ‘কত টাকা’-র বিনিময়ে সেটি এই প্রোজেক্ট-এর থ্রেড-এ লিখতে হবে। ক্লায়েন্ট ‘বিড’-গুলি পড়ে তার মধ্যে থেকে বেছে নেবে। এখানে ক্লায়েন্ট দেখবে মূলত চারটি জিনিস— আপনার আগের কাজের অভিজ্ঞতা, স্কিল টেস্ট-এর ফলাফল, আপনি ক্লায়েন্ট-এর দেওয়া ডেডলাইনের মধ্যে প্রোজেক্ট জমা দিতে পারবেন কি না এবং কত কম টাকায় কাজটি করবেন।
৩. বিড-এ না গিয়ে লিঙ্কডইন, ইলান্স অথবা ফ্রিলান্সার থেকে ক্লায়েন্ট-এর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে সরাসরি ফোন করে কথা বলতে পারেন। মনে রাখবেন, মেইল করে খুব একটা লাভ হয় না। ফোন-এ প্রাথমিক কথা বলে পরে স্কাইপি-তে যোগাযোগ করলে ভাল। বিদেশি ক্লায়েন্টরা সাধারণত স্কাইপি-তেই কথা বলতে চান।
‘পে-প্যাল’ এবং পেমেন্ট
ওয়েব-এ বেশিরভাগ কাজই আসে বিদেশ থেকে। সবচেয়ে বেশি আদানপ্রদান হয় ডলার-এ। এক্ষেত্রে লেনদেনের জন্য নির্ধারিত একাউন্টের ব্যপারটা যাচাই করে নিতে হবে।
ওয়েব কনটেন্ট রাইটিং নিয়ে একটি বদনাম আছে। অনেকে কাজ করিয়ে টাকা দেয় না। এমনটা সত্যিই ঘটে। তাই খুব জরুরি হলো, কাজ হাতে নেওয়ার আগে ক্লায়েন্ট সম্পর্কে ভাল করে জানা। ক্লায়েন্ট-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে ভাল করে স্টাডি করতে হবে। তাছাড়া ইলান্স বা ফ্রিলান্সার-এ ক্লায়েন্ট রিভিউগুলি পড়তে হবে। এখানে কাজ করিয়ে-রা যেমন লেখকদের কাজের মূল্যায়ন করেন, তেমনই লেখকরাও মূল্যায়ন করেন ক্লায়েন্টদের।
যেমনই ক্লা়য়েন্ট হোক না কেন, অর্ধেক টাকা হাতে নিয়ে তবে প্রোজেক্ট-এ হাত দেবেন। বাকি টাকার পেমেন্ট হবে ফাইনাল প্রোজেক্ট সাবমিশন-এর পর।
আমি তানভীর আহমেদ অনন্ত। Managing Director, HostingNibo, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
Wanna be the highest taxpayer!