একজন ব্যক্তি তার ওয়েবসাইট বিশ্ব দরবারে প্রথম উম্মোচনের সময় এত বেশি আবেগপ্রবণ থাকে যে ওয়েব হোস্টিং এর বিষয়টি তার ভাবনার বাইরের জিনিসে পরিনত হয়। এমন কি সুন্দর একটি ডোমেইন নেম বাছাই করার জন্যই দুই/একদিন সময় চিন্তা করে সময় অপচয় করতে নারাজ। অথচ একটি প্রোজেক্টের শুরুতে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ওয়েবসারভারে আপনার ওয়েবসাইটটি থাকবে সেটি কি আপনার প্রোজেক্টের জন্য উপযোগি কিনা তা প্রথমে ভেবে দেখতে হবে।
অধিকাংশ সময়ই ওয়েব হোস্টিং নেওয়ার সময় ক্লাইন্ট শুধু বলে এত জিবি হোস্টিং এবং এত জিবি ব্যান্ডউইথের সারভার লাগবে। এবং আমি তাদের প্রোজেক্টের বেপারে জিজ্ঞাস করি। কারন তার জন্য উপযোগি সারভার কি হবে তা আমাকে জানতে হবে এবং সেই মানের সারভার দিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশেরই ধারনা স্পেস আর ব্যানউইথই হোস্টিং সারভারের মানের নিয়ামক! এ বেপারে কিছু কথা না বললেই নয়। এমন কি একাধিক পোস্টে এ কথা আমাকে বলতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও বলতে হবে।
এটা সবাই ভুলে যায় যে ওয়েবসারভারও একটি কম্পিউটার বা কম্পিউটার সমস্টি, আর তাদের সাথে যুক্ত থাকে উচ্চ মান সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ। আপনার ওয়েবসাইট যখন কোন তথ্য চাইবে তখন সেই কম্পিউটারের কনফিগারেশনের উপরেই নির্ভর করবে কত দ্রুত আপনি তথ্যগুলো পাবেন। আর সারভারটি নিন্ম মানের হলে ধিরে ধিরে তথ্য পারেন, উচ্চ মানের হলে দ্রুতগতিতে তথ্য পাবেন। অনেক বেশি স্পেস ও ব্যান্ডউইথ দেওয়াটা যতটা না সহজ তার চেয়ে হাজারগুন কঠিন দ্রুতগতির এবং ভাল আপটাইমের সারভার প্রদান করা।
নিজের তালিকাটি দেখলে বুঝতে আরো সুবিধা হবে-
এখানে দেখা যাচ্ছে সারভারের দামের ক্ষেত্রে স্পেস এবং ব্যান্ডউইথের ভুমিকার চেয়ে সারভারের প্রোসেসর ও র্যামের ভূমিকা বেশি। ১০ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথের কোন একটি সারভারের মাসিক খরচ ৮০ ডলার, আবার কোনটির খরচ ৩৭০ ডলার।
এতক্ষন যা বললাম তা হলো ওয়েবসারভারের কনফিগারেরশন ও দামের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা বিষয়ক কথা। এখন শুরু করছি- মূল আলোচনায়- আপনার ওয়েবসাইটটি কোন ধরনের হলে আপনি কোন ধারনের সারভার নিবেন?
শুধু এইচটিএমএল, সিএসএস , জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে তৈরী ওয়েবসাইটগুলোর জন্য এপাচি ইনস্টল করা নাই এমন সারভার থেকে দেখতে পারবেন। এবং যেহেতু ডাটাগুলো এইচটিএমএল কোড আকারে আছে তাই ডাটাবেজেরও দরকার হয় না। ভাল ইন্টারনেট গতির এবং দ্রুত রেসপন্স করতে পারে এমন সারভারই যথেষ্ঠ।
এএসপি ডট নেট উইনডোজের একটি জনপ্রিয় সারভার সাইট স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ। অনেক প্রতিষ্ঠানই ভিজুয়াল বেসিক বা ভিজুয়াল বেসিক ডটনেট প্লাটফর্মের ডেস্কটপ এপ্লিকেশনের অনেকগুলোই এএসপি ডটনেট প্লাটফর্মের ওয়েব সফটওয়্যারে ডিজাইন করেছে। কারন, ওয়েব ইন্টারফেসে কনভার্ট করতে খুব সহজ সমাধান পেয়েছেন এবং একই এসকিউএল ডাটাবেজ রেখে তারা কাজটি করতে পেরেছেন। বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের এপ্লিকেশন ওয়েবসাইটই এএসপি ডটনেটে ডিজাইন করা। এই সফটওয়্যার হোস্ট করতে হলে আপনাকে উইনডোজ সারভার ব্যবহার করতে হবে। যেখানে, এসপি ডটনেট ও এসকিউএল রয়েছে। সাধারনতঃ সব উইনডোজ সারভারই পিএইচপি সাপোর্ট করে।
ছোট করপোরেট ওয়েবসাইট যেখানে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের তথ্যসমুহ এবং কিছু ছবি দিয়ে ওয়েবসাইটটি তৈরী করা হয় সেই সাইটের জন্য দ্রুতগতির এবং ভাল মানের শেয়ার হোস্টিং নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের তথ্যগুলো খুব কম পরিমানের ভিজিট হয় কিন্তু এটি সামান্য সময়ের জন্যও ডাউন থাকলে প্রতিষ্ঠানের ইমেজের উপরে প্রভাব ফেলবে। করপোরেট ওয়েবসাইটে অনেক সময় জেকোয়েরী, জাভাস্ক্রিপ্ট, ফ্লাস ইত্যাদি কনটেন্ট থাকে তা দ্রুত লোড হওয়ার বেপারে সারভারের ভূমিকা রয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথের কথা না ভেবে ভাল মানের দিকে চিন্তা করতে হবে।
ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলাসহ বিভিন্ন কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বেশ জনপ্রিয়। ওয়েব ডিজাইনের উপরে কম জেনেও অনেকেই থিম ও টেমপ্লেট ইডিট করে করে সুন্দর ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলছে। কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলো এমনভাবে তৈরী হয় যাতে সহজে এদের কোড ইডিট করা যায় এবং একটি পেজের জন্য অনেকগুলো HTTP রিকোয়েস্ট পাঠায়। বিশেষ করে কিছু সিএমএস থিম বা টেমপ্লেটে একাধিক জাভাস্কিপ্ট, সিএসএস, জেকোয়েরী ফাইল কল করায় দেখা যায় প্রতিটি পাতা লোড হতে ১০ থেকে ৫০ টি পর্যন্ত HTTP রিকোয়েস্ট পাঠায়। সারভারের প্রোসেসিং ক্ষমতা এবং রেসপন্স টাইম কম হলে সিএমএসগুলো আরো দেরীতে লোড হবে।
যারা অনেক বেশি পরিমানের ফাইল সংরক্ষণ করবেন এবং এগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং খুব বেশি যা ডাউনলোড করা হবে না, একই সময় খুব বেশি ভিজিটরও হবে না তারা বেশি স্পেস ও নিচু প্রোসেসিং ক্ষমতার ওয়েবসারভার নিলেও সমস্যা হবে না।
ধরা যাক আপনার ২০০ জিবি ব্যাক্তিগত ফাইল আছে যা আপনি সংরক্ষন করতে চাচ্ছেন এবং প্রয়োজন হলেই কাজে লাগাবেন সে ক্ষেত্রে টাকা বাচানোর জন্য কমগতির সার্ভার নিতে এই পরামর্শ দেবো।
সকলের জন্য উম্মুক্ত অনেক বেশি ফাইল ডাউনলোড ওয়েবসাইট বানাতে চাইলে তার জন্য আমার পরামর্শ থাকবে একাধিক সারভার ব্যবহার করা। আপনার সাইটটি হোস্ট করার জন্য খুবই দ্রুত প্রোসেসিং করতে পারে এমন একটি সারভার পছন্দ করবেন। আর ফাইলগুলোর জন্য বেশি ব্যান্ডউইথের বেশ কিছু সারভার ব্যবহার করতে পারেন। সারভারের ব্যান্ডউইথ অপচয় রোধে বেশ কিছু পদ্ধতিও অবলম্বন করতে হবে। ( সেটা অবশ্য ওয়েব ডেভলপমেন্ট বিষয়ক পোস্ট- পরবর্তিতে লেখার পরিকল্পনা রইল।)
নিজের সারভারে যারা অডিও ভিডিও স্ট্রিম করতে চান তাদের জন্য ভিন্ন টেকনোলজীর সারভার ব্যবস্থাপনা দরকার হয়। আর সেই সারভার নির্ভর করে একসাথে কতজন স্ট্রিমটি দেখবে বা অডিওটি প্লে করবে।
ভিডিও স্ট্রিমিং টেকনোলজীর সারভার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অনেক বেশি কথা লেখা যায় তবে এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বলছি। স্ট্রিমিং সারভারগুলো একই সাথে অনেকগুলো সারভারের সমন্বিত সারভার ব্যবহার করে এবং স্ট্রিম ভিউয়ার বেশি হওয়ার সাথে সাথে সারভারের লোড অনুসারে সারভারের বিভিন্ন অংশ থেকে স্ট্রিম হতে থাকে। আবার লোড কমার সাথে সাথে গ্রিড রিসোর্স কমিয়ে ফেলে।
যারা ইভেন্টের স্ট্রিমিং করতে চান তারা স্ট্রিমিং সারভার থেকে প্রয়োজন অনুসারে রিসোর্স কিনে ব্যবহার করতে পারেন। আর যারা নিয়মিত স্ট্রিমিং করকরে যাবেন তাদের জন্য ক্লাউড সারভারের পরামর্শ দেবো।
এমএলএম (Multi Level Marketing), হাইপ (High Yield Investment Program), পিটিসি (Pay Per Click) বা প্রাতিষ্ঠানিক সফটওয়্যার যেখানে ডাটা ও নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের অবশ্যই ডেডিকেটেড বা ভিপিএস নিতে বলবো।
এমএলএম, হাইপ, পিটিসি সাইটে প্রতিদন্ডিরা একে অন্যের সাইটে DDos এটাক চালাতে পারে। হ্যাকারগণ বিভিন্ন পদ্ধতিতে সারভারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেস্টা চালাতে পারে, কারন এখানকার প্রতিটি ডাটাই টাকার হিসাবের সাথে জরিত। আর যে কোন সময় সারভার ডাউন হলে ব্যবসার উপরে প্রভাব পড়বে। ইউজারের সংখ্যার উপরে ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় কনফিগারের ডেডিকেটেট সারভার নিতে হবে। আর DDos আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম সারভার নিতে হবে।
অনেক জনপ্রিয় ব্লগের ক্ষেত্রে ভিজিটরের উপস্থিতির উপরে ভিত্তি করে ডেডিকেটেড বা ক্লাউড সারভার এবং কনটেন্ট ডেলিভারী নেটওয়ার্কের (CDN) সম্মিলিত ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অধিকাংশ ব্লগের তথ্যই মাইএসকিউএল ডাটাবেজে সংরক্ষিত হয় এবং প্রচুর সারভারসাইড কাজ করতে হয় এ জন্য লাল ক্যাশ মেমরী ও র্যামের ওয়েবসারভার কিনতে হবে।ডাটাবেজের জন্য প্রয়োজনে আলাদা সারভারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোন একটি ওয়েবসাইটের ট্রাফিকের বর্তমান অবস্থা, ওয়েবসাইটের কনটেন্ট এবং ডিজাইন না দেখে অবশ্য হলফ করে বলা যায় না এই সারভারই আপনার প্রয়োজন। ওয়েব হোস্টিং বিষয়ক কোন সহযোগিতার দরকার হলে টিউটোহোস্ট টিম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত। আল্লাহ হাফেজ।
Cross Posted on TutorialBD.com
আমি টিউটোহোস্ট। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 162 টি টিউন ও 69 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টিউটোহোস্ট বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ওয়েব হোস্টিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাস্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দ্রুতগতির বেশ কিছু ওয়েব সারভারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। আমরা এদেশে ২৪ ঘন্টা এবং বছরে ৩৬৫ দিন অনলাইন এবং ফোন সাপোর্টের ব্যবস্থা রেখেছি। বাংলেদশসহ অনেক দেশের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আমাদের সারভার ব্যবহার করছে।
Good Tune, Good Post… Go ahead…